- দেবরাজ ঘোষাল
#SAYNOTORACISM
গত কয়েকটা সপ্তাহ আমাকে কিছুটা থমকে দাঁড়ানোর এবং গত কয়েকমাস ধরে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলোর বিষয়ে ভাবনার সুযোগ দিলো।সেই ব্যাপারেই আমি আমার ভাবনা ও চিন্তাগুলো সকলের সাথে শেয়ার করতে চাই।
অনেকের মতোই,আমার পূর্বপুরুষেরা এক দেশ থেকে অন্য দেশে এসেছেন।আমি জার্মানিতে বড় হলেও,আমার পুর্বপুরুষের আদি বাসস্থান তুরস্কের প্রতি আমার স্বাভাবিক টান ছিলোই।আমার দুটো হৃদয়, একটা জার্মানি অন্যটা তুরস্ক।আমার শৈশবে আমার মা শিখিয়েছিলেন জীবনে কখনো নিজের অতীতকে ভুলে না যেতে ও তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে যার মুল্য আমার কাছে আজকের দিনেও অনেক।
মে মাসে লন্ডনে একটি চ্যারিটেবল ও শিক্ষা মুলক অনুষ্ঠানে আমি প্রেসিডেন্ট এর্দোগানের সাথে আলাপ করি।২০১০ সালে আমাদের প্রথম আলাপ হয় যখন তিনি ও অ্যাঞ্জেলা মর্কেল বার্লিনে একসাথে জার্মানি বনাম তুরস্ক ম্যাচ দেখতে আসেন।তখন থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তেই আমাদের কাছাকাছি আসার সুযোগ হয়েছে।আমি জানতাম আমাদের তোলা ছবি জার্মান মিডিয়ার কাছে মুখরোচক হবে,কিছু লোক আমাকে মিথ্যুক বলে বিদ্রুপ করবে,কিন্তু আমি জানতাম কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমরা ছবি তুলিনি কারন আমি প্রথমেই বলেছি আমার মা সবসময় আমার পরিবারের ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সম্পর্কে সবসময় শ্রদ্ধাশীল থাকতে শিখিয়েছেন।প্রেসিডেন্ট এর্দোগানের সাথে ছবি তোলা মানে সেটা রাজনীতি বা নির্বাচনের জন্য নয়,এটা আমার পূর্বপুরুষের মাটির সর্বোচ্চ আসনকে সম্মান জানানো।আমি একজন ফুটবলার, রাজনীতিবিদ নই।যতোবারই দেখা হয়েছে আমরা একটা বিষয় নিয়েই কথা বলেছি-ফুটবল,কারন উনিও একটা সময় চুটিয়ে ফুটবল খেলেছেন।
জার্মান মিডিয়া পুরো ব্যাপারটাই অন্যভাবে তুলে ধরলো।আমার কাছে কে প্রেসিডেন্ট সেটা তাৎপর্যপূর্ণ নয়,তিনি একজন প্রেসিডেন্ট সেটাই আসল।একটি সংসদীয় গনতন্ত্রের প্রতি শ্রদ্ধাতেই আমি সেটাই করেছি যা রানী ও প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে লন্ডনে এর্দোগানকে সেই প্রথম আলাপের দিনে করেছিলেন।সেখানে তুরস্ক হোক বা জার্মান প্রেসিডেন্ট আমার আচরন একরকমই থাকতো।
কোনো রাজনৈতিক নেতার আলাদা কোনো ব্যক্তিস্বত্বা থাকেনা এটা আমি প্রথম জানলাম।সেই নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর আগে বা পরেও আমি সেই ছবি তুলতাম।আমি জানি আমি এমন একজন ফুটবলার যে বিশ্বের তিনটে কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ লিগে খেলেছে,সৌভাগ্যবান যে বুন্দেসলিগা, লা লিগা আর প্রিমিয়ার লিগে খেলার সময় সতীর্থ ও কোচিং স্টাফদের প্রচুর সাহায্য পেয়েছে।এর পাশাপাশিই এসবের মধ্যেই আমি মিডিয়াকে সামলাতেও শিখেছি।
আমার পারফরম্যান্স নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে-কেউ প্রশংসা করছে কেউ বা সমালোচনা করছে।যদি কোনো সংবাদপত্র বা ফুটবল পন্ডিত আমার খেলা নিয়ে বলেন আমি মেনে নিতে রাজি কারন "আমি একজন পারফেক্ট ফুটবলার নই '-এটাই আমায় বাড়তি পরিশ্রম করতে ও ভালো খেলতে সাহায্য করে।কিন্তু আমার পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির প্রতি ভালোবাসার জন্য ও একটা সামান্য ছবি তোলার জন্য যদি বিশ্বকাপে ব্যর্থতার দায় আমাকে নিতে হয় তা মানতে আমি রাজি নই।কিছু সংবাদপত্র আমার পারিবারিক অতীত ও প্রেসিডেন্ট
এর্দোগানের সাথে ছবিকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ক্রমাগত ব্যবহার করে চলেছে।কেন তাঁরা আমার নাম ও সেই ছবি জড়িয়ে রাশিয়ায় টিমের ব্যর্থতার দায় আমার উপর চাপাতে চাইছে??
