-সৌম্যদীপ মৈত্র
আজকাল বেশিরভাগ ফুটবলারের জীবনই অনেকটা পরিযায়ী বন্য পাখিদের মতোন।কোথাও স্থির হয়ে থেমে থাকেনা।দেশ থেকে দেশান্তরে তারা কখনো নিজের প্রয়োজনে আবার কখনো কিছুটা বাধ্য হয়েই ঘুরে বেড়ায়।পাখির মতোন পিছুটানহীন স্বাধীনভাবেই বাঁচতে চায় তারা।ইচ্ছেমতো নীল আকাশের বুকে ডানা মেলে উড়তে চায় নিজের আপন খেয়ালে।
সেইজন্যেই হয়তো একই দাঁড়ে বসে নিশ্চিন্তভাবে সারাজীবন কাটিয়ে দেওয়ার পোষা পাখি থেকে বরাবরই এরকম অ্যাডভেঞ্চার বিলাসী বন্যপাখিরাই আমাকে চারিত্রিক দিক থেকে বেশি আকর্ষণ করেছে।
ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডোও ঠিক এরকমই একটা বন্য পাখি।যে কখনো কোনো নির্দিষ্ট একটা বাঁধা জায়গায় সারাজীবন থাকেনি বা থাকতে পছন্দ করেনা।ফুটবলের নতুন নতুন শৃঙ্গজয় বা নতুন নতুন অ্যাচিভমেন্টের তাড়না তাকে কোনো একটা ক্লাবের প্রতি আজো কৃতজ্ঞ করে রাখলোনা।
টেকনিক্যালি বলবো ক্রিশ্চিয়ানোর জুভেন্টাসে যাওয়া একদম ঠিক সিদ্ধান্ত।নতুন করে হয়তো ওর কোনো সাফল্যই আর পাওয়ার নেই।ফিফা বিশ্বকাপ ছেড়ে আর বাকি যা যা সাফল্য সে সবই পেয়ে গ্যাছে ক্রিশ্চিয়ানো।চ্যাম্পিয়ন্স লীগ থেকে শুরু করে ক্লাব ফুটবলের বাকি সব বড়ো বড়ো ট্রফির উইনিং মেডেলই ওর ড্রয়িংরুমের ট্রফি ক্যাবিনেটে আছে।দুটো আলাদা আলাদা দলের হয়ে ব্যালন জেতার বিরল কৃতিত্ব আছে ক্রিশ্চিয়ানোর।বিশ্বফুটবলে এটা যে কতোটা কঠিন কাজ সেটা বোঝার জন্যে ফুটবল বিশেষজ্ঞ হওয়ার বদলে আমার মতো একজন সাধারন ফুটবলপ্রেমী হলেই চলে।নতুন দলে মানিয়ে নিয়ে সেখানে অভূতপূর্ব সাফল্য পাওয়াটা ওর এখন প্রায় অভ্যাসের পর্যায়ে।রিয়েলের মতো দলের সমর্থকদের প্রত্যাশার অমানুষিক চাপ দীর্ঘ নয় বছর ধরে সামনে থেকে দলের পোস্টার বয় হয়ে সামলানোটা মুখের কথা নয়।
কিন্তু ফুটবলটা যে ওই তেত্রিশ বছর বয়সী অহঙ্কারী লোকটার মধ্যে এখনো পূর্ণমাত্রায় বেঁচে আছে সেটা ওর রিয়েল মাদ্রিদের মতো তারকাখচিত নিরাপদ দল নিজের ইচ্ছেতে ছেড়ে দেওয়ার ফলেই বোঝা যায়।
এবার জুভেন্টাসকে দলগত সাফল্য দেওয়ার পাশাপাশি লোকটার নিজের ব্যক্তিগত লক্ষ্য হয়তো আরেকটা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ অথবা সাদাকালো জার্সীতে আরেকটা ব্যালন!!
