ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098
Utsav Dutta এর ৬টি অনুগল্প


ইস্কুলে পড়ান উৎসব দত্ত বাবু। পড়াশুনা ইংরেজি সাহিত্য নিয়ে । লিটিল ম্যাগ ব্লগে নিজের খেয়াল মত লেখেন। নিজের ব্যাস্ততার থেকে ছাড় পেতে দেখতে ভালোবাসেন গান, সিনেমা, টিভি, সিরিজ। ফেসবুকে নিজের বায়ো তে লেখা 'You can't fit me in a straight jacket.'






ঠিক বিকেল পাঁচটা

এর চেয়ে লিভ ইন সম্পর্ক ভালো ছিল। কোন দায় দায়িত্ব বাঁধা ধরা নিয়ম ছিলনা অবাধ স্বাধীনতা। যেমন খুসি থাকো। মাঝখান থেকে হল কি একদিন হঠাৎ রিমা কে বিয়ে করে ফেলল ঋজু। বাড়িতে আপত্তি ছিলনা। বেশ ধুম ধাম করে বিয়ে হল।কিন্তু বিয়ের প্রায় দুবছর যেতে না যেতেই গোল বাঁধল। যে রিমাকে ঋজু ভালোবাসত সেই রিমা আসতে আসতে বদলে যেতে থাকল। রিমা বরাবরই একটু জেদি এবং পজেসিভ কিন্তু ভালোবাসায় কোনো খামতি ছিলনা। বিয়ের এই দুবছরে ভালবাসা যেমন ছিল তেমনি হাতাহাতি মারামারি পর্যন্ত হয়েছে। ঝগড়াঝাঁটি তো লেগেই থাকে। তাবলে এরকম সম্পর্ক নিয়ে টানাটানি কোনোদিন হয়নি। ঈশিতার ব্যাপারটা তো রিমা জানতোই। নতুন করে কি আর হওয়ার আছে। ওদের মধ্যে কোনোদিন বন্ধুত্ব ছিলনা শত্রুটাও ছিলনা।গাড়ি চালাতে চালাতে এই সব কথাই মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে ঋজুর। কাল রাতে জম্পেশ মদ খেয়েছে। ঘোর যেন এখনও কাটছেনা। দশটার মধ্যে অফিস ঢুকতে হবে গাড়িটা বেশ জোরেই চালাচ্ছে। এক একটা বাঁক এমন ভাবে টার্ন নিচ্ছে যেন এই বুঝি ধাক্কা খাবে। একসপ্তা হতে চলল রিমা ওর বাবার বাড়িতে চলে গ্যাছে। যথারীতি ফোন ধরছেনা। এবার একটা ব্যবস্থা করতে হয় কিন্তু ওর বাড়ি যাওয়া সম্ভব নয়।অফিসে ঢুকতেই নতুন মেয়েটা বলে গ্যালো 'স্যার আজ বিকেলে মিটিং আছে আপনি মনে করিয়ে দিতে বলেছিলেন।' কথাটা শুনেই যেন একটা ঘোর কাটল। এক্ষুনি কাজের জগতে ঢুকে যেতে হবে। ব্যাগ থেকে জলের বোতল আর মোবাইলটা বের করতেই রিমার মেসেজ 'ঠিক বিকেল পাঁচটায় গাড়ি নিয়ে চলে আসিস লং ড্রাইভে যাবো।'

