![]() |
Somtirtha Nandi |
আমাদের সবার জীবনেই এক একটা শখ থাকে। কেউ জীবনে গায়ক হতে চায়, কেউ লেখক,
কেউ বা ছবি এঁকে কাটিয়ে দিতে সারাজীবন। কিন্তু আজ যার সাক্ষাৎকার আমরা নিতে এসেছি সেই
মানুষটার শখ একটু অদ্ভুত। এই মানুষটার নাম হয়তো আপনারা সবাই দেখেছেন Youtube এ।
হ্যাঁ বাউলগান, লোকগীতি search করলেই আর
কারোর চ্যানেলে না পাওয়া গেলেও এনার চ্যানেলে পাওয়ার সম্ভবনা ১০০%।
‘সোমতীর্থ নন্দী’।
লেখালেখির সাথে এনার একটা অদ্ভুত শখ আছে। গত প্রায় ছ-সাত বছর ধরে বাংলার বিভিন্ন প্রান্তে ছুটে গিয়ে
ইনি সংগ্রহ করেছেন নাম না জানা, অচেনা অজস্র সব গান। একেবারে আখড়া থেকে। জয়দেব
মেলা থেকে গোড়ভাঙ্গা, পুরুলিয়ার গ্রাম থেকে উত্তরবঙ্গের চা-বাগান সবখানে ছুটে গেছেন আসল
গানের খোঁজে। তাই হয়তো তার চ্যানেলে পাঁচশোরো বেশি গানে প্রায় ২৫ লক্ষ ৬৫ হাজার
ভিউ।
যদিও তিনি স্ট্যাট নিয়ে মোটেও ওয়াকিবহল নন বরং আমরা বলাতে
অবাক হয়ে বললেন – ‘তাই নাকি!’
![]() |
Somtirtha Nandi at Recording |
এরকমই একটা মানুষের সাক্ষাৎকারে আজকে ব্লগটগ। রেকর্ডিং এর
পেছনে থাকা মানুষটা আজ একদম সামনে থেকে আমাদের সাথে। কোন বড় ক্যাফে বা রেস্তোরাতে
নয়, আড্ডা শুরু হল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের World View তে বসেই।
ব্লগটগ - ২০০৮ এ শুরু, আজ ২০১৮। মাঝে দশটা
বছর। জার্নিটা কেমন ছিল?
সোমতীর্থ নন্দী - গোটা জার্নিটা যদি বলতে হয় অনেক অংশে আমি অত্যান্ত লজ্জিত
বোধ করবো কারন হুডিনির তাঁবু বা আমাদের কিছু গান ছাড়া শুরুর দিকের বেশির ভাগ গানই আমার
রেকর্ড করা নয়।
কিন্তু ২০০৮-১০ থেকেই হঠাৎ করে দেখছিলাম
যে মার্কেট folk নিয়ে মাতামাতিক করা শুরু করলো। তার আগে folk নিয়ে এত মাতামাতি তো হতই
না, সিম্পেলি বাদ দেওয়া হত। কিন্তু সেই সময়ে folk এর উত্থানের পর থেকে বলা ভালো শহুরে
উত্থানের পর থেকেই দেখতে শুরু করলাম ভীষণ কালচার শুরু হল। তারমধ্যে ৯০% এ ফিউশন গাইছে।
তার কথা ভুল, ভাব ভুল সমস্ত কিছুই
কোন ভাবে folk হয়ে উঠছে না কারণ রেকর্ডিংগুলো শুনে শেখার থেকে আমার মনে হয় কারোর কাছে
গিয়ে শেখাটাই বেটার।
ব্লগটগ - কেন?
সোমতীর্থ নন্দী - কারণ বাউল তো কোন গান নয়, সেখানে শুধুই সাধনার কথা বলা হয় যে সাধনার পথে আমি হাঁটছি। এবার এইখানে সামান্যতম একটা থেকে দুটো শব্দের এদিক-ওদিক
হলেই কিন্তু গোটা মানেটাই বদলে যেতে পারে। You are killing the song ultimately.
