ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098


আর মাত্র কিছুসময় পরেই শুরু হতে চলেছে ফুটবলের মহাযজ্ঞ।শুরু হয়ে যাবে বিশ্বসেরা শিরোপার লক্ষ্যে ৩২টা দেশের মধ্যে ধুন্ধুমার মরণপন লড়াই।বিশ্ব ফুটবলের বিভিন্ন দেশের সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে তুমুল আকচাআকচি শুরু করে দেবেন।একমাস ধরে চলা এই মহারণে ফুটবলাররাও কম উত্তেজিত নয় তারাও সাধ্যমতো নিজের সেরাটা উজাড় করে দেবেন দেশের হয়ে আর আমরা বাঙালিরা ড্রয়িংরুমে বসে অথবা ক্লাব পাব চায়ের দোকানে বসে সেই উত্তেজনার আঁচ পোয়াবো তারিয়ে তারিয়ে।
নিশ্চিতরূপেই এই বিশ্বকাপ যেমন জন্ম দেবে নতুন কিছু তারকার ঠিক সেভাবেই কিছু বর্তমান ফুটবলার ব্যর্থতাকে সঙ্গী করে তলিয়ে যাবেন বিস্মৃতির অন্তরালে।নিঃশব্দে চোখের জল সঙ্গী করে বিদায় ঘটবে অস্তমিত তারকাদের।
এটাই সময়ের নিয়ম
কিন্তু প্রতিবার বিশ্বকাপের বোধনের ঢাকে কাঠি পড়ার ঠিক আগের মুহূর্তে স্মৃতির গভীর অতল থেকে মনের পর্দায় জলছবি হয়ে ভেসে ওঠে একটাই নাম....

অ্যান্দ্রে এস্কোবার

হতভাগ্য কলম্বিয়ান ডিফেন্ডার
প্রত্যেক ফুটবলারের জীবনের স্বপ্ন থাকে নিজের ফুটবল সত্ত্বাকে বিশ্বকাপের মতো মঞ্চে মেলে ধরার।
কিন্তু এই হতভাগ্য কলম্বিয়ান তরুণকে বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন তার নিজের জীবন দিয়েই গুনতে হয়েছিলো মাত্র সাতাশ বছর বয়সেই।

এবার কিছুটা সংক্ষেপে আসল ঘটনাটা বলার চেষ্টা করি।
সালটা ১৯৯৪
বিশ্বকাপের আসর বসেছে সেবার আমেরিকাতে।
সব দল ভালোভাবেই তৈরী।
বিশেষ নজর টুর্নামেন্টের ডার্ক হর্স ফ্রান্সিসকো মাতুরানার কলম্বিয়ার দিকে।
দুর্দান্ত কলম্বিয়া দল বিশ্বকাপের কোয়ালিফাইং রাউন্ডে দিয়েগো মারাদোনা গ্যাব্রিয়েল বাতিস্তুতা সমৃদ্ধ আর্জেন্টিনার মতো দল যারা গতবারের ফাইনালিস্ট এবং তার আগের বার চ্যাম্পিয়ন সেই আর্জেন্টিনাকেও উড়িয়ে দিয়েছে পাঁচ শূন্য গোলের বড়ো ব্যবধানে।
গরীব দেশটি ভেঙে যাওয়া পঙ্গু অর্থনীতি এবং ড্রাগে জর্জরিত বেটিং চক্রের করাল ক্ষত বুকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছে বিশ্বকাপে ভালো কিছু করার।
ফুটবলারদের পাশাপাশি স্বপ্ন দেখছে সে দেশের হাজার হাজার ফুটবল পাগল জনতা।
ফেরিওয়ালা হয়ে স্বপ্ন দেখছেন স্বয়ং কোচ মাতুরানা।

শক্তিশালী কলম্বিয়ার সাথে মূলপর্বে একই গ্রূপে স্থান পেলো  রোমানিয়া আয়োজক ইউ.এস.এ এবং সুইজারল্যান্ড।
যথারীতি এই গ্রূপে অ্যাসপ্রিল্লা,কার্লোস ভালদোরামা,অ্যাডলফো ভ্যালেন্সিয়া,গ্যাব্রিয়েল গোমেজ,ফার্নান্দো হেরেরা,ফ্রেডি রিঙ্কন সমৃদ্ধ কলম্বিয়াই চোখ বুজে ফেভারিট।
কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতি অন্য কথা বললো।
অনেক সময় শক্তিশালী অপ্রতিরোধ্য কোনো বস্তুও কিছুটা অজানা প্রতিপক্ষের কাছে ঘায়েল হয়ে যায়।
ঠিক টাইটানিক জাহাজের মতোন।

প্রথম ধাক্কাটা এলো "কার্পেথিয়ান মারাদোনা" হাগির রোমানিয়ার কাছ থেকে।প্রথম ম্যাচেই ১:৩ গোলে হার।
প্রাথমিক ধাক্কার ঘোর কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলো কলম্বিয়া কিন্তু এখানেও বিধি বাম।
২২শে জুন তাদের স্বপ্নভঙ্গের রাত
রাতারাতি আকাশছোঁয়া রঙীন স্বপ্নের পাতাল প্রবেশ
সলিল সমাধি বিশ্বকাপ 'ছুঁতে' চলা একটা দেশের তিলতিল করে জমানোর প্রত্যাশার।
হ্যাঁ আবার হারলো কলম্বিয়া।
এবার আয়োজক আমেরিকার কাছে।
ভরা দর্শক সমর্থনপুস্ট নিজেদের দেশের মাটিতে কলম্বিয়ার খেতাব জয়ের স্বপ্ন কেড়ে নিলেন এগারোজন মার্কিন ফুটবলার।
ম্যাচের পঁয়ত্রিশ মিনিটে আত্মঘাতী গোল করে খলনায়ক হয়ে গেলো মুখচোরা নিজের দেশের ক্লাবের বাইরে কোনোদিন বাইরে পা না রাখা সাতাশ বছরের অ্যান্দ্রে এস্কোবার।
নিরীহ একটা সেন্টার ক্লিয়ার করতে গিয়ে বল ঢুকিয়ে দিলো নিজেদের জালেই।
ঢুকিয়ে দিলো দেশবাসীর অসীম প্রত্যাশাকে আবার চারবছরের জন্যে ঠান্ডা কবরের তলায়।
ম্যাচটা কলম্বিয়া হারলো ১:২ গোলে।

