দস্যু রত্নাকরের পাপের
বোঝা বহন করতে তার পরিবারের সকলেই অসম্মত হ'লে রত্নাকরের বোধচক্ষু উন্মীলিত হ'ল ! যে লোভ ও
নৃশংসতার সমার্থক ছিলেন রত্নাকর, তা থেকে পরিত্রানের উপায়
খুঁজে পাবার তাগিদে, মূলত আত্মার পরিশুদ্ধির জন্য ধ্যানযোগের
মাধ্যমে অনন্ত ঐশ্বয' সন্ধানে ব্রতী হলেন। এইরূপে অনন্তকাল
অতিবাহিত হ'লে, বল্মীক স্তূপের
অভ্যন্তর থেকে মহর্ষি বাল্মীকির আবির্ভাব ঘটলো - যা ভারত ইতিহাসের এক গুরুত্ববাহী
অধ্যায়। কেননা, মহাপাপী হ'তে মহাজন -
এইরূপ রূপান্তর মানবসভ্যতার যে কোনো কালেই পরম কাম্য। এরপর, অরণ্য
অভ্যন্তরে ক্রৌঞ্চ মিথুনকালে, ব্যাধ দ্বারা নিক্ষিপ্ত
শরে-বিদ্ধ এক ক্রৌঞ্চের বিয়োগ ব্যথায় অতিশয় ক্রুদ্ধ মহর্ষি বাল্মীকির মুখ থেকে
নিঃসৃত হ'ল - " মাঃ নিষাদঃ..", এই ধ্বনি জন্ম দিলো মহাকাব্য রামায়নের।
.....যে মানুষটি
উঁচু বৃক্ষের একটি শাখায় আরোহন করে সেই শাখাটিকেই কাটছিলেন - তিনিই যে পরবর্তীকালে
কুমারসম্ভব এর রচয়িতা মহাকবি কালিদাস, একথা সকলেই জানেন।
স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন
জাগবে, কোন বিশেষ প্রজাতির ধান ভানতে এতক্ষন
ধরে শিবের গীত গাইবার এই প্রচেষ্টা ? সেই প্রসঙ্গে প্রবেশ
করা এখন সঙ্গত হবে...
.........আমদানি-রফতানি
প্রক্রিয়া সুপ্রাচীনকাল থেকেই মান্যতা পেয়ে এসেছে। প্রাচ্যের দেশগুলোর সাথে পারস্য
উপসাগর, লোহিত সাগরের আশেপাশের দেশগুলো আমদানি রফতানি করে
আসছে যুগ-যুগান্ত ধরে। মহাসাগরীয় জলপথের আবিষ্কারের ফলে পাশ্চাত্য দেশগুলোও
প্রাচ্যের সাথে বিনিময় করেছে অনেক কিছু। খাদ্য দেহকে পুষ্ট কোরে প্রাণীকূলকে
বাঁচিয়ে রাখে - তেমনি, মন পুষ্টিলাভ করে জ্ঞান আহরণ এবং
জ্ঞান আমদানি-রফতানির মধ্য দিয়ে।
............একদিকে
বাল্মীকি, ব্যাসদেব , কালিদাস, ভবভূতি,চন্ডীদাস, লালন সাঁই,
রবীন্দ্রনাথ - প্রমুখ দেশীয় জ্ঞানতপস্বী; অন্যদিকে
বিজাতীয় প্লেটো, সক্রেটিস, ভলত্যের,
রুশো, রাসেল, রম্যাঁ
রলাঁ, কাফ্কা, কাম্যু, সার্ত্র ,ব্যোভেয়ার -- এরা প্রকৃতই মানবসমাজের চিন্তন
প্রক্রিয়ার মুক্তিদাতা। এদেরকেই প্রকৃত বুদ্ধিজীবী জ্ঞানে বহুমূল্য স্বীকৃতির
মুকুট পড়িয়েছেন যুগ যুগান্তরের অগুনতি সাধারন মানুষ।
কবি ঈশ্বর গুপ্ত
লিখেছিলেন, "এত ভঙ্গ বঙ্গদেশ / তবু রঙ্গে
ভরা " ....বিগত কয়েক দশকে এমনকি অদ্যাবধি, প্রিয়
বঙ্গদেশের সিংহভাগ বুদ্ধিজীবী উক্ত কবির "রঙ্গ" সংক্রান্ত বক্তব্যের
যথার্থতার স্বীকৃতি সম্বলিত শিলমোহরের ছাপ নিজ নিজ কপালে অমোচনীয় কালির দ্বারা
রাঙিয়ে নিয়েছেন ! ভুবনডাঙার সব স্থানেই তারা স্বার্থকেন্দ্রীক পরমার্থ লাভের জন্য
জমি কর্ষণ কোরে, উত্তম ফলপ্রদায়ী শস্যবীজ বুনতে আগ্রহী! বস্তুত, এই সম্প্রদায়ের অধিকাংশই, আদিম গুহাবাসী মানুষের মতো কিছুটা ঝুঁকে চলেন। সম্ভবত শিরদাঁড়ায় অস্থিভঙ্গ
জনিত পীড়া, নয়তো অস্থিসংস্থানের বিকলনের কারনে..!!
দূরদ্রষ্টা মহর্ষি
বাল্মীকি সেই ত্রেতাযুগে-ই সিংহভাগ বুদ্ধিজীবীর আদর্শ চরিত্র হিসাবে হয়তো
কুঁজযুক্তা মন্থরা চরিত্রটিকে রামায়নে উত্থাপিত করেছিলেন।
আমাদের স্মরণে আছে যে -
মন্থরাকে শেষপর্যন্ত সাধারন মানুষের কাছ থেকে অপরিসীম নিগ্রহ সহ্য করে অযোধ্যা
থেকে বিতাড়িত হতে হয়েছিল..!
"সাধু" বুদ্ধিজীবীরা আমাদের মনের মণিকোঠা থেকে
বিতাড়িত হচ্ছেন না তো ? কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে পাচ্ছেন
কি..?
No comments:
Post a Comment