ফেক নিউজ-ডেটা লিক: আমরা ডিজিট্যাল ক্রীতদাস - সমৃদ্ধ দত্ত
নয়ডা, গুড়গাঁও, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বইয়ের ছোট্ট
দেড়শো কিংবা আড়াইশো স্কোয়ার ফুটের একটি ঘরে ১৫ থেকে ২০ জন ছেলেমেয়ে প্রতিদিন
সকালে আসে এবং বিকালে বাড়ি চলে যায়। চাকরি করে তারা। কাজটা খুব সিম্পল। তারা
ফেসবুক পেজ তৈরি করে। আই লাভ ইন্ডিয়া। আই সাপোর্ট ইন্ডিয়ান আর্মি। মাই কান্ট্রি
মাই প্রাইড। স্যালুট টু ইন্ডিয়া। হিন্দু জাগরণ। ড্রিম ইসলাম, ফলো ইসলাম। আই হেট
রাহুল। মোদি মুক্ত ভারত। এরকমই আরও নানাবিধ স্বদেশ, স্বধর্ম এবং রাজনৈতিক
বিশ্বাসকে উস্কে দেওয়া পেজ তৈরি করা হয়। তারপর সেগুলি ফেসবুক তো বটেই, অন্য
সোশ্যাল মিডিয়ার সঙ্গেও কানেক্ট করে দেওয়া হয়। আমাদের নিজেদের ফেসবুক ওয়ালে সেগুলি
কোনও না কোনও মাধ্যমে উপস্থিত হয়। আমরা হয় লাইক করি। অথবা করি না। যদি লাইক করি
তাহলে ওই পেজ আরও বেশি করে সামনে আসে রোজ। ধীরে ধীরে সেখানে কমেন্টও করা শুরু
করি। ওই পেজে লেখা যে কোনও কনটেন্ট শেয়ার করতে ইচ্ছা করে। কারণ আমার মনের মতো
কথা লেখা আছে সেখানে। যা আমি বিশ্বাস করতে চাই এবং যা সত্যি বলে ভাবতে ভালোবাসি।
এভাবেই ওইসব স্পনসর্ড পেজের ফাঁদে নিজেদের প্রকাশ করে ফেলি যে আসলে আমাদের
মনোভাবটি কী। আমি উগ্র হিন্দুত্বে বিশ্বাস করি? উগ্র মুসলিম? আমি মোদিকে অপছন্দ
করি? নাকি কংগ্রেসকে ব্যক্তিগত শত্রু ভাবি? এভাবে আমাদের মতো হাজার হাজার লক্ষ
লক্ষ কোটি কোটি ফেসবুক ইউজারের মনের ভিতরটা সম্পূর্ণ খুলে যায়। সবাই জেনে যায় আমি
আসলে কোন অবস্থানের। একবার যেই জানা হয়ে যায় আমি ঠিক কোন মনোভাবাপন্ন, তখন
যাত্রা শুরু করে ফেক নিউজ। আমি যে রাজনৈতিক দল কিংবা ধর্মীয় সম্প্রদায়কে অপছন্দ
করি তাদের সম্পর্কে নানাবিধ মিথ্যা, অর্ধসত্য এবং অসত্য তথ্য সংবাদের আকারে আসতে
থাকে। আর আমাদের মনের সঙ্গে মিলে যাচ্ছে বলে সেইসব ফেক নিউজ আমরা বিশ্বাস করতে
থাকি এবং শেয়ার করি। এই জাতীয় ডিজিট্যাল সংস্থা কারা চালায়? রাজনৈতিক দল, সার্ভে
কোম্পানি, স্পনসর্ড ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম, রাজনৈতিক দলের অধীনে থাকা শাখা সংগঠন।
এদের উদ্দেশ্য কী? সামগ্রিকভাবে একটা আইডিয়া করে নেওয়া এবং নিরন্তর সমীক্ষাকে
আপডেট রাখা যে ভারতের কোন এলাকায় কোন মনোভাবের কোন বয়সের কোন জাতির কোন
ধর্মের ইন্টারনেট ব্যবহারকারী মানুষের মনের গতিপ্রকৃতি ঠিক কেমন। এর মাধ্যমে
পরবর্তী রণকৌশল সাজাতে সুবিধা হয়। আর এইসব পেজের সদস্য যত বাড়ে, ততই বিজ্ঞাপন
