"..রেখেছ বাঙালী করে.."
- রাজীব দে রায়
ফ্যাসিস্ত দল ক্ষমতাসীন হলে এমনই হয় !
আমরা ইতিহাস পড়ি নিছক পাশ করার জন্যেই। পাঠ্যপুস্তক বা নানাবিধ ঐতিহাসিক সন্দর্ভ পাঠ আমাদের চেতনায় কতখানি আঘাত হানতে সক্ষম হয়, সে নিয়ে সন্দেহ আছে ! নাহলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং হিটলার-মুসোলিনির অশুভ অক্ষই যে দুনিয়াজুড়ে কয়েক কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী সেসব জেনে বুঝেও জাতি-ধর্ম-বর্ণ নিয়ে এত মাতামাতি! আসলে আমরা হিপোক্রিট। চার্লি চ্যাপলিনের সিনেমার রেট্রোস্পেক্টিভ দেখতে গিয়ে সন্তানের কচি তুলতুলে আঙুল ধরে পর্দায় গ্রেট ডিক্টেটরের উগ্র ভাষণের মর্মার্থ (নিজের মত করে)সন্তানকে বোঝাতে চেষ্টা করি। সন্তান ইতিহাসবই পড়বার আগেই জেনে যায় একদা 'হিটলার' নামের প্রজাপতির মত গোঁফওয়ালা লোকটা আসলে ছিল হাড়-বজ্জাত! অনেক অনেক মানুষকে সে খুব কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলেছে, ইত্যাদি..প্রভৃতি..!
যে আমরা ঋত্বিক ঘটক নির্মিত সিনেমাগুলোর গূঢ় অর্থ নিয়ে চায়ের টেবিলে তুফান তুলি, সেই আমরাই আড্ডার ঠেকে গলার শিরা ফুলিয়ে তর্ক করি ঘটি-বাঙাল, ইন্ডিয়া-পাকিস্তান, পূর্ববঙ্গ-পশ্চিমবঙ্গ, রিফিউজি-স্বদেশি নিয়ে ! আমরা বেমালুম ভুলে যাই দেশভাগ পরবর্তীতে সংবিধানের প্রস্তাবনায় লিখিত হয়েছিল --
" আমরা ভারতের জনগন, ভারতকে একটি সার্বভৌম গনতান্ত্রিক ধর্মনিরপেক্ষ সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র হিসেবে গড়ে তুলতে সত্যনিষ্ঠার সাথে শপথ গ্রহণ করিতেছি..।"
.....রাজনীতিবিদেরা আইনসভায় নির্বাচিত হবার পর - দেশের অথবা রাজ্যের মন্ত্রিরূপে ঠিক এই শপথটিই উচ্চারণ করে থাকেন, অথচ অবাক হই যখন দেখি এই শপথরক্ষার দায় তাদের নেই! দেশভাগের সময় প্রায় ৭ কোটি মানুষ নিয়ে গঠিত হয়েছিল পশ্চিম ও পূর্ব পাকিস্তান। এরমধ্যে ৪ কোটি বাংলাভাষী মানুষ ছিলেন পূর্বপাকিস্তানে(বর্তমান বাংলাদেশ রাষ্ট্র),
২ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষ থেকে যান পশ্চিমবঙ্গে। সে সময়ের মোট বাংলাভাষী অর্থাৎ প্রায় ৬ কোটি ৪০ লক্ষ মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছাকে মর্যাদা না দিয়ে শুধুমাত্র ক্ষমতার চেয়ারে আসীন হবার জন্য যে খেলা শুরু করেছিলেন তৎকালীন কংগ্রেস দল, হিন্দু মহাসভা, জনসংঘ, কম্যুনিষ্ট পার্টি.. তার মাশুল আজো চুকিয়ে চলছি আমরা!
অসমে ক্ষমতায় আসীন নেতারা সংবিধান ছুঁয়ে সত্যনিষ্ঠার শপথ নেন, আবার এরাই ৪০ লক্ষ বাঙালীকে পুনরায় ' এন আর সি নবীকরন ' এর নামে শরনার্থী শিবিরে ঠেলে দিতে পিছপা হন না!
বাঙালী বিতাড়নের এই ষড়যন্ত্র স্বাধীনতার আগে থেকেই চলে আসছে। হীনবল করে দেবার ঘৃণ্য এই খেলায় ধর্ম-ই যে প্রধান হাতিয়ার, তা সকলেই কবে উপলব্ধি করবে জানিনা! স্বদেশী স্বদেশী বলে এই যে উচ্চকিত রব, আসলে জানিই না প্রকৃত অর্থে এদেশের আদি ভূমিজ মানুষ কারা..! ভারতভূখন্ডের আদি ইতিহাস তো দ্রাবিড়দের। আর্যরা তো বহিরাগত! কালেকালে রক্তের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা সংকর জাতির এত আত্মম্ভরিতা শোভা পায় না! আদি ভারতীয়দের (কোল,ভিল,মুন্ডা, হো..)প্রান্তিক অবস্থানে ঠেলে দিয়ে বর্ণসংকর জাতির একটি অংশ যখন ধর্মের ধ্বজাধারী হয়ে উঠতে চায় তখন বুঝতে অসুবিধে হয়না যে এদেশে সার্বিক মানবিক পতন আসতে বেশি দেরী নেই যদি না এখনই গর্জে উঠি...
No comments:
Post a Comment