অনিন্দ্য চক্রবর্তীর সাথে আড্ডায় বসেছিল ব্লগটগ। কথা হলো ছেলেবেলার ইচ্ছে
থেকে ব্যাঙ্কার হিসাবে প্রফেসানাল কেরিয়ারের শুরু। সেই থেকে ডিজে বাপন হয়ে ওঠা সব
কিছু নিয়েই অকপট ছিলেন অনিন্দ্য।
শোনালেন গিটার বাজিয়ে নিজের লেখা গান,প্রিয় শিল্পী নচিকেতার “তুমি আসবে বলে” গানেও ছিল বাপন সিগনেচার টাচ। সেই মুহূর্তগুলোর কোলাজ জমা থাকলো
ব্লগটগের কলমে।
ছোট বেলায় অনিন্দ্য কি ডিজে বাপন হতে চাইতো?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী — বরাবরই সায়েন্স ভালো লাগত। ফিজিক্স আর অঙ্ক ছিল সবচেয়ে
প্রিয়। ইচ্ছে ছিল অ্যাস্ট্রোনট হয়ে মঙ্গলে পাড়ি দেব। সময়ের সাথে ইচ্ছেও পালটে
গেল। হায়ার স্টাডি ইকনোমিক্স নিয়ে। ছোটবেলার মহাকাশের স্বপ্ন ব্যাঙ্কের লেজার শিটে
ছেপে গেল।
লেখালেখি শুরু হলো কবে?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —২০০৫ এ মাধ্যমিক। তখনই গান গাওয়া,গান
লেখা শুরু। তবে কবিতা বা লেখালেখির হাতেখড়ি তারও বছর তিনেক আগে থেকে।
অনিন্দ্য থেকে বাপন ট্রানজিশানটা কিভাবে?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —কোনদিনই ভাবিনি ডিজে বাপন হবেন। গান গাইতে ভালো লাগত।
লিখতে ভালো লাগত। প্রচন্ড ভালো লাগত রক,হার্ড রক। সেই জন্যই
রোড রোলার ব্যান্ড তৈরি। শখেই ফ্রিহ্যান্ড অ্যানিমেশন করতে করতে আইডিয়াটা মাথায়
আসে। সেই শখ থেকেই সেল্ফি স্টিক ধরে ভিডিওগ্রাফি আর ইউটিউবে চ্যানেল তৈরি।
সবটাই পরপর এফোর্টের রেজাল্ট।
ডি জে বাপন কি অন্যান্য ইউটিউবার থেকে আলাদা?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী — ইউটিউবে চ্যানেল হবে, সাবস্ক্রাইবার হবে লক্ষ লক্ষ এতটা আশা ছিল না। তবে ডেডিকেটেটলি কাজ করেছি,কাজের
জন্য অনেক কিছু শিখেছি। ভিডিওগ্রাফি,সাউন্ড মিক্সিং,এডিটিং সবটাই নিজের। তাছাড়া নিজেকে বারবার পালটাতে হয়েছে। এই যে লুকসটা
সবাই চেনে এটাও ইউনিক। গতানুগতিক ডিজের মতন ঝিনচ্যাক একটা নাম বা ট্রেন্ডি মেট্রো
ফ্যাশানেবল আউটফিট নয়,নাম থেকে শুরু করে পোষাক সবেতেই বাপন
আলাদা। জাজমেন্টাল মানসিকতার উল্টোদিকে দাঁড়াবো বলেই বাটিকের পাঞ্জাবী, গালভরা দাঁড়ি নিয়ে রেট্রো ভেতো বাঙালী লুকসটা বানানো। এটাই ইউএসপি। ২০১৭
থেকে কাজ করতে শুরু করে আজকে এই জায়গায় এসে দাঁড়ানোটাই ইউনিক মনে হয়।
বাপনের প্রথম হিট কি?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —মেট্রো রেট্রো। তবে বিখ্যাত বাঙলা গানের মার্সআপ গুলোও
পপুলার। রুপম,নচিকেতা সবার গান নিয়েই কাজ করেছি। মাইকেল
মধুসূদনের বঙ্গভাষা কবিতার ভিডিও বা সহজ পাঠের আজ মঙ্গলবার,জঙ্গল
সাফ করার দিন এই লেখাটাকে নিয়ে বানানো ভিডিওটাও দারুন চলেছে। রেডিও মির্চির কাজটাও
পেন্ডিং পড়ে ছিল বহুদিন,হঠাৎ করে হয়েও গেল এই লাস্ট
ডিসেম্বরে। সবাই ভালো বলছে। আমিও নতুন কাজের জন্য ইনসপায়ার্ড হচ্ছি।
নিন্দুকেরা বলে ছ্যাবলামো! ডিজে — বাপোনের উত্তর কি?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —ছ্যাবলামোর কোন ডেফিনেসন বা পাস্ট রেফারেন্স আছে কি?