বাড়ে। ফলে একদিকে যেমন এই পেজগুলির প্রধান উদ্দেশ্য সফল হয়ে যাচ্ছে আমাদের মন
জানতে পারা, ঠিক তেমনই আয়ও বেড়ে যাচ্ছে। এসবের মাঝখানে আমরা বোকার মতো সম্পূর্ণ
অজানা অচেনা ইউজারদের সঙ্গে ঝগড়া করি, যুক্তি খুঁজে না পেয়ে গালাগালি দিই, ব্লক
করি, ফেসবুকে কমপ্লেইন করি। আসলে এইসবই ওয়াচ করে ওইসব সংস্থা। একটি পেজকে ঘিরে যত
এসব হয় তত তার রোজগার বাড়ে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে। কারণ এরকম যত হবে ততই ওইসব পেজের
জনপ্রিয়তা বাড়বে। আমরা তাদের পাতা ফাঁদে স্রেফ পুতুলের মতো আচরণ করি আর রাতে শুতে
যাওয়ার আগে ভাবি দারুণ জিতে গেলাম।
ফেক নিউজ এবং ডেটা লিক বর্তমান যুগের সবথেকে
বিপজ্জনক প্রবণতা। যে প্রবণতার অস্ত্র, ঘাতক, শিকারি, শিকার, হত্যাকারী এবং নিহত
সবই আসলে আমরা নিজেরাই। আমরা নিজেদের প্রকাশ করে ফেলছি অনেক বেশি বেশি। যা আমাদের
কিন্তু কোনও লাভ প্রদান করছে না। আর্থিক ভাবে তো নয়ই। সামাজিকভাবেও নয়। নিজেকে
এক্সপোজ করা কখনওই বুদ্ধিমানের লক্ষণ নয়। কারণ একবার রাজনৈতিক দল যখন জেনে যাবে
আমি কোন মনোভাবের তখন আমি নামক ব্যক্তিত্বের প্রতি তাদের কোনও বিশেষ ইন্টারেস্ট
থাকবে না। তারা জেনেই যাবে আমি কী করতে পারি আগামী ভোটে। আমাকে আর গুরুত্ব দেবে
না। ঠিক এই কাজটিই করেছে কেম্ব্রিজ অ্যানালিটিকা নামক সংস্থা। যে কনসালটিং সংস্থা
রাজনৈতিক দল বা থিংক ট্যাংকদের পরিষেবা প্রদান করে। কংগ্রেস থেকে বিজেপি সকলেই এই
জাতীয় সংস্থাকে কন্ট্রাক্ট দিয়েছে। তাদের মাধ্যমে আমাদের জেনে নিয়ে ডেটা ব্যাঙ্ক
গঠন করছে রাজনৈতিক দলগুলি। আমরা রাজনীতির কাছে আত্মসমর্পণ করছি নিজেদের মনকে নগ্ন
করে দিয়ে। আমরা কর্পোরেটের কাছে নিজেদের প্রকাশ করে দিয়ে জানিয়ে দিচ্ছি কোন
ক্যামেরা কিনতে ইচ্ছা করছে, কোন মোবাইল খুব পছন্দ, কার সঙ্গে ঝগড়া হয়েছে, আমি
কোথায় যেতে চাই। সোশ্যাল মিডিয়া জানে আমরা আড়ালে কোন বন্ধুর বিরুদ্ধে চক্রান্ত
করছি, কাদের অলক্ষ্যে তাদের সম্পর্কে চরম বদনাম করি, কাদের প্রেমপ্রস্তাব পাঠাই,
কাকে মিথ্যা কথা বলি। এবং সর্বোপরি আমরা আদৌ কতটা পড়াশোনা করি সেটা বোঝা হয়ে
যায়। কারণ যখনই আমরা কোনও ফেক নিউজ শেয়ার করি তখনই ধরে নেওয়া যায় সেটি আমি
বিশ্বাস করি। এবং সেটির আসল তথ্য আমি জানি না। এবং যদি দেখা যায়, যে ডিভাইসে আমি
একটি ফেক নিউজ পেয়েছি সঙ্গে সঙ্গে সেটাতেই গুগল খুলে রিচেক করছি তাহলে সার্ভিস
প্রভাইডার আন্দাজ করে যে এই লোকটাকে বোকা বানানো যাবে না। এ লোকটা যা পায় তাই
শেয়ার করে না। সত্যাসত্য যাচাই করে। তখন আমাদের সে সমীহ করবে, ভয় পাবে। কারণ আমি
