ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098

আপনারা হয়তো ভাবছেন হিমুকে কী ভাবে কলকাতায় পাওয়া গেল। ঢাকার রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা হিমু হঠাৎ করে শ্যামবাজার, ধর্মতলা, চৌরঙ্গী বা সল্টলেকে হাঁটছে কেমন করে!
সকাল থেকে কলেজ স্ট্রিট ঘুরে ঘুরে অবস্থা শেষ। প্রেমিকাকে জয় গোস্বামীর কবিতা সমগ্র বইটা উপহার দেব। আজ রাতেই জন্মদিন। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাচ্ছিনা। দে'জ থেকে বেরিয়ে আনন্দর দিকে যাচ্ছি হঠাৎ দেখি হিমু দাঁড়িয়ে আখের রস খাচ্ছে। আর যাবে কোথায়? পাকড়াও করে সোজা সটান আমার রুম। সে এখন কী করে? কোথায় হাঁটে? থাকে কোথায়? 
জানবেন, জানবেন। সব জানবেন। সেই জন্যই তো হিমু কে পাকড়াও করে ধরে এনেছি আমাদের মেসে। যদিও পাকড়াও শব্দটা ভুল। তিনি বহাল তবিয়তে আছেন।
 
সকাল সকাল কচুরি খেয়েছেন। রাতে ভোলাদার হোটেলে খাবে বলেছে। কলকাতার নিম্ন তলার সমস্ত হোটেল চুষে ফেলার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে।
 
হিমুর ইচ্ছা। ফেলা যায়না। আমিও তেমন ভাবে প্ল্যান প্রোগ্রাম করা শুরু করেছি। যাইহোক এসব কথা পরে হবে আপাতত সরাসরি আমরা চলে যায় হিমুর ইন্টারভিউ এ।
(কোনো কাট ছাট নেই। যা হচ্ছে তাই লিখবো।)
ওহ! দেখেছ, কথা শেষ হওয়ার আগেই ব্রাকেট ক্লোস করে দিলাম। দাঁড়ান আবার খুলি- 
( হ্যাঁ তো যা বলছিলাম। আমাদের বর্তমান অবস্থাটা বলে দি। আমার এক রুমের ঘরে খাটের ওপর আমি আর হিমু পাশাপাশি শুয়ে আছি। দরজা দিয়ে বেরোলে রান্নাঘর। রান্নাঘর দিয়ে বেরোলে বাইরের রাস্তা। না বেরোলে বাথরুম। আমার রুমে একটা আয়না আছে। যেটা আমার মুখোমুখি। আমি তাই মাঝে মধ্যে চুল ঠিক করছি। হিমুর মুখের সামনে আমার মশারিটা ঝুলছে। তাতে তার কোনো আপত্তি আছে বলে মনে হলো না। তিনি মশাদের ছাড়া ঘুমোতে পারেন না বলে দু তিনটে ফুটো করেছেন সিগারেট দিয়ে। আমি হিমুপন্থী। তাই বারণ করবার সাহস হয়নি। আর আছে কয়েকটা বই। আর একটা পুরোনো পেপার। যার ওপর থালা রেখে আমি ভাত রুটি খাই। হিমু এখন ভীষণ মনোযোগ দিয়ে সেই পেপার পড়ছে।)




আমি- তো হিমু দা, কেমন আছেন?
হিমু- সকালে একবার জিজ্ঞাসা করলে না?
আমি- হ্যাঁ, তা .. আসলে.. ওই ইন্টারভিউ শুরু করলাম বলে আর কি।
হিমু- ওহ, ভালো।
আমি- তুমি বলে বলবো না আপনি?
হিমু- বিবেকানন্দ বা গৌতম বুদ্ধকে কী বলো?
আমি- তাদের কে? তাদের কে তো কিছুই বলি না। মানে তেমন ভাবে সরাসরি কোনোদিন কথা হয়নি তো।
হিমু- তাহলে আমাকেও তুমি,তুই আপনি কিছুই বলে ডেকো না।
 
আমি- আপনি কি তবে শেষ পর্যন্ত তাদের মতো মহাপুরুষ হয়ে গেছেন?
হিমু- আমার তো মনে হয় না। তবে তোমার হুমায়ুন আহমেদ শেষ লেখায় কী বলে গেছেন?
আমি- হননি।
হিমু- তাহলে তাই ধরে নাও। ভদ্রলোক আমার জীবনটা শেষ করে দিয়ে গেল। শান্তিতে একটু হাঁটাহাঁটি ও করতে পারিনা। ঢাকায় তো আমায় দেখলেই আম্মি-ফুফা-খালারা হা রে রে রে করে তেড়ে আসে। কলকাতায় এসেও দেখছি সে উপদ্রব কম নেই।
আমি- (হাসি) এখানেও কোনো কাকিমার পাল্লায় পড়লে নাকি?
হিমু- না। তোমার পাল্লায় পড়লাম।
 
