![]() |
Image Source - Wikipedia |
- রিক গুহ
ইংরেজ উদ্ভিদবিদ ও আলোকচিত্রী অ্যানা অ্যাটকিনসকে
বিবেচনা করা হয় ইতিহাসের প্রথম নারী আলোকচিত্রী হিসেবে এবং তিনিই হচ্ছেন প্রথম
ব্যক্তি যিনি কিনা আলোকচিত্র সম্বলিত বই প্রকাশ করেছিলেন।এটিই ছিল বৈজ্ঞানিক
গবেষণার মত জটিল কাজে আলোকচিত্রের প্রথম ব্যবহার।এই অগ্রগামী বিজ্ঞানী এবং শিল্পী
১৮৪৩ থেকে ১৮৫৪ পর্যন্ত তার সংগৃহীত জলজ উদ্ভিদ নমুনার আলোকচিত্র নিয়ে British
Algae: Cyano type Impressions বইটি প্রকাশ করেন।
![]() |
Image Source - digitalcollections |
প্রকৃত অর্থেই তিনি ছিলেন
আলোকচিত্রের বই প্রকাশের পথিকৃৎ। এমন এক সময় তিনি কাজটি করেন, যখন প্রাতিষ্ঠানিক
বিজ্ঞানচর্চায় নারীদের অগ্রযাত্রা ঠিক শুরু হয় নি।এমন একটা সময় যখন মাত্রই
নিপসে-ট্যালবট-দাগেরোর হাত ধরে আলোকচিত্র মাধ্যমের পথ চলা শুরু
হয়েছে।"সায়ানোটাইপ" নামের এই বিশেষ বৈজ্ঞানিক কৌশলের আসল লক্ষ্য ছিল সহজ
প্রক্রিয়ায় এবং কম খরচে স্থাপত্য সম্পর্কিত ড্রয়িং, স্কেচ, ডায়াগ্রাম ইত্যাদি
পুনর্মুদ্রণ করা। নীলচে বা সায়ান রঙের কারণে প্রক্রিয়াটি সায়ানোটাইপ নামে পরিচিতি
লাভ করে। এই কারণে আজও আমরা স্থাপত্য বিষয়ক প্রিন্টগুলোকে ‘ব্লু প্রিন্ট’ নামেই
ডেকে থাকি।
![]() |
Image Source - The Public Domain Review |
১৮৪৩ সালে স্ব-প্রকাশিত বইটি অ্যানা উৎসর্গ করেন তার পিতা এবং তার বিজ্ঞান শিক্ষক-ইংরেজ রাসায়নিক, খনিজবিজ্ঞানী, প্রাণিবিজ্ঞানী জন জর্জ চিলড্রেনকে ।পরবর্তী এক দশকে অ্যানা সামুদ্রিক শৈবালের সহজ কিন্তু বিস্ময়কর আলোকচিত্র সম্বলিত তিনটি ভলিউম প্রকাশ করেন।প্রকৃত অর্থে অ্যানার উদ্ভিদের প্রতি আগ্রহই তার বইয়ে দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। তিনি ১৮৪১ সালে প্রকাশিত ব্রিটিশ শৈবালের একটি গাইডের চিত্রণ দেখে এতটাই হতাশ হয়ে পরেন যে এ ব্যাপারে নিজে কিছু করার সিদ্ধান্ত নেন। তারপর ১৮৪৩ সালের শরতে তিনি হার্শেলের সায়ানোটাইপ পদ্ধতি ব্যবহার করে শত শত বিভিন্ন ধরনের ছবি তৈরির কাজ শুরু করেন। শুধু মাত্র এই একটি কাজের জন্য পরবর্তী এক দশকে অ্যানা ৫০০০ এর অধিক ফটোগ্রাফিক প্রিন্ট তৈরি করেন। এই কাজে জন্য প্রয়োজন ছিল সূক্ষ্ম দক্ষতার যাতে করে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য