আমি বরাবরই ভালো স্টুডেন্ট ছিলাম না। অন্তত মাধ্যমিক অবধি তো একেবারেই পড়াশোনা করতাম না। প্রচুর বকা, শাসন কিস্যু কাজে আসেনি। তবে উচ্চমাধ্যমিকের ব্যাপারটা আলাদা ছিল। তখন খুব পড়তাম,কেমন যেন একটা জেদ চেপে বসেছিল, আমার স্বপ্নের রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার জন্য। খুব ইচ্ছে ছিল ভালো রেজাল্ট করে বিশ্বভারতীতে পড়বো। কিন্তু ঘটনা চক্রে আমার ঠিকানা হয় কোলকাতা-৩২। মনে আছে, প্রথম যেদিন পরীক্ষা দিতে এসেছিলাম, সেদিন আমি ভয়ে ছিলাম যে, যদি কিছুই লিখতে না পারি!কিন্তু ভয় কাটিয়ে দিয়েছিল মুধুরিমা দি।
ভাবছেন কি, স্মৃতিচারণ করতে বসেছি? না। আসলে গল্পটা এবার বলবো। প্রচণ্ড বৃষ্টির মধ্যে যখন বেরিয়ে এলাম হল থেকে, মা আর বাবা মিলনদার ক্যন্টিনের সামনে দাঁড়িয়ে। ততক্ষণে তাদের মনস্থির করা শেষ, আমায় এখানেই ভর্তি করাবে। কিন্তু ভয় একটাই, পরীক্ষা ভালো হয়েছে তো? হ্যাঁ, এই ভয়েই ছিলাম। পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরে গিয়েও খুব চিন্তায় ছিলাম। আসলে আর পাঁচটা কলেজের মতো যে যাদবপুর নয়।এখানে সিট বিক্রি হয়না। সেই জন্যই হয়তো আজকে আমি এখানে পড়ার সুযোগ পেয়েছি। নইলে অতো দামী সিট কেনার ক্ষমতা আমার বাবার ছিলনা।
যাদবপুরে আমরা ১২৩৫ টাকা দিয়ে ভর্তি হয়েছি। আর যারা Free Studentship এর জন্য eligible , তারা সেই টাকাটাও ফেরত পেয়ে গেছে। এখানে সিট বিক্রি হয় না মশাই। এখানে ছাত্র-ছাত্রীদের দরদাম করা হয়না, তাদের মেধা দেখা হয়।তাই অনুরোধ করছি সবাইকে, আমাদের আরো ভাইবোনেদের নিজেদের যোগ্যতার ভিত্তিতে ভর্তি হতে পারার জন্য সাহায্য করুন।
যাদবপুরের দর্শন বিভাগে যেদিন প্রথম ক্লাস করতে ঢুকেছিলাম, পরিচয় পর্ব শেষ হওয়ার পর খুব স্বাভাবিক ভাবেই, সেদিন আমাদের প্রত্যেক শিক্ষক-শিক্ষিকারাই আমাদের ক্লাসে এসে আমাদের অনেক কথা বলেন। তার মধ্যে S.B. sir এঁর বলা একটা কথা এখনও মনে আছে, "আমাদের এই দর্শন ভবন, Asia's best department of Philosophy".
এখন বিষয় টা হলো যে, এই "Asia's best department" হওয়ার পেছনে যাদের অক্লান্ত এবং অবর্ণনীয় ভূমিকা আছে তাঁরা হলেন আমাদের এই সমস্ত শিক্ষকগণ। তিল তিল করে এই বিভাগকে সেই পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছেন যাঁরা, হঠাৎ করে আজ কিভাবে তাঁদের কর্মপদ্ধতি বা তাঁদের যোগ্যতার দিকে আঙুল তোলা হচ্ছে?
আমাদের শিক্ষকদের অপদস্থতার শিকার না হতে দেওয়ার জন্য লড়ে চলেছি আমরা। অনশনের পর অনেকেরই শরীরের অবস্থা ভালো নয়।সোমাশ্রী দি বর্তমানে K.P.C. তে ভর্তি।এরপরেও অনশনকারীদের দিকে তাকানোর বিন্দুমাত্র প্রয়োজন বোধ করছে না কর্তৃপক্ষ।
এর মধ্যেই আমাদের বিভাগের শিক্ষকেরা নিজেদের মতামত জানিয়ে ডেপুটেশন জমা দিয়েছেন। এই ডেপুটেশন অনুসারে,তাঁরা কেউ প্রবেশিকা বিহীন ভর্তি প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণ করবেন না, এমনটাই জানিয়েছেন।
যারা খুব জোর গলায় বলে চলেছেন, যাদবপুরের ভর্তি প্রক্রিয়ায় চরম দুর্নীতি থাকে। এখানে শিক্ষকদের নিজেদের পছন্দ মতো কিংবা পরিচিতি ভিত্তিক ছাত্র-ছাত্রী বাছাই প্রক্রিয়াকে সমর্থন করা উচিৎ নয়। আমার যতোদূর ধারণা হলো, হয় তাঁরা নিজে এখানে ভর্তি না হতে পারার জন্য যে ক্ষোভ দীর্ঘদিন ধরে মনে চেপে রেখেছিলেন, আজকে সুযোগ পেয়ে তা উগড়ে চলেছেন; কিংবা হতে পারে তাঁদের নিজেদের আত্মীয় বা পরিচিত কেউ সুযোগ পাননি যাদবপুরে পড়ার অথবা হতে পারে খুব কষ্ট করে টুকলি করে উচ্চমাধ্যমিকে দারুন নম্বর পেয়েছে,এখন মেধার ভিত্তিতে ভর্তি হলে তার সুযোগ না পাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল, তাই প্রবেশিকা বন্ধ হয়ে গেলে ভালো হবে ভেবে আনন্দে নাচছে। আর সবথেকে প্রবল সম্ভাবনা ময় আরেক দল, যাদবপুরে তোলাবাজি করতে পারছেননা জন্য হতাশ হয়ে পড়েছেন।
ওদের কোনো দায় ছিলনা, তিন দিনের ওপরে (প্রায় ৯৩ ঘন্টা) অনশনে বসে থেকে নিজেদের যেচে কষ্ট পাওয়ার।আর আজকে ওরা আংশিক হলেও সফল।হাজার হাজার আবেদনকারীর মুখে হাসি ফোটাতে পেরে, তাদের একটু স্বস্তি দিতে পেরে ওরা সফল।
এভাবেই বারবার হার না মানার লড়াই শিখিয়ে দেয় যাদবপুর।
No comments:
Post a Comment