(মনঃক্ষুণ্ণ হলাম। সামাল দিলাম। তারপর আমিও ভাবলাম পাল্টা অপমান করে রিভেঞ্জ নেবো)

আমি- আরে আপনি জানেন না। আমি আপনার মহাফ্যান। আপনার ইন্টারভিউ করে বাজারে বিক্রি করে কোটি কোটি টাকা কমাবো, এ আমার সাত জন্মের স্বপ্ন।
হিমু- ও আচ্ছা।
আমি- ও আচ্ছা মানে? আমি আপনাকে নিয়ে ব্যবসা করবো বললাম আর আপনি খিস্তি করবেন না?
হিমু- না।
আমি- কোথায় বিক্রি করবো তাও জানতে চাইবেন না?
হিমু- না।
আমি- আপনি তো দেখছি দিনে দিনে মজিদের মতো হয়ে যাচ্ছেন।
হিমু- মজিদ কে?
আমি- কী বলছেন!!!! আপনার মজিদ কে মনে নেই। আপনার রুমমেট। যে সব বিষয়ে ধ্যান করা ছাড়াই নির্বিকার হয়ে গেছিল। ওই যে...
হিমু- ও হ্যাঁ মনে পড়েছে।
আমি- বলুন তো আপনার কোন বইয়ে ছিল?
হিমু- 'আজ হিমুর বিয়ে'
আমি- গোল্লা পেয়েছেন আপনি। কিচ্ছু মনে নেই।
হিমু- হুম।
আমি- তাহলে তখন বললেন কেন চিনেছেন?
হিমু- না বললেই তুমি ইতিহাসের ফর্দ খুলে আমাকে বোঝাতে বসতে। তারপর যতক্ষণ না আমি বুঝি ততক্ষণ আমার মাথা আউলা করে দিতে মনে করাতে করাতে।
আমি- কলকাতায় কবে এলেন?
হিমু- গতকাল।
আমি- কেন?
হিমু- হেরোইন সাপ্লাই করতে।
আমি- বলেন কি!!!!!!
হিমু- হ্যাঁ। ওদিক থেকে পাঠিয়েছিল আমায়। কথা ছিল গেদের ওখান থেকে মাল হ্যান্ডভার নিয়ে নেবে। শালা বোধহয় পুলিশে ধরা খাইছে। আর তাকে পেলাম না।
আমি- তারপর?
হিমু- তারপর খুঁজেই যাচ্ছি খুঁজেই যাচ্ছি। কেউ নেই। কয়েকটা লোক দেখলাম ওয়েস্ট বেঙ্গলের। যতই কাছের হোক, বিদেশি তো। পালানোর কথা ভুলে গেলাম। ভাবলাম একটু কথা বার্তা হোক। একটু আলাপ পরিচয় করতে গেলাম তারপর...
আমি- তারপর??
হিমু- তারপর সোজা লালবাজার।
আমি- কেন?
হিমু- ওরা ভেকধারী পুলিশ ছিল।
আমি- তাহলে আপনি এখানে কি করছেন?
হিমু- মারবো একটা থাপ্পড়। নিজে নিয়ে এলো বাড়িতে আর জিজ্ঞাসা করছিস আমি এখানে কী করছি?
আমি- না মানে আমি জিজ্ঞাসা করছি, পুলিশ থেকে ছাড়া পেলেন কেমন করে!
হিমু- সব ফাঁস করে দিলাম। কাকে সাপ্লাই করতাম, কোথায় সাপ্লাই করতাম হাবি জাবি সব। তবে আমার মধ্যে রেসিজিম একদম নাই। আমার কাছে বাংলাদেশ এর পশ্চিম বাংলার আলাদা কোনো বিভেদ নাই। বাংলা একটাই। তাই দুই দেশের সব কটার নাম-ধাম বলে দিয়ে একসাথে ফাসিয়ে দিলাম সব্বাইকে। এদিকের গুলা বোধহয় ধরা খাইছে। অদিকের খবর জানিনা। তবে ধরা খাবে। সবাই একসাথে ধরা খাবে। দুই বাংলা এক হোক।
আমি- অসাধারণ। তারপর আপনাকে ছেড়ে দিলো?
হিমু- হ্যাঁ আজ রাতে ভিসা না কি সেটা হবে বললো। আমি বললাম অত সব লাগবে না। হেটে হেটে চলে যাব। খেলাম এক চড়। কলকাতার পুলিশ কি চড় নিয়ে এক্সট্রা কোনো কোর্স করে?
আমি- জানি না তো। খাইনি কোনোদিন। তবে লাঠির বাড়ি খেয়েছি।
হিমু- জেনে আমাকে জানিও। এখনো গাল টনটন করছে।
আমি- (হেসে) এবার আরেক গাল এগিয়ে দেননি
হিমু থিয়োরি মেনে?
হিমু- না। সাহস হয় নাই।
আমি- কেন?