শুকনো শৈবালগুলোকে রাসায়নিকযুক্ত কাগজের উপর রেখে সূর্যের আলোতে এক্সপোজার ( ক্যামেরার মাধ্যমে ছবি তোলার সময় ছবিতে কতটুকু আলো বা অন্ধকার আসবে তা যে বিষয়ের উপর নির্ভর করে তাকেই ফটোগ্রাফির ভাষায় এক্সপোজার বলা হয়ে থাকে ) দেয়া যায়। অ্যানার বইয়ের ছবিগুলো দেখলে শুধুমাত্র পৃষ্ঠা জুড়ে সুন্দর ও সূক্ষ্মতায় ছড়িয়ে থাকা শৈবালগুলোর প্রান্তরেখার প্রতি আকর্ষণ কাজ করে না বরং ছবিগুলোর উজ্জ্বল প্রুশিয়ান নীল দৃশ্যপট এক ধরণের মনলোভা ঘোরের সৃষ্টি করে। হার্শেলের পদ্ধতি তার বইয়ের পাতায় রঙ জুগিয়েছে, তাতে করে বইয়ের প্রতিটি পাতাকে শৈবালের প্রান্তরেখার সাথে রূপান্তরিত করেছে গভীর নীল রঙে। পরবর্তীতে এই পদ্ধতির ফলস্বরূপ ইংরেজি ভাষায় নতুন একটি শব্দ “ব্লুপ্রিন্ট” যোগ হয় যাকে আমরা বাংলায় নীলনকশা বলে থাকি।
অ্যানার ছবিগুলো বিস্ময়কর রকমের আধুনিক। কখনো
পৃষ্ঠাজুড়ে সিহর্সের মত আকৃতি সাথে ছুঁচালো তুষারকণা। অন্য কোথাও, পালকের
প্রান্তরেখা এবং ভৌতিক উদ্ভিদের গুচ্ছ। কিছু পাতায় শুধুমাত্র শৈবালের একটি বা দুটি
ফোঁটা দেখা যায়, আবার কিছু পাতায় বস্তুর বিন্যাস দেখলে এক নান্দনিক এবং বৈজ্ঞানিক
দৃষ্টির পরিচয় মেলে। আমরা বলতেই পারি যে অ্যানা ছিলেন খুব সতর্ক এবং দক্ষ। এই
কাজের জন্য তিনি বেছে নিয়েছিলেন খুব ভাল মানের কাগজ, যে কারণে এখনো তার ছবিগুলো
চমৎকার অবস্থায় রয়েছে। যতটা সম্ভব পরিষ্কার ছবির জন্য এই কাগজে কতটুকু সময়
সূর্যালোকে রাখা প্রয়োজন সে ব্যাপারে তিনি ছিলেন যথেষ্ট পারদর্শী । তাই এখন ১৭৫
বছর পরেও তার ছবিগুলোকে অনেক সজীব লাগে এবং বর্তমান সময়ের শিল্পীরাও এই একি পদ্ধতি
ব্যবহার করে নিজেদের শৈল্পিক বোধ প্রকাশ করে চলেছেন। দশ বছরে অ্যানা যথেষ্ট ছবির
প্রিন্ট তৈরি করেন, যা পরবর্তীতে তার সহকর্মী এবং শুভানুধ্যায়ীদের মাধ্যমে বইয়ের
দুই মলাটে আবদ্ধ হয়। অ্যানা নিজেই তাদের ছবি পাঠাতেন। প্রতিটি ছবিতে থাকত ছোট
কিন্তু পরিষ্কার হাতের লেখায় উদ্ভিদগুলোর ল্যাটিন নাম।
আলোকচিত্র এবং এর মুদ্রণ ইতিহাসে অ্যানা অ্যাটকিনস
স্পষ্টত গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন।আলোকচিত্রের শৈশবে তার করে যাওয়া কাজ আজও পথ
দেখাচ্ছে-অনুপ্রাণিত করছে নতুন প্রজন্মকে।
No comments:
Post a Comment