আগামী মাসের বিষয় ‘প্রেমের গল্প’। লেখা পাঠান আমাদের মেইল করে
– অনাধিক ৫০০ শব্দের মধ্যে। লেখা পাঠানোর শেষ তারিখ ১৫ই জুন। সাবজেক্টে অবশ্যই লিখবেন
‘প্রেমের গল্প’ শিরোনাম।
অলৌকিকের সন্ধানে - সুপর্ণা চক্রবর্তী
জিরো তে এসে ইসতক বিনয় মজুমদার আমাকে পাগল করে
চলেছেন ।হং ভিলেজে কখন যাবেন স্যার ? আরে বাবা !আমি টুর অপারেটর ।আমি তো ঠিক নিয়ে
যাবো ! ইটানাগার থেকেই দেখেছি ওনার দুষ্প্রাপ্য ,অলৌকিক জিনিসের প্রতি একটা আকর্ষণ
আছে ।বলছিলেন ও কাকে যে ওনার বাড়িতে নানা এ ধরণের জিনিস আছে ।অরুনাচলের হং ভিলেজ ট্রাইবালদের পৃথিবী বিখ্যাত গ্রাম ।
জানেন তো !ওরা নানা তুক তাক জানে !ওদের কাছে অনেক
অলৌকিক জিনিস ও পাওয়া যায় ।তবে দিতে চায় না আর কি ।
শেষমেষ পেছি পুটু হয়ে গেলাম হং ভিলেজ ।বিরাট
দিগন্ত প্রসারী মাঠ পেরিয়ে সেই গ্রাম ।গ্রামে ঢুকতেই আশ্চর্য একটা গন্ধ নাকে এলো
।কেমন যেন ঝিম ধরা ।কেমন যেন মাথা টাল খেয়ে যায় ।লোকাল ড্রাইভার বললো যে ওরা কোনো
কিছু ভাজে না আধ সেদ্ধ খায় ।তা
ছাড়া ওদের ঘরে ঘরে মদ তৈরি হয় নানা শস্য দিয়ে
।সে যাই হোক সে গন্ধে সবার ই গা গুলোচ্ছিলো ।কিন্তু বিনয় বাবু নাছোড় বান্দা ।কার
কাছ জেনেছেন যে নারং তাম নামে একজন নাকি
নানান অতিপ্রাকৃত জিনিসের কারবার করে ।অনেক খুঁজে পাওয়া গেলো তাকে ।দু একটা জিনিস
দেখালো ও সে ।কিন্তু বিক্রি হবে না ।বিনয়বাবু
ঘরের এক কোনে রাখা একটি অদ্ভুত দর্শন মুখ কেনার জন্য জোর করতে লাগলেন ।নারং তাম লোকটির মাথায় ফেট্টি
।কপালে সিঁদুর লেপা ।ধীরে ধীরে তার মুখ শক্ত হয়ে উঠতে লাগলো ।চোখে হিংস্রতার চড়া
স্রোত
এ জিনিস হং ভিলেজের বাইরে যাবে না কখনো । কখনো না !!,কথাটা যেন ঘোষণার মতো
শোনালো ।জোরজার করেই বিনয় বাবুকে বের করে আনা হলো কিন্তু ওনার সেই এক কথা ।ওটা আমি
নেবই ।টাকা ছড়ালে আবার দেবে না !হুঁ হ!
পরদিন সকালে আমরা কাছা কাছি
জায়গা গুলো দেখলাম ।বিনয় বাবু গেলেন না ।শরীর ঠিক নেই ।
সন্ধেতে ফিরতেই আমাকে ধরলেন বলেছিলাম না
জিনিসটা নেব এই দেখুন । আমি অবাক !দিলো আপনাকে
?
না সে ছিল না ।তার ছেলে দিয়ে দিল ,তবে কড়কড়ে 500
টাকা দিতে হোলো বাবা !!!
একটা পুরুষের মুখ তার চোখ দুটো যেন জীবন্ত ।এখনই
পিছি পড়বে ।মাথায় পাখির পালক আর কিসের যেন
কাটা ঠোঁট ।মুখের হাসিটা কেমন যেন বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকা যায় না !কেমন অস্বস্তি হয়
।
কি করবেন এটা ?লোকটা ফিরে এসে যদি চায় ?
ও ফিরবে কাল বিকেলে ।আর আমরা তো সকালেই বেরিয়ে
যাচ্ছি !!!