হিমু- কারণ ভদ্রলোক আমাকে চিনেছে। আর হুমায়ন সাহেবের লেখাও পড়েছেন। সুতরাং আমার ট্যাক্টিস সব জানে। সাহিত্যপ্রেমী পুলিশ নিয়ে এই এক ঝামেলা। বাদ দাও, তুমি আজ সকালে ওরকম হন্তদন্ত হয়ে ঘুরছিলে কেন?
আমি- আমি একটা বই খুজছিলাম প্রেমিকার জন্যে। বললাম নাহ।
হিমু- ওহ হ্যাঁ। বললে তো।
আমি- আচ্ছা। ফিরে আসি নতুন কথায়।
হিমু- ফিরে আসি মানে? এখানেই তো ছিলে।
আমি- হ্যাঁ মানে ওই আর কি। রুপার খবর কী? বাদল কেমন আছে?
হিমু- রুপার সাথে অনেকদিন কথা হয়না। তোমার কাছে টেলিফোন আছে?
আমি- না মোবাইল আছে।
হিমু- বাংলাদেশে কল যাবে?
আমি- না। ভারতেও কল যাবে না। তিন পয়সা পরে আছে।
হিমু- বাহ দানে দানে তিন দান। তিন খুব ভালো নম্বর।
আমি- মহাপুরুষেরা মানে এসব?
হিমু- সকল মান্যতা যখন এক হয়ে যায় তখনই মানুষ জ্ঞানিরূপে আত্মপ্রকাশ করে।
আমি- দারুন। কবে লিখলেন?
হিমু- ধার করা ডায়ালগ। কাজ শেষ হয়ে গেলে ফেরত দিয়ে দেব।
আমি মোহিত হয়ে গেলাম হিমুর হিমুত্বে। এই মুহূর্তে একটা চা বড় প্রয়োজন। সামনে বসে হিমুর চা খাওয়া দেখবো এ আমার জীবনের সাধ। এত গল্পে এতবার পড়েছি যে লোভ সামলাতে পারছিনা।
আমি- চা খাবে তো?
হিমু- একবার তুইতকারী করে ফেলো জলদি। তাহলেই তুমি-আপনি-তুই তিনই বলা হয়ে যাবে। দানে দানে তিন দান।
আমি- হে হে হে। চা খাবি?
হিমু- (হেসে) মারবো এক থাপ্পড় ফাজিল ছেলে। দে একটু চা দে।
আমি হাসতে হাসতে বেরিয়ে এলাম রান্না ঘরে। জল চাপিয়ে বাথরুমে এলাম। জঘন্য গন্ধ বেরিয়েছে। কালকেই পরিষ্কার করতে হবে। চারদিকে ফিনাইল ছড়িয়ে রান্নাঘরে এলাম। চা প্রায় হয়ে এসেছে। ছেঁকে নিয়ে দুটো কাপে ঢেলে ভেতরে রুমে এসে দেখি....
হিমু নেই। বিছানা খালি। একটাই রুম। দৌড়ে একবার বাথরুমে গেলাম। নেই। রান্না ঘরে আসতেই দেখি বাইরে যাওয়ার দরজাটা খোলা।
হায়। পাখি উড়ে গেছে কখন।
ভীষণ মন খারাপ হলো। দরজাটা লক করে ভেতরের রুমে এলাম। কী আর করার আছে? চা খাচ্ছি। সামনে হিমুর কাপ। কাপে ভর্তি চা।
ভালোই হলো। হিমু তো এমনই। হিমুর তো এমনই হওয়ার কথা। এই রহস্যই তো আর হাজার বছর বাঁচিয়ে রাখবে তাকে। তার চারপাশে যে গোলকধাঁধা সেখানে ঢুকতে চাইবে সবাই কিন্তু কিছুই না পেয়ে ফিরে আসবে আবার। তাই প্রতিদিন প্রতিরাতে ইচ্ছে করবে আর একটু জানি হিমুকে। আরো একটু রহস্য কাটুক তার।
কিন্তু কাটবে না। হিমু এমন রহস্য যা শুধুই বাড়ে, কমে না।
চা খেয়ে কাপটা নিয়ে রান্নাঘরে রেখে এলাম। খাটটা একটু ঠিক করে শোব। 
হিমু যেখানে বসেছিল এতক্ষন সেইখানে এসে দাঁড়ালাম। বেশ ভালো লাগছে।
বিছানা করবো বলে চাদরটা ঠিক করতেই দেখি- একি!!!!
চাদরের নীচে সযত্নে রাখা জয় গোস্বামীর কবিতা সমগ্র। যেটা আজ রাতে আমার প্রেমিকাকে দেব বলে ঠিক করেছিলাম কিন্তু কিছুতেই পাচ্ছিলাম না কোথাও। আনন্দে আমার চোখ দিয়ে জল বেরিয়ে এলো। হিমু কখন কিনলো এটা? আমি জানলাম না কেমন করে??? রেখেও ছিল বা কোথায়!!!
জানিনা, আর আমি আজীবন জানতে চাইও না।
কারণ হিমু এমন রহস্য যা শুধুই বাড়ে, কমে না।

No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098