ল্যান্ড অফ মাইন্স-এর এডিন জেকো
বলুন তো পৃথিবীর ইতিহাসে বোসনিয়ার ভূমিকা কি?হ্যা,ঠিকই শুনেছেন,আজ
যাকে আমরা বোসনিয়া হার্জেগোভিনা বলি,সেই বোসনিয়া।আচ্ছা,হিটলার কে
জানেন?চার্চিল,ভার্সাই?হিরোসিমা ,নাগাসাকি তারপর ইউনাইটেড নেশন্স?পোলিশ
করিডর?প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ?পরোক্ষ কারণ অনেকগুলিই ছিল এই ভয়ঙ্কর
সংকটের,কিন্তু প্রত্যক্ষ কারণটি জানেন?
হ্যা এই
সেই বসনিয়া,যার শহর সেরাজেভোর এক হত্যাকান্ডকে নিয়েই শুরু হয় প্রথম
বিশ্বযুদ্ধ,পৃথিবী পাল্টানোর ইতিহাস।হয়ত সেরাজেভো না থাকলে না থাকত
মুসোলিনি,হিটলার,না থাকত এই আধুনিক জীবনশৈলী,বিশ্বযুদ্ধোত্তর শান্ত পৃথিবী।
অস্ট্রিয়ার
যুবরাজ ফার্দিনান্দ আর তার স্ত্রী সেরাজেভোতে ভ্রমণে এলে তারা গুপ্তহত্যার শিকার
হন।গুপ্তহত্যাকারী দলের নাম ছিল ব্ল্যাকহ্যান্ড।যে সপ্তাহে ফ্রাঞ্জ ফার্দিনান্দ আর
সোফি সারায়েভো ভ্রমণে আসেন, সেই সপ্তাহে শহরের হলগুলিতে দুইটি নির্বাক চলচিত্র
দেখানো হয় যেগুলোর নামে হামলার প্রচ্ছন্ন ইঙ্গিত ছিল। দ্য ইমেরিয়াল কিনো তে দেখানো হয় ‘The World Without Men’ আর দ্য অ্যাপোলো কিনো তে দেখানো হয় ‘The Shot at Midnight’।সার্ভিয়ার মিলিটারী
ইন্টিলিজেন্সকে এই হত্যাকান্ডের অভিযান পরিচালনার জন্য অর্থ দেয় তৎকালীন
বেলগ্রেডের রাশিয়ান মিলিটারী প্রধান Wiktor Artamono।
হত্যাকান্ডের পর ঘটনাস্থলে ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মত স্মৃতিস্মারক স্থাপন করা হয়।ঘাতক Princip যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সে স্থানটায় দেয়ালের সাথে খাড়া করে কালো মার্বেল পাথরের একটা প্লেট বসানো হয়, যেটার উপর সিলিরিক ভাষায় সোনার হরফে লেখা হয় ‘Princip proclaimed freedom on St. Vitus’ Day June 28, 1914’। পরে ১৯৪১ সালে নাৎসি আর্মি যুগোস্লাভিয়া আক্রমণের সময় ফলকটি সরিয়ে ফেলে এবং স্বৈরশাসক হিটলারকে তার ৫২তম জন্মদিনে উপহার হিসাবে প্রদান করে।তবে এইটুকুই ছিল বোসনিয়ার কৃতিত্ব,সুযোগসন্ধানী বিবদমান গোষ্ঠীগুলো এই সুযোগে দু'দলে বিভক্ত হয়ে যায় এবং সারাবিশ্বব্যাপী এক মহাযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরী করে।
হত্যাকান্ডের পর ঘটনাস্থলে ১৯৩০ সালে প্রথমবারের মত স্মৃতিস্মারক স্থাপন করা হয়।ঘাতক Princip যেখানে দাঁড়িয়ে ছিল সে স্থানটায় দেয়ালের সাথে খাড়া করে কালো মার্বেল পাথরের একটা প্লেট বসানো হয়, যেটার উপর সিলিরিক ভাষায় সোনার হরফে লেখা হয় ‘Princip proclaimed freedom on St. Vitus’ Day June 28, 1914’। পরে ১৯৪১ সালে নাৎসি আর্মি যুগোস্লাভিয়া আক্রমণের সময় ফলকটি সরিয়ে ফেলে এবং স্বৈরশাসক হিটলারকে তার ৫২তম জন্মদিনে উপহার হিসাবে প্রদান করে।তবে এইটুকুই ছিল বোসনিয়ার কৃতিত্ব,সুযোগসন্ধানী বিবদমান গোষ্ঠীগুলো এই সুযোগে দু'দলে বিভক্ত হয়ে যায় এবং সারাবিশ্বব্যাপী এক মহাযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরী করে।
তবে
বোসনিয়া হার্জেগোভিনায় শান্তি কোনওদিনই ছিলনা।১৯৯১সালে সার্বভৌমত্বের দাবী রাখা
দেশে ১৯৯২সালে রেফারেন্ডাম ফর ইনডিপেন্ডেন্স প্রস্তাবিত হয়,কিন্তু সার্বসরা এর