_______________________

শুকিয়ে যাওয়া গলা 

গাড়ির হর্নের শব্দের সাথে ছেলের গলাটা শুনতে অসুবিধে হচ্ছিল।- কিরে কবে আসবি?- কোলকাতায় একটা কাজ আছে। সামনের সপ্তায় যেতে পারি। দুদিনের জন্য। তবে অফিসেই থাকতে হবে বাড়ি যাওয়ার সময় পাবোনা।- সেকি রে? তোর বাবা আর আমি তোর জন্য কবে থেকে অপেক্ষা করছি আসবি বলে? তোর জন্য রান্না করিনি কতো দিন। বাড়িতে বাবাকে একবার দেখে দিয়ে যাস অন্তত।- বললাম তো সময় পাবোনা। যাবো বলেও না যেতে পারলে কি লাভ?- আসলে তোকে তো অনেক দিন দেখিনি রে। খুব দেখতে ইচ্ছে করে।- তোমরা তো আমায় এই রকমই দেখতে চেয়েছিলে মোটা মাইনে নিয়ে বড় কোম্পানিতে চাকরি করব। বাইরে বাইরে ঘুরব। তখন কি একবারও জিগেস করেছিলে আমি কি চাইতাম?প্রায় এক মিনিটের নীরবতা। শুধু গাড়িটা হুশ হুশ করে বেরিয়ে যাওয়ার শব্দ।প্রায় এক বছর শয্যাশায়ী হয়ে যাওয়া বাবা ফোনটা কানের কাছে ধরে শুকনো গলায় বললেন- বাবু তোর মা আর আমি ভালো আছি রে। তোকে আর কষ্ট করে আসতে হবেনা। তুই মন দিয়ে কাজ কর।
___________________________

সিনেমার মতো

কমলিকা এর মধ্যে অন্তত বার'তিনেক বালিশ ছুঁড়েছে প্রতীকের দিকে। তুমুল ঝগড়া চলছে। গালি গালাজ খিস্তি খেউড় কিছুই বাদ যাচ্ছেনা। পাশের ফ্ল্যাটের জানলা দিয়ে লোকজন উঁকি মারার চেষ্টায় আছে। ঝগড়ার কারনটা ঠিক কি সেটা অবশ্য দুজনের কেউই জানেনা।বিছানায় প্রতীকের ল্যাপটপ আর অফিসের কিছু দরকারি কাগজ পত্র পড়ে আছে। কমলিকার নজর ওগুলোর দিকে পড়ার অর্থ সুনামি আসতে চলেছে। প্রতীক তাই আগেভাগে সাবধানবানী শোনাচ্ছে -'ঐ ভাবে মেন্টালি চ্যালেঞ্জ দের মতো তাকিয়ে থেকে লাভ নেই বাবু কোন আমার ল্যাপটপে হাত দিলে তোকে ছাড়বনা।''অনেক ন্যাকামো মেরেছো সোনা বউ পেটাবি তুই পার পাবি ভেবেছিস' কথাটা বলেই কমলিকা ল্যাপটপটা তুলে আছাড় মারতে যাবে ঠিক সেই মুহূর্তে প্রতীক কমলিকার দিকে ছুটে গিয়ে সজোরে একটা চড় মারল। কমলিকা ছাড়বার পাত্রী নয়। নখ দিয়ে প্রতীকের বুকে আঁচড়ে নিয়েছে।দুজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি চলছে। ঠিক সেই মুহূর্তে পাওয়ার কাট। ঘরের আলো নিভে গ্যাছে। এতক্ষণ কমলিকা প্রতীকের চোদ্দপুরুষ উদ্ধার করছিল। কারেন্ট যেতেই সব ভ্যানিশ।প্রতীক আর কমলিকা একসাথে থাকে প্রায় একবছর। বিয়ে করবে কিনা ঠিক নেই। কমলিকাকে হয়তো কমলিকা'র চেয়েও প্রতীক ভালো চেনে। তাই এই ঝগড়ার পরিনতি কি সেটাও আগে থেকেই প্রতীক জানত। তবুও তখনও ফোর প্লে তখনও চলছে -'কিরে থামলি ক্যানো আরশোলায় ভয় পেলি নাকি''ভালো হচ্ছেনা তুই থাম ভাল্লাগছেনা। আচ্ছা প্রতীক You know why don't they make a movie about what happens after they kiss' প্রতীক বলল 'They do its called porn'প্রতীক আর কমলিকার ঝগড়া সেদিন ওখানেই থেমে গ্যাছিল। তারপর যেটা হল পুরোটা সিনেমা'র মতো।

