ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098


                  "বাংলা" বা "বঙ্গাল" শব্দের উৎপত্তি সম্পর্কে "আল" শব্দটির ওপর জোর দেওয়া হয়। অধ্যাপক নীহাররঞ্জন রায়ের অনুমান অনুযায়ী, আলবহুল যে জায়গা, সেই জায়গাকেই বঙ্গ+আল বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। আল শব্দটির মানে সীমা বোঝাতেও ব্যবহার করা হতে পারে। বঙ্গ কি সাঁওতাল দেবতা বোঙ্গার থেকে এসেছে? কে জানে!তবে ভারতীয় ভূখণ্ডের পূর্বদিকে বসবাসকারী,উত্তরাংশের থেকে জেনেটিক্যালি অনেকটাই আলাদা এই জাতি।বাঙালি বলতে যারা প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে এই অংশে সেটল করেছে, এই অংশের সংস্কৃতি, ভাষাকে কোন না কোনভাবে প্রভাবিত করেছে,তাদেরকে ধরা উচিত!


                   ভারত আক্রমণকারী গ্রিক এবং তৎপরবর্তী গ্রিক ও রোমান ঐতিহাসিকদের লেখায় পাওয়া যায় গঙ্গারিডির নাম।প্রচলিত ধারণা অনুসারে,গঙ্গারিডির উৎপত্তি "গঙ্গাহৃদি" অর্থাৎ হৃদয়ে যার গঙ্গা" থেকে।আচার্য সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায় গঙ্গারিডির উৎস নিয়ে বলেছেন,"গঙ্গে" শব্দের কথা। গাঙ্গেয় অঞ্চলে যে জাতি থাকতো,তাদের গঙ্গে বলে চিহ্নিত করার কথা (Gangae)।গঙ্গারিডি বা গঙ্গারিডাই সম্ভবতঃ গ্রিক ভাষায় এদের প্লুরালে বোঝাতে ব্যবহৃত হয়েছে। ডি সি সরকারের মতামতও কাছাকাছিই।


              "গঙ্গে" শব্দের সাথে উল্লেখ পাওয়া যায় বন্দর-সভ্যতার।বাঙালির জিনোমে বহু জাতির জিনের প্রবেশ রক্তসংমিশ্রণের দিকেই ইঙ্গিত করে, অর্থাৎ এই বন্দর বা বন্দরগুলোতে বিভিন্ন সভ্যতার যাতায়াত ছিল। সিন্ধু সভ্যতা এবং সুমেরীয় সভ্যতার চিহ্নযুক্ত প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও পাওয়া যায়। 

         

               বঙ্গীয় অঞ্চল বরাবরই ঊর্বর।ঊর্বর মাটিতে ফসল হয়, সেই ফসল নিয়ে যায় শাসক বরাবরই খাজনা হিসেবে,দেশের উৎপাদন বৃদ্ধি হয়।মোগল যুগে, বাংলা দেশের ৫০ শতাংশ উৎপাদন দিত (GDP), বিশ্বের ১২ শতাংশ। ঢাকার জনসংখ্যা ছিল ১০ লাখের বেশি। কলকাতা তখনো জন্ম নেয়নি। ইওরোপীয় ব্যবসাদারদের চোখ এড়ায়নি। ব্রিটিশরা প্রাথমিকভাবে রেসিডেন্সি খুলেছিল হুগলিতে, চিফ অফিসার মিস্টার হেজেসের দায়িত্বে। ব্রিটিশ ডাক্তার বুটন জোগাড় করেছিলেন ফরমান।

           

                এবার শুরু আওরংজেবের জমানা।বাংলার সুবেদার ছিলেন শায়েস্তা খাঁ। স্থানীয় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়ে ব্রিটিশরা। শায়েস্তা খাঁর হাতে প্রায় শায়েস্তা হয়ে সামরিক অফিসার জোব চার্নকের মনে ধরে গঙ্গার এপারের সুতানুটি অঞ্চল। অতএব- কলকাতা।সুযোগ বুঝে নবাব হওয়া ব্যক্তির নবাবপৌত্রকে খুন করে তারপরের ইতিহাস,চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত,মেকলের শিক্ষানীতি এবং ব্লা ব্লা ব্লা- সবাই জানে। 