সেটাকে খানিকটা সামাল দেওয়ার জন্যেই
বলতে পার আমার জার্নি শুরু। এই যে ডিজিটাল ব্যাপারটা যখন এত প্রকট হয়ে উঠলো, Android
এলো, Youtube এলো এবং আমরা বুঝতে পারলাম এই ব্যাপারটা আগামি ১০-২০ বছর মার্কেটে সাস্টেন
করবেই। তখনি আমি বুঝলাম এইটাই একমাত্র মিডিয়া যেখান থেকে ওই পিওরিটির জায়গাটায় পৌঁছনো
যেতে পারে।
সেখান থেকেই শুরু। আমি চেষ্টা করি
যতটা সম্ভব গানগুলোর নিজেস্বতা বজায় রাখা। যাতে ফিউশনটাই সব না হয়ে দাঁড়ায়।
বেসিকালি এই গানগুলোর মধ্যে কিন্তু
বিরাট Collective consciousness রাখা আছে, এবং সেটাকে যতটা সম্ভব পিওরেস্ট ফর্মে আমি
রাখতে পারি।
ব্লগটগ - রেকর্ড করা কবে থেকে শুরু?
সোমতীর্থ নন্দী - ২০১৪ তে সাত্যকি ব্যানার্জিকে দিয়ে শুরু।
সেই সময় সাত্যকিদা
বিকেল ৪টা ৫টা থেকে রাত্রি ১১টা ১২টা পর্যন্ত ৩-৪ দিন কন্টিনিউ গান গেয়ে গেছে যাদবপুরে।
আর আমি সেই সবগুলোই অলমোস্ট কভার করি। সেই দিয়েই শুরু।
ব্লগটগ - হুডখোলা কবিতার দারুন সব
গান আমরা তোমার চ্যানেলে শুনছি। সেগুলো কি সব তোমাদেরই গান?
সোমতীর্থ নন্দী - হুডখোলা কবিতারা বলার জন্যে নিয়ে আমি ঠিক মানুষ নই। এই ব্যাপারে রিতম সেন, দিপাংশু, রিপন ফিউ আরও ভালো বলতে পারবে। বেশিরভাগ গানই লিখতো দিপাংশু
আর রিতম একসাথে। হুডখোলা কবিতারা খোলা হয়েছিল
as a lyrical Band. আমরা শুধু লিরিকটা দিতাম, আর আমাদের প্রচুর বন্ধুবান্ধব ছিল যারা সুর দিত, জিঙ্গেল
বানাতো, তারাই এই কথায় মিউজিক দিয়ে গান হিসেবে সামনে আনে।
হুডখোলার শুরু এরকম একটা যৌথ প্রচেস্টা
থেকেই। মানে যেকোনো ফর্ম অফ আর্টই অনেকে মিলেই করা ভালো।
ব্লগটগ - তোমার সব গানগুলো কি বিভিন্ন উৎসব থেকেই রেকর্ড করা?
সোমতীর্থ নন্দী - বাউল-ফকির উৎসব যেখানে যেখানে হত সেখানে মঞ্চে আমি খুব
কমই থাকতাম। বরং আমি চেস্টা করি যাতে একেবারে আখড়া থেকেই গানগুলো রেকর্ড করতে পারি। কারণ শোনার থেকেও ওখানে আমি গানের ফিলসফিটা বোঝার ভীষণ চেষ্টা করি সবসময়।
ব্লগটগ - বাউল গানের কথা তো অনেক সময়ে পাল্টে গেছে নতুন ভাবে হয়েছে, এক্ষেত্রে বাউলদের নিজেদের কোন মতামত নেই?
