ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098

-সৌম্যদীপ মৈত্র

একটা রূপকথা

রূপকথার নাম ক্রোয়েশিয়া

দক্ষিনপূর্ব ইউরোপের হাঙ্গেরী সার্বিয়া বসনিয়া-হার্জেগোভিনার হিজিবিজি ম্যাপের মধ্যে চাঁদের ফালির মতো আকৃতি নিয়ে নিজস্ব স্বতন্ত্রতায় মাথা তুলে দাঁড়ানো ছোট্ট একটা দেশ।

সেই ১৫২৭ সাল থেকে নিজের আত্মপরিচয় নিজের স্বাধীনতা অর্জনের লক্ষ্যে কখনো হাবসবার্গ সাম্রাজ্য কখনো অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরীর বা কখনো যুগোস্লাভিয়ার হাতে নিষ্পেষিত হতে হতে অবশেষে ১৯৯১ সালের ২৫শে জুন স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে ইউরোপ তথা পৃথিবীর বুকে আত্মপ্রকাশ।কেবলমাত্র লড়াই এবং ইচ্ছেশক্তিকে সম্বল করে গৃহযুদ্ধে বিধস্ত শূন্য অর্থনীতি সত্ত্বেও সামনের অ্যাড্রিয়াটিক সাগরের পর্বতসঙ্কুল তটরেখা ধরে সোনালী সাফল্যের পথে একটু একটু করে নিজের ঈপ্সিত লক্ষ্যের দিকে এগোনো।


বরাবরই ফুটবলটা যে ক্রোটদের রক্তে সেটা একটা ছোট্ট উদাহরন দিলেই হয়তো বোঝা যাবে।১৯৯১ সালে ক্রোটদের স্বাধীনতার পূর্বে ফুটবলের দিক থেকে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী দেশ যুগোশ্লাভিয়ার ফুটবল অস্তিত্ব আজকের বাকি ফুটবলবিশ্ব তো ছাড়ুন ইউরোপের বুকেই প্রায় ফসিলে পরিনত।ফুটবলে যুগোস্লাভিয়ার তৎকালীন সাফল্য এই আধুনিক ক্রোয়েশিয়ার ফুটবল ঐতিহ্য বা ফুটবলারদের ওপরেই যে পুরোপুরি নির্ভর ছিলো এই ঘটনাই তার জলজ্যান্ত দলিল।


প্রচন্ড পরিশ্রমী ফুটবলপ্রেমী ক্রোটরা যে ১৯৯১ সালের ফিফা ক্রমতালিকার ১২৫ নম্বরে সন্তুষ্ট থাকবেনা তার প্রমান বিশ্ববাসী অনুভব করে ১৯৯৮ সালের জুলাইতে।বিশ্বকাপের শেষে বাকি ফুটবলজগৎ কে চমকে দিয়ে তাদের ফিফা র‍্যাঙ্কিং এসে দাঁড়ায় মাত্র ৩(আজ পর্যন্ত এটাই ফিফার সর্বকালীন অগ্রগমনের রেকর্ড)অর্থাৎ বিশ্বের তাবড় তাবড় ফুটবলকুলীন দেশগুলোর সাথে সেয়ানে সেয়ানে টক্কর নেওয়ার সেই যে শুরু,সেই অগ্রগমন ক্রোয়েশিয়া আজ কুড়ি বছর পরও নিজেদের ক্ষমতায় ধরে রেখেছে।প্রসঙ্গত ক্রোয়েশিয়া ওদের স্বাধীনতার মাত্র সাতবছর পরই আটানব্বই বিশ্বকাপের মূলপর্বে অংশগ্রহন করে এবং প্রথমবারের বিশ্বকাপ অভিযানেই তারা তৃতীয় হয় দাভর সুকেরের হাত ধরে।সেই স্বপ্নের অভিযানের শেষ হয় সেমিফাইনালে লিলিয়ান থুরামের ফ্রান্সের কাছে প্রথমে গোল করে এগিয়ে থেকেও ১-২ হারের পর।অবশ্য ফ্রান্স বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়ে গোল্ডেন বুটটা শেষমেষ সুকেরের হাতেই ওঠে।


