কনসেপ্ট - Debashree Ray
সকাল ঠিক সাত টা বাজলেই বেজে ওঠে ঘড়ি টা কর্কশ
স্বরে, আজও তার অন্যথা হলো না,রোজকার মতন আজকেও ঘুম ভাঙলো না আমার,
-রাতুল ওঠ বাবা, রোজ এভাবে কলেজ দেরি করে গেলে
চলবে বল? ওঠ না।
-প্লিজ মা একটু ঘুমাই, একটু আসোনা তোমার কোলে মাথা
রেখে শুয়ে থাকি, ও মা।
-ওঠ রাতুল, তোকে ব্রেকফাস্ট দিয়ে আমিও যাবো
ইলেক্ট্রিসিটি বিল টা দিতে, ওঠ সোনা।
-না তোমায় যেতে হবে না, আমি দিয়ে দেবো কলেজে
যাওয়ার সময়, একটু ঘুমিয়ে নি আর...
আমার মাথার কাছে বসে আমার মাথায় কিছুক্ষণ হাত
বুলিয়ে রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যেতে চায় মা, আবার আঁচল টেনে ধরি আমি,
-আরেকটু বসো না মা।
হেসে মা বলে উঠলো, "পুরো বাবার মতন হয়েছিস
তুই।"
ব্যস মুড টা চটকে গেলো সকাল সকাল এই কথাটা শুনে,
খাট থেকে নেমে বললাম,
-লোকটার কথা না বললে হচ্ছিলো না, না মা? দিনে
একবার নিতেই হবে ওঁর নাম, কি তাই তো?
-তোর বাবা হয় রাতুল, ভুলিস না।
-সেই, ঐ যে আমাদের বাড়ির সামনে যে ভুলু, যে
কুকুরটাকে রোজ ভাত দিয়ে আসো মা, বাবা কিন্তু ওরও আছে, আমারও সেরকমই খানিকটা, বাবা
আছে তো জানি, নাহলে এলাম কি করে পৃথিবীতে।
-খুব অসভ্যের মতন কথা বলিস আজকাল, একটুও বড় ছোট
কিছুই জ্ঞান করিস না...
-সেই, ঠিক বলেছো মা, স্কুলে আমার জায়গায় যদি পড়তে,
আমার বেঞ্চে যদি বসতে, পিছনের থেকে যদি ফিসফিসিয়ে বলা কথা কানে আসতো, "যে ওর
বাবা ওকে ছেড়ে পালিয়ে গেছে।" তাহলে দেখতে মা তুমিও রোজ টিফিন টাইমে লুকিয়ে
কাঁদতে, সেই কান্না দেখেও লোকে হাসতো, বলতো "রাতুলের একটা বাবা খুঁজে দিতে
হবে, চল পেপারে....
এই কথাটা বলার সাথে সাথেই মায়ের হাতটা আমার গালে
পড়লো, আমিও রেডি হয়ে ব্রেকফাস্ট না করেই, বেরিয়ে পড়লাম ঘর থেকে,
আমি রাতুল মুখার্জী, দিব্যেন্দু সিনহা আর মিতালী
মুখার্জীর এক ছেলে। আমার মায়ের গল্পটা বলেনি আপনাদের আগে, তারপরে আমারটা না হয়
বলবো,
সারা কলেজ দিব্যেন্দু সিনহার ফ্যান, ক্লাস টপার,
গিটারে পাগল করে তোলা সুর, ক্রিকেটে ফার্স্ট ডাউন কলেজ টিমের। আর সবচেয়ে শান্ত
স্বভাবের, ভীতু মেয়েটা ছিলো মিতালী মুখার্জী, কলেজের হিরো কিভাবে যেনো সব রূপসী
ছেড়ে প্রেমে পড়লো চুপচাপ থাকা মেয়েটার, বুঝতো মিতালীও, মুখ ফুটে কেউই কাউকে কিছু
বলেনি তখনও।
কলেজ ফেস্ট, দিব্যেন্দুকে কোথাও দেখতে না পেয়ে
রিহার্সাল রুমের দিকে যায় মিতালী, গিটারে তখন জি মেজর আর দিব্যেন্দু কে ঘিরে
রেখেছে ফার্স্ট ইয়ার থেকে থার্ড ইয়ারের সব ছেলে মেয়েরা, দিব্যেন্দুর ঠিক পাশে বসে
মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে গান শুনছে কৌশাণি সেন, যাকে দেখলে জিভ বেরিয়ে আসে কলেজের সব
ছেলেদের লোভে। মিতালীর খুব রাগ ওঠে হয়তো একটু হিংসেও হয় ওভাবে দেখে দুজনকে,
"বাঃ, লীলা চলছে কৃষ্ণের, থাক ও, আমি হস্টেলে যাই, এগুলো জাস্ট নিতে পারিনা
এখন, প্রেম হলো তো হলো এমন একজনের সাথে..."