সোমতীর্থ নন্দী - তারা তো সবসময়ই চেষ্টা করে যতটা সম্ভব পিওরিটিটা ধরে রাখা
যায়।
তারপরে যেটা হল , আমি নাম করতে চাইনা এরকম অনেক অরগানাইজেশন এলো যারা এই গোটা ব্যাপারটাকে বিক্রি করতে শুরু করলো। বিক্রির জন্যেই বাউল গান তৈরি করতে শুরু করলো। এই যে বাউল বললেই গোড়ভাঙ্গা নাম সবার আগে মনে আসে - এটা কিন্তু ২০১০ এর আগে তেমন ছিল না। কিছু কোম্পানি initiative এই এই জিনিসগুলো শুরু করলো।
তারপরে যেটা হল , আমি নাম করতে চাইনা এরকম অনেক অরগানাইজেশন এলো যারা এই গোটা ব্যাপারটাকে বিক্রি করতে শুরু করলো। বিক্রির জন্যেই বাউল গান তৈরি করতে শুরু করলো। এই যে বাউল বললেই গোড়ভাঙ্গা নাম সবার আগে মনে আসে - এটা কিন্তু ২০১০ এর আগে তেমন ছিল না। কিছু কোম্পানি initiative এই এই জিনিসগুলো শুরু করলো।
আবার অন্যদিকে এই গানগুলোর মুল যে
কথা সেখানে তো কমার্সের কোন কথাই নেই, ন্যাচারেলি সেখানেও যখন টাকা ঢুকতে শুরু করলো
বাউলরাও আস্তে আস্তে পালটাতে শুরু করলো। আসলে তারাও তো মানুষ, তাদেরওতো ভালো ভাবে বেঁচে
থাকতে ইচ্ছে হয়।
বাউল কিন্তু spirituality বাদে আর কিছু নয়। সব গানেই তাই। বাউল শুধু গান নয় সেটা একটা সাধনার পথ। গানটা গেয়ে সে, ওই ভাবটায় পৌছতে
চাইছে।
যদিও এটা আমি খুব রাফ্লি বললাম, এটা
আরও ডিপার একটা বিষয়।
ব্লগটগ - বাউল গানের সাথে এই ‘ভাব’
শব্দটার সাথে আমরা ভীষণ ভাবে পরিচিত। এই ‘ভাব’ নিয়ে যদি কিছু বল?
সোমতীর্থ নন্দী - (একটু
হেসে) না সেটা এই ভাবে বলার মত সহজ একটা বিষয় নয়।
এই ভাবটায় পৌছতে গেলে অনেক বড় একটা
প্রসেসের মধ্যে দিতে যেতে হয়। তারপর তুমি যখন সেই ভাবটায় পৌঁছবে তখনই তুমি সেই ভাবের
গানটা গাইতে পারবে।
সেটা স্টেজে উঠে দর্শকের মধ্যে কেউ
একজন রিকোয়েস্ট করলো- ‘এই গানটা গান’ আর আমি গেয়ে দিলাম এরকম মোটেও নয়। বাউল গানের
গাইকির ব্যাপারটা কিন্তু গায়কের ভাব অনুযায়ী চলে, গায়ক ঠিক করবে সেটা। শ্রোতা নয়।
এটাকে বলা সম্ভব নয়, এটাকে experience করতে হবে। তুমি যখন গায়কের ভাবটা বুঝতে পারবে বা ধরতে পারবে
তখন তুমিও ওই গানগুলোর কথা নিজের মনে রিলেট করতে পারবে। কিছু একটা হতে শুরু করে তখন
নিজের মধ্যে যেটা তুমি বুঝতে পারবে, কিন্তু প্রকাশ করতে পারবে না। যেটা তুমি চিনতে
পারবে না।
আসলে মানুষের মন তো অদ্ভুত একটা জিনিস
এবং আমাদের যে অনুভুতিগুলো তার খুব
বেশি হলে ১০ কি ১২ % আমরা ভাষা দিতে পেরেছি। কিন্তু
এই ভাষা হীন অনুভুতিগুলো যখন মনের মধ্যে আসে তখন আমরা ম্যাক্সিমাম বুঝতে পারি কিছু
একটা হচ্ছে! কী যে হচ্ছে এটাই ধরতে পারি না।
এই ভাষাহীন অনুভুতিগুলোই হচ্ছে ভাব।
বেসিক্যালি রিসিনিং দিয়ে এগুলো ব্যাখ্যা করা যায়না। এটা কমপ্লিটলি ইমোশন এবং এটা কারন
দিয়ে চলতে পারেই না।
ব্লগটগ - এই ‘ভাব’ কি শ্রোতা হিসেবে
ধরা যায় বা পৌঁছনো যায়?
