ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098
                                                     


আপনি শেষ কবে মন প্রাণ খুলে হেসেছেন মনে করতে পারেন? বা কাউকে কি হাসিয়েছেন, জানি আপনার উত্তর টা না, ভাবছেন অত সময় কোথায় যে নিজে মন প্রাণ খুলে হাসবো তার উপর আবার অন্যকেও হাসানো ,সেটা নিজেই বড় একটা হাস্যকর ব্যাপার কিন্তু আমাদের দৈনন্দিন জীবন থেকে হাস্যকৌতুক কে মুছে ফেললে চলবে না সে যতই আমরা রামগরুড়ের ছানা হইনা কেন।

আচ্ছা আপনি ভজহরি মুখার্জি কে চেনেন? কিংবা গোপাল চন্দ্র ভাণ্ডারী বা ধরুন মহেশ দাস? চিনে যাবেন যদি আমি এই তিনটে নাম বলি টেনিদা, গোপালভাঁড় আর বীরবল, আশাকরি এবারে আর চিনতে অসুবিধা হোলনা। কি অসম্ভব ভালো এনাদের রসবধ ছিল। সমস্ত কাঠিন্যকে হাঁসির মোড়কে মুড়িয়ে ছড়িয়ে দিয়েছিল মানুষের ভিতরে। আসুন আজ তাঁদেরকে নিয়ে একটু বিস্তারিত ভাবে জানার চেষ্টা করি।

গোপাল ভাঁড়ের জন্মস্থান জলঙি নদীর ধারে অবস্থিত বাসস্থান ঘূর্ণিতে,  অনেক অল্প বয়েসেই তাঁর পিতৃবিয়োগ হয়। শোনা যায় তাঁর মাকে সতীদাহ করা হয়। ছোট থেকেই তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন ছিলেন। নিজের বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়ে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের রাজসভায় এক  অনবদ্য জায়গা করে নেয় গোপাল, যিনি পেশায় ছিলেন একজন নাপিত। সমস্ত প্রতিকূলতাকে জয় করে গোপাল হয়ে ওঠে রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের  সভার নবরত্নের একটি রত্ন। সমস্ত বিপদে আপদে নিজের বুদ্ধি দিয়ে রাজাকে রক্ষা করে গিয়েছেন। গোপাল ভাঁড়ের  কীর্তিকলাপের উপড়ে কম করে হলেও ৪০০ টা গল্প আছে , যা আমাদের বাংলা সাহিত্যর সম্পদ।

তেমনি একটা ছোট্ট গল্পের উল্লেখ না করলেই নয়।

 মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র আর গোপালের মধ্যে মাঝে মাঝেই একটু আধটু খুঁটিনাটি বেধে যেত। একবার গোপালের সঙ্গে মহারাজের একটা কথা নিয়ে মনের গরমিল হোল। বহুদিন পর্যন্ত গোপালের সঙ্গে মহারাজ আর কথা বলেন না। কেউ কোন কথা জিজ্ঞেস করলে বলতেন ---- আমি আর গোপালের মুখ দেখব না।



একদিন গোপাল রাজসভায় এসে মহারাজের দিকে পিছন ফিরে বসে আছে। মহারাজ বললেন , গোপাল! আমি তোমার মুখ দেখব না, তবু তুমি আমার সভায় এসেছ কেন?  গোপাল বললে - আজ্ঞে, আপনি তো বলেছিলেন আমার মুখ দেখবেন না। সেজন্য আপনাকে মুখ না দেখিয়ে পশ্চাৎ ফিরে বসে আছি। ভাবুন কি রসবোধ ছিল এনার মধ্যে। আর একটা ছোট নিদর্শন দেওয়া যাক।

একবার মহারাজা কৃষ্ণচন্দ্রের গোপাল তাঁর শ্বশুরবাড়ি গিয়েছিল। গোপাল বেশ ভালোরকম পোশাক-পরিচ্ছদ পরেছিল। গায়ে একখানি বহুমূল্য চিড়িয়া বুটিদার শাল ও ছিল। মহারাজের শ্যালক সম্পর্কীয় কোন লোক রসিকতা করে গোপালকে বললে - "কি হে গোপাল, তুমি যে চিড়িয়ার গোলাম সেজে এসেছ? গোপাল প্রত্যুতর দিল হ্যাঁ, এবার বিবি তরুপ করে গোলামকে ধরে নিন।"

                                      