বলেই হেঁটে বেরিয়ে যায় লম্বা করিডর টা ক্রস করে ক্যান্টিনের দিকে, দুতিনবার পিছনে ফিরেও তাকায়,
"আসছে না তো?"
একটু এগিয়ে গিয়ে ক্যান্টিনের সামনের বেঞ্চটাতে
গিয়ে বসে মিতালী, কী ভাবতে থাকে চুপচাপ শুধু ঐ জানে, হঠাৎ পাশের থেকে একটা আওয়াজ,
-সবার সামনে কথা বলতে লজ্জা পাও কেনো?
-বাবা, তুমি? কৌশাণি ছাড়লো?
-যতক্ষন না ভাবি নিজের থেকে ধরা দেবো কেউ ধরতে
পারবেনা। তাই এলাম ধরা দিতে, বেঁধে নিও শক্ত করে, যাতে পালাতে না পারি।
-এই কথাগুলো আমার আগে কতজন মেয়েকে বলেছো?
-অনেককে, নিজের লেখাও না লাইনটা, কিন্তু মন থেকে এই
প্রথম বললাম, কারণ কি জানো?
-কি?
-তোমার চোখ দুটো, নিজেকে দেখতে পাই আমি..
-মানে পুরো বাংলা সিনেমা না?
-বেশ, তাহলে যাই কৌশাণির কাছেই, বল তাড়াতাড়ি..
-পা ভেঙে রেখে দেবো, আমায় ছেড়ে দিয়ে আসো, চলো।
-তাহলে বলতে ভয় পাও কেনো? কেনো একবার বলো না যে
আমাকে ভালোবাসো তুমি?
-সব কথা বলতেই হবে, বোঝো না আমাকে দেখে।
-না বললে তো হবে না, যখন বলবে সেই মুহূর্ত থেকে
শুধু তোমার, আর কোথাও দেখতে পাবেনা আমাকে, কেউ পাশে বসলেও বলবো, "একটা সিট
ছেড়ে বস, মিতালী বসবে এটায়।"
-হয়েছে, এবার যাওয়া যাক।
মিতালী কিন্তু মনে জোর এনে, বলেছিলো, "খুব
ভালোবাসি, ছেড়ে যাবে না তো?"
দিব্যেন্দুও জড়িয়ে ধরে বলেছিলো, "কোনোদিন
না।"
মানুষ আর গিরগিটির মধ্যে একটাই পার্থক্য, আমরা
জানি "যে সব গিরগিটি রঙ বদলায়" ব্যস এইটুকু।
এবার একটু আমার কথা বলি, মায়ের গল্পটায় আসছি একটু
পরে আবার,
ছোট থেকে প্রেম কে ঘেন্না করি, কোনো কাপলকে দেখলে
মনে হতো, "শালা নাটক যত্তসব।" কিন্তু বলে না আমাদের গল্পটা আমরা শুধু
পড়ি বা দেখি, লেখে অন্য কেউ। কলেজে আমার সাথে আলাপ হয় শ্রীতমার, আমার শ্রীর, ঠিক
আমার উল্টো, খালি ঘুমানোর সময়টুকু ছাড়া বাকি সারাক্ষন বকবক, সে কান ঝালাপালা করে
দেবে, ক্লাসে যত চুপ করে বসে থাকতে চাইতাম তত যেচে যেচে এত কথা বলতো যে বাধ্য হয়ে
উত্তর দিতে হতো, একটা টাইমে দেখলাম ওটা আমার স্বভাব হয়ে গেলো, শুনতে চাইতাম ওর
গলার আওয়াজ, লুকিয়ে দেখতে চাইতাম ওকে, সারা কলেজ চেনে একনামে ওকে, তেমনই ভালো নাচে
আমার শ্রী, যখন বুঝতে পারতাম ওর দিকে দূর্বল হয়ে পড়ছি, নিজেকে মায়ের মতন লাগতো।
মনে হতো আমারও যদি.... কিন্তু কি করবো সেটাই ভেবে পেতাম না, ভাবলাম কথা বলা বন্ধ
করে দিয়ে দেখি, ভুলে থাকার চেষ্টা করি, ভাবলেই হয় নাকি?
-রাতুল শোন?
-কি?
-কথা বলছিস না কেনো? কি করেছি আমি?
-কথা বলবো না কেন? কিন্তু এটাও তো ঠিক কলেজটাতে
পড়তে আসি, আড্ডা দিতে নয়।
-কৌশিক সেনের গ্রূপে নাটক করিস নাকি?
-মানে?
-নাটক টা বন্ধ কর। আমার সাথে কথা বললে প্রেমে পড়ে
যাবি আমার, সেটাই ভয় পাস তাই তো?
