স্ক্রল করতে করতে আঙুলটা যেন আটকে গেল রোহিতের। বারবার ফটোটা ঘুরে ফিরে আসছে নিউজফিডে। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় শুয়ে আছে ওরই বয়সী একটা ছেলে সঙ্গে অনশনের ঘন্টার হিসেব। সত্যিই তো কিই বা চেয়েছে ওরা। ওদের মেধার সম্মান হিসেবে এটুকু কি দেওয়া যেতোনা ওদের।
রোহিতের বাবা একটি কলেজের উচ্চপদে আছেন বহুবছর। ফোনটাকে সাইডে রেখে বাবার কাছে গিয়ে ধীরে ধীরে বললো-"সত্যিই কি ওদের জন্য কিছু করা যায় না বাবা। সমস্যাটা কোথায়..."
কথাটা শুনে রীতিমত ধমকে উঠলেন বাবা, "এবার তুমি প্রশ্ন করবে?তোমায় উত্তর দিতে হবে?শোন ওরা আন্দোলন করতেই আসে। লেখাপড়া নয়। একদম ওদিকে মন না যায়। যত্তোসব।"
অবাক চোখে বাবাকে দেখতে থাকে রোহিত। মনে পড়ে যায় বাবার দেওয়া শিক্ষাটা-"অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করতে নেই।" তবে আজ??কার স্বার্থ কার ইগোকে রক্ষা করতে প্রাণ নিয়ে ছিনিমিনির খেলায় মেতে উঠেছে সমাজের অভিভাবকরা। তবু যে যাই বলুক আজ যাবে রোহিত ওদের পাশে।
★★★★★
ফেসবুকে খবরটা দেখতে দেখতে চোখ দুটো জলে ভরে আসে রমলাদেবীর। ভাতের গ্রাসটা তুলতে গিয়েও আটকে যায় হাত। খোকার থেকেও কত ছোট ছেলেমেয়েগুলো না খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ছে মাতৃসম হয়ে তিনি মুখে খাবার তোলেন কি করে। একবেলা না খেলে কিই বা হবে। বড্ড খারাপ লাগছে। আচ্ছা ওরা যে ভবিষ্যতের চিকিৎসক। ওরা নিঃশেষ হয়ে গেলে আমরা কোথায় যাবো। কেন ভাবছে না ওদের কথা কেউ!!মেয়ের কাছে শুনেছেন ওদের মায়েরাও নাকি এসেছেন। আজ যদি একবার যাওয়া যায়। মা ছাড়া কেই বা বোঝে আরেক মায়ের কথা।
★★★★
খবরটা দেখতে দেখতে মনে মনে হাসে তীর্থ। ঘুনধরা সমাজটার অবস্থাও কতকটা ওই হোস্টেলটার মতই। অরাজকতা বিভ্রান্তি ছড়িয়ে আছে দিকে দিকে। নিজের সার্টিফিকেটের ফাইলটায় হাত বোলায় একবার।মনে মনে অভিবাদন জানায় অচেনা ভাইগুলোকে। অনেক অন্যায় চোখের সামনে দেখেও প্রতিবাদটা করা হয়ে ওঠেনি বিতর্কের ভয়ে। তবু আজ আরেকবার লড়াই করার সাহস পাচ্ছে মনটা। তীর্থরা পারেনি, অনিকেতরা পেরেছে। জীবনের তোয়াক্কা না করে লড়াইটা জারি রাখতে। আজ তীর্থর মতো অনেক অপ্রতিবাদী মানুষও দাঁড়িয়েছে ওদের পাশে।
★★★★
কদিন ধরে মনটা বড় অশান্ত প্রশান্তবাবুর। কি হচ্ছে চারিদিকে!!খবরের কাগজটার পাতাগুলো আর উল্টোতে ইচ্ছে করেনা আজকাল। শুধু খারাপ খবর চারিদিকে।
আজকাল ওষুধও ঘুম আনতে পারেনা চোখ দুটোতে। ওদের মনের লড়াইয়ের আগুনটা বড্ড চেনা একসময়ের ছাত্রনেতা প্রশান্তবাবুর। বড্ড ইচ্ছে করছে ওদের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে। কিন্তু বার্ধক্যের গ্রাস বাধা হয়ে দাঁড়ালো যে...। তাতে কি কিপ্যাড তো আছে প্রতিবাদ জানানোর জন্য।
রোহিত, রমলাদেবী, তীর্থ বা প্রশান্তবাবু এরা আসলে আমরাই। আমার আপনার মতো সাধারণ মানুষ। আমরাই আছি শুধু। কেউ সশরীরে কেউ ভার্চুয়ালি।
যারা ওদের প্রচেষ্টাকে শেয়ার করে বা মন থেকেই ওদের জন্য ভাবছে। এর থেকে বেশি আর কিই বা করতে পারি।
কিন্তু যারা সত্যিই করতে পারতো, তারা কোন অজ্ঞাত কারণে আজ পর্দার আড়ালে। হয়তো এধরনের খবর পাবলিক খায়না ভেবে। থেমে গেছে কলম, হারিয়ে গেছে চিন্তারা।
কেউ কেউ হয়তো আবার ভাবছে এসবটাই লাইমলাইটে আসার চেষ্টা। তবু অতন্দ্র প্রহরীরা জ্বলে উঠছে এখনো। আসলে কি জানেন ওরা এখনও অনেক তাজা তাই হয়তো ঘুনধরা সমাজের হিসেব নিকেশগুলো শিখে উঠতে পারেনি। মনভরা আবেগ আর বুকভরা আদর্শকে পাথেয় করে নিজেদের বাজি রেখে লড়াইটা চালিয়ে যাচ্ছে। কেরিয়ার নষ্টের হুমকি পুলিশি টহলেও অনড় ওদের দাবীগুলো।
আচ্ছা সমাধান হয়তো সহজে আসেনা। তাই বলে কিছুটা আলোচনাও কি করা যেতো না এতদিনে। কিছুটা ওরা এগোতো কিছুটা আমরা এগোতাম। এতটা কষ্ট করে কেন সমাধানের রাস্তা খুঁজতে তৎপর হতে হলো ওদের। সবটুকু চেষ্টার বদলে কিই বা পেল বলুন, শারীরিক মানসিক কষ্ট কটূক্তি দুর্ব্যবহার। মায়ের বুকফাটা কান্নাটা উপরের স্তরে পৌঁছতে বড্ড দেরী হয়ে যাচ্ছে যে।
তবে ভাই অনিকেত,
লড়াই করতে গেলে শক্ত হয়ে থাকতে হবে। তোমাদের বাঁচতে হবে নাহলে আমাদের বাঁচাবে কে। শুধু চিকিৎসক হিসেবে নয় তোমার মত প্রহরীরা থাকলে হয়তো আমাদের সন্তানরা প্রশস্ত পথ পাবে হাঁটার জন্য। শুধু এটুকুই বলতে পারি "আন্দোলন চলুক, বন্ধ হোক অনশন"
No comments:
Post a Comment