সোমতীর্থ নন্দী - অবশ্যই যদি তুমি সেখানে পৌছতে চাও।
যদি তুমি শুধুই কমার্শিয়াল দিক থেকে
না দেখে যদি তার ভেতরের কথাটা বুঝতে চাও। সেক্ষেত্রে
তোমার মনের দরজাটা খোলা থাকা দরকার। যাতে সব কিছু তোমার ভেতরে ঢুকতে পারে এবং বেশিরভাগেরই
সেই দরজাটা বন্ধ থাকে।
ব্লগটগ - কিন্তু এখনও তো চলছে কমার্শিয়াল
ব্যাপারটা?
সোমতীর্থ নন্দী - হ্যাঁ চলেবেই তো কারন কমার্শিয়াল এই ব্যাপারটায় লাভ পেয়ে গেছে তাই ওরা বেচবেই, কিন্তু অল্টারনেটিভ ভয়েস সব সময়েই থাকে। আমি এবং আমার মতো বহু
মানুষ যারা অনবরত চেষ্টা করে চলেছে যাতে পিওর ব্যাপারটা বজায় থাকে, যাতে ওই মাটির গন্ধটা
কোনভাবেই হারিয়ে না যায় এই গানগুলোর থেকে।
তাই আমি সবসময় চেষ্টা করি, প্রোগ্রামে
বা স্টেজের শো’ থেকে গানগুলো কালেক্ট না
করে সারাসরি বাউলদের ঠেকে বা আখড়ায় গিয়ে যদি
রেকর্ড করা যায়। সেখানেই তাদের ভাবটা প্রকাশ পায় সবচেয়ে বেশি। গানের একদম কাছাকাছি
পৌঁছে যায় সহজেই।
ব্লগটগ - তুমি একটু আগেই বললে বাউল
আসলে spiritual একটা collective consciousness. কিন্তু এই আত্মা বা আত্মা-তত্বের কথা যদি আমি বলি তাহলে প্রশ্ন আসে-
মানুষের আত্মা তো এক, যা গোটা বিশ্বের সাথে সম্পর্কিত। তাহলে বাউল গান আলাদা পথের কথা
কেমন ভাবে বলছে?
সোমতীর্থ নন্দী - ধরে নাও ভাওয়াইয়া গান সেখানে যেই কথাগুলো হচ্ছে সেগুলো
কিন্তু
বাউল গানের থেকে একদমই আলাদা। কিন্তু দুরকম গানই তোমাকে নতুন করে ভাবাতে সাহায্য
করছে, তোমাকে অনেক নতুন ভাবনার কথা বলছে।
এক ধরনের গানে তোমাকে বাইরে বের করছে,
আর এক ধরনের গান তোমাকে তোমার অন্তরে নিয়ে যাচ্ছে।
Spirituality বলতে আমি এই অন্তরে প্রবেশ
করা’কে বলছি। ওই দরজাটা খোলা থাকছে এবং কিছু একটা ঢুকছে ভেতরে সবসময়।
একটা কিছু আমার ভেতরেই আছে আমি তাকে
নতুন করে চিনছি সবসময়। একটায় আমি নতুন কোথাও পৌছনোর চেষ্টা করছি, আর একটায় আমি এই চলার
পথেই নতুন কিছু জানতে পারছি।
পুরোটাই হচ্ছে জীবনবোধ।
ব্লগটগ - বাউল আর রকের যেই ফিউশনগুলো
হচ্ছে সেটা কি সত্যি সম্ভব বলে তুমি মনে করো?