যাক গে !এ নিয়ে আর বেশি কি বলবো । পরদিন সকালে
বিনয়বাবু র দেখা নেই ।খোঁজ করতে গিয়ে দেখি তখনও
দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ।উনি তো খুব ই আর্লি রাইজার দেখেছি ।অনেক ডাকাডাকিতেও দরজা
খুলল না !!তারপর থানা পুলিশ ।দরজা ভেঙে দেখা
গেল খাটের উপর উপুড় হয়ে পড়ে
আছেন ।সামনে বিচিত্র মুখটা রাখা । ঝামেলা গড়ালো সেই সন্ধে অব্দি ।সন্ধে নামার মুখে
হঠাৎ ই সে এলো কপালে বিরাট করে সিঁদুর লেপা ,মুখে ক্রূর হাসি ।কোনো দিকে না তাকিয়ে
সোজা ঢুকে পড়ল ঘরে । টেবিলের ওপর থেকে যেন
ছিনিয়ে নিলো অদ্ভুত দর্শন সেই মুখটা কে । চোখে আগুন ঝরিয়ে হিসহিস করে বলে উঠলো
হং গ্রামের বাইরে এর যাবার উপায় নেই…
কখনো যাবে না…
শয়তানের দিব্বি …!!!!!!!
হঠাৎ ই সে এলো ।এরপর হবে নারং তাম !
পরিবর্তন - পায়েল সরকার
"না রে গরমের ছুটি তে যাওয়া হবে না এবার। অনেক কাজ আছে
" .
"করিস তো ওই গ্রামের স্কুলে চাকরি , তোর আবার এত কি কাজ ", অভিকের কাজের কথা শুনে
চেঁচিয়ে ওঠে সন্তু ।
"দেখ নির্ঘাত কোনো গ্রাম্য সুন্দরী কে মনে ধরেছে ছেলের।
তাই বাড়ির পথ ভুলে গেছে বাবু ।", ঠাট্টা করে বলে রুদ্র
।
ঘন্টা খানেক ধরে কনফারেন্স কলে তিনজন মিলে বেড়ানোর প্ল্যান করার চেষ্টা
করছে। কিন্তু কিছুই ঠিক করা যাচ্ছে না, এরকম ঠাট্টা ইয়ার্কি ই চলছে। অবশেষে
অনেক আলোচনার পর ওরা ঠিক করলো অভিক যখন আস্তে পারবে না তখন এবারের ছুটি তে ওরা
দুজন ই অভিকের কাছে যাবে। কোনো পরিচিত টুরিস্ট স্পট র বাইরে এবারে নাহয় গ্রামবাংলা
ই ঘুরে দেখবে।
মাস খানেক হলো এই তালপুর গ্রামের হাই স্কুলে চাকরি পেয়েছে অভিক । বাড়ি থেকে
এত টা দূরে চাকরি টা নেওয়া ঠিক হবে কিনা অনেক বার ভেবেছিল । কিন্তু বিকল্প কোনো
চাকরির সুযোগ ও সেরকম ভাবে ছিল না। তাই একরকম বাধ্য হয়েই এই পাড়া গাঁয়ের স্কুলে
চলে আসে অভিক। প্রথম প্রথম একটু অন্যরকম লাগলেও এখন জায়গাটা কে ভালোবেসে ফেলেছে
অভিক। বিশেষ করে তালপুর গ্রামের স্কুল টা একটা অদ্ভুত সুন্দর জায়গায়। তিনদিকে ধানী
জমি আর সামনে অনেকটা জুড়ে খোলা মাঠ। এরকম প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেওয়ার সুযোগ শহরে মেলা
ভার। সন্তু আর রুদ্রর জায়গা টা ভালোই লাগবে , মনে মনে ভাবে
অভিক। অনেক দিন পরে প্রিয় বন্ধুদের কাছে পাবে ভেবেই মনটা ভালো হয়ে গেল ওর। আরেকটা ব্যাপার খুব ভালো হয়েছে যে ওরা কেউ
ই জিগেস করেনি অভিকের কি কাজ আছে। ভোটের ডিউটি শুনলেই ওরা আর আস্তে চাইতো
না । দুজনেই রাজনীতি কে মন থেকে ঘৃণা করে আর এই সবের মধ্যে থাকতে চায় না। সেই
ভাবেই অভিক ওদের আস্তে বলেছে যাতে ভোটের রেজাল্ট র পরের দিন ওরা এসে পৌঁছয়। এত দিন
পরিশ্রমের পর কয়েকটা দিন ওদের সাথে আনন্দ করা যাবে।
ভোটের দিন যত এগিয়ে আস্তে লাগলো তালপুর সম্পর্কে অভিকের ধারণাও আস্তে আস্তে
