অতীন্দ্রিয়বাদ বলে যদি কিছু থাকে তবে তা কাহলিন
জিব্রানের মন।ঈশ্বরের বাণী সেই অমৃত সত্য যার অন্বেষণ চন্ডীদাস,বাউল,রবীন্দ্রনাথের
অন্তরাত্মা করেছে ছন্দে সুরে কবিতায় বাঙময় প্রকাশে শান্তি দিয়েছে।খ্যাপা পরশপাথর
খুজে পেয়েছে,অচিন পাখি আপনারে চিনেছে,ঘর হতে দু পা ফেলে আমরাও চিনেছি সবচেয়ে সুন্দর শিশির বিন্দু।সেই সত্যকে কাহলিন
জিবরান অক্ষরে অক্ষরে দেবতার বাণীর মতো সাজিয়ে গেছেন তার গদ্য কবিতার বই -দি
প্রফেট এ।১৯২৩ সালে আমেরিকায় প্রকাশিত হয়।সেই সময় বইটি ছিল বিশ্বের তৃতীয় সবচেয়ে বেশী
বিক্রি হওয়া বই।বইটির প্রতিটি শব্দ বিশুদ্ধ মানে নিয়ে বেচে আছে।যারা ভাবেন অনুবাদ
করা সহজ তাদের এই বইটি অনুবাদের আহ্বান জানিয়েছেন নানা ভাষায় অনুবাদকারী
কবি,শিল্পী, সাহিত্যিকগণ।জিবরান এমন এক সত্যদ্রষ্টা কবি মানব যে তার বইটি রচনার
পরও চার বছর নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন।নিজেই বলেছেন যে,আমি এমন শব্দ অনুভূতি দিতে
চাই যার সবটুকু পরিণত,ঠিক ঠাক,তার অর্থ যেন ধ্রুব সত্যই হয় চিরকাল।একজন কবি তার
রচনা এভাবে বারবার বিশুদ্ধতার পরীক্ষায় নিজেকে উজার করে সৃষ্টি কে অক্ষত অমর রাখার
প্রয়াস এযাবতকালেও লক্ষ্য করা যায় না খুব বেশী।প্রফেট হল-একটি সত্য স্থানীয় চরিত্র
সত্তা।আমাদের বিবেক অনুভূতির চরম বিশুদ্ধতার পরিণত এক ফল।আল মোস্তাফা ওরেফেলস শহরে
থাকার পর ফেরার সময় পরিচিত জনদের মূলত আলমিত্রা কে জীবনের সার কথা গুলো
বলেছেন।আলমিত্রা সেই আয়না যার সামনে দাঁড়ালে অন্তরাত্মা কে দেখা যায়।দেখে নেই একক নজরে কি সেই বাণী!বলতে পারেন সহজিয়া
তত্ত্ব আছে,বাউল তত্ত্ব আছে ইত্যাদি অনেক কিছু আছে।আমি বলছি না,বারবার পড়লে এটাই
মনে হয় জলের এককোষী থেকে আজকের যান্ত্রিক সভ্যতা কোথাও কোনো সুতো বাধা টান
নেই।যাবতীয় সব সম্পর্ক ফেলে দিয়ে নিজ স্বরুপের কাছে আমি একা সমগ্র।জিবরান সেই
সমগ্রতার সত্যকে প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন।
ভালোবাসা-ভালোবাসা তোমাকে যেমন রাজমুকুটে ভূষিত
করে তেমনি সে তোমাকে ক্রুশবিদ্ধ করবে।
বিবাহ- একত্রে থেকেও তোমাদের মাঝে দূরত্ব বজায়
থাক,দূরে থেকেও একত্র থাকুক অনুভব।তোমাদের মাঝে স্বর্গের বাতাস নেচে নেচে বইতে
থাকুক।
সন্তান- তোমার সন্তান তোমার সন্তান নয়য়।তারা