বিরোধিতা করেছিল।ঐ সালেই শুরু হয় আধুনিক যুদ্ধ,ক্রোট-বসনিয়ান ওয়ার,ক্রোটরা
ব্যাপকহারে ল্যান্ডমাইন ব্যবহার করে,পুরো বোসনিয়া জুড়ে ২মিলিয়ন ল্যান্ডমাইন রাখা
হয়।সেরাজেভোতে সবচাইতে বেশী ল্যান্ডমাইন ছড়িয়ে রাখা হয়েছিল,যার অনেকাংশ আজও
সক্রিয়,আজও অনেকে প্রাণ হারান ২৫বছর আগের সেই ল্যান্ডমাইনস গুলোতে।
বোসনিয়ার
ইতিহাস অনেক,কিন্তু সুখের নয়।বড় বড় রাষ্ট্রের রাজনৈতিক টানাপোরেনের শিকার
বোসনিয়া।কিন্তু,স্বাধীনতা পরবর্তী ইতিহাস সামান্য হলেও সুখের,আর তাতে যাদের ভূমিকা
অন্যতম তাদের মধ্যে একজন হলেন এডিন জেকো,বা পায়ের বোসনিয়ান নায়ক।সেই সেরাজেভোর
বস্তি থেকে যার উত্থান,ক্রোটযুদ্ধের ভয়াবহতায় যার ছোটবেলা উথালপাতাল হয়েছিল সে আজ
রোমের রাজা।খুব সামান্য দূরত্ব থেকে মাইন বিস্ফোরণ দেখেছেন যিনি,মরতে দেখেছেন
অসংখ্য বোসনিয়ানকে,তিনি আজ বিশ্বফুটবলের একজন তারকা।যেবার প্রথম বোসনিয়া ইউরো কাপে
খেলল,প্রতিটি বোসনিয়ান সবকিছু ছেড়ে মাঠে উপস্থিত হয়েছিল এক অদম্য ইচ্ছে নিয়ে,এক
নতুন সুন্দর ইতিহাস তৈরীর জন্য।
বোসনিয়া
তখন ছিল যুগোস্লাভিয়া,কিন্তু বর্তমান সময়ে কোনও বসনিয়ান ১৯৯২এর আগের ইতিহাসকে
বোসনিয়া-হার্জেগোভিনিয়ান ইতিহাস মানতে নারাজ।তাই তাদের কাছে এডিন জেকো একজন জাতীয়
বীর।জেকোর জন্ম যুগোস্লাভিয়ান সময়ে ১৯৮৬তে,দেশ স্বাধীন হলে ১৯৯৬এ স্থানীয় ক্লাব
জেলজেস্নিকারে যোগ দেয় বছর দশের এডিন।এরপর সামান্য ১৬বছর বয়সে দু-দুটো সিজনে ভালো
খেলার জন্য টেপলিসে সুযোগ পায় সে।জার্মান ক্লাব উল্ফসবুর্গ তার প্রতিভা দেখে মুগ্ধ
হয় এবং মাত্র উনিশ বছর বয়সে সে প্রথম বোসনিয়ান হিসেবে বুন্দেসলিগায় যোগ
দেয়।বুন্দেসলিগায় তার নিয়মিত ভালো প্রদর্শনের জন্য ম্যান্সিনির ম্যাঞ্চেস্টার সিটি
তাকে সাইন করায় ২০১১সালে,তারপর আগুয়েরোর পাশে অনবদ্য কয়েকটা সিজন এবং
প্রিমিয়ারলীগের খেতাব জয়।তার চাইতেও যেটা সবচাইতে বেশী গুরুত্বপূর্ণ তা হল এই
জেকোর হাত ধরেই একটা গোটা জেনারেশন বোসনিয়ান জাতীয় ফুটবল টিমকে ফুটবল মানচিত্রে
জায়গা করিয়েছে।
এরপর
সোল স্ট্রাইকার হিসেবে জেকোর গুরুত্ব বাড়তে থাকে।আগের মরসুমে এ.এস রোমা তাকে রেকর্ড অর্থ দিয়ে সাইন করায় এবং জেকো সিরি এ ও
চ্যাম্পিয়নস লিগের প্রায় প্রত্যেকটি ম্যাচে অসাধারণ প্রদর্শনীর জন্য হয়ে ওঠেন
রোমের তারকা।ফিরতি লেগে বার্সেলোনাকে হারিয়ে সেমিফাইনালে জায়গা করে নেওয়ার মূল
কারিগর জেকো আজ প্রতিটি বোসনিয়ানের ভালবাসার পাত্র।দেশের হয়ে সর্বাধিক গোলস্কোরার
জেকো দেশের মানুষের কাছে আত্মবিশ্বাসের আরেক নাম,তাদের কাছে হারানোর কিছু নেই।
মাত্র
বছর পঁচিশের দেশের ইতিহাস এভাবেই তৈরী হোক,প্রতিটি বোসনিয়ান শিশু ল্যান্ডমাইন্সের
সীমানা দেখে বল পায়ে ড্রিবল করতে শিখুক আর উঠে আসুক সীমানা ছাড়িয়ে।প্রায় শত বছরের
ক্ষত সারিয়ে এত দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠা সারায়েভো(সেরাজেভো) ঠিকানা হয়ে উঠুক আগামীর
এডিন জেকোদের।সবাই ফুটবলের ল্যান্ডমাইন হয়ে উঠুক।শুধু জেকো নয় স্পাহিচ,বেগোভিচ
অথবা পিয়ানিচরাও স্বপ্ন দেখাক এই অভাগা দেশকে।
No comments:
Post a Comment