__________________________


মুখোমুখি

ডেনিম জিন্সের সাথে ব্ল্যাক টিশার্ট আর সানগ্লাসে নিলয়কে দেখলে যেকনো মেয়ে ফিদা হবে। ট্রেনে ফাঁকা সীট পেয়ে জানলার ধারে বসেছে নিলয়। সানগ্লাসটা খুলে বুকপকেটে ঢোকাতে যাবে হঠাৎ সামনের সিটে দুজন এসে বসললেন। স্বামী স্ত্রী। ভদ্রলোক নিলয়ের বয়সী কিম্বা একটু বড়ই হবে। একটা বড় ব্যাগ নিয়ে উঠেছেন। ব্যাগটা ওপরে বাঙ্কারে রেখে নিলয়কে জিগেস করলেন ট্রেন কখন ছাড়বে। নিলয় কোনো উত্তর না দিয়ে ভদ্রলোকের স্ত্রীর দিকে হাঁ করে তাকিয়ে। কোনো উত্তর নেই। ভদ্রলোক বেশ বিরক্ত হয়েই বললেন- কি দেখছেন ভাই?নিলয় ভদ্রলোকের স্ত্রীর দিকে চেয়ে উত্তর দিল- মিনি ক্যামন আছো?ভদ্রলোক এবার বেশ রেগে গিয়েই বলে বসলেন- এটা কি ইয়ার্কি হচ্ছে ভাই। পরস্ত্রীর সাথে ফাজলামো হচ্ছে।ইতিমধ্যে ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে। দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটিতে পাশের সীটের লোকজন এদিক ওদিক তাকাছে। নিলয় তখনো বলে যাচ্ছে -- মিনি আমায় চিনতে পারছনা? তুমি এতটা বদলে গেলে কি করে? যাকে ছাড়া তোমার এক মুহূর্তও কাটতোনা তাকেই তুমি ভুলে গেলে?ভদ্রলোক এবার মারমুখী মেজাজে তেড়ে গেলেন নিলয়ের দিকে। চলন্ত ট্রেনে তখন প্রায় হিমশিম অবস্থা। স্বাভাবিক ভাবেই সহযাত্রীরা কটূক্তি করতে শুরু করেছে নিলয়কে। নিলয় চুপ।এক সহযাত্রীর সহায়তায় ভদ্রলোক বউকে নিয়ে উঠে যাবেন জায়গা ছেড়ে ভদ্রলোকের বউ নিলয়ের দিকে তাকিয়ে। ভদ্রলোক প্রায় হাত ধরে টেনেই নিয়ে গেলেন পাশের সীটে।পরের স্টেশন আসতেই নিলয় নেমে গ্যালো। ভদ্রলোক মিনিকে জিগেস করলেন তুমি কিছু বললেনা ছেলেটাকে তোমায় এতক্ষণ বিরক্ত করে গ্যালো?মিনির বলল ওর নাম নিলয়। বাবা আমাদের বিয়ে দ্যায়নি। আমরা আর্ট কলেজে একসাথে পড়তাম। তারপর তোমার সাথে আমার সম্বন্ধ এসে গ্যালো।

________________________


মেঘের ছবি

একটা কফি শপে আলাপ। টল ডার্ক হ্যান্ডসাম। সবসময় কাঁধে ক্যামেরার ব্যাগ। ফোটো তোলা নেশা ছিল। তখন এখনকার মতো ডিজিটাল ক্যামেরা ছিলনা। অনেক ছবি তুলেছিল। সব ছবি ওয়াশ করে পাঠিয়ে দিত। খামের ওপর লেখা থাকতো "মেঘের ছবি"। নভেম্বর কি ডিসেম্বর হবে সেবার শীতে দাদুর বাড়ি শিলিগুড়ি বেড়াতে আসা একমাসের ছুটিতে। নীল কে দেখে ভালোলাগা। ওর সাথে কাটানো দিন। হাইওয়েতে বাইক রাইড, কাম্পফায়ার, গলা ছেড়ে গান গাওয়া, ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে একই ব্লাঙ্কেট জড়িয়ে ছেড়ে না যাওয়ার প্রমিস। একসাথে রাত কাটানো।নীলের তোলা ছবি গুলোর মতই সব ঘটনা এখনও ছবি হয়ে রয়েছে মেঘের মনের ক্যানভাসে। পুরোনো অ্যালবাম গুলো মেঘ উলটে পাল্টে দেখে যদি কোথাও নীলের ছবি থাকে। কিন্তু শুধুই মেঘ আর মেঘ। চল্লিশ পেরোনো মেঘের এক মেয়ে তিথি। মাইক্রো বায়োলজি নিয়ে পড়ে। মা মেয়ের বন্ধুত্বে ভাগ বসাতে আরও একজন আছে। যার কথা বললেই তিথি সব সময় এড়িয়ে যায় কিছু জিগেস করলে বলে "বিশেষ বন্ধু"। মেঘ বলেছে ওর সাথে আলাপ করিয়ে দিতে।মায়ের পুরনো অ্যালবাম গুলো তিথি দেখতে দেখতে বলছে 'মা তোমায় কি অসাধারন দেখতে ছিল ইশ আমি যদি তোমার মতো হতে পারতুম! কে তুলেছে গো এই ছবি গুলো? কি অপূর্ব লাগছে তোমায় কার তোলা ছবি গো কোনোদিন দেখাওনি তো আমায়।'মেঘ বলে 'তোর মতো আমারও একটা বিশেষ বন্ধু ছিল।'