পাল্টাতে লাগলো। গোটা গ্রাম যেন একটা খোলসের মধ্যে ছিল । ভোটের তাড়নায় তারা যেন
হটাৎ সেই খোলস ত্যাগ করতে লাগলো। অভিকের স্কুল র সহকর্মী শিশির
বাবু সেদিন বলছিলেন গ্রাম বাসীরা এবারে পরিবর্তন চায় । কিসের পরিবর্তন অভিক আর
জিগেস করেনি। ওর রান্নার র লোক মালতি মাসিও সেদিন বলছিল এবারে ওরা সবাই খুব সজাগ।
সবাই পরিবর্তন চায়। অভিকের বেশ ভালো লাগছিলো ভেবে যে গ্রামের মানুষ ও এবারে উন্নয়ন
চায়। ভালো রাস্তা ঘাট, বিদ্যুৎ ব্যাবস্থা, নাগরিক জীবনের অন্যান্য সুবিধে পেতে তারাও আগ্রহী। মানুষ যেদিন নিজের
অধিকার বুঝে নেবে সেদিন ই পরিবর্তন আসবে । অভিক ও মনে মনে চাইছিল গ্রামবাসীদের
মনের ইচ্ছে যেন পূরণ হয় এবারে।
স্কুলেই্ ভোটের কেন্দ্র পড়েছে তাই ভোটের কয়েকদিন আগে থেকেই সতর্কতা
তুঙ্গে। অভিকরাও জোরকদমে প্রস্তুতি নিতে লাগলো। এরই মধ্যে সন্তু র রুদ্র ভোটের
ব্যাপারটা জানতে পেরে আর আস্তে চাইছিল না। অভিক অনেক বুঝিয়ে ওদের রাজি করেছে।
দেখতে দেখতে ছোট খাটো সমস্যা পেরিয়ে ভোটের দিন এগিয়ে এলো। রাত পোহালেই ভোট। তাই
স্কুলে র হেড মাস্টার এর নির্দেশে অভিক আর ওর সহকর্মী হাসান রাতে স্কুলেই থাকবে ।
পাড়া গাঁয়ে এমনি তেই তাড়াতাড়ি সন্ধে হয় তারপর পরের দিনের যজ্ঞের প্রস্তুতি নিতে
পুরো গ্রাম যেন তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়লো। হাসান ও শুয়েই পড়েছিল। অভিকের আর ঘুম আসছিল
না। এই প্রথম ওর ভোটের ডিউটি । ভেতরে ভেতরে একটা উত্তেজনাও চলছিল। একটা চা বানিয়ে স্কুলের
বারান্দায় এসে দাঁড়ালো অভিক। কতক্ষন হয়েছিল ওর খেয়াল নেই। হটাৎ ওর মনে হলো কিছু
লোক মাঠ পেরিয়ে স্কুল র দিকে এগিয়ে আসছে। সংখ্যায় ও নেহাৎ কম না।
দশজন তো হবেই । স্নায়ুতন্ত্র সতর্ক করে দিলো অভিক কে। কিছু একটা বিপদ ঘটতে চলেছে।
ভোটের আগের দিন প্রায় মাঝ রাতে এত জন লোকের এই ভাবে ভোট কেন্দ্রের দিকে আসা টা খবর
একটা স্বাভাবিক ঘটনা না । নিশ্চয় ওরা কোনো গোলমাল করতে চায় , আবার গ্রাম বাসীরা তাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। দৌড়ে ঘরের ভিতরে
ঢুকলো অভিক , হাসান কে পাগলের মতো ডাকতে লাগলো। কিন্তু হাসান
উঠলো না । ছুটে চার্জার পয়েন্ট থেকে মোবাইল তা খুলে হেড মাস্টার কে ফোন করতে গেল
অভিক। কিন্তু কিছুতেই কল লাগলো না। নিরুপায় হয়ে আবার বারান্দায় ছুটে গেল অভিক।
লোকগুলো এগিয়ে প্রায় স্কুল র গেটের কাছে পৌঁছে গেছে। যেকোনো মুহূর্তে গেট খুলে
ঢুকে পড়বে। কিন্তু একি ! কি করছে ওরা । ভেতরে না ঢুকে ওরা
স্কুল র চারদিকে ছড়িয়ে পড়ছে। তারমানে ওরা কাল কাউকে ভোট দিতে দেবে না ।তার জন্য আজ
রাত থেকেই প্রস্তুতি নিচ্ছে। কি করবে অভিক এবার ? হাসান ও
উঠছে না , ফোনের টাওয়ার ও নেই। যা করার ওকেই করতে হবে। আটকাতেই