তারা আমার খেলার সমালোচনা করছেনা,তারা টিমের খেলা নিয়ে বলছেনা,তাদের আক্রমনের লক্ষ্য শুধু আমার তুরস্কের অতীত ও আমার বেড়ে ওঠা নিয়ে।একজন মানুষকে ব্যক্তি আক্রমনের সমস্ত সীমা অতিক্রম করে গোটা জার্মানিকে আমার বিরুদ্ধে দাঁড় করানোর চেষ্টা করছে এরা।আমি আরো হতাশ এদের দু-মুখো নীতি নিয়ে।লোথার ম্যাথিউস কদিন আগেই একজন বিশ্বের প্রভাবশালী ও বিতর্কিত রাজনৈতিক নেতার সাথে দেখা করলেও তা নিয়ে মিডিয়ার কোনো লেখালেখি নেই,সমালোচনা নেই।জাতীয় দলের সাথে জড়িত থাকা সত্বেও তাকে এই নিয়ে কোনো জবাবদিহি করতে হয়নি একবারও।আমার তুরস্ক-অতীত কি আমায় তাই অনেক বেশি আক্রমণের লক্ষ্য করে তুলেছে??
আমি সবসময় ভাবি একটা যুগলবন্দীর সবসময় একে অপরকে সাহায্যের প্রয়োজন হয়,যেমন ভালো সময়ে তেমনি খারাপ সময়ে।সম্প্রতি আমি গেলসেনকির্চেনে আমার পুরনো স্কুলের মাঠে আমার দুই চ্যারিটেবল সঙ্গীদের নিয়ে যাওয়ার কথা ভেবেছিলামIএক বছরের প্রজেক্টের কথা ভেবেছিলাম যেখানে দরিদ্র শিশুরা,অনুপ্রবেশকারী পরিবারগুলোর শিশুরা একসাথে ফুটবল শিখবে,সামাজিক নিয়মশৃঙ্খলা জানবে।আশ্চর্যজনকভাবে ঠিক ওখানে যাওয়ার আগের দিনই আমার দুই সঙ্গী আমার সাথে দীর্ঘদিনের সম্পর্ক-ছেদ করে ভবিষ্যতে আর একসাথে কাজ করতে চায়না জানিয়ে দেয়।এর পাশাপাশিই আমার নিজের স্কুল আমায় চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেয় তারা চায়না স্কুলের কোনো কর্মকান্ডে জড়িয়ে থাকি কারন আমার সাথে প্রেসিডেন্ট এর্দোগানের সেই ছবির কারনে হঠাৎ করেই কিছু ডান-পন্থী আন্দোলনের সুত্রপাত শুরু হয়ে যায় সেখানে।যে স্কুলের ছাত্র ছিলাম,সেখানে আমি অপ্রয়োজনীয় ও মুল্যহীন ভেবে সেদিন খুব খারাপ লেগেছিলো।
এর পাশাপাশি আমার অন্য এক স্পনসরের সাথে পূর্ব-চুক্তি অনুসারে বিশ্বকাপের জন্য কিছু প্রোমোশোনাল ভিডিওতে কাজ করার কথা ছিলো, কারন তারা জার্মানি জাতীয় দলেরও স্পনসর ছিলো।হঠাৎ করে সেই ইভেন্ট ও সমস্ত আগামী প্রজেক্ট থেকে আমাকে রাতারাতি বাতিল করে দেওয়া হয় তাদের তরফে ।এসব কিছুই সাজানো কারন জার্মান মন্ত্রক সেই স্পনসরের প্রোডাক্টকে ততদিনে অবৈধ বলে ঘোষনা করেছে।হাজার হাজার মানুষ তাদের পন্য ফেরত পাঠাচ্ছেন।