সোমতীর্থ নন্দী - সত্যি হয় কিনা বা করা যেতে পারে কিনা সেটার আগে যেটা দেখা জরুরি যে- যে গাইছে সে গানের ভাবটায় পৌছতে পারছে কিনা! আমি রক আর বাউলের মধ্যে কোন
পার্থক্য দেখি না।
কারন রক’তো কোন মিউসিক নয়, রক আসলে
কী কথা বলছে? সে কী বলতে চাইছে?
রক তো আসলে একটা ওয়েস্টার্ন ফিলসফি।
সেখানে যেই কথাগুলো বলা হচ্ছে সেই কথা, সেখানকার ভাষা সেখাকার কালচার অনেক কিছুকে এক
জায়গায় নিয়ে আসছে।
সেই সেম ব্যাপারটাই যখন ইস্টার্ন ফিলসফিতে
আসছে তখনই সেটা folk। এই ব্যাপারটাকে
তুমি আলাদা করবে কীভাবে?
এই ফিউশন আসলেই নির্ভর করছে গায়কের
নিজের ভাবের ওপর।
ব্লগটগ - আচ্ছা সুর এবং কথার পাল্টে যাওয়া। মানে এই যে ফারিদ আয়াস তথাকথিত আমির
খুসরু এবং কাবির এর গান করেন, তো তিনি সেদিন একটা ইন্টার্ভিউতে বলছিলেন- ব্যাবসার
খাতিরে এরকম অনেক গানই সুর এক রেখে কথাগুলো সময়োপযোগী করে তোলা হয়েছে এবং আমরা যখন
গানটা শুনছি তখন বুঝতে পারছি এটা আসলে তো কাওয়ালি। তখন তার মূল বা রুট খুঁজতে গিয়ে
খুঁজে পাচ্ছি সেই সব আমির খুসরু বা কবিরের গান। সেক্ষেত্রে তোমার কি মনে হয়না
ব্যাবসাটাও ভীষণ ভাবে দরকার।
![]() |
Somtirtha Nandi |
সোমতীর্থ নন্দী - তুমি যেই
কথাগুলো বললে একদমই ঠিক, কিন্তু আমায় একটা কথা বলো কতজন এই রুটটা পর্যন্ত ফলো করে?
সেটার অরিজিনটা খুঁজে পেতে চায়? সুরটা পৌঁছছে সেটা তো খুব ভালো কিন্তু মুলটা তো
হারিয়ে যাচ্ছে। একটা গানে সুরগুলোতে এবং কথাগুলোতে যখন একটা ভাব পড়ে তখনই সেটা
একটা পুর্নাঙ্গ গান হয়ে ওঠে, সেই পিওর অরিজিনটার খোঁজ কি সবাই করছে?
ব্লগটগ - আগেও একটা সময়ে তো মানুষ প্রচুরভাবে বাউল লোকগীতি এই গানগুলো শুনত। তারপর
মাঝে প্রায় কয়েক বছর বাউল নিয়ে নারচার বলা ভুল হবে কালচার করাই বন্ধ হয়ে গেল। এখন
আবার ভীষণ ভাবে উঠে আসছে। এই ফারাকটা কেন হল বলে তোমার মনে হয়?