হবে এদের। বারান্দা থেকে নেমে সামনের লোকটার দিকে এগিয়ে গেল অভিক। কিন্তু লোকটার
মুখের দিকে তাকিয়ে হটাৎ খুব মায়া হলো অভিকের। মনে হলো হত দরিদ্র এই লোকটাকে কয়েকটা
টাকার লোক দেখিয়ে কিভাবে রাজনৈতিক দল এই খারাপ কাজে এগিয়ে দিয়েছে। লোকটাও নিস্পলকে
তাকিয়ে আছে অভিকের দিকে। "আপনারা কি চান এখানে। এত রাতে এই ভাবে এখানে ঢুকে
পড়েছেন কেন। ", বেশ জোরের সাথেই বলে অভিক। "আমরা
বেশি কিছু চাই না বাবু। শুধু দেখতে এসেছি এবারে যেন কেউ আর ভোট দিতে এসে মরে না
যায়। বোঝেন ই তো বউ ছেলে গুলো কাল আসবে ভোট দিতে, পাশের ঘরের
সব ছেলে পিলের দল আসবে। ওদের যেন কেউ আর ভোট দেওয়ার দোষে কুপিয়ে না মারে। " ,
অভিকের মুখে আর কথা সড়ছিলো না। এসব ও কি শুনছে , কি বলছে লোকটা উল্টো পাল্টা। ওর অভিব্যাক্তি দেখে লোকটা বুঝতে পারলো ,নিজেই আবার বলতে শুরু করলো,"আপনারা শহুরে মানুষ
বাবু। এসব গ্রাম গঞ্জের সব কথা কি আর আপনাদের কানে যায়। আমরা হলাম নিচু তোলার লোক।
আমাদের খবর কে রাখে বলুন। এই তো গেল বার ভোটে কিছু গুন্ডা লোক এসে বাড়ি বাড়ি
শাসিয়ে গেল ,যে ভোট দিতে যাবে সেই মরবে। কিন্তু তাও আমরা
ওদের কথায় কান দেইনি। গাঁ উজাড় করে ভোট দিতে এলাম। ভোট টা দিয়েও ছিলাম জানেন।
তারপর বেরোনোর সময় বউ বাচ্চার সামনেই দা দিয়ে আমায় কুপিয়ে দিলো। ওই যে দূরে
দাঁড়িয়ে আছে দেখছেন ও এই স্কুল র মাস্টার শিশির বাবুর ছেলে। ওর ও গলা টা কেটে
দিয়েছিল। আর এই যে সামনের ছেলে টা কে দেখছেন ওকে গুলি করেছিল। ওর বিধবা মা মালতি
কত কষ্ট করে ওকে বড় করেছিল জানেন। এক মুহূর্তে সব শেষ। তাই এবারে আমরা ঠিক করেছি
আমরা পরিবর্তন আনব। বাইরের কাউকে ঢুকতে দেব না গাঁয়ে। আমাদের তো কেউ আটকাতে পারবে
না, কিন্তু আমরা ওদের আটকে দেব। সবাই স্বাধীন ভাবে ভোট দেবে
।" , এতক্ষনে পরিবর্তন র কথার মানে বুঝলো অভিক। কিন্তু ও
আর তখন কথা বলার অবস্থায় নেই। এরপরের ঘটনা ওর আর কিছুই মনে নেই ।
দুদিন পরে ওর যখন জ্ঞান এসেছে, ততক্ষনে ভোট যজ্ঞ শেষ। ওকে নাকি
স্কুলের সামনের মাঠে পাওয়া গেছিলো অজ্ঞান অবস্থায়। হাসান কিছুই জানতো না যে অভিক
কখন স্কুল থেকে বেরিয়েছে, আর তার থেকেও অবাক করার ঘটনা হলো
স্কুল র সামনে সেদিন পুলিশ পোস্টিং ছিল তারাও কিছু দেখতে পায় নি। তবে ভোটের সব
কিছু নির্ঝঞ্ঝাট এ হয়েছে। কোনো গোলমাল ছাড়াই সবাই ভোট দিতে পেরেছে। আর পৃথিবীর বেশ
কিছু আশ্চর্য ঘটনার মতো অভিকের জীবনেও এ এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়ে থাকলো যা কাউকে
বললে কেউ বিশ্বাস করবে না। আবার কিছু প্রশ্ন অভিকের কাছেও উত্তরহীন হয়ে থাকলো ।
যেমন হাসান সেদিন কেন উঠলো না, ফোনের টাওয়ার হটাৎ চলে গেল
কেন, স্কুলের সামনে পুলিশ পোস্টিং ছিল অথচ অভিক তাদের দেখতে
পেলো না কেন। হয়তো কিছু প্রশ্নের উত্তর খোঁজা বৃথা।
No comments:
Post a Comment