সত্যি বলতে কি তিরিশ বছর পরে দেশে ফিরে এই নির্জন পাহাড়ি জনপদে এসেছি শুধুমাত্র ছেলে বেলাকে
ফিরে পেতে । এই ভুবনায়নের যুগে আমার সেই জন বিরল গ্রামখানি পাল্টে যেতে পারে এমন
আশঙ্কা মনের দোতারায় ধাক্কা যে দেয় নি তা নয় ।তবে এসে বুঝলাম যে সে ভাবনা একেবারেই
অমূলক ছিল ।প্লান্টেশনের আওতায় থাকায় বাইরের লোক গা জোয়ারি করতে পারে না ।ফলে
রাস্তা ঘাটের উন্নতি হলেও বিজন সে বনভূমি এক মুহূর্তে আমাকে যেন হারানো অতীত
ফিরিয়ে দিল ।
এসেছি দুদিনের করারে ।এখানে হুট বলতে গাড়ি মেলে না ।হাঁটাই এখানে ভরসা ।সেই যে
থাকিতে চরণ মরণে কি ভয় সেই আর কি !ব্রেকফাস্ট করে
ঘুরে এসেছি আমাদের পুরোনো বাংলো ,রবীন্দ্র ভবন , টুং খোলা ।দুপুর গড়াতে হাত দিলাম
দূরবীন দাঁড়া র পথে ।ওখান থেকে অসাধারন সুন্দর দৃশ্য দেখা যায় ।তিস্তা রিয়াং আর
রংগীত তিনটি যদি আর পাহাড়ের সারি !ওঃ সে যে কি সুন্দর !ছেলেবেলায় পূর্ণ বাহাদুর
দাজু র সাথে আসতাম মাঝে মাঝে ।নির্জন সেই পাহাড় চূড়া আজও এক ই রকম সুন্দর ।অনেকটা
নীচে নেপালি বস্তি ।ওখানেই পূর্ণ বাহাদুর থাকতো ।আমাকে ওর বাড়ি নিয়ে গেছে কত বার
।খাইয়েছে সেল রুটি আর রুখ টমটরের চাটনি ।ভাবতেই হঠাৎ মনে হলো যাই না !একটু দেখা
করে আসি ! পাহাড় বেয়ে নেমেছে সরু পথ । পাহাড় বড়ো মজার ।যত কাছে মনে হয় আসলে তা
একেবারেই নয় ।বেলা ঢলে আসছিল ।ঘরে ফেরা পাখিদের কিচিরমিচির ।দু চারজন দেহাতি লোক
নিজেদের মধ্যে কথা বলতে বলতে নেমে গেল দুদ্দার।নাঃ ,কাউকে একটা জিজ্ঞেস করতে হবে
।বাঁক ঘুরতেই দেখি বৃদ্ধ একজন মানুষ পথের ধারে বসে ।জিজ্ঞেস করি পূর্ণ বাহা দূর
লেপচা কা ঘর কাহ পর হায় !
নানি !তিমি !!
অবাক হয়ে চাই ।পূর্ণবাহাদুর দাযু!!!!! তারপর কত কথা !
বললো চলো নানি আমার ঘরে চলো
।খাওয়াবো সেল রুটি আর
আর রুখ তমটারের চাটনি !!!!!আমি বলে উঠি ।দুজনেই
একসাথে হেসে উঠি অট্টহাসে ।
বস্তির কাছে এসে যখন পৌঁছলাম সাঁঝের আঁধার নেমে গেছে
।ছোট ছোট নেপালি ছেলেমেয়েরা তখনও দৌড়াদৌড়ি করছে কিছু ।কেউ বা মুরগি খাঁচায় পুড়তে
ব্যস্ত ।
নানি তুমি একটু দাঁড়াও
পূর্ণবাহাদুর ঘরে ঢুকে গেলো ।বাড়ির সামনের ফালি জমিতে
সুন্দর চাষ । রাই শাক ,বেগুন আরো অনেক কিছু
।এখানে বিদ্যুৎ নেই ।ঘরের ভেতরে মোমবাতি জ্বলছে ।কথা কথির আওয়াজ আসছে ভেসে । আমাকে
আবার এতটা পথ উজিয়ে ফিরতে হবে ।সিঁড়ি বেয়ে বারান্দায় উঠি
দাযু
হা বলিয়ে ।একজন মাঝ বয়সী লোক বেরিয়ে আসেন ।
পূর্ণবাহাদুর লেপচাকো জরা বুলাইয়ে ।
লোকটি আমতা আমতা করে
জি !
আমি আবার বলি
উনকো জরা বুলাইয়ে ।
ভিতর থেকে এক মহিলাও বেরিয়ে এসেছেন ।লোকটির বউ ই হবে
সম্ভবত ।
উসনে হি মুঝে লে আই
আমি বোঝানোর চেষ্টা করি ।ওরা নিস্পলক চেয়ে থাকে আমার
দিকে তারপর বলে
ও মেরে পিতাজি থে ।লেকিন ও তো দশ সাল পাহেলে হি মর
চুকে !!!
ঘরের ভেতর থেকে সেল রুটির গন্ধ আসছিল আর মোমবাতির
চারপাশে একটা পোকা কেবল ই ঘুরে মরছিল
,,,,,,
কেবল ই ঘুরে মরছিল ,,,,,,,,,,,
No comments:
Post a Comment