-না, বোকা বোকা কথা বলিস না শ্রী।
-কে?
-সরি শ্রীতমা, সেরকম কিছুই নয়।
-মিথ্যে বলিস না, আমি নিজেকে দেখতে পাই তোর চোখে,
মেয়ে তো এইটুকু বুঝি, আর আমাকে দেখেছিস আর কারুর সাথে গিয়ে খেজুড়ে আলাপ করতে?
বাচাল আমি জানি, কিন্তু সবার সাথে না কিন্তু রাতুল।
-বুঝলাম।
-গুড। প্রপোজ কর। ফাস্ট।
-যাঃ শালা, মানে টা কি?
-আই লাভ ইউ বল, হ্যাঁ বলবো ভয় পাস না।
-আরে এরকম করে হয় নাকি? মানে বলা নেই কওয়া নেই..
-তাড়াতাড়ি বল, কালকে কাকু কাকিমার সাথে দেখা করতে
যাবো, বিয়ের কথা বলে আসবো, কোথায় রাখবি সেই জায়গাটাও দেখে আসতে হবে তো।
দিব্যেন্দু কে সকাল থেকে ফোন করে পাচ্ছে না
মিতালী, বারবার সুইচড অফ বলছে, বিকেল নাগাদ দিব্যেন্দু নিজেই ফোন করলো,
-সোনাই বলো, কি হয়েছে?
-মাথা কাজ করছে না, এটা হবে ভাবিনি, তুমি কোথায়?
-কি হয়েছে বলবে তো?
-আমি প্রেগনেন্ট, শুনছো আমি প্রেগনেন্ট।
-সত্যিই? আমি খুব খুশি সোনাই, তুমি এইটা নিয়ে
ভাবছো? বোকা মেয়ে,এমনিই তো বিয়ে করতাম, নাহয় একটু আগেই হবে, বাবা-মা সব জানে, তুমি
কোনো চিন্তা করবেনা, আর এরকম অবস্থায় তো একদমই না, তুমি কিচ্ছু চিন্তা করোনা আমি
আছি তো নাকি?
-সত্যিই বলছো? আমরা বিয়ে করে নেবো তো? নাহলে মা
বাবাকে...
-আবার চিন্তা, বলছি তো, আমি আসছি দাঁড়াও।
বারান্দায় চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো মিতালী, পিছনের
থেকে এসে জড়িয়ে ধরে দিব্যেন্দু, নিজের দিকে ঘুরিয়ে পেটে কান দিয়ে বলে, "ছেলে
হবে দেখে নিও, রাতুল নাম রাখবো কেমন? রাতুল সিনহা। ক্রিকেট খেলবে আমার মতন, কিন্তু
ওপেন করবে, দেখে নিও।"
খুশিতে জড়িয়ে ধরে মিতালী দিব্যেন্দুকে,
-সোনাই একটা কথা বলি, এই অবস্থায় আর যাই করো বাজে
চিন্তা করোনা, এতে আমাদের সন্তানের ক্ষতি হবে, সেটা ঠিক নয়। একটা মাস নিজেকে সামলে
রাখো। ঠিক একটা মাস..
-মানে?
-বাবার ব্যবসার একটা কাজে কুয়েত যাচ্ছি, একমাসের
জন্যে, ফিরে এসেই বিয়ে করবো, বাবা মা সব জানে।
-এক মাস?
-হ্যাঁ, তোমার বাড়ির লোকেদের সাথে কালকে আমরা কথা
বলে যাবো, চিন্তা করোনা।
দিব্যেন্দুর বাবা মা এসে কথা বলে গেছিলো, ঠিকঠাক
হলো সব, এবং সেই দিনটার পর থেকে আর কোনোদিন তাদের কোনো খোঁজ পাওয়া যায়নি, আমিও বড়
হতে থাকি মায়ের পেটে, মা কাঁদতো বুঝতাম, আমাকে তাও কোনোদিন কোনো কষ্ট দেয়নি, পরে
উড়ো খবর পাওয়া যায় ওরা আদৌ কুয়েত যায়নি, ক্যানাডায় আছে ফুল ফ্যামিলি।
এইসব কিছুই শ্রীকে জানাই,শ্রী সব জানার পরে
কেঁদেছিল বেশ কিছুক্ষণ, মায়ের সাথে সেদিনকেই দেখা করতেও এসেছিলো, মা কে দেখেই
জড়িয়ে ধরে বলেছিলো,
-মা, রাতুল কে বিয়ে করতে চাই, তুমি রাজি থাকলে।
৫ই অগাস্ট আমার জন্মদিনের দিন ফোন করে শ্রী,
-হ্যাপি বার্থডে, লাভ ইউ লাভ ইউ লাভ ইউ লাভ ইউ,
সারাজীবন আমার হয়ে থাকিস যেনো, এই কামনা করি।
-বাঃ, জন্মদিন আমার, তাও নিজের জন্যেই চেয়ে নিলি,
ভালো তো বেশ।
-কালকে আসবো, শাড়ি পরে আসি?
