ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098

                                    অভিজিৎ চৌধুরী এর তিনটে কবিতা


ঘরভর্তি হাঁটুজল।
পাশাপাশি দুটো ছায়া।
ছোট বড় নানা আকারের অনুভূতি তাতে এদিক ওদিক সাঁতরে বেড়াচ্ছে।
তুমি আর আমি দায়বদ্ধতার সমস্ত ঝঞ্ঝাট গা থেকে ঝেরে ফেলে,
ডুবে যাচ্ছি পরস্পরের মধ্যে।

ঠিক কতটা গভীরে তা বাকিদের বুঝতে হলে,
মৃত্যুর পরেও তোমাকে ভালোবেসে যেতে হবে।

বাইরে এখন ঝমঝমিয়ে যে আঘাত নেমেছে,
তার প্ৰত্যেকটা ছিটে এক একটা নদী।
যার উৎস তোমার চোখ ধুয়ে দেওয়া ঝিরঝিরে বৃষ্টি।
আমি পরিত্যক্ত নিবিড় ঘাট।
বরাবরের মতো।
ভিজে চলেছি চিরসুখে।
শুধু পাতার পর পাতা কবিতা উড়ছে,
বিকেলের মেঘলা আকাশে।

বেশ কিছুটা সংযত আমি আগের থেকে।
অভিজ্ঞতা।
প্রতিটা বর্ষার মতো তুমি ফিরে যাবে জেনেও,
স্রেফ স্মৃতি হতেও রাজি।
চাইলেই তো সব কিছু অস্বীকার করা যায়না।
বালির সৈকতে আছড়ে পড়া ঢেউ সারাজীবন থেমে থাকেনা।
ঘাসের শরীর ছুঁয়ে চেনা পা বারবার হেঁটে যায়না।
কাগজে কলমে সবসময় সহবাস হয়না।
তবু এরা অপরাজিত বন্ধুতার দোসর!
অভ্যেসে নয়।
অভাবে নয়।
শুধু ফুরিয়ে না যাওয়া টানে।

তোমাকে আটকে রাখার মতো সাহসী আমি নই।
তবে ভীতু মন যতগুলো বছর এই শূন্যতাকে আঁকড়ে ধরে কিছু না কিছু লিখে যেতে পারবে, ততোগুলো ঋতুতে তুমি প্রেরণা হয়েই জেগে থেকো রাতের শান্ত আলোয়।






ত্যাড়াব্যাঁকা গলি। ছোটোখাটো ব্রীজ। পেরিয়ে গিয়েছে তারা,
পূর্ণিমার লাইব্রেরী। কাটাকুটি বই। সাঁতরে এসেছে যারা।

টানা রিক্সা। আঁকাবাঁকা মানুষ। গানে মুখ ঢেকেছে সব ক্ষত,
হাতে হাত রেখে ঈশ্বর খোঁজা। কাঙালের আদিখ্যেতা যত।

' চা খাবে কি? ' , ' নাকি ফাঁটা ঠোঁট? ', চোখ বলে শুধু ছোঁব,
ঝর্ণাপিপাসু ন্যাড়া শরীর বলে, আমিও তো আত্মারই দোসর।

একতলা বাড়ি। লোকজনহীন। সেলাই মেশিনে লেগে ওম,
তোমারই স্পর্শ তাড়া করে ফেরে। সুতোয় অবলম্বন গাঁথে মন।

ছেলেমানুষি নিটোল।আপাদমস্তক। শখ করে ভাবি,

' ইশ! কালই যদি সত্তরে পৌঁছে যাওয়া যেত..'

দলাদলি অঝোর। মিথ্যে অভিযোগের।
কিচ্ছুটি না বলে দূরত্ব ঘিরে,
গিটারের স্ট্রিং হতে হতো।

বাঁদিকে চিনচিন ব্যথা। মাঝরাতে আজও।

' কোন ওষুধটা ঠিক যেন খেতে হয়? '

স্মৃতির বিচ্ছিরি হাসি। আমিও ফ্যাকাসে চাঁদ।
বাঁচিয়ে রেখেছে ঢেউ। ঝড়ে ঘেরা তীর নয়।

অবসাদ ঝরে পরে। টুকরো টুকরো হয়ে।
গোটা শহরে আজ হুল্লোড়ে উৎসব কেন এত্তো?