যেখানে একটা ছবি তোলার জন্য আমি ততদিনে ফেডারেশনের কাছে জবাবদিহি করতে বাধ্য তখন সেই স্পনসরকে নিয়ে ফেডারেশনের কোনো বিবৃতি নেই কেনো??তার মানে কি এটাই আমার পরিবারের পূর্বতন ভিটের প্রেসিডেন্টের সাথে ছবি তোলার দায়েই আমাকে এসব সহ্য করতে হচ্ছে??।যেমনটা আগে বলেছিলাম পার্টনারদের সবসময়ে পাশে থাকতে হয়,সেভাবেই অ্যাডিডাস,বিটস আর বিগ শু এই সময়টা আমার প্রতি চুড়ান্ত দায়বদ্ধ ছিলো।জার্মান মিডিয়া ও সংবাদপত্রের সব অবাস্তব কাহিনীকে দুরে সরিয়ে তারা আমার সাথে নিজেদের সমস্ত কাজকর্ম চালিয়ে যায় যা আমি খুবই উপভোগ করি।বিশ্বকাপের সময় আমি বিগ শু-র সাথে কাজ করে ২৩টি বাচ্চার জীবন-নির্ধারক অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করি,যা আগেও ব্রাজিল আর আফ্রিকায় করেছি।ফুটবলার হিসেবে এই কাজগুলো আমার কাছে ভীষন গুরুত্বপূর্ণ মনে হলেও এক্ষেত্রে অবশ্য সংবাদপত্র এই ব্যাপারে কোন সচেতনতা প্রচারে আগ্রহ দেখায়নি।
হয়তো তাদের কাছে শিশুদের চিকিৎসার খবর ছাপার থেকে প্রেসিডেন্টের সাথে ছবি তোলার বিষয়টাই বেশী প্রাধান্য পেয়েছে।তাদের এই বিষয়ে সচেতনতা ও ফান্ড গড়ে তোলার যথেষ্ট সুযোগ ছিলো, কিন্তূ করেনি।
শেষ কয়েকমাস ধরে ফেডারেশনের আমার প্রতি দুর্ব্যবহার করাটাও ভীষন হতাশ করেছে,বিশেষ করে প্রেসিডেন্ট রেইনাড গ্রাইন্ডেলের আচরন।এর্দোগানের সাথে সেই ছবির পরেই কোচ জোয়াকিম লো ছুটি বাতিল করে আমাকে বার্লিন ফিরে এসে এইবিষয়ে বিবৃতি দিয়ে বিষয়টার মীমাংসা করে নিতে বলেন।ফিরে এসে গ্রাইন্ডেলকে যখন আমি ছবি তোলার কারন ও আমার পারিবারিক ঐতিহ্য সম্পর্কে ব্যাখা দিতে যাই উনি সেটা না শুনে নিজের রাজনৈতিক চিন্তাধারা বলে আমার যুক্তিকে খন্ডন করে যাওয়ার চেষ্টা করে যান অনবরত।সবশেষে দুজনেই আমরা এই সিদ্ধান্তে মনোনীত হই যে আমার আগামী বিশ্বকাপের দিকেই মনোযোগ দেওয়া উচিত।সেইকারনেই আমি বিশ্বকাপের প্রস্তুতির সময় জার্মান মিডিয়াকে এড়িয়ে চলি কারন জানি সাংবাদিকরা ফুটবলের চাইতে রাজনৈতিক বিষয় নিয়েই বেশি আলোচনা করবে আমাকে আক্রমনের উদ্দেশ্যে।পরে অলিভার বিয়েরহফ লেভারকুশেনে সৌদি আরবের বিরুদ্ধে ম্যাচের আগেই একটি টিভি ইন্টারভিউতে বিষয়টি নিয়ে বিবৃতি দিয়ে তখনকার মতো এর সমাপ্তি করে দেন।
