ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098
পর্ণব দাস


ক্ষুধা বোধি ও তেপায়া

ক.
মূর্তিটি অসমাপ্ত রেখে ভাস্কর অপ্রকট হলেন।
নিজেকে প্রকাশ করবে ভেবে মূর্তি যেই একহাতে তুলেছে হাতুড়ি
ছেনি ধরতে গিয়ে দেখে অন্যহাতে করতল নেই।।

খ.
কেন্দ্র আর পরিধির মাঝামাঝি দাঁড়িয়ে রয়েছি।
ক্ষেত্র অপরিসর ভেবে বিন্দুতে ঝাঁপ দেব যেই
সাঁই বলে, 'পরিধিলগ্ন হয়ে দেহশুদ্ধ ভেসে র’বে অথৈ সাগরে'।

গ.
মহেশ দিয়েছে ত্রিশূল! আমার শরীরে তীক্ষ্ণ ত্রিশূল!
একশূলে তোর লজ্জা গেঁথেছি, একশূলে কামকটাহ!
আর এক শূলে আটকে গেল যুযুৎসা!!

ঘ.
শ্রাবণতীর্থে রাই উঞ্চল পাঞ্চল দেহকুম্ভে চলকায় লাবণ্যপানি।
পানিকাউরী সেজে সাঁই পানি সেঁচে ননী খায়
বায়ুবাদ্যে দেহ বাজে, তন্ত্রীতরঙ্গে কাঁপে চৈতন্যপয়োধি।।

ঙ.
রূপের স্বভাব বর্ণে চিনি। বর্ণ চেনায় উচ্চারণ
আসল রূপ যে গুহ্য আছে- তার স্বরূপবর্ণ নির্ধারণ
করবি যদি, অন্ধ হবি, জাত খোয়াবি, অচিনলোকে ভুগতে হবে নির্বাসন!

চ.
বিচিত্র জানালাগুলি জন্মদ্বার যেন উগরে দিচ্ছে অজস্র গল্পের ভ্রুণ।
শূণ্যজ্ঞান-গল্পভ্রুণ আউলিয়ার একতারায় বোধিশূণ্য প্রেমিক পুরুষ।
সাঁইয়ের বচনে কয়, 'সচ্চাষী সাধিলে পায় শূণ্যজ্ঞান-বোধিবৃক্ষ-বীজ।।'

ছ.
শরীরে দিয়েছ সাঁই অশরীরি ক্ষুধা
ক্ষুধা আছে পেট নাই মেটেনা লালসা
দেহসুদ্ধ পেট আমি ক্ষুধা খুঁটে খাই….

জ.
পুরুষের শ্রম বহির্মুখী, দৃশ্যত রূপ জমিনে আশমানে.....
লাঞ্চবাক্সে নারীর শ্রম দ্বিপ্রহরে উসখুস করে
সাঁই বলে, 'দ্যাখ, রাধার ভাবে খাটে কানহা,শামের ভাবে রাই...'

ঝ.
বহুশ্রমে নিষাদযুবক ধরেছিল পাখি নয়, রমণী পাখির পোশাক
পাখি উড়েছিল বনে, লুকিয়ে সবুজ ঘুমে...
পালকের খোসা মিছে নড়েচড়ে খেলা করে নিষাদ পুরুষের কোলে।

ঞ.
ত্রিভূজ বোঝাও ত্রিভূজ বোঝাও ত্রিভূজ বোঝাও...
সাঁই বলেছে, 'ভিতরে যার ব্রহ্মগোলক গ্রাস করে লয় কালের ধাতু,
বদ্ধ জমিন অসীম হলেই ত্রিভূজ ভ্রমে মাপতে চলিস!'

ট.
মন্দিরচূড়ায় শত কুলিশে হানছে বাণ, মন্ত্র অশ্রুত নাদে শক্তি-উপাসক
মুকুরে গুম্ফ এঁকে চেরাগের শিখা কাঁপে তাপসতনয়া কাঁপে গর্ভগৃহদ্বার
সাঁইসাহেবায় গায়, 'মওলা, না নারী না পুরুষ, এ'দেহ কামনাশকট'...

ঠ.
বামে জোয়ার ডাইনে ভাঁটি, মধ্যে পানি স্রোতহারা
কুদরতির এই গাঙ পেরোলেই ঢুকবি লোনা ভাঁটির দেশে
উজান নদী বাইবি যদি গুন পাকা কর সাঁই এর সাথে সন্ধি ক'রে।।

ড.
গেরস্তালি রাখে দেবী, রাঁধেবাড়ে, সারাদিন পুরুষের পথ চেয়ে থাকে
জানে সে সমস্তদিন ছায়াযুদ্ধে হেরে ফিরে এঁকে দেবে ঘরময় উথালিপাতাল
সাঁই বলে, 'পুরুষ অযথা ঘেমে উঠে নারীর এয়োতিচিহ্ন মুছে ফেলে'।

ঢ.
আহারে আহার্য্য হত্যা, মিলনে নিহত লাজ
কালা লাজ-চুরি-করা বাঁশিতে বাজায় কালো যমুনার জল।
সাঁই বলে, ‘দ্যাখ, নিজেকে সাজিয়ে তবেই মানুষ আত্মহত্যা করে।’

ণ.
ভাব ধরেছে চইতি-পাতায়; ফাগ ছড়ালো নি:স্বভাবী পুরুষ
বীজের বর্ণ স্বভাবশূণ্য, মাটির অন্ন-রক্ত চুষে
গর্ভে দহন, চাষ হলনা, খরাটী মরশুমে....