গোপাল ভাঁড়ের অস্তিত্ব আছে কি নেই সেই নিয়ে অনেক মতান্তর আছে ঠিকই কিন্তু সেই দিকে বিশেষ কর্ণপাত না করে বরং আমরা এগিয়ে যাই আর একজনের কাহিনী তে, মহেশ দাস অর্থাৎ বীরবলের গল্পে।
মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট আকবরের নবরত্নের একটি রত্ন ছিলেন রাজা বীরবল। এই দরিদ্র ব্রাহ্মণটি জন্মেছিলেন মধ্যপ্রদেশের সিধি জেলায় যা যমুনা নদীর কাছে অবস্থিত। প্রখর জ্ঞান ও বুদ্ধির অধিকারী এই মানুষটি খুব অল্প দিনের মধ্যে সম্রাট আকবরের প্রিয় মন্ত্রী ও বিদূষক হয়ে ওঠেন। যখন দিন-ই-ইলাহি প্রতিষ্ঠা হয়, তার একমাত্র হিন্দু সদস্য ছিলেন বীরবল। সম্রাট ও বীরবলের প্রথম সাক্ষাতকারটি বেশ উল্লেখজনক, সেটা কিভাবে তা একটু বলি।

সম্রাট আকবরের শিকারের শখ ছিল, একদিন তিনি ও তাঁর সভাসদরা শিকারের জন্য বেরোয়। সম্রাট ও আরও কয়েকজনের গতিবেগ এতটাই তীব্র ছিল যে অনেকেকে পিছনে ফেলে তাঁরা এগিয়ে যান। যত সন্ধে হয়ে আসে তাঁদের খিদে ও তৃষ্ণাও তত বাড়তে থাকে। এবং তাঁরা এইটাও উপলব্ধি করে যে তাঁরা পথ হারিয়ে ফেলেছে। অবশেষে কিছুটা এগিয়ে তাঁরা তিন রাস্তার মোড়ের মাথায় আসে। দিশা খুঁজে পেয়ে সম্রাট তো বেশ খুশি, এর মধ্যেই কোন একটা পথ আগ্রার দিকে যায়।(আগ্রা তখন মুঘল সাম্রাজ্যের রাজধানী) কিন্তু কোনটা যায় সেটা তো কারুর জানা নেই। এ তো খুব মুশকিল হোল। ঠিক সেই সময় সম্রাট দেখতে পান একটি যুবক তিনটে পথের একটা পথ ধরে এগিয়ে আসছে। সম্রাট যুবকটি কে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আচ্ছা কোন পথটা আগ্রার দিকে যাচ্ছে বলতে পারো?’ শুনে যুবকটি জবাব দিল হুজুর এতো সকলেই জানে যে পথ কখনও চলতে পারে না তাই আগ্রা কেন এই পথ কথাও যাবে না বলে যুবকটি হেঁসে ওঠে। তখন যুবকটি আরও বলে যে মানুষ চলে পথ নয়। এই শুনে আকবর খুব খুশি হয়ে হেঁসে ওঠেন এবং যুবকটির পরিচয় জানতে চায়, যুবকটি নিজেকে মহেশ দাস বলে পরিচয় দেয়। সে নিজেও সম্রাটের পরিচয় জানতে চায়। আকবর নিজের পরিচয় দেন এবং যুবকটিকে নিজের অঙ্গুলি থেকে খুলে সোনার আংটিটি দান করে দেখা করতে বলেন সেই আংটি সমেত যেটা পরিচয়পত্র হিসেবে গণ্য করা হবে। অবশেষে যুবকটি আগ্রা যাওয়ার পথটি সম্রাটকে দেখিয়ে দেয়। আশাকরি এখন আর বুঝতে বিশেষ অসুবিধা নেই যে এই যুবকটি আর কেউ নয় স্বয়ং বীরবল। এইভাবেই পরিচয় ঘটেছিল আকবর ও বীরবলের।