চোখ বন্ধ করা নকল অন্ধ সাজছি না এটা খুব বিপজ্জনক তাদের কাছে। কারণ ওটা হলে তাদের
ব্যবসা মার খাবে।
দুনিয়া জোড়া রাষ্ট্র এবং আন্তর্জাতিক কর্পোরেটের
কাছে এখন একটাই টার্গেট। কোনও নাগরিক যেন অচেনা এবং অজানা মনোভাবের না থাকে।
সবাই যেন খোলা বই হয়। সে কোথায় যাচ্ছে, কী করছে, কাকে ভোট দেয়, কাকে পছন্দ করে,
কাকে ঘৃণা করে, কী গান শোনে, কী গান শোনে না, কোন ফুটবল দলকে সাপোর্ট করে,
হিন্দুবিদ্বেষী কিনা, মুসলিম বিরোধী কিনা, গে কিনা, লেসবিয়ান কিনা, কে কার সঙ্গে
চ্যাটিং এ কী কী মেসেজ আর কনটেন্ট পাঠাচ্ছে, এই মুহূর্তে কোথায় রয়েছে...সব। সেটা
একমাত্র সম্ভব যদি তাঁকে সর্বদাই নজরবন্দি করে রাখা যায়। সেটা কীভাবে সম্ভব? ডেটা
লিকের মাধ্যমে। কাদের মাধ্যমে এভাবে ডেটা লিক হয়? প্রথমত সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে।
সার্চ ইঞ্জিন হিস্ট্রি প্রকাশ করে দেয় আমাদের পছন্দ, অপছন্দ। আমাদের স্মার্ট ফোনে
যখনই আমরা কোনও অ্যাপস ডাউনলোড করি সেটা আমাদের জিজ্ঞাসা করে কন্ট্যাক্ট, গুগল
ডেটা, মেল আইডি, লোকেশন ইত্যাদি অ্যাকসেস করতে আমি পারমিশন দিচ্ছি কিনা। আমরা
বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সেটা দিয়ে থাকি। অ্যালাউ কমান্ডে ইয়েস করি। তৎক্ষণাৎ ওই অ্যাপস
আমাদের সিংহভাগ ব্যক্তিগত ডেটা জেনে গেল। কিছু অ্যাপস, গান বা সিনেমা ডাউনলোডের
সাইট এবং কয়েকটি পেমেন্ট পোর্টাল আছে যারা জিজ্ঞাসা করে ফেসবুক কিংবা গুগল
অ্যাকাউন্ট ইউজ করবো? আমরা ইয়েস বলি। এবং নিজেদের সমস্ত গোপনীয়তা তুলে দিই ওই
অ্যাপস কিংবা থার্ড পার্টি পেমেন্ট পোর্টালের কাছে। এইসব অ্যাপে যখন আমাদের ডেটা
বা ব্যক্তিগত তথ্য ধীরে ধীরে চলে যায়, তখন আবার অন্য এক বিপদ জেগে ওঠে অলক্ষ্যে।
সেটি হল হ্যাকার গ্রুপ সক্রিয় হয়ে ওঠে। এইসব অ্যাপস হ্যাক করে সমস্ত তথ্য আহরণ করা
সম্ভব। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় সম্প্রতি এরকম এক হ্যাকার গোষ্ঠীকে ১ লক্ষ ডলার
দিতে বাধ্য হয়েছে একটি পরিচিত অ্যাপ ক্যাব সংস্থা। যাকে আমরা রোজই ব্যবহার করি।
নিজেদের কাস্টমার তালিকার লিক হয়ে যাওয়া ডেটাকে বিভিন্ন সংস্থাকে বিক্রি করা হবে
বলে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছিল। সেইসব ডেটা গোপন রাখার শর্ত হিসেবে বাধ্য হয় ওই
সংস্থা টাকা দিতে। ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, ট্যুইটারের মতো সোশ্যাল মিডিয়ায় থাকা
আমাদের গোপন ডেটা স্টোর করা আছে সেটা তো জানা কথা। পাশাপাশি গ্লোবাল পজিশনিং