এবারে আবির্ভাবের কুড়ি বছর পরেও ক্রোয়েশিয়ার উত্থান সেই প্রথমবারের রূপকথার মতনই।মাত্র নমাস দায়িত্ব পাওয়া নতুন কোচ দালিচের পাশাপাশি ক্রোয়েশিয়ার একঝাঁক তরুণ ফুটবলার সমৃদ্ধ দলকে মাঠের লড়াইতে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বিশ্বের অন্যতম সেরা ক্লাবগুলোয় খেলা ত্রয়ী লুকা মদরিচ ইভান রাকিটিচ এবং মান্ডুকিজ।মাঠে ক্রোয়েশিয়ার অনমনীয় হাল না ছাড়া লড়াই পেরিসিচ ভিদা গোলকিপার সুবাসিচ সহ প্রত্যেকটা ফুটবলারের শরীরী ভাষায় ফুটে উঠছে।গ্রূপপর্বে মেসিসমৃদ্ধ আর্জেন্টিনাকে তিনশূন্য গোলে উড়িয়ে দেওয়া থেকে সেমিফাইনালে পিছিয়ে পড়েও নিজেরা আন্ডারডগ হিসেবে হ্যারি কেনের ফেভারিট ইংল্যান্ডকে দেশে পাঠানো এটারই ইঙ্গিত দেয় যে ক্রোটরা এবার পুরোপুরি তৈরী।নক আউটের তিনটে ম্যাচই ১২০ মিনিট পর্যন্ত লড়াই করা এবং জিতে মাঠ থেকে বেরোনো যে সর্বোচ্চ ফুটবলে কতোটা অমানুষিক পরিশ্রমসাধ্য কাজ সেটা সহজেই অনুমেয়।

মাঠের মধ্যে রোগা পাতলা নাছোড় ক্যাপ্টেন লুকা যেমন সবুজ ঘাসে আগুন ঝরাচ্ছেন ঠিক তেমনই ম্যাচের আগের দিন ১০২ জ্বর নিয়ে ঘুমোতে না পারা রাকিটিচ ক্লাব ফুটবলের ক্যারিয়ার ইউরোর চিন্তা জলাঞ্জলি দিয়ে পেনকিলার ইনজেকশন নিয়ে ১২০ মিনিটই মাঠে থাকছেন।জাতীয়তাবাদে উদ্বুদ্ধ ক্রোট ফুটবলারদের ইচ্ছে আগুনে ঘি ঢেলেছেন স্বয়ং সে দেশের প্রেসিডেন্ট।

দেশের ইতিহাসের প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট কলিন্দা গ্র্যাবার।

প্রটোকল বিসর্জন দিয়ে সেই ভদ্রমহিলাও একজন সাধারন ক্রোয়েশিয়াবাসী ফুটবল সমর্থকের মতো নিজের দলকে জার্সী পরে চিয়ার আপ করেন।কখনো নিজের মন্ত্রীসভা অস্থায়ী ভাবে তুলে আনেন রাশিয়াতে আবার কখনো হাইভোল্টেজ ম্যাচ জেতার পর দেশের জনপ্রিয় পপ তারকাকে কয়েক ঘন্টার নোটিশে উড়িয়ে নিয়ে আসেন টিম হোটেলে ফুটবলাদেরকে চাঙ্গা করতে।

যাইহোক পরশুদিনের ফাইনালে ফেভারিট অবশ্যই ফ্রান্স।এম্বেপে উমতিতি মাতুইদি পোগবা পাভার্ড সমৃদ্ধ ফ্রান্স কাপ জেতার ব্যাপারে ফেভারিট হলেও ক্রোটরা যে একবিন্দু জমিও ছাড়বেনা সেটা হলপ করেই বলতে পারি।

কারন লড়াই করা ওদের রক্তে মিশে আছে।

আর ইতিহাস যদি সত্যিই ফিরে আসে তাহলে হয়তো এবারই নবম দেশ হিসেবে সোনার পরী স্পর্শ করতে চলেছেন লুকাবিগ্রেড।

কুড়ি বছর পরপর নতুন চ্যাম্পিয়নের ইতিহাস।

১৯৫৮ ব্রাজিল ১৯৭৮ আর্জেন্টিনা ১৯৯৮ ফ্রান্স হয়তো ২০১৮ ক্রোয়েশিয়া।

ফ্রান্সের প্রতি কোনো বৈরীভাবা সম্পন্ন মনোভাব না রেখেই বলছি এবার বিশ্বকাপ ক্রোয়েশিয়ার মতো একটা "ফুটবল লেগ্যাসিবিহীন ছোট্ট" দেশই পাক।

চেকোস্লোভাকিয়া হাঙ্গেরি নেদারল্যান্ডের স্বপ্নভঙ্গের করুন অভিজ্ঞতা যেনো এতোদিন ধরে লড়াই করার পরে ওদের কপালে না জোটে।

ব্যক্তিগত ইচ্ছে চ্যাম্পিয়ন হোক ক্রোয়েশিয়া।

ভলগা নদীর ধারে আগামী ১৫ই মধ্যরাত্রে হোক অকাল সূর্যোদয়।বিশ্বফুটবলের নামীদামী কুলীন দেশের মহাকাশে উদিত হোক নতুন সূর্য্য।

সেই সূর্য্যের প্রজ্জ্বলিত আলোকরশ্মি পৃথিবীর প্রত্যেকটা ঘরে পরিচিতি পাক ক্রোয়েশিয়া নামে

হ্যাঁ নিজস্ব 'ক্রোয়েশিয়া' নামেই

No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098