জীবনের জন্য আকুল প্রত্যাশার পুত্র-কন্যা।
ধর্ম- তোনার দৈনন্দিন জীবন তোমার উপাসনালয় এবং
তোমার ধর্ম।
মৃত্যু- নদী ও সমুদ্র যেমন এক তেমনি জীবন ও মৃত্যু
এক।
এরকম অসংখ্য জীবনদর্শন তত্ত্বের সরল স্বাভাবিক সহজ
মার্গ জিবরান আমাদের দিয়েছেন বইয়ে।যার প্রতিটি শব্দ সত্যের অনিবার্যতাকে বহন করে।বাংলায় অনুবাদ করতে গিয়ে প্রফেট শব্দের সঠিক
বাংলা শব্দ খুঁজতে অপারগ অনুবাদক স্বীকার করেছেন।প্রেম,মনুষ্যত্ব, মানব জীবনে
তত্ত্বের সীমা পরিসীমা নেই।অথচ এত পথ এত তত্ত্ব থাকতেও আমরা উশৃঙ্খল উদভ্রান্তিতে ঘুরপাক খাই।সহজ
সত্যকে ঠিক খুঁজে বেড়াই।
লেবাননের কবি কাহলিন জিবরান কোনো ধর্ম বলেন
নি,মতবাদ প্রতিষ্ঠা করতে চান নি।গুহাবাসী মানুষের আগুন জ্বালানো শেখার মতোই তিনি
আমাদের সহজ জীবনের মন্ত্রগুলি তুলে ধরেছেন।সকলেরই পড়া উচিত বইটি।আমেরিকার
ধর্মগ্রন্থ রুপে স্বীকৃত। মননের ধর্ম কেউ পাঠ দেয় না।নিজেকেই নিতে হয়।জিবরান মননের
ধর্মগ্রন্থ রচনা করেছেন।শ্রেণীবিদ্বেষ, শ্রমজীবী, জাতপাত অন্ধতা,কারারুদ্ধ রাজার
অক্ষমতা সব কিছুর মুক্তির মার্গ প্রফেট।মনের রাফ খাতাগুলোতে লেখার কিছু থাকবে না
প্রফেট জ্বলে উঠলে।
প্রফেটে ছাব্বিশ টি কাব্য রচনা রয়েছে।প্রায় পঁচিশ
টি ভাষায় অনুবাদিত হয় বইটি।আমরা প্রাচীনের সন্ধ্যানী।আধপোড়া বাড়ি দেখলে দহনিত শরীর
মাংস জেগে ওঠে।মিশর,ব্যবিলন,পারস্য,কিংবা আমাদের নাটোর,বিদিশার মতো, জীবনানন্দের
হাজার বছরের পথ হেটে শান্তির নীড় খোজা অনুভূতির বাস্তব চলমান জীবনের রুপচিত্র
প্রফেট।আদিমের প্রতি, ফেলে আসা অতীতের প্রতি যে সহ্রদয়তা আমাদের টানে প্রফেট
সেখানে বর্তমান কেই ভেঙে গুছিয়ে দেয়।আমরা আসলে পিরামিড গায়ে চেপেই বেড়াচ্ছি।নিজেকে
মমিতে দেখার দৃষ্টি দেয় প্রফেট।মৃত্যুকে আর জন্মের মুক্তির আনন্দ রুপে তুলে
ধরে।কিন্ত জন্মান্তরবাদ খুঁজতে যান তবে মুশকিল।মুহূর্ত মৃত্যু গুলোই বাঁচাতে
পারবেন প্রফেট জেগে উঠলে।উঠবেই আশা রাখি.....
কারণ আমরা জানি ভালোবাসাকে আমরা শষ্যের আটির মতো
বেধে রাখি।অথচ ভালোবাসা আমাদের মাড়াই করে,শষ্যদানা ছাড়িয়ে নেয়।আমাদের কাজ তখন
নিজেকে শষ্যের দানার মতো ভগবানের ভোজ্য রুপে প্রস্তুত করা নিজেকে পবিত্র করা।আমরা আপন আপন ভগবানের জন্য চলুন ভোজ্য রুপে
নিস্পাপ নির্মল হই।প্রফেট জেগে ঊঠুক মনে।
No comments:
Post a Comment