সোমতীর্থ নন্দী - সেটা বেশিরভাগই
হল যখন থেকে এই বিক্রি ব্যাপারটা শুরু হয়ে গেল
এবং যখন থেকে মানুষ বিক্রির জন্যে
বাউল গানকে প্রডিউস করতে শুরু করলো। শুধু তাই নয় লাভ করতে শুরু করলো। তখন থেকেই
একটা বিচ্ছিরি ব্যাপারে দাড়িয়ে গেল সবকিছু।
বাউল তো প্রানের আনন্দে গাওয়া
একটা গান সেটা কেউ কোনদিন ঠিক করে দিতে পারে না- ‘এই গানটা গাও’। কোন আর্টই
পিওরেস্ট ফর্মে এরককম হয় বলে আমার মনে হয় না।
তোমরা দেখবে এক্ষেত্রে ভিসুয়ালটা
ভীষণ ভাবে ম্যাটার করে গেছে, মানে বাউলদের আখড়া তো একটা ধুধু মাঠ, সেখানে কয়েকটা
মোমবাতি জ্বলছে আর একজন গান গাইছে। বাকি সবাই শুনছে। এখানে আকর্ষণ করার মত ভিসুয়াল
তো কিছুই নেই, কিন্তু অপরদিকে তুমি যদি দেখ ঝাঁ চকচকে কিছু ভিসুয়াল যেটা দেখলেই
মানুষের মনে হবে দেখি, সেখানে এটাকে বেস করেই গানগুলোকে বিক্রি করা হচ্ছে।
ব্লগটগ - এই যে সাধুসঙ্গ খুব লোকমুখে শোনা যায়, সেখানে বাউলের আদর্শের গল্প
থেকেও
বেশি শোনা যায় নেশার গল্প। গোড়ভাঙ্গা বলতেই প্রথমেই যেটা মনে পড়ে সেটা হল গাঁজা।
তাহলে কোথাও গিয়ে বাউলের সাথে নেশা, এটা একটা অদ্ভুত কম্বিনেশন হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে
তোমার মনে হয়না?
সোমতীর্থ নন্দী - ওই যে তখন
বলছিলাম তোমাকে দরজাটা খোলা রাখতে হবে সবসময়।এখন যদি গ্রামে গিয়ে তোমার মনে হয়
যে- ‘আমি তো ভাই শহর থেকে গ্রামে এসেছি এরা কি জানে? আমি জাস্ট গাঁজাটা কিনে চলে
যাবো’। সে তো কিছু জানতেই আসেনি। মনের দরজাটা বন্ধ করে এসেছে শহর থেকেই।
সেক্ষেত্রে বাউলরা এদের জন্যে বনে
মুক্ত কেন ছড়াবে? তারা তো চেনে শ্রোতা দের যারা জানতে চায়, শুনতে চায়।
যেমন মনে করো স্কুলে কিছু কিছু
ভালো ছাত্র-ছাত্রির প্রতি শিক্ষকদের একটু বেশি দুর্বলতা থাকে। কারন তারা জানে এরাই
আবার পৌঁছে দেবে আমার দর্শনকে বা আমি যেটা বলছি সেটা ও সম্পূর্ণ রুপে গ্রহন করতে
পারবে।
যারা নেশার জন্যে যায় তারা গানের
জন্যে যায়না। কারন গানটার মানে বুঝতে গেলে তো তোমায় সময় দিতে হবে, ওই ভাব তো তুমি
সামনে থেকে লাইভ ছাড়া আর কোথাও পাবে না। সেখানেও যদি তুমি নিজেদের নিয়েই মসগুল
থাকো তাহলে নতুন কিছু গ্রহন করবে কেমন করে?
ব্লগটগ - তুমি বারবার পিওর শব্দটা ব্যাবহার করছ? কিন্তু এখন তো কিছুই পিওর নেই, মানে
আমরা ক্ল্যাসিকাল গানও তেমন শুনছি বা শিখছি না, ধুতি-পাঞ্জাবি ও পরছি না। আমাদের
পিওরনেসটাই তো অনেকাংশে হারিয়ে গেছে জীবনের সঙ্গে সঙ্গে। গানের ক্ষেত্রে এটাকে
তুমি অস্বাভাবিক বলে ধরছো কেমন করে?