তাই নিন্দুকেরা বলতেই পারে কিস্যু হয়নি,সবঘাটের
জল খেয়ে শেষে ইউটিউবে ছ্যাবলামো করে পয়সা কামাচ্ছে। তাদের জন্য বলা এই চ্যানেলগুলো
করে কোটিপতি হওয়া যায় না। তবে সামনে কিন্তু সবাই ভালোই বলে।
এই সময় দাঁড়িয়ে বাঙলা ভাষায় কাজ করে লাইম লাইটে থাকাটা কতটা কঠিন?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —এটাও একটা নিছক ভুল ধারনা। হয়ত এই সময় দাঁড়িয়ে রেডিও টিভিকে
ছাপিয়ে ডিজিটাল মিডিয়াম যেমন ফেসবুক,ইউটিউব এসব পপুলারাইজ
হচ্ছে। খুব বেশি লোকই টিভিতে বসে বসে সিরিয়াল দেখে। তার মানে কিন্তু এই না বাঙলায় ভালো
কাজ নেই বা সেগুলো পপুলার নয়। বাঙলার বহু রিজিওনাল গান বা সেখানকার টিপিক্যাল
আর্টফর্ম দারুন হিট। ইউটিউবেও বাঁকুড়া,পুরুলিয়ার প্রচুর লোকাল মিউজিক ভিডিও আছে যেগুলোর সাবস্ক্রাইবার অনেক। কেবল বাঙলা কেন
সারা বিশ্বেই লোকাল ল্যাঙ্গুয়েজে যেসব কাজ হচ্ছে তার অনেকেরই রিচ মিলিয়ন। তাই
বাঙলাতে যারা গান,নাটক বা লেখালেখি করছে তাদের হয়ত স্ট্রাগল
আছে কিন্তু সুন্দর একটা ভবিষ্যৎও আছে। কাজটাকে শুধু ভালোবাসতে হবে।
নিজের কাজ গুলোকে আর নিজেকে কতটা ক্রিয়েটিভ মনে হয় ডিজে বাপনের?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —ক্রিয়েটিভিটি না থাকলে কোন কাজই হয় না। আগেই বলেছি ডিজে
বাপন যে ক্যারেক্টার তাকেও তো ইউনিক ভাবে রিপ্রেজেন্ট করেছি। ব্র্যান্ডেড লেখা বা
নিজের লেখা সবগুলোকে তাদের ফ্লেবারটা রেখে নিজের মত করে বানাতে হয়েছে। গানগুলোতে
দেখবে কিভাবে ছন্দমিল রেখেছি। ছন্দ আর সুরের বিট বুজে গান তৈরি করেছি। আর জানো তো
আমি মাঝে মাঝেই একটা ফ্রাস্টেশন ফেজের মধ্যে দিয়ে যাই আর তখনই দারুন কোনো কাজের
আইডিয়া পেয়ে যাই।
একদিকে চাকরী অন্যদিকে ইউটিউব চ্যানেল ,কেমন লাগে এই টানাপোড়েন?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —কোন টানাপোড়েন নেই। এ ব্যাপারে আমি প্রাক্টিক্যাল। ইউনাইটেট
ব্যাঙ্কের চাকরিটা আছে বলেই হয়তো ডিজে বাপনের কাজ গুলো করতে পারছি। ফিনানশিয়াল ক্রাইসিসটা মিট আপ করতে পারছি। আর টাইম ম্যানেজমেন্টের কথা যদি বল তবে বলব রোজ
যেমন অফিস থাকলেও,স্নান করা ,ব্রাশ করা
বা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেই,তেমনই ডিজে বাপন হয়ে কাজ গুলো
করি। আর অফিসে যখন অল্প বয়েসিরা এসে বলে আপনার ইউটিউব চ্যানেল আছে না, দারুন লাগে।
রোড রোলার নিয়ে কি পরিকল্পনা?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —আসলে ব্যক্তিগত জীবনে যতটা না ডিজে বাপন তার থেকেও বেশি রোড
রোলার। রোড রোলারের জন্য নতুন গান ,অ্যালবাম হবে। ওটা আমার
একান্তই ভালোলাগার জায়গা।
প্লেব্যাক সিঙ্গার হিসাবে বা মুভিতে অন্য কোন ভূমিকায় নিজেকে সফল দেখতে
ইচ্ছে করে না?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী — সে যদি বল আমি মুভিতে কাজ করেছি। মুম্বইতেও কাজ করেছি।
কিন্তু ব্যক্তিগত ভাবে কখনোই মনে হয়না মুভিতে প্লে ব্যাক বা অভিনয়টাই সব না। অনেকে
যে মুভিতে কাজ করার জন্য হাপিত্যেশ করে বসে থাকে,আমি তেমন
না। যদি ভালো কাজের স্কোপ থাকে,যোগ্য রেমুনারেশন দিয়ে অফার
করলে তবেই ভাববো।
নতুন কাজ কবে আসছে?
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —গোটা তিনেক কাজ চলতে। ডেট বলতে পারছি না তবে শীঘ্রই আসছে।
ব্লগ টগের জন্য ডিজে বাপোনের এক্সপার্ট টিপস।
অনিন্দ্য চক্রবর্তী —প্রথমেই বলে রাখি তোমাদের আমন্ত্রণ পেয়ে দারুন লেগেছে।
ব্লগ টগের সাফল্য কামনা করি। তোমরা যেভবে বাঙলার
নতুন লেখক,শিল্পীদের তুলে আনতে চাইছো তা প্রশংসনীয় । তবে বলি
পেজের হিট কত হল,কতটা সাবস্ক্রিপশান হলো এটাই একমাত্র না।
ওটা জরুরি আর তারসঙ্গে জরুরি কাজের কোয়ালিটি। যারা কাজ করছে তারা কজটা ভালোবেসে
করুক। ভালো উদ্যোগ। আমিও থাকবো তোমাদের সাথে। আমিও লিখবো ব্লগ টগের জন্য।
![]() |
DJ bapon with Blogtog Team |
No comments:
Post a Comment