            

                  কলকাতা ব্রিটিশ শাসনের অধিকাংশ সময়টাতেই রাজধানী হিসেবে ছিল।লণ্ডনের পর সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ শহর। ব্রিটিশদের আমদানি করা পশ্চিমি শিক্ষাব্যবস্থাই বাঁশ হয়ে দাঁড়িয়েছিল ব্রিটিশদের কাছে। জাতীয়তাবোধ, আন্তর্জাতিকতাবোধ, সমাজতন্ত্র, গ্যারিবল্ডি-ম্যাকিয়াভেলি-আওয়েন-বেন্থাম-মিলার ঢুকতে শুরু করে।রাজধানী অপসারণ দিল্লিতে। দিল্লিরাজের শুরু।

            

                     বাংলা বরাবরই অবাধ্য ছেলে। সেটা আদিযুগেই হোক, মধ্যযুগেই হোক, ব্রিটিশযুগেই হোক বা ব্রিটিশপরবর্তী যুগেই হোক। গান্ধীবাদী রাজনীতি আর যাই হোক, বস্ত্রশিল্পের কেন্দ্র বাংলা থেকে সরিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিল। মিশ্র অর্থনীতি (ঢপের চপ- প্রিভি পার্স রেখে মিশ্র অর্থনীতি), লাইসেন্স রাজ ইত্যাদির নামে বাংলার শিল্পের সাড়ে বারোটা বাজানোর পরিকল্পনা স্বয়ং দিল্লির।তারপর গর্বের ৩৪ বছর।হ্যাঁ বাম আমলের প্রায় অর্ধেক সময় লাইসেন্সরাজের যুগে।অর্থহীন ট্রেড ইউনিয়ন রাজনীতি,কেন্দ্রীয় বাংলাবিদ্বেশী,টেকনোলজির প্রতি অনিহা পরিণত হয়েছে বাংলার বাঁশে।


             এই ছিল এতদিন যাবৎ আমাদের সোনার বাংলা।এবার জাতীয় নাগরিকপঞ্জী!পশ্চিম পাকিস্তানের সঙ্গে দীর্ঘ লড়াই-সংগ্রামের পর ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্র হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। তার দুদিন আগে অর্থাৎ ২৪ মার্চ পর্যন্ত যারা পূর্ব পাকিস্তান থেকে আসামে এসেছেন,তাদের ভারতীয় হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হবে। কিন্তু তার পরেও বহু মানুষ বাংলাদেশ থেকে আসামে চলে এসেছেন।তাদের আলাদা করতেই এই নাগরিকপঞ্জি।এই পঞ্জিতে বরাক এবং ব্রহ্মপু্ত্র উপত্যকায় বাঙালিদের নাম কম উঠেছে। ফলে বাংলাভাষীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।স্বাভাবিক।মুসলিমদের মনেও নাম বাদ পড়ার তীব্র আশঙ্কা। গুয়াহাটি হাইকোর্টের নির্দেশে ডি-ভোটার(ডাউটফুল ভোটার)এবং তাদের বংশধরদের নামও তালিকার বাইরে রাখা হচ্ছে।১৯৫১ সালের পর এই প্রথম তৈরি হলো খসড়া তালিকা।

নাম বাদ পড়ল এমন ব্যক্তিরা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আগামী ৩০ আগস্ট থেকে ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আবেদন জানাতে পারবেন।এদিকে প্রশাসন জানিয়েছে,"সুযোগের কোনও অভাব হবে না।বাদ যাওয়া নামের মধ্যে যদি এমন কেউ থেকে থাকেন যিনি নাগরিক হওয়ার যোগ্যতা রাখেন।" কিন্তু এই নাগরিকত্বের তালিকা থেকে যাদের নাম বাতিল করা হয়েছে তারা আগামী লোকসভা নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন কিনা তার কোনো আশা ভরসা কিছুই নেই।

১৯৬৬ সালের ১ জানুয়ারি থেকে  ১৯৭১ সালের ২৪ মার্চের মধ্যে যারা ভারতে এসেছেন তারাই ভারতের বৈধ সন্তান হিসেবে স্থান পেয়েছেন।১৯৫১ সালের জনগণনার পর ন্যাশনাল রেজিস্ট্রি অফ সিটিজেন প্রথম নাগরিকদের তালিকা তৈরি করে। সেই তালিকায় যাদের নাম ছিল তাদের বংশধরদের নাম এই তালিকায় রয়েছে।