এইসময়েই আমার জার্মান প্রেসিডেন্ট ফ্রাঙ্ক-ওয়াল্টার স্টেইনমায়ারের সাথে দেখা করার সুযোগ হয়।তিনি গ্রিন্ডেলের মতো না ভেবে আমার মত,পরিবার ও ঐতিহ্য নিয়ে শুনতেই বেশি আগ্রহী ছিলেনIমনে পড়ে সেই মিটিংয়ে প্রেসিডেন্ট, আমি ও গুন্ডোগান ছাড়া আর কারো প্রবেশাধিকার ছিলোনা।এই ঘটনায় গ্রাইন্ডেল নিজের মতামত রাখতে না পারায় একটু মনক্ষুন্ন হয়।আমি প্রেসিডেন্টের সাথে একমত হয়ে এই ব্যাপারে একটি যৌথ বিবৃতি দিতে রাজি হয়ে যাই যাতে আমরা শুধু ফুটবল নিয়ে সামনের দিকে এগোতে পারি I কিন্তু গ্রাইন্ডেলের এই ব্যাপারটা ভালো লাগেনি কারন প্রেসিডেন্টের অফিস এই ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করেছিলো।
বিশ্বকাপ শেষ হওয়ার পরেই গ্রাইন্ডেল বিশ্বকাপের শুরুতে তার নেওয়া সিদ্ধান্তের জন্য চাপে পড়ে যায়।তার পরেই শুরু হয় আমায় ভিলেন বানানোর খেলা।আমি আর ওর অযোগ্যতা ও কাজের প্রতি দায়বদ্ধতার অভাবের জন্য বলির পাঁঠা হতে চাইনা।লো না চাইলে ও পুরোপুরি বন্দোবস্ত করে ফেলেছিলো আমাকে রাশিয়ার টিম থেকে বাদ দেওয়ারIগ্রাইন্ডেল ও তার সমর্থকদের মতে টিম জিতলে আমি জার্মান, হারলে একজন অনুপ্রবেশকারী।জার্মানির হয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপ জেতার পর,জার্মানির বিভিন্ন স্কুলে অগুনতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়া,দেশের একজন অধিবাসী হিসেবে প্রয়োজনীয় সমস্ত কর মেটানোর পরও আমি সমাজে এখনও সর্বজনগ্রাহ্য হতে পারলামনা, আলাদা হয়েই রইলাম।২০১০ সালে জার্মানির সামাজিক দায়বদ্ধতার জন্য "বাম্বি খেতাব',২০১৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ ক্রীড়া সম্মান গুলোর একটা "Silver Laurel leaf' অর্জন করি।২০১৫ সালে জার্মানির ফুটবল অ্যাম্বাসেডর নির্বাচিত হইIতাও আমি জার্মান নই!!আমার বন্ধু পোডোলস্কি ও ক্লোজেকে তো কোনোদিন জার্মান-পোলিশ বলে অভিহিত করা হয়না,তাহলে শুধু আমাকেই জার্মান-টার্কিশ বলা কেন??কারন এটা তুরস্ক বলে??কারন আমি মুসলিম বলে??আমার মনে হয়না এটার পিছনে কোনো কারন আছে।আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা সব জার্মানিতে, তবুও কেন আমাকে জার্মান বলে মেনে নিতে মানুষের আপত্তি??