__________________________

মনের কাছাকাছি

সহেলি আর রাজীব ছমাস হল একসাথে থাকে সামনের বছর বিয়ে করতে পারে নাও পারে দুজনেই খামখেয়ালি । কদিন ধরেই ভাবছে শপিংএ যাবে । অফিসের ব্যস্ততায় সারা হচ্ছিলনা। আজ প্ল্যান করা আছে অফিস থেকে আগে বেরোবে। সময় মতো ওরা চলে এসেছে। রাজীবের জন্য টি শার্ট পছন্দ করে দিয়েছে সহেলি আর দুটো ডেনিম জিন্স সাথে টুকটাক যা নেবার ছিল।
সহেলি ওর সেই প্রিয় বুটিকটায় ঢুকেছে। ডানদিকে সেই পরিচিত লোকটা। "ম্যাডম ক্যামন আছেন ? নতুন শাড়িগুলো দেখুন । ব্রান্ডেড। এগুল আমাদের এখানেই তৈরি । কদিন পর বাইরে চলে যাবে। "বেশ কয়েকটা পছন্দ হল। সহেলি শাড়ি গুলো নিয়ে ট্রায়াল রুমে এ চলে গেল। রাজীব চুপচাপ বসে আছে। দু একবার এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। রাজীবের একটা শাড়ি পছন্দ হয়েছিল একবার ভাবল সহেলি কে বলবে কিন্তু বলা হলনা।ট্রায়াল রুম থেকে বেরিয়ে এসে সহেলি "অ্যাই ক্যামন লাগছে ?"রাজীব আর কি বলে "খুব ভালো"। কিন্তু সহেলির মনোমতো হচ্ছেনা কিছুতেই। আরও বার পাঁচেক শাড়ি দেখা হল। রাজীবকে যথারীতি ডজ করতে হচ্ছে। প্রতিবার কি ভালো বলা চলে আবার খারাপ লাগছেও বলা যাবেনা। ফাইন্যালি পছন্দ হল। কিন্তু সহেলির কপাল খারাপ বুটিকের লোকটা জানালো ওটা Already Sold । কি করা যাবে অন্য শাড়ি নিতে হল। ফেরার পথে সহেলি রাজীবের ওপর রাগ দেখাল "তোমার জন্য এতো দেরি করে এলাম কদিন আগে এলে ওই শাড়িটা পেয়ে যেতাম।"বাড়ি ফিরে এক এক করে সব বের করা হচ্ছে। "একি! সেই শাড়িটা তো ! যেটা আমি পছন্দ করেছিলাম "অ্যাই রাজীব আমার পছন্দ করা শাড়িটা আমদের ব্যাগে এল কি করে? "রাজীবের ছোট্ট জবাব "আমি পছন্দ করে রেখেছিলাম তোমার ট্রায়াল দেবার আগে" ।
_________________________

মেইল করুন আপনার কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, বই-এর সমলোচনা, ফটোগ্রাফি, বিশ্লেষণ ও সিনেমা, ডিজিটাল আর্ট, খেলা-ধুলো - blogtog18@gmail.com-এ, সাথে পাঠাবেন আপনার Faceook Link এবং আপনার একটি ছবি। সাথে থাকুন ব্লগটগের। পড়ুন, পড়ান এবং ছড়িয়ে দিন।



No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098