ত.
নিজেকে ব্যক্ত করে অব্যক্ত রইলেন তিনি
সদাসদ বিম্বে হল ব্যক্তি-পরিচয়...
'আত্মজ যে', সাঁই বলে, 'গর্ভমাঝে তাকে ব্যক্ত কর'।।

থ.
অন্নের স্বাদ ভর্তৃহারী; ভর্তৃর স্বাদ আলজিহ্বায় আয়ু
পোয়াতি বসুধা ক্ষুধায় গিলছে অন্নের মত সন্তানদের ডেলা
মুর্শিদে কয়, মায়ের এঁটােয় জাত মেরে ছেলে মা'কে করছে আহার।।

দ.
শরীরে লজ্জাগীতি স্পর্শরাগে রচনা করলে
হৃদয়মধুর ওমে শ্বাসবায়ে বনে বনে হিমেল শিহর...
'ম্যাঘহাওয়া না বুইঝলে', নাইয়া রঙ্গ করে, 'কী বুঝবি পানির খবর!'

ধ.
গাছের লজ্জা ছিঁড়ে সন্ধ্যারাগে দিয়েছি তোমায়
শরীরশয্যাশিরে তুমি তাকে জাগিয়ে রাখলে
হেমলকলোভী তুমি চাদর মথিত করে লজ্জারঙে নিজেকে ফোটালে?

ন.
প্রিয়ার কাছে গোপন কথা গুপ্ত রাখার অহং যদি না পাও সখা
গুপ্তজনায় ক্যামন ক'রে প্রকাশ পাবে নিকট-রূপে?
অচিন লোকের নাও চিনে মন সাঁই-মুর্শিদ-চরণ ধ'রে...

প.
'কথারাই' শ্যাম খোঁজে অধরে অধরে
রাস-সরোবরে রাধার অঙ্গে জ্বলে কথা
মুর্শিদের হুঁশিয়ারি, 'ওরে মূর্খ চুপ থাকি অগ্নিকণ্যা কথাদেবীর পদসেবা কর'।।

ফ.
দাঁতের নগ্নবেদী বেজে ওঠে জিহ্বানৃত্যে
আলোর স্বভাবরঙে আলোছায়া মুখের উপর
'মুখর হোসনে ক্ষ্যাপা'; সাঁই বলে, 'শুনে দ্যাখ নাদব্রহ্ম ভাষা।।'

ব.
(মওলা!) ধুলোর ভ্রমণ পায়ে পায়ে খেতির মরদ গায়...
'মাটির পরে চারকোণা এক ঘর ফেঁদেছি; ছয়কোণে তার টান 
(ভবের) উঠোন জুড়ে রাইকিশোরী ভেজা পায়ে আঁক কেটেছে কাপড় মেলার ঢঙ...'

ভ.
মকানে যা কিছু খাড়া সাজানো তোমার। 
মাসে মাসে বারো হাওয়া নাচাও কুলায়...
ঘরণীর কোলে সাঁই ত্রিদুয়ারি দহলিজে সলতে আগুনে উসকায়।।

ম.
আলেফ-স্তম্ভে গাঁথা মন্ডলের ঘর । 
দু'জনে তা'য় ঘরকন্না, দু'দুয়ারে খিল।
(গৃহে) তে-কোণা আখায় জ্বালে পঞ্চগুণা ঘি।।

য.
নীলতিমি আয়ু খায়, কামুক মুরিদে খায় বায়ু। 
কালসর্প কুঁয়ে রেখে কলাপীর পাখা থেকে খসে যায় স্মৃতির পালক।
শিখীপাখা শিরে সাঁই অদ্বৈতভাবে গায়, 'দ্বৈতের দ্বন্দ্বজ্ঞানই কালসম্মোহন'।।

র. 
ধ্রুবতারা ধ্রুব নয়। আজ যদি শিশুমারে কাল সিফিউস।
অনাহত মন্ডলে যে শুনেছে নীরব ধ্রুবপদ 
তাকে নিয়ে বৈখরী সামাজিক কথাবার্তা হয়।।

ল.
প্রকৃতিপুরুষ নাই, রসের মাকুতে বোনা একাহারা দেহটিতে আকাশের টান।
ঝাড়ে বাঁচে রতিসুখে; নিস্কাম গ্রামটিকে ঝড়েজলে ভরসা যোগান।
কেন শতকে দু'বার মরে, বাঁশের পাতায় খোঁজো, পুষ্পিত সাঁইয়ের কালাম।।

ৰ.
তারা ফোটার শব্দে হঠাৎ দৃশ্যপাড়ে জোছনা ভেঙে যায়। 
মাটির বাসনা শুনে ঢেউশব্দে বেলাভূমে আছড়ে পড়ে পানি।
সর্ববর্ণধারী শুক্তি সেজে শঙ্খনাদে অন্তস্থ বাহ্‌র-ই-বয়াত।।

শ. 
এক নৌকোর দুই কিনারে এক ঢেউয়ে দেয় দোল। 
মালিক! মালিক! তর্কে চাপল্‌ জলবৈঠায় খেল। 
আমি ডুবলেই তিনি ডুববেন- এই আমাদের প্রেম।।

স.
খাঁ-খাঁ-শূণ্য-শব্দে আমি দুপুর ভরেছি। 
ফসলের গুঞ্জনে ফুলে ফুলে মৌচাকী-ডাক।
দমবন্ধ ঝিঁঝিঁরবে সাহারা সাহিলে ভেসে যায়।।

ষ.
টান ধরেছে রসিক ডালে মাটির বুকে গুমরে ওঠে আগুন। 
অনেক চিল্লাফালের চেয়ে আপন স্বরে সমিধ থাকেন সাঁই।
হাওয়া উঠছে : মাভৈঃ মাভৈঃ! বীজপত্রে উথলে ওঠে দুধ।।


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098