সে যাই হোক লোকটার সাফল্যের খিদে যে এখনো শেষ হয়নি এই দলবদল সেটারই একটা পরিষ্কার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
কারন লোকটা যে হারতে শেখেনি লোকটা যে থামতে জানেনা।
আর মাদ্রিদ সাপোর্টাররা হয়তো শুধু ক্রিশ্চিয়ানোর জন্যে জুভেন্টাসের খেলা দেখলেও দিনের শেষে সমর্থনটা শেষমেষ রিয়েলমাদ্রিদকেই করবে।"ফ্যানবয়" কালচারে বিশ্বাসী না হলেও এটা অবশ্যই জানি বা মানি যে কোনো একটা বিশেষ ফুটবলারের জন্যেই লোকে একটা বিদেশী ফুটবল ক্লাবের সমর্থক হয়।স্বদেশী কোনো ক্লাবের প্রতি সমর্থন তাদের ঐতিহ্য বা উত্তরাধিকার সূত্রে বা অন্য নানা কারনে আসলেও বিদেশী ক্লাবের প্রতি সমর্থনটা কোনো নির্দিষ্ট ফুটবলারকে কেন্দ্র করে আসে(বিশেষ কিছু ব্যতিক্রম ছেড়ে) বলেই আমার বিশ্বাস।আমার বয়সী বা আমাদের গোটা প্রজন্মটা যেমন কেউ ব্রাজিলের রোনাল্ডো বা এল ফেমোনেনন,রবার্তো কার্লোস অথবা জিনেদিন জিদান বা বেকহ্যামকে দেখে আজ পর্যন্ত রিয়েলমাদ্রিদের সমর্থক।
বাকি রইলো রিয়েলমাদ্রিদ ম্যানেজমেন্ট!!!
এই মুহূর্তে বিশ্বের সেরা ক্লাবের(তিনটে পরপর চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জিতেছে বলে আনডাউটেডলি সেরা) ম্যানেজমেন্টের পক্ষে রোনাল্ডোর ইচ্ছেতে সীলমোহর দেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা।অবশ্যই রোনাল্ডোর বিদায়টা জাঁকজমকভাবে হতেই পারতো কিন্তু রাজা যেখানে নিজেই মুকুট খুলে সবার অলক্ষ্যে স্বেচ্ছায় সাম্রাজ্য ছেড়ে চলে যায় সেখানে হতভাগ্য সাম্রাজ্যবাসীর তার জন্যে দুচোখ ভেজানো ছাড়া কিইবা আর করার থাকতে পারে!!!!
আর হ্যাঁ রিয়েলমাদ্রিদ নিষ্ঠুর রুথলেস ক্লাব বলেই আজকে ওদের ট্রফিরুমে তেরোটা চ্যাম্পিয়ন্স লীগের ট্রফি।আর ওসব লা-লিগা,কোপা-দেল-রে,ক্লাব ওয়ার্ল্ড কাপ এসব না হয় বাদই দিলাম।ক্লাবটা আবেগ ধুয়ে জল খায়না বলেই এখনো,
প্রতিষ্ঠার এতো বছর পরেও স্বমহিমায় নিজের জায়গাটা ধরে রেখে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে।
যেখান থেকে শুরু করেছিলাম সেখান থেকেই শেষ করি লেখাটা।ক্রিশ্চিয়ানো দাঁড়ে পোষমানা সভ্য চকচকে পলিশড ভদ্র চৌখশ টিয়াপাখির বদলে বন্য হিংস্র বাজ হয়েই স্পেন থেকে ইতালি উড়ে যাক।
যাও ক্রিশ্চিয়ানো উড়তে দিলাম তোমাকে
খুঁজে নিয়েছো তুমি ইতালিতে নতুন বাসা
জানি সেখানেও সাফল্য পাবে তুমি
একটুও কমবেনা তোমার জন্যে ভালোবাসা
বিদায় ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো
দীর্ঘ্য নয় বছর ধরে সফলভাবে সান্তিয়াগো বার্নাবিউ সামলানোর জন্যে তোমাকে অজস্র ধন্যবাদ ক্যাপ্টেন।
এবার জুভেন্টাসের নতুন সফল জীবন শুরু করো।
রিয়েলমাদ্রিদ সমর্থক হিসেবে আমি এবং আমাদের নিঃস্বার্থ ভালোবাসা সারাজীবন তোমার সঙ্গে থাকবে।
চরৈবতী ক্রিশ্চিয়ানো।
সামনে থেকে বুকচিতিয়ে নেতৃত্ব দেওয়া একজন অকুতোভয় ক্যাপ্টেন
No comments:
Post a Comment