-মা তো এমনিই ইম্প্রেসড, আবার এসব কেনো?
-না বলবি, কাল বৌমা রান্না করবে সব।
যেমন বলা তেমন কাজ, আজকে ঘড়িও বাজলো না, ঘুম ভাঙলো
যখন দেখলাম শ্রী আর মা রান্নাঘরে, শাড়ি পরে রান্না করছে আমার গিন্নী, আমায় দেখেই
মা বলে উঠলো,
-কেমন লাগছে শ্রী কে বললি না তো?
-ভালো লাগছে, শাড়িতে সব বাঙালি মেয়েদেরই ভালো
লাগে, এটা আবার এমন কি?
শ্রী বলে উঠলো, "মা ওকে এসব জিজ্ঞেস করোনা,
ট্যারা ট্যারা কথাই বলবে, ছাড়ো।"
মা বলে উঠলো, "খুব মিষ্টি লাগছিস শ্রী,
রাতুলের ভাগ্য তোর মতন একটা মেয়ে পেয়েছে ও।"
দুপুরে খেতে বসলাম, জমিয়ে খেলাম, পোলাও, মটন,
চাটনি, মিস্টি, পায়েস আমায় খেতে দেখে মা বললো,
"পুরো ওর বাবার মতন খেতে ভালোবাসে।"
-মা, বাবার মতন না আমি, বাবার মতন না, তোমার মতন।
এটা বলতে পারোনা কেন? বোঝো না যে আমি তোমার মতন।
শ্রী হাতটা চেপে ধরে থামতে বলে, আমিও চুপ করে যাই।
বিকেল নাগাদ শ্রীকে ওলা তে তুলে দেখলাম, মায়ের
চোখে জল, খুশির জল যে সেটা সেটুকু বুঝতে পারি, আমার দিকে তাকিয়ে বললো,
-যাক বাবা, আমার ছুটি।
পরেরদিন সকালে মায়ের আগেই উঠে পড়লাম, লাস্ট ইয়ার
টা ভালো করে পড়েই একটা চাকরি করতে হবে, বিয়ে করবো, অনেক চাপ লাইফে শুরু হবে, কোমর
বেঁধে নামতে হবে, মা কে ডাকতে গেলাম চা করে দিতে বলবো, অনেক ডাকলাম কিছুতেই উঠলো
না, চুপ করে শুয়ে থাকলো, প্রথম আমার ডাকে মিতালী মুখার্জী সারা দিলো না, এত বছর
একা আমার দায়িত্ব নিয়ে আগলে রেখে ক্লান্ত হয়ে গেছে মহিলাটা আজকে হয়তো নিজের কলেজে
যাবে, বাবা গিটারে গান গাইছে দেখতে পাচ্ছে, পাশে প্রচুর মেয়ে, এবার মা কাউকে
তোয়াক্কা না করেই এগিয়ে গিয়ে হাত ধরে বাবাকে টেনে নিয়ে যাবে ক্যান্টিনের দিকে,
পুরোনো বেঞ্চ টাতে বসে রেগে বাবার দিকে তাকিয়ে বলবে,
-কথা দিয়ে কথা রাখলে না কেনো? একা একা মানুষ করা
কত কষ্টের জানো না।
-সরি সোনাই, বাবা চায়নি,অনেক বুঝিয়েও পারিনি
বোঝাতে আমিও কি করবো বুঝতে না পেরে, আমিও ভয়ে পালাই।
-এরকম আমায় একা ফেলে, খোঁজ নিলে না একবারও বাঁচলাম
কি মারলাম।
-ভুল করেছি, বিয়ে করার তিন বছরের মাথায় ক্যানসার
ধরা পরে, আর তার পরের বছরই..তখন খুব ভেবেছিলাম..
-নিজেও তো কাটালে এত বছর একা একা এই অচেনা জায়গায়,
ভালো লাগলো।
-পারলে ক্ষমা করো।
-এই নাও এই সিঁদুর টা পরিয়ে দাও, কিছুটা দিন তোমার
সাথে সংসার করি?
হয়তো বাবা আজকে মা কে পরিয়েছে সিঁদুর, মা হয়তো
তখনও বলছে,
"রাতুল টা পুরো তোমার মতন হয়েছে জানো, কিন্তু
ভীতু না, পালিয়ে যাবে না, সেই জিনিসটা আমার পেয়েছে, দেখো কোনোদিন শ্রীকে ছেড়ে
পালাবে না।"
মা আমি বাবার মতন না মা, আমি তোমার মতন, পুরো
তোমার মতন।
No comments:
Post a Comment