ঠিক গ্রন্থ সমালোচনা নয় জয় গোস্বামী র 'যেখানে
বিচ্ছেদ 'পড়তে পড়তে নিজের অনুভূতি গুলোর কথাকে লিখেছি মাত্র। পড়তে পড়তে শব্দ
গুলোকে যখন ছুঁয়ে দেখছিলাম তখন বারবার
মনে হয়েছে এ যেন এক নিঃসঙ্গ কবির
বেদনার যাপনচিত্র।
জয় গোস্বামী হৃদয়ের ব্যাকুলতাকে নিয়ে বারবার
এসেছেন পাঠক মহলে। তাঁর কবিতা এবং গদ্যে বারবার ঘুরে ফিরে এসেছে মানবিক সম্পর্কে র
টানাপোড়েন, আলো-আঁধার, প্রেম-অপ্রেম, নিঃসঙ্গতা এবং ব্যর্থতা বোধের কথা। অনুভূতি
র ক্যানভাসে তাঁর অনায়াস যাতায়াত। 'যেখানে বিচ্ছেদ 'এও রয়েছে এক কবির বিষাদঘন
জীবনের আখ্যান। বইটি শুধু মাত্র ই যে কবিতার তা নয়, এতে
যেমন কবিতার আস্বাদন রয়েছে, রয়েছে কাব্যের আলোছায়া । ঠিক
তেমন ই তিনি তিনটি চরিত্র কে নিয়ে এসেছেন অথচ সেই
চরিত্র তিনটির কোনো নাম নেই নেই কোনো
প্রত্যক্ষ উক্তি-প্রতুক্তি। লেখনীকৌশলের দিক থেকে এবং সংরূপের বিচারে তাই 'যেখানে
বিচ্ছেদ 'একটি সার্থক কাব্যনাট্য।
'সে-সব সূর্যাস্ত যারা বহুকাল অতীত হয়েছে
সে-সব সূর্যাস্ত যারা এরপর অতীত হয়ে যাবে... '
'যেখানে বিচ্ছেদ 'শুরু হচ্ছে এই কবিতার মধ্য দিয়ে
এবং বইটি যে কাহিনি বলতে শুরু
করেছিল তারও সমাপ্তি ঘটছে কবিতার
মধ্য দিয়ে। এখানে লেখক তিনটি মূল চরিত্রের অবতারণা করেছেন। যাঁদের মধ্যে একজন কবি এবং তাঁর সম্পর্কিত
দুই নারী। জীবনের ওঠা -পড়া, ভালোথাকা, ঘাত-প্রতিঘাতের মোড়োকে সাজানো হয়েছে
'যেখানে বিচ্ছেদ 'কে। এটি একটি সম্পূর্ণ ভাবে মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েনের গল্প।
যেখানে রয়েছে সম্পর্কে র নানা জটিলতা -নাম আবার নাম না থাকা অদ্ভুত সব
সম্পর্ক।ভালোবাসতে যে বয়স লাগে না এবং ভালোবাসা সম্পূর্ণ রূপে একটি যাপন তারই গল্প
হল'যেখানে বিচ্ছেদ '।যতটা পুড়লে একটি কবিতার জন্ম হয় ঠিক ততটাঅ যেন এই লেখার মধ্যে দিয়ে কবি পুড়েছেন। এবং তেমন ভাবেই কবি
তাঁর উত্তপ্ত শরীরে জন্ম দিয়েছেন গল্পের মূলচরিত্রদের।
এখানে মূল পুরুষ চরিত্র যিনি একজন কবি, সেই কবির
কাব্যজগৎ ও ব্যক্তিগত জীবনের উপর নির্ভর করে জন্ম হয়েছে 'যেখান বিচ্ছেদ 'এর। 'যেখানে
বিচ্ছেদ 'এর অপর দুই প্রধান নারীচরিত্র এই কবির
ছায়াসঙ্গিনী হয়েছেন। তাঁদের জীবনবৃত্তের
কেন্দ্রে ছিলেন একমাত্র এই কবি।প্রথম নারী হলেন কবির প্রাক্তন প্রেমিকা আর দ্বিতীয়
নারী কবিকে ভালোবাসেন, এক নামহীন অসমবয়সী ভালোবাসা। আবার দেখা যায় এঁনারা তিনজনেই একই সুতোয়
বাঁধা, ঘটনাচক্রে কবির প্রাক্তন প্রেমিকা আবার
দ্বিতীয় নারীর আত্মীয়। তাঁদের জীবনের পাওয়া না পাