ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098


রুপকথার গল্প আমরা অনেকেই পড়ি, নায়কদের অবিশ্বাস্য কাজকর্মে শিহরিতও হই,কিন্তু বাস্তবজীবনে সেই রুপকথার প্রতিফলন হতে দেখলে তখন বাস্তবের হিরোদের দিকে তাকানোর বদলে আমরা সবার আগে বেছে নিই চটকদার মশলা নাটুকে চরিত্রদের। এই দেখুননা কোথাকার কোন মাইতি যাকে নিজের ক্লাবের লোকেরাই ভালো করে চেনেনা,তাঁর কথায় কুয়েসকে লোকে মেল করলে ক্লাব উঠে যাবে এসব নিয়ে আমরা ভাবিত হয়ে পড়লাম।প্রতিদিন একটা করে স্টেটাস দিতে শুরু করলেই চারদিক থেকে সবাই দায়িত্ব নিয়ে হামলে পড়ছে স‍্যান্ডি সাহা-হিরো আলম,আরজে চৈতালীর পর এই সময়ে মার্কেটে সবথেকে বেশি বিক্রি হওয়া মাইতির গুরুবানী ছড়িয়ে দিতে।যেন ওই ম‍্যাসেঞ্জারে আসা ভবিষ‍্যতের সফলতার মন্ত্র দশজনকে পাঠান পরশুদিন রাতে ভালো খবর আসবে।প্ররোচনার বার্তা ছড়ানো এই ধরনের চরিত্রগুলিকে সম্পূর্ণ বয়কট করে পারলে একবার তাকাননা হিন্দু-মুসলিম বৈরিতার ধুয়ো বেচে খাওয়া রাজনীতির কারবারীদের মুখে দু-থাপ্পড় কষিয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে একটা নতুন স্বপ্নের আলো দেখানো সন্দীপ চাট্টু ও শামিম মেহরাজের দিকে।হোটেল ব‍্যবসায়ী সন্দীপ ও পারিবারিক পত্রিকা চালানো শামিমের যুগলবন্দী শুরু কাশ্মীরে বন‍্যাদুর্গতদের জন‍্য লঙ্গরের মাধ‍্যমে।দুবছর বাদে কাশ্মীরের উঠতি প্রজন্মকে পাথর ছোঁড়ার কাজ থেকে মুক্তি দিয়ে ফুটবলের পথ দেখাতে  রিয়েল কাশ্মীরের সুচনা করার পর আজ বাকিটা সত‍্যিই রুপকথা।ক্লাব শুরুর ছমাসের মধ‍্যে   লেজেন্ড ম‍্যান ইউ ম‍্যানেজার স‍্যার অ্যালেক্স ফার্গুসনের সুযোগ‍্য ছাত্র ডেভিড রবার্টসনকে কোচ করে আনা,নিজেদের প্রথম প্রতিযোগিতা ডুরান্ড কাপ খেলতে প্রস্তুতি নিতে স্কটল্যান্ডে প্রতিনিধিদল নিয়ে চারটে ম‍্যাচ খেলে আসা এসব চিন্তাভাবনা শুরুর দিন থেকে যাদের মস্তিষ্কপ্রসুত রুপকথা তাদের কাছে বশ মানবেনা এটা হতে পারে কি??
শেয়ার করতে চাইলে করুন বিখ‍্যাত ক্লাব রেঞ্জার্সে রেকর্ডসংখ‍্যক ট্রফি জেতা মানুষটার কথা।কাশ্মীরে কাটানো প্রথমদিনগুলোয় ক্রমাগত লোডশেডিং,ইন্টারনেট ব‍্যবহারে হঠাৎ হঠাৎ অযাচিত নিষেধাজ্ঞায় বাড়ির লোকের সাথে যোগাযোগ বন্ধ, রাস্তায় কার্ফু দেখে বিধ্বস্ত হয়ে ফিরে যেতে চাওয়া মানুষটা আজ কাশ্মীরেই থেকে যেতে চান আজীবন।কে বলে কাশ্মীর অশান্ত,কাশ্মীরে প্রানের সংশয়??এই কবছরে একজন ভিনদেশীর চোখে কাশ্মীরের সাধারন মানুষের ছবিটা একদম পরিস্কার ভাবে ফুটে ওঠায় পুত্র ম‍্যাসনকেও নিয়ে আসছেন এই "অশান্ত' কাশ্মীরে।কোন বাবা চায় তাঁর পুত্রকে বিদেশের উন্নত পরিকাঠামো,ভবিষ‍্যত ছেড়ে একটা অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে??ডেভিড পেরেছেন কারন শামিমদের মাধ‍্যমেই আম কাশ্মীরীদের সাথে মিশে তিনি এটুকু বুঝতে পেরেছেন পাথর ছোঁড়ার প্রবনতাটা মুষ্টিমেয় কিছু মানুষের মস্তিষ্কপ্রসুত,একটা বড় অংশই নিজেদের সংস্কৃতি, উৎসব,রকমারি পোষাক, ডাল লেক,শিকারা নিয়ে আনন্দের সাথে জীবন কাটাতে চান।এই পরিবেশের স্বাক্ষী হতে এইমাসের শেষের দিকেই স্ত্রী, কন‍্যা সমেত পুরো রবার্টসন ফ‍্যামিলি হাজির হতে চলেছে শ্রীনগরের টিআরসি টার্ফ গ্রাউন্ডে উপস্থিত থেকে সাধারন কাশ্মীরিদের সাথে আরো একটা রুপকথা লিখতে।ডেভিড এখনো ধন‍্যবাদ দিতে চান শামিমকে সেই থেকে যেতে বলার কাতর অনুরোধের ফোনকলের জন‍্য। আইলিগ অভিযানের পাশাপাশি চাইনিজ লিগের দুটি,স্কটল‍্যান্ডের একটি ও ইপিএলের একটি ক্লাবের ইউথ ডেভেলপমেন্টের অফার ছিলো ডেভিডের কাছে এবছরে।সব ফিরিয়ে দিয়েছেন একটা বাস্তবের রুপকথার যথার্থ পরিসমাপ্তি ঘটাতে চান বলে।
ছড়িয়ে দিতে পারেন আরো এক ভিনদেশীর কথা।ভারতীয় ফুটবলে তাকে বেদুইনই বলা যেতে পারে।রয়‍্যাল ওয়াহিংডো থেকে আইজল,মালাবার ইউনাইটেড থেকে রিয়েল কাশ্মীর সবদলগুলোকেই আইলিগের মুলপর্বে তুলে আনার লড়াইতে ছিলেন তিনি।অনেক দল সাফল‍্য পেলেও পরের মরসুমেই চলে গেছেন তিনি অন‍্য কোন দলে আইলিগ দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলে মুলপর্বে তুলে আনার লড়াইয়ের শরিক হতে।কাশ্মীরের প্রেমে পড়ে যাওয়া নাইজেরীয় লাভডে এনিনায়া রিয়েল কাশ্মীরকে নিয়েই নতুন স্বপ্ন ঠিক করে ফেলেছেন।শুরুর দিনগুলোর ঝামেলা,কার্ফুবিধ্বস্ত শহরে হেঁটে বেড়ানোর সময় সাধারন কাশ্মীরিদের তাকে নিরাপদে বাসস্থানে পৌছে দেওয়া,উৎসবে শরিক করে নেওয়া,দলের প্র‍্যাকটিসে এসে  কাশ্মীরের স্পেশাল মেনু খাইয়ে যাওয়ার দিনগুলোর কথা মনে রেখেই দলনায়ক লাভডে প্রথম বছরেই ভারতীয় ফুটবলে স্মরনীয় করে রেখে দিতে চান রিয়েল কাশ্মীরকে।
কি করে ভুলে যেতে পারেন সারাবছর সামাজিক পরিবেশ,আবহাওয়া ও বিচ্ছিন্নতাবাদীদের কুমন্ত্রণাকে চুরমার করে ফুটবলকে ভালোবাসা কাশ্মীরী ফুটবলারদের। প্র‍্যাকটিসের সময় হঠাৎ শুরু হওয়া অশান্তির কারনে কার্ফু ঘোষনা হয়ে গেলে ওই অবস্থাতেই ছুটে গিয়ে রাস্তায় দাঁড় করানো সাইকেল, মোটরবাইক লুকিয়ে রাখতে হয়েছে দানেশ ফারুক,বসির ,খালিদ কায়ুমদের যাতে অশান্তির কবলে পড়ে তাঁদের বাড়ি ফেরার মাধ‍্যমটুকু কেউ জ্বালিয়ে না দেয়।কার্ফুর দিন লুকিয়ে লুকিয়ে সেনাবাহিনী ও বিচ্ছিনতাবাদীদের নজর এড়িয়ে অলিগলি দিয়ে পালিয়ে বহুদিন টিমের জিম সেশন,ফিজিকাল ট্রেনিংয়ে যোগ দিয়েছেন তাঁরা।এই লড়াই সহজে অস্বীকার করা যায় কি??
এতো কষ্টের মাঝে একটুকরো প্রানোচ্ছল হাসিও আছে।কাশ্মীরিদের প্রিয় খাদ‍্য গুস্তাবা (মশলা চিকেন বল কারি) প্লেয়ারদের খেতে মানা করার অপরাধে কোচকে হিন্দি শেখানোর নামে গালাগালি শিখিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনাও প্লেয়ারদের মাথা থেকেই বেরিয়েছে।কোচের দেখাদেখি বাকি বিদেশীরাও মানে না জেনেই প্র‍্যাকটিসে আউরে যাচ্ছেন সেইসব বিশুদ্ধ হিন্দি গালি আর শুনে মজা নিচ্ছেন দলের ভারতীয় ব্রিগেড এই আনন্দও তো সীমাহীন।
এই সবকিছুর মাঝেই সবথেকে বড় খবরটা কি জানেন??অ্যাডিডাস কিট স্পনসর করলেও এখনো পর্যন্ত কোনো মেন স্পনসর নেই রিয়েল কাশ্মীরের।শামিমরা এতো সমস‍্যার মধ‍্যেও অ্যাডিডাস দলের সাথে যুক্ত হওয়ার আগেই যুব দলকে পাঠিয়েছিলেন বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের অ্যাকাডেমিতে ট্রেনিং নিতে।বকসী স্টেডিয়ামে রক্ষনাবেক্ষনের কাজ চলায় টিআরসি টার্ফ গ্রাউন্ডের পরিঠাঠামো এই অবস্থাতেও উন্নত করেছেন ওঁরা যাতে কাশ্মীরের মানুষ নিজেদের রাজ‍্যে আইলিগ দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত না হন‌।শত অর্থনৈতিক সমস‍্যার মধ‍্যেও ইতিমধ‍্যেই দলের পাঁচ বিদেশীর কোটা পুর্ন।প্রায় নিঃশব্দে শামিম,সন্দীপ ও গুটিকয়েক শুভানুধ্যায়ীদের সহায়তায় চলছে আরেকটা ইতিহাস তৈরীর পরিকল্পনা। আজ পাঞ্জাবের মাটিতে প্রথমবার ভারতীয় ফুটবলের মূলমঞ্চে পা রাখলেও আসল অভিষেক তো আগামী ৬ই নভেম্বর, যখন শ্রীনগরের মাটিতে প্রথমবার রিয়েল কাশ্মীর নামবে চার্চিল ব্রাদার্সের বিরুদ্ধে।

তাই অনুরোধ হাতে অঢেল সময় থাকলে এইসব সস্তার ফুটেজখোর মাইতির মতো পাবলিকদের পাত্তা না দিয়ে আপনার শুভেচ্ছাবার্তা রিয়েল কাশ্মীরের পেজে পৌছে দিয়ে এই লড়াইটাকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করুন।কে বলতে পারে আজকের কাশ্মীরের দানেশ ফারুক,ঋতিকরাই কোনোদিন আমাদের বিশ্বকাপ খেলার অধরা স্বপ্নের সারথী হবেনা।যেভাবে ডেম্পো, স্পোর্টিং, এফসি কোচিন,সালগাওকর শেষ হয়েছে সেভাবে শামিম-সন্দীপদের স্বপ্নটাও যাতে শেষ না হয়ে যায় তাঁর  দায়িত্বটা গোটা ভারতের ফুটবলপ্রেমীদের। ইস্টবেঙ্গলকে সামনে রেখে যাদের বেড়ে ওঠা লড়াইটা তো তাদের মজ্জাগত হবেই।
নিজের সঙ্গে কানামাছি খেলে
সময় কাটাতে চাইছিলে বলে
সস্তা কাঁচের চুড়িতে আমায় ঘর সাজাতে বলবেনা।
ইতিহাস হতে পারছোনা বলে
বন্ধুর হাত বাড়াবার ছলে
মিথ‍্যা মায়ার গল্প শুনিয়ে ভয় দেখাতে পারবেনা।
আমি ইচ্ছের ঘুড়ি আকাশে উড়িয়ে
বসে আছি এই সন্ধেতে
জোনাকির আলো জ্বলেনি এখনও
জ্বলবে হয়তো মাঝরাতে
তারারাও আজ স্বপ্ন দেখছে
স্বপ্ন সবার সত‍্যি হোক।।

ভালো থাকুন শামিম-সন্দীপ আপনাদের রুপকথা নিয়ে।রিয়েল কাশ্মীর এফসির সব স্বপ্ন সত‍্যি হোক।

গানের লাইন :- ইচ্ছেঘুড়ি , বাংলা ব‍্যান্ড ক্রসরোডস


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098