বীরবলের বুদ্ধির পরিচয় পাওয়া যায় আর একটা হাস্যকৌতুকর মাধ্যমে। একবার এক বিদুষী ভদ্রলোক রাজদরবারে হাজির হলেন। তিনি সমস্ত ভাষাতে ছিলেন পারদর্শী। তিনি দাবী করলেন যে কেউ তাঁর মাতৃভাষা কি বলতে পারবেনা। সম্রাট বীরবলকে বলেন এর উত্তর খুঁজে বার করতে। বীরবল তখন ফন্দি আঁটলেন কি করে এর সমাধান করা যায়। নানাভাবে প্রচেষ্টা করেও যখন অসফল তখন শেষ একটা ফন্দি আঁটলেন, যেমন ভাবা তেমন কাজ লোকটি যখনই দরজা দিয়ে প্রবেশ করল বীরবল নিজের পা টা বাড়িয়ে দিতেই লোকটি হোঁচট খেয়ে হুরমুরিয়ে পড়ে যায় এবং রেগে গিয়ে নিজের মাতৃভাষায় অভিশাপ দিতে লাগল। ব্যাস জানা হয়ে গেল ওঁর মাতৃভাষা। এবং ঐ লোকটার দাবীকে এইভাবেই নস্যাৎ করা হোল।


এহেন বীরবলের মৃত্যুতে সম্রাট এতোটাই শোকাহত হয়ে গিয়েছিলেন যে তিনি খাবার খাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলেন দুটো দিনের জন্য। তিরিশ বছরের দীর্ঘ সম্পর্ক এইভাবেই ইতি হোল।

দুঃখের মাঝেও আনন্দকে খুঁজে নিতে হয়, আর সেই আনন্দ আমরা খুঁজে পাবো বিভিন্ন হাস্যকৌতুকের মাধ্যমে। এইবারে যার কাহিনী বুনতে চলেছি সে এক বিশেষ সৃষ্টি লেখকের। নাম ভজহরি মুখার্জি অরফ টেনি। আমাদের সকলের প্রিয় টেনিদা।



দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর আগে অর্থাৎ ১৯৪৬এর মার্চ মাসে নারায়ণ গঙ্গোপাধ্যায় পটলডাঙ্গায় বাড়ি ভাড়া করে ওঠেন। সেখানে তাঁর বাড়িঅওালার নাম ছিল শ্রী প্রভাত মুখোপাধ্যায় ওরফে টেনিদা। তাঁদের দুজনের মধ্যে অসম্ভব সখ্যতা ছিল এবং স্রেফ মজার ছলেই নারায়ণ বাবু টেনিদাকে নিয়ে দুটো গল্প রচনা করেন, মৎস্য-পুরাণ আর খাট্টাঙ্গ ও পাল্লান্ন। এরপর ধীরে ধীরে ক্যাবলা ও হাবুলের চরিত্র যোগ হয়।

টেনিদার চরিত্র নিয়ে যদি কিছু কথা বলা যায় তাহলে মন্দ হয়না। চারজনের তৈরি দলের মূল মাথা বা সভাপতি ছিল এই টেনিদা। বাকিরা যথাক্রমে প্যালারাম, ক্যাবলা ও হাবুল। উচ্চতায় ছয় ফুট দুই ইঞ্চি, লম্বা নাসিকা, রোগাটে গড়ন। পড়াশোনায় বিশেষ সুবিধে করে উঠতে না পারা টেনিদার উপস্থিত বুদ্ধি ছিল বেশ তীক্ষ্ণ, এবং তার সঙ্গে ছিল সৎ সাহস। কিন্ত টেনিদা বিখ্যাত তার ভোজনরসিক স্বভাবের জন্য ও তার মুখে মারিতং জগতের জন্যে এবং তা দিয়ে সুন্দর সুন্দর গল্প ফাঁদার জন্যে। যেমন টেনিদার  কেরামতিতে আমরা পরেছি কিভাবে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে টেনিদা জাপানি মেরেছিল। আবার বিচিত্র চার মূর্তিতে কিভাবে টেনিদা পকেট মাড়ের পক্ষপাতিত্য করেছিল।।


এইভাবেই চলতে থাকে গোপাল,বীরবল বা টেনিদার হাস্যকৌতুকের নিদর্শন।

কিন্তু গোপাল ভাঁড়, বীরবল বা টেনিদার গল্পের অস্তিত্ব অনেকটাই খীন হয়ে আসছে। আগে বাচ্চাদেরকে তাঁদের গল্প শুনিয়ে ঘুম পারানো হতো, কিন্তু এখন সেসব বিশেষ হয়না কারণ মোবাইল ও কম্পিউটার অনেকটা সময়ই দখল করে নিয়েছে। তাই কথাও এঁদেরকে বাঁচিয়ে রাখা আমাদের কর্তব্যের মধ্যেই পরে, যাতে আমাদের আগামী প্রজন্ম এঁদেরকে পড়ে বড় হতে পারে এবং হাস্যকৌতুকের রসে বশে থাকতে পারে আজীবন।

No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098