কেউ কি বলেনি ওদের..

ভীষণ দুর্যোগেও আদর আঁকলে মাথায়,
ভালোবাসার জন্য চিরটাকালই যে বরাদ্দ।



সদর দরজা ঠেলে খানিক আগেই হুড়মুড়িয়ে ঘরে ঢুকে পড়েছে গানভর্তি ঝোড়ো হাওয়া।

তোমার আমার সমাজে স্পর্শের কোনও ধর্ম নেই,
পরিচয় আছে।
স্পষ্ট।
রক্তের গন্ধে যৌনতার অকারণ বুঁদ হয়ে থাকা নেই,
পবিত্রতা আছে।
স্নেহের।
যদিও বা কিশোর পাঠকের মতো অনেকবার না বুঝেই তোমার প্রত্যেকটি লেখায় উল্টে পাল্টে সন্ধান করেছি বিপর্যস্ত,
অস্থির একটা কল্পনার।
তোমার চশমার ফাঁকে চিকচিক করা জলের পুরোটা গায়ে ঢেলে প্রেমিক হয়ে চেয়ে থেকেছি,
ডানা মেলা মানুষদের উড়ন্ত শহরের দিকে।

অবশেষে তুমি কাচা জামাকাপড়ের সাথে,
বাসি কিছু অক্ষর টাঙ্গিয়ে রেখেছ উঁচু উঁচু বহুতলের ভাঙাচোরা-ঘোলাটে আকাশে।

টানা রিক্সা আর এলোমেলো ট্রামলাইনের সংযোগের চারপাশে,
হাতে বানানো নৌকোর সাথে সাদা কালো মেঘেরা বারবার আশ্রয় নিয়েছে কবিতা লেগে থাকা স্যাঁতস্যাঁতে ঠোঁটেই।
অসমাপ্ত গল্পেরা অনায়াসে চোখমুখ ধুয়ে দিয়েছে,
দিনরাত জেগে থাকা অসংখ্য এস এম এসের।
তবে কি..
অবলম্বন..?
নাকি পিছুটান..?

ভালোবাসলে মিথ্যে যুক্তি খুঁজতে নেই।
চুপচাপ সব মুঠো খুলে দিতে হয়।

বছর পঁয়ষট্টির এক অসহায় বৃদ্ধ বৃষ্টি-বাদলা আর যানজটের ব্যস্ত এই সন্ধ্যায় জল কাদা পাড়িয়ে পৌঁছে গেছে সেই সরকারি হাসপাতালের কাছে,
যেখানে গতকাল দুটো ছায়া আলাদা হয়েছে কয়েকযুগ টানাপোড়েনের শেষে।
হাতে তার স্ত্রীর অস্থি।
বুকে জীবনের পর জীবনের স্মৃতির সম্বল।

গাছের আদরে মাথা রাখা আজকের বন্ধুযুগল,
কাল থেকে কখনও সামনাসামনি দাঁড়াবে না।
তাই ওরা ঝগড়া করছেনা।
শুধু গভীরভাবে মত্ত হয়েছে দীর্ঘশ্বাস এবং চুমুর স্বরলিপিতে।

রেললাইনের ধারে আগাছা হয়ে বেড়ে ওঠা সারি সারি ঝুপড়ি বাড়ির আমরণ সংগ্রাম আছে।
কিন্তু ওরা এতটুকু সান্ত্বনা চায়নি।
পরাজয়ের ধূলো গায়ে মাখেনি।
সংশয়ের মধ্যেই স্বপ্ন দেখেছে।
অজস্র।
অনেক মুখোশ উদ্ধার করেছে,
একটা একটা করে ছুঁড়ে দিয়েছে পতাকাধরা মানবিকতার দিকে।

ঠিক তেমনভাবেই,
তোমার ও আমাকে ভীড়ের সামনে স্বীকার করার দুঃসাহস না থাকলেও আমি তারা হয়ে খসে পড়ি তোমারই ছবির পাশে।
সবসময়।

তুমি এখন আর টের পাওনা।



No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098