সিস্টেম আমাদের প্রতি মুহূর্তের লোকেশন ট্র্যাক করে। অর্থাৎ আমরা জিপিএস অন করে
যেখানে যাই সেই অজানা রাস্তা আমাদের জিপিএস ম্যাপিং দেখিয়ে যেমন সাহায্য করে,
তেমনই তার আড়ালে বসে থাকা পরিচালকবৃন্দ জেনে যায় আমরা কবে কোথায় গিয়েছি, কোথায়
নিয়মিত যাই এবং সেভাবেই আমাদের মুভমেন্ট সম্পর্কে একটা অনুমানও করে নেওয়া হয়।
মতামত প্রদান করছি নিজেদের ব্যক্তিগত অবস্থান, বিশ্বাস আর পছন্দ অপছন্দের।
এতে সমস্যা কী? সমস্যা হল আমাদের কিছুই আর গোপন
নেই। এতে কার লাভ? রাষ্ট্রের লাভ। রাজনৈতিক দলের লাভ। দাঙ্গা বা সংঘর্ষ সৃষ্টি করে
মুনাফা করা সংগঠনের লাভ। এবং কর্পোরেটের লাভ। কর্পোরেট নানাভাবে লাভ করতে পারে।
তার একটি ক্ষুদ্র উদাহরণ হল আমাদের মধ্যে যুব সম্প্রদায়ের কর্মপ্রার্থী ছেলেমেয়েরা
জানেই না যে আজকাল চাকরি দেওয়ার আগে কর্পোরেট তথা বেসরকারি সংস্থা নিয়োগপরীক্ষা
বা ইন্টারভিউ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট প্রার্থীর ফেসবুক, ট্যুইটার অ্যাকাউন্ট দেখে নেয়। জেনে
নেওয়া হয় ওই প্রার্থী কতটা রাজনৈতিকভাবে উগ্র। কিংবা দাঙ্গাহাঙ্গামাপ্রিয় কিনা।
অথবা হেট স্পিচ শেয়ার করে কিনা। এরকম প্রার্থী হলে তাদের নাকচ করে দেওয়া হয়।
শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও। তাই যুব সম্প্রদায় সতর্ক থাকুন। নিজেকে অতিরিক্ত
প্রকাশ করে ফেসবুকে হাততালি পাওয়ার আড়ালে বহুকাঙ্ক্ষিত চাকরি কিন্তু হাতছাড়া হয়ে
যেতে পারে! এবার এসেছে ইন্টারনেট অফ থিংস নামক নতুন ডিভাইস। যা সেন্সরের সঙ্গে
আমাদের শরীরের যোগসূত্র তৈরি করছে। অর্থাৎ এবার মন নয়, আমাদের শরীরকেও জেনে যাবে
ডিজিট্যাল প্রযুক্তি।
কেন ডিজিট্যাল প্ল্যাটফর্ম ডেটা লিক আর ফেক নিউজের
সবথেকে বড় একটি মাধ্যমে পরিণত হল? কারণ ভারতে এখন ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা
৪৭ কোটি। তাদের মধ্যে গড়ে প্রত্যেকে ইন্টারনেট ব্যবহার করে সাড়ে ৭ ঘণ্টা করে। তার
মধ্যে আড়াই ঘণ্টা গড়ে সময় ব্যয় করা হয় সোশ্যাল মিডিয়ায়। ৪৩ কোটি ইন্টারনেট ব্যবহার
করে স্মার্ট ফোনে। ভারতে ২৫ কোটি মানুষ ফেসবুক গ্রাহক। ২০ কোটি মানুষ হোয়াটস
অ্যাপে আছে। ৬ কোটি ইনস্টাগ্রামে। সুতরাং লাইব্রেরি, বই, খবরের কাগজ ইত্যাদি
প্রিন্ট মিডিয়া থেকে দূরত্ব বাড়ছে। ফেক নিউজ শুধুই কি ডিজিট্যালি প্রচারিত হয়? না।
রাজনৈতিক নেতাদের ভাষণেও হয়। যেমন বিশ্বজুড়ে চলা ক্ষোভ আর নিন্দার প্রেক্ষিতে
মায়ানমারে আং সান সু কির ইনফরমেশন মিনিস্টার নিজের ফেসবুক ওয়ালে লিখেছিলেন
