স্পেন-৩ (দিয়েগো কোস্তা-২, নাচো)
পর্তুগাল-৩ (রোনাল্ডো পেনাল্টিসহ ৩)
২০১৮ রাশিয়া বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিনে গ্রূপ লিগের প্রথম বড় ম্যাচে আজ পরস্পরের মুখোমুখি ছিল বর্তমান ইউরো জয়ী পর্তুগাল এবং প্রাক্তন ইউরো এবং বিশ্বকাপ জয়ী স্পেন। খেলার প্রারম্ভেই মাত্র ৪ মিনিটের মাথায় স্পেন ডিফেন্সের ভুলে পেনাল্টি পায় পর্তুগাল.. যা থেকে গোল করে দলকে এগিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি হয়নি অভিজ্ঞ রোনাল্ডোর। এরপরই হতোদ্যম স্পেন ধীরে ধীরে গুছিয়ে নিতে শুরু করে। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস খেলে স্পেনের বিখ্যাত তিকিতাকার স্মৃতি যেন আবার ঝলসে উঠতে শুরু করলো কোকে, বুস্কেটস, সিলভা, ইনিয়েস্তা, ইস্কোদের পা থেকে। বল পজেশন নিজেদের কাছে রেখে শুরু হলো পাল্টা চাপ তৈরির ফুটবল বিপক্ষের ওপর। জর্ডি আলবার বাঁ প্রান্তিক দৌড়, সাথে সিলভা-ইস্কো-ইনিয়েস্তা-কোকেদের নিয়ে গড়া মাঝমাঠের পারস্পরিক বোঝাপড়া ছিল চোখে পড়ার মতো। ২৪ মিনিটের মাথায় স্পেনের একমাত্র স্ট্রাইকার দিয়েগো কোস্তা পর্তুগালের ৩ জন ডিফেন্ডারকে সামনে রেখে গোলশোধ করে। প্রথমার্ধে বল পজেশন থেকে শুরু করে পাসিং প্রায় সমস্তক্ষেত্রেই স্পেন এগিয়ে থাকলেও পর্তুগালের কাউন্টার attack নির্ভর ফুটবলও এক্ষেত্রে প্রশংসার দাবি রাখে। মৌতিনহো-গুয়েদেস-রোনাল্ডো-গুয়েরিরো পাল্টা কাউন্টার attack নির্ভর ফুটবল খেলে বেশ কয়েকটি গোলের সুযোগ তৈরি করলেও গোলে দরজা খুলতে ব্যর্থ হয়। প্রথমার্ধের শেষের দিকে একইরকম ভাবে স্পেনের দাপুটে ফুটবল বজায় থাকলেও খেলার স্রোতের বিপরীতে পুনরায় রোনাল্ডোর শট এবং গোল! এক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে দায়ী স্পেন গোলরক্ষক ডি গিয়া। ডি গিয়ার ফাঁক গলে বল জালে জড়িয়ে ২-১ এর লিড নিয়ে নেয় রোনাল্ডোর পর্তুগাল।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলায় ৫৫ মিনিটের মাথায় সিলভার নেওয়া ফ্রি-কিক থেকে বুস্কেটস এর হেড এবং সুযোগ সন্ধানী কোস্তা পা ছুঁইয়ে পুনরায় গোলশোধ। তার কিছুক্ষনের মধ্যেই ৫৮ মিনিটে নাচোর দূরপাল্লার শটে অসাধারণ গোল স্পেনকে কাঙ্খিত লিড এনে দেয়। যদিও এই লিড বেশিক্ষন স্থায়ী হয়নি। কারণ ফুটবল ঈশ্বর হয়তো আজকের দিনটি রোনাল্ডোর নামেই লিখে রেখেছিলেন। ৬৭-৬৮ মিনিটের মাথায় পর্তুগাল কোচ দুটি স্ট্র্যাটেজিক পরিবর্তন আনেন। হলুদ কার্ড দেখা ব্রুনো ফার্নান্দেজ-এর জায়গায় জুয়াও মারিও এবং প্রথমার্ধের খেলায় সেরকম ছাপ রাখতে না পারা ইপিএল চ্যাম্পিয়ন ম্যাঞ্চেস্টার সিটির অন্যতম নির্ভরযোগ্য ফরোয়ার্ড বার্নার্দো সিলভার পরিবর্তে 'সুপার সাব' নামে খ্যাত রিকার্ডো কারেশেমা। এই দুই নির্ভরযোগ্য এবং অভিজ্ঞ পর্তুগিজ মিডফিল্ডার মাঠে নামতেই যেন খেলার গতির আংশিক পরিবর্তন ঘটে। এরপর পর্তুগাল দল মুহুর্মুহু আক্রমণ শানাতে শুরু করে রামোস-পিকে-আলবা-নাচো সমৃদ্ধ স্পেনের রক্ষণভাগে। যোগ্য সঙ্গ দেয় গুয়েদেসের পরিবর্তে প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে নামা এসি মিলানের তরুণ প্রতিভাবান স্ট্রাইকার আন্দ্রে সিলভাও (৭৯ মি)। স্পেন দলেরও তিনটি পরিবর্তন ঠিক এই সময়েই। ইনিয়েস্তার বদলী হিসেবে থিয়াগো, জোড়া গোলদাতা দিয়েগো কোস্তার পরিবর্তে আসপাস এবং ডেভিড সিলভার জায়গায় লুকাস ভাজকুয়েজ। খেলার শেষ ১০ মিনিট পর্তুগাল বিপক্ষের রক্ষণভাগের ওপর চাপ সৃষ্টি শুরু করলে ভুলবশত রোনাল্ডোকে ধাক্কা মেরে ফেলে দিয়ে স্পেনের জয়ের আশায় কার্যত জল ঢেলে দেন স্পেন রক্ষণের অন্যতম স্তম্ভ জেরার্ড পিকে। ডি গিয়াকে দাঁড় করিয়ে রেখে বিস্ময়কর ফ্রি-কিক থেকে গোল করে নিজের হ্যাটট্রিকের সাথে সাথে সমতা ফিরিয়ে দলেকে অবশ্যম্ভাবী পরাজয়ের মুখ থেকে উদ্ধার করে ক্যাপ্টেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো।
অমীমাংসিত ভাবে আজকের খেলা শেষ হলেও দারুন উপভোগ্য ফুটবল উপহার দিয়েছে দুই দলই। যদিও খেতাবের অন্যতম দাবিদার এই দুই দলের কাছেই রক্ষণ অত্যন্ত মাথা ব্যথার কারণ। স্পেন দলের কাছে সমস্যা বলতে এছাড়াও রয়েছে দিয়েগো কোস্তা বাদে বিকল্প স্ট্রাইকারের অভাব। মোরাতার অনুপস্থিতিতে যা স্পেন ম্যানেজার ফার্নান্দো হিয়েরোর কাছে নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয় হয়ে দেখা দেবে এই বিশ্বকাপে।
No comments:
Post a Comment