হয়তো এরপরেও ফিরে আসা যেতো,
যেহেতু চব্বিশ দেশের বিশ্বকাপ তাই নিয়ম অনুযায়ী গ্রূপ চ্যাম্পিয়ন গ্রূপ রানার্সের পরেও আরো চারটে দল গ্রূপের তৃতীয় সেরা দল হয়ে পরের পর্বে ওঠার ছাড়পত্র পেতো।
কিন্তু সেই সৌভাগ্য কলম্বিয়া তথা হতভাগ্য এস্কোবারের ছিলোনা।গ্রূপের শেষ ম্যাচে দুর্বল সুইজারল্যান্ড কে ২:০ গোলে হারালেও অন্য ম্যাচে রোমানিয়া ইউ.এস.একে হারানোয় বিদায় নেয় কলম্বিয়া।

এবার দেশে ফেরার পালা
মনটা অ্যান্দ্রে এস্কোবারের ভালো নেই
কারন সেদেশের ড্রাগমাফিয়া এবং বেটিংচক্রের হুমকি কোচ মাতুরানাকে বিশ্বকাপের আগেই দেওয়া ছিলো।পরিস্কার বলা ছিলো হয় ভালো ফলাফল নয়তো মৃত্যু।
কিন্তু বাকি দেশবাসীর সাথে অ্যান্দ্রে এস্কোবার ফুটবলটাকে ফুটবল হিসেবে নিলেও সেটাকে ব্যবসা হিসেবে নিয়েছিলো সে দেশের ড্রাগ মাফিয়া এবং ফুটবল জুয়াড়িরা।
অতএব সবাইকে ছেড়ে বিশ্বকাপের ব্যর্থতার জন্য  'খলনায়ক' এস্কোবারকেই দায়ী করে তার শরীর রক্তে রাঙিয়ে দেওয়া হলো বারো খানা বুলেটের মাধ্যমে।
সেই অভিশপ্ত আমেরিকা ম্যাচের মাত্র দশ দিন পরে।
দোসরা জুলাই 
হ্যাঁ 'মাত্র' বারোখানা তপ্ত সীসার বুলেটের মাধ্যমে নিজের এই 'অপরাধের' প্রায়শ্চিত্ত করলেন সাতাশ বছরের লাজুক তরুণ কলম্বিয়ার মেডেলিন শহরের একটা বারের সামনে।

গোটা ফুটবলবিশ্ব এই ঘটনায় হতবাক এবং শোকে ভেঙে পড়লো।
নিজের জীবন দিয়ে বাকি বিশ্বকে জানান দিলেন হতভাগ্য এই তরুণ যে বিশ্বের সর্বত্র ফুটবল শান্তির বাণী শোনালেও বিশ্বের সর্বত্র ফুটবল আনন্দ দিলেও কোথাও কোথাও সেটা প্রাণও কেড়ে নেয় কোথাও ফুটবল কোনো পরিবারে চিরকালীন অন্ধকারও নামিয়ে আনে।

প্রবহমান কালের স্বাভাবিক নিয়মে এসবই আমরা ভুলে গেছি আবার কদিন পরেই ভুলে যাবো।
কিন্তু বিশ্বকাপ ট্রফির সাথে বিভিন্ন তারকাদের নাম তাদের স্বর্ণোজ্জ্বল পারফরম্যান্স যেমন সারা ফুটবল বিশ্ব মনে রাখবে
যেমন পেলে,জর্জ বেস্ট,কাইজার,মারিও কেম্পেস,পাওলো রোসি,দিয়েগো মারাদোনা,লোথার ম্যাথিউস,রোমারিও, জিদান,রোনাল্ডো দ্য লিমা-রোনাল্ডিনহো,কানাভারো-বুফোঁ,ইনিয়েস্তা,টমাস মুলার এই নামগুলো মনে রাখবে ঠিক তেমনই ফুটবলপ্রেমীদের কাছে অ্যান্দ্রে এস্কোবারের নামটাও মনে রাখবে।
নিজের প্রাণের বিনিময়ে যে অদৃশ্য নাম তিনি এই সুন্দর ট্রফির বুকে লিখে দিয়েছেন
স্বয়ং ফুটবলের দেবতাও এই বিশ্বকাপের ট্রফি থেকে এই  অ্যান্দ্রে এস্কোবার নামটা কোনোদিনও তুলতে পারবেন না।

শান্তিতে ঘুমোও 'জেন্টেলম্যান'
ফিফা বিশ্বকাপ টুর্নামেন্টের একমাত্র ফুটবল শহীদ
মৃত্যুর চব্বিশ বছর পরেও তোমাকে কফিনের সামনে এসে বিরক্ত করার জন্যে আন্তরিক দুঃখিত এবং ক্ষমাপ্রার্থী।

বিঃদ্রঃ ভদ্র লাজুক এবং মিষ্টি স্বভাবের জন্যে কলম্বিয়ার মানুষ আদর করে ভালোবেসে অ্যান্দ্রে এস্কোবারকে জেন্টেলম্যান বলে ডাকতেন।


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098