গ্রাইন্ডেলের মতামতও হয়তো পাওয়া যাবে কোথাও।জার্মান রাজনীতিবিদ বার্নার্ড হোলজহাওয়ার আমাকে শূকরের সন্তান বলে অভিহিত করেছেন প্রেসিডেন্ট এর্দোগানের সাথে ছবি তোলার জন্য।জার্মান থিয়েটারের প্রধান ওয়ার্নার স্টিয়ার আমায় অনুপ্রবেশকারী অধ্যুষিত তুরস্কের অ্যানাতোলিয়ায় মুত্র বিসর্জন করতে বলেছেন।আমার বংশের অতীতের জন্য যদি কেউ যদি আমায় সমালোচনা ও গালিগালাজ করে নৈতিকতার সীমারেখা পেরিয়ে যায়,বর্নবৈষম্যকে কেউ যদি নিজের রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করার জন্য ব্যবহার করে তাদের অবিলম্বে নিজেদের পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়া উচিত।প্রেসিডেন্ট এর্দোগানের সাথে তোলা ওই ছবিটা ব্যবহার করে তারা নিজেদের লুকিয়ে রাখা বর্নবিদ্বেষী মানসিকতাকে আবার তুলে ধরতে চাইছে যা সমাজের জন্য বিপজ্জনক।তারা সেই সমস্ত জার্মান ফ্যানদের স্রষ্টা যারা সুইডেন ম্যাচের পর আমাকে টার্কিশ বেশ্যার সন্তান বলেছিলো।আমি সেই অগুনতি ফোন কলস,ইমেল ও সোশ্যাল মিডিয়ার কুৎসিত মন্তব্য নিয়ে কথা বলতে চাইনা যা এই কমাসে আমাকে ও আমার পরিবারকে সহ্য করতে হয়েছে।তারা নিশ্চয়ই সেই জার্মানির প্রতিনিধিত্ব করেনা যা সকলকে সমানাধিকার দেয়,নতুন চিন্তাধারাকে স্বাগত জানায়।আমি এই জার্মানির জন্য গর্বিত নই।আমি বিশ্বাস করি অনেক মুক্তমনা জার্মান নাগরিকও আমার সাথে একমত হবেন।
রেইনাড গ্রাইন্ডেল,
আমি হতাশ হলেও আশ্চর্য নই তোমার কাজে।২০০৪ সালে তুমি যখন সংসদ সদস্য ছিলে তখন তোমার দাবি ছিলো সংস্কৃতির মেলবন্ধন বাস্তবে একটি গিমিক এবং সর্বৈব মিথ্যা।তুমি দ্বৈত-নাগরিকত্বের অধিকারের জন্য ও ঘুষ নেওয়ার জন্য শাস্তির আইনপাশের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছিলে।জার্মানির মধ্যে ইসলামিক ভাবধারার প্রবনতা বাড়ছে একথাও প্রকাশ্যে বলে লোক ক্ষেপাতে চেষ্টা করেছিলে।এসব কোনোভাবেই কোনোদিন ভোলার নয়।
ফেডারেশন ও তার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের থেকে যে ব্যবহার আমি পেয়েছি তাতে জার্মানির জাতীয় দলের জার্সি গায়ে দেওয়ার ইচ্ছা ভবিষ্যতে আমার নেই।
আমি নিজেকে অবাঞ্ছিত মনে করছি ও তার সাথে এটাও মনে করি ২০০৯ সালে অভিষেকের পরে জার্মানির জন্য এনে দেওয়া সাফল্য হয়তো অনেকেই ভুলে গেছে। জাত-ধর্ম-বর্ন নিয়ে খুঁতখুঁতে মানুষদের বিশ্বের কোনো ফেডারেশনে কাজ করতে দেওয়াই উচিত নয় কারন নানাবিধ ধর্ম-ঐতিহ্য থেকে প্রচুর প্লেয়ার উঠে আসে,অনেকেরই দ্বৈত-সত্বা বজায় থাকে।
তাই বর্তমান বিষয়ে অনেক চিন্তাভাবনার পর দুঃখিত হয়ে আমি জানাচ্ছি এই অশ্রদ্ধা ও বর্নবিদ্বেষ থাকার কারনেই আন্তর্জাতিক স্তরে আর কখনো আমি জার্মানির হয়ে খেলবোনা।আমি আনন্দ ও গর্বের সাথে জাতীয় দলের জার্সি এতোদিন পরে এসেছি ,কিন্তু আর নয়।এই সিদ্ধান্ত নেওয়াটা সত্যিই খুব কঠিন ছিলো কারন আমি সবসময় আমার সতীর্থ, কোচ ও জার্মানির জন্য নিজের সবকিছু উজাড় করে দিয়েছি।কিন্তু ফেডারেশনের সর্বময় কর্তা যখন এই ভাবে আমাকে ,আমার তুরস্কের শিকড়কে অসম্মান করে এবং নিজেদের রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য আমাদের ব্যবহার করে তখন আর নয়।এই দিনটার জন্য আমি ফুটবল খেলা শুরু করিনি।বর্নবৈষম্য কোনোদিন কোনোভাবেই গ্রহনযোগ্য হওয়া উচিত নয়।বিদায়।।
মেসুট ওজিল।।
No comments:
Post a Comment