                     

                       দিল্লির ঔপনিবেশিক ভারতীয়ত্বের সাথে বাঙালিদের দ্বন্দ্বটা বরাবরই হয়ে চলেছে।আফস্পার প্রয়োজন তো সেজন্যই।এখনকার ভারত জনতা পার্টির হিন্দুত্ব ও ভারতীয়ত্ব শব্দ দুটি একে অপরের সমার্থক!উত্তর ভারতের হিন্দুত্বের আইডিয়াতে সম্মত না হলে আপনি ভারতীয় না।যা বাঙালি কোনোকাল দেয়নি দেবেও না,এছাড়া ছত্তিশগড়ের উপজাতি বা উত্তর পূর্বের মানুষও দেননি।ইতিহাস ঘাঁটলে ভারতীয় নাগরিকপঞ্জীর সাথে জার্মানির ইহুদিদের লিস্ট বানানোর মিল পাবেন।আবার শোনা যাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের মুসলিমদের বাংলাদেশে পাঠাবেন,ওপরমহল থেকে খবর এসেছে হে।

               

                     বাঙালী হিন্দু-মুসলমান বলে কিছু হয় না। বাঙালী ইজ বাঙালী। এবং বাঙালীর অস্তিত্ব অন্য জাতির অস্তিত্বের সঙ্গে সম্পৃক্ত। যারা নিজেরাও দিল্লির ঔপনিবেশিক ভারতীয়ত্বের আক্রমণের মুখোমুখি। এটা মিথোজীবী সম্পর্ক।আর এন আর সি তে একটু "ভুলচুক" তো হয়েই থাকে।আর সেটা হলেই আপনি "ডি" ভোটার-ডাউটফুল ভোটার।ডিটেনশন ক্যাম্প রেডি আপনার জন্য।শব্দটা কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পের কাছাকাছি যাচ্ছে?যাকগে, অসমে বাড়াবাড়ি করলে রেলপথ, হাইওয়ে, মালপরিবহণ মায় আকাশসীমা পর্যন্ত বাংলার ব্যবহার করতে হয়। বন্দর বাদই দিলাম।


                 ৩ কোটি ২৯ লাখ ৯১ হাজার ৩৮৪ এর মধ্যে ২ কোটি ৮৯ লাখ ৮৩ হাজার ৬৭৭জনের নাম প্রকাশ হয়।আর বাকি চল্লিশ লাখ কী বাঙালিই সবাই!মানে চিরশত্রুতাটি কীসের কেন্দ্রমশাই?তা এবার একটু প্রতিবাদী হয়ে উঠলে কেমন হয়?কী করব?ফেবুতে স্ট্যাটাস দেবো!ডিপিতে বাঙালির ছবি রাখবো লিখব আমি গর্বিত আমি বাঙালি।আরে ধুত্তোর ঘন্টা হবে তাতে।আমরা ক্রোয়েশিয়ার লুক মডরিচ কে নিয়ে মাতামাতি করি, কিন্তু আমরা নিজের দেশের লোককে ঘরছাড়া করি।মানে ব্যাপারটা,বাইরে আমি নারীদের অগ্রগতি চাই আর বাড়িতে বউ পিটাই,এর মতন খানিকটা। 

               কিছুদিন,মানে এই সপ্তাহ খানেক আগেই,আমরাই না উঠেপড়ে লেগেছিলাম মেডিক্যালের ছাত্রদের হোস্টেলের দাবিতে অনশন নিয়ে।সেটা ছিল অধিকারের লড়াই।আর আজ যখন ৪০লক্ষ মানুষ দেশছাড়া হয়ে গেল,তাদের জন্য কোনো তাপ-উত্তাপ আমাদের মধ্যে জন্ম নেয়না।আপনি যে দেশে দশ বছর থেকে নাগরিকত্ব দাবি করেন,ওরাও সেখানেই থাকে।তা ওদের পাশে দাঁড়ানো নিশ্চই উচিত আমাদের?অন্তত বাঙালি হিসেবেই নাহয় দাড়ালাম!


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098