রোহিঙ্গারা নিজেরাই নিজেদের ঘরে আগুন লাগিয়েছে। এর সঙ্গে মায়ানমার আর্মির সম্পর্ক
নেই। আমাদের দেশের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী সম্প্রতি বলেছিলেন, স্টিফেন হকিং
নাকি কবে কোথায় লিখেছেন বৈদিক তত্ত্ব আইনস্টাইনের থিওরি অফ রিলেটিভিটির থেকে
উন্নতমানের। ফেক নিউজ নানারূপে আসছে আমাদের কাছে। আজকাল যে কোনও কোটেশনের নীচে
এপিজে আবদুল কালামের নাম লেখা থাকে। কবে কোথায় এসব কথা তিনি বলেছেন তার কোনও
অথেনটিক সোর্স নেই। রবীন্দ্রনাথের ভাষাভঙ্গির সঙ্গে বিন্দুমাত্র মিল নেই এরকম
কোটেশন শেয়ার করা হয় তাঁর নামে। আগামী একমাস পর নির্দিষ্ট একটি তারিখে পৃথিবী
ধ্বংস হবে এই সতর্কবার্তা দেওয়া হয়। আমরা শেয়ারি করি। ফেক নিউজের থেকেও বড় বিপদ
ফেক ফোটো। সুপার ইম্পোজ করে অন্য কোনও রাষ্ট্রের দাঙ্গার ছবি আমাদের আশপাশে
হয়েছে বলে শেয়ার করা হয়। রাহুল গান্ধী কিংবা মোদির ভুয়ো ছবি পোস্ট করে দেওয়া হয়।
এসব সম্ভব হয় কারণ আমরা কোনও পোস্ট বা ছবি, ভিডিও পছন্দ হলে সেটিকে যাচাই করি
না। শেয়ার করি। শ্রীদেবী মারা যাওয়ার দু ঘণ্টা আগেই যে দুবাইয়ের পার্টিতে নাচছিলেন
সেটি অনবরত শেয়ার হয়েছে। ইউটিউব সেটিকে অথেনটিকেট করেনি। অথচ সেই ভিডিও আদৌ সত্যি
কিনা কেউ যাচাই করেনি। শেয়ার করেছে। রাহুল গান্ধী জওহরলাল নেহরু নরেন্দ্র মোদি
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে অপছন্দ করুন। ক্ষতি নেই। ওটা আপনার গণতান্ত্রিক অধিকার।
কিন্তু তাঁদের সম্পর্কে ফেক নিউজের শিকার হবেন না। সেটা আপনার নিজের অপমান। আপনাকে
বোকা ভাবা হয় বলেই আপনাকে মিথ্যা খবর দিয়েই দলে টানার চেষ্টা হচ্ছে না তো?
নিজেকে করুন এই প্রশ্নটি।
ফেক নিউজের প্রথম ভিত্তিই হল অডিয়েন্সকে বোকা
বানানো। অর্থাৎ মিথ্যাকে সত্যি হিসেবে প্রচার ও প্রমাণ করা। এর পিছনের মনস্তত্ত্ব
হল ধরেই নেওয়া হচ্ছে আমরা সাধারণ পাবলিক সিংহভাগ ইতিহাস, ভূগোল, বিজ্ঞান কিংবা
সমকালীন রাজনীতি সম্পর্কে অজ্ঞ। সুতরাং জানেই না যখন, তখন ভুলপথে চালিত করো এদের।
এভাবে আমরা জানার কোনও চেষ্টা না করে নিজেদের অজান্তে হয়ে যাচ্ছি অন্ধ ক্রীতদাস।
রাজনৈতিক দলের,স্বার্থান্বেষী সংগঠনের, কর্পোরেটের এবং রাষ্ট্রের। নিজেদের
বোধবুদ্ধির ঘরে বেশিক্ষণ থাকি না। আমরা স্থায়ী বাসিন্দা হয়ে যাচ্ছি ডিজিট্যাল
বন্দিশালার! যা ক্রমেই হয়ে পড়ছে হীরক রাজার মস্তিষ্ক প্রক্ষালক যন্ত্র। চলছে
নিরন্তর মগজ ধোলাই!
(প্রবন্ধটি বর্তমান পত্রিকা ,১৩ই এপ্রিল,২০১৮ এ প্রকাশিত হয়েছে। লেখকের
সন্মতিক্রমে ব্লগে প্রকাশিত হল।)
No comments:
Post a Comment