- ঋদ্ধিমান
১৯৯৪ এর বস্টোনের ফক্সপোরর স্টেডিয়ামের সেই ম্যাচটা মনে পড়লেই ওই মানুষটাকেই মনে পড়ে। বাতিস্তুতা হ্যাট্রিক করেছিল। গ্রীস চারগোলে পর্যদুস্ত তবুও যে ৮৩ মিনিট তিনি মাঠে ছিলেন মনে হচ্ছিল যেন মাঠে ফুল ফুটে আছে। লোটস ইটাররা ছুটে আসছে । তারপরই সেই অদ্ভুত আঁধার। ম্যাচ শেষ হতে তখনও বোধহয় প্রায় আধাঘন্টা বাকি,ছটা পাসে বল সটান চলে এল গ্রীসের পেনাল্টি বক্সে। মারাদোনার ডান পায়ে বল,এরপর দুটো টাচ!চারদিকে তখন যেন শাঁখ বাজছে,কাঁসর বাজছে,ঠিক যেন পুজো হচ্ছে। এরপর গোওওওল!গোলকিপার সন্মোহিত,স্তব্ধ। সেটাই শেষ বারের জন্য ভগবান গোল করলেন। সারা স্টেডিয়াম,সারা আর্জেন্টিনা,সারা বিশ্ব শেষবারের মতন চিৎকার করে উঠল “ভামোস মারাদোনা”। ৮৩ মিনিটের মাথায় যখন মাঠ ছাড়ছেন,চোখ রক্তিম ছলছলে। ক্যামেরার সামনে তখন এডুয়ার্ড মুখের স্ক্রীম জীবন্ত হয়ে উঠেছে মারাদোনার চিৎকারে। তখন তো হতভাগ্য ফুটবল প্রেমিক জানে না রাজপুত্র নির্বাসনে যাচ্ছেন। এরপর নাইজেরিয়ার ম্যাচে মাঠে ছিলেন মারাদোনা, তারপরই সেই দুঃসংবাদ আছড়ে পড়ল। ডোপ করেছেন। দেবতা স্বয়ং অভিশপ্ত। হাউহাউ করে কেঁদেছেন। সাজা মুকুপ হয়নি। নির্বাসিত হলেন রাজপুত্র। আর মাঠে নীল সাদা জার্সিতে তাকে দেখবো না ভেবে সেদিন খুব কষ্ট হয়েছিল।
৮২র মারাদোনাকে দেখিনি। ৮৬র মারাদোনা যেন গল্পের মতন। রূপকথা। হ্যান্ড অব গড ইউ টিউবে যখন দেখেছি,গায়ের রোম খাঁড়া হয়ে যায়। ৯০তে জার্মানি আটকে দিল ভগবানের স্বপ্ন। কিন্তু একটা গোটা প্রজন্মের কাছে নিজে হয়ে গেলেন স্বপ্নের ফেরিওয়লা। ফুটবল মানেই ওই বেঁটে মানুষটা। পেলে কে দেখিই নি,তাই মনে মনে ওই লোকটাকেই ফুটবলের নেপোলিয়ান মেনেছিলাম। দল হিসাবে জার্মানি কে সাপোর্ট করার কারনও মারাদোনা। যারা ওই লোকটাকে আটকাতে পারে তারাই সেরা। আর্জেন্টিনা নিয়ে আদিখ্যেতা ছিল না কোনদিনই তবু ওই মানুষটির জন্যই নীল-সাদা জার্সিটার প্রতি আগ্রহ তৈরি হয়েছিল।
আজ মারাদোনা নেই তবু ভীষন ভাবে আছেন। আর্জেন্টিনা কে কোচিং করিয়েছেন,সমস্ত আবেগ ঢেলে দিয়েছিলেন,হয়ত পারেন নি ,তবুও তিনি আমাদের সকলের রাজপুত্র। মেসিরা বিশ্বকাপ পেলে তিনি কিভাবে রিঅ্যাক্ট করবেন ভাবলেই রোমাঞ্চিত হয়ে যাচ্ছি। মেসি গতবার পারেন নি ,এবারেও পারবেন কিনা জানি না। ক্রুয়েশিয়ার কাছে ওই ভাবে তিনগোল খাওয়ার পরও মেসির ডান পা বাঁচিয়ে দিয়েছে। সামনে এবার পোগবা ,গ্রীসম্যান। উতরে গেলেও কঠিন লড়াই সামনে। এরপর উরুগুয়ে ,ব্রাজিল বা বেলজিয়াম কঠিন সব প্রতিদ্বন্দ্বী। মেসির হাতে যদি কাপ ওঠে তবে মারাদোনা হয়ত আনন্দিত হবেন,শিশুর মতন উল্লাসিত হবেন নির্বাসিত রাজপুত্র কিন্তু কোথায় যেন লুকানো দুঃখ থেকেই যাবে। মারাদোনার পাশে এসে দাঁড়াবেন মেসি। তবে পার্থক্যটা মিটবে কি আদৌ?
No comments:
Post a Comment