সোমতীর্থ নন্দী - দেখ, পিওর বলতে
আমি কিন্তু সবসময়ে আমাদের অন্তরাত্মার কথা
বলছি। আমাদের মনের কথা বলছি, সততার কথা
বলছি। চেঞ্জের কথা যদি তুমি বল সেটা তো সেই সিভিলাইজেশনের সময় থেকে হয়েছে তাহলে
আমাদের সেখান থেকেই শুরু করতে হয়! কিন্তু সেটা তো কোন কথা নয়। কথাটা পাল্টে যাওয়া
মানে বহিরাংশের পাল্টে যাওয়ার কথাই আমি বলছি। ভেতরের বা সোল টাকে পাল্টানোর কথা
নয়।
চেঞ্জ মানে এটা নয় যে তুমি স্বাস
প্রশাস বন্ধ করে সালক সংস্লেশ করা শুরু করে দিলে মন করো তুমি একটা কবিতা লিখলে,
সেটা শুনে কেউ অন্য একটা জায়গায় তোমার নাম করেই বলল কিন্তু অর্ধেক তোমার শব্দই
বদলে দিল। তাহলে তোমার শিল্পে আর তুমি থাকলে কোথায়?
ব্লগটগ - তোমার এতদিনের এই যাত্রাপথের
পাওনা কী?
সোমতীর্থ নন্দী - অবশ্যই হঠাৎ হঠাৎ যখন চেনা অচেনা কেউ আমার রেকর্ড করা গান থেকে নতুন কিছু পেয়ে আমাকে জানায় সেটাই আমার কাছে বিশাল একটা পাওনা হয়ে থাকে। আর সবার
কাছে পৌঁছে দিতে পারছি বলে আমি যখন মাঝেমাঝে আমার চ্যানেলের বিভিন্ন লিস্টগুলো দেখি-
যে কোথায় কোথায় পৌঁছেছে তখন এমন সব দেশের নাম দেখি যার নামও আমি জানি না।
অর্থাৎ সেখানেও কোন বাঙালি বসে আমার
চ্যানেল থেকে পিওর বাউল গান শুনছে। এর
চেয়ে বড় পাওনা আর কি বা হতে পারে!
ব্লগটগ – শেষ এবং obvious প্রশ্ন- তোমার ভবিষ্যৎ
প্ল্যানিং?
সোমতীর্থ নন্দী - রিসেন্টলি Independent
musician এবং গীতিকার যারা আছে বাংলায়
তাদের কে ক্যালেক্ত করার চেষ্টা করছি শুরুও করে দিয়েছি। তাদের গানগুলোকে তুলে ধরার
চেষ্টা করবো আমার চ্যানেল থেকে। আর আখড়া বা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে গান রেকর্ড তো
চলেবেই।
সোমতীর্থ নন্দীর বন্ধুদের আড্ডা তখন বেশ জমে উঠেছে এবং বারবার ডাক আসছে ওদিক থেকে। তাই এখানেই শেষ
করে হয়তো চলে গেল অনেক গল্প, ঘটনা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করতে আর আমাদের দিয়ে গেল
অনেক নতুন গান, একদম সেই আখড়া থেকে উঠে আসা।
কিন্তু শেষ হলেও এই মানুষগুলো
সবার মধ্যে ছড়িয়ে যায় রেশ। তাই যখন আমরা ফিরে আসছি তখন কেউ একজন সোমতীর্থ
নন্দীকে জিজ্ঞাসা করলো – ‘এবার কোথায় যাচ্ছ রেকর্ডিং এ?’
সোমতীর্থ নন্দী উত্তর দিল- ‘উত্তরবঙ্গে’।
গানের যাত্রা বোধহয় শেষ হয়না কোনদিন...
Somtirtha Nandi Youtube Channel -
https://www.youtube.com/user/ami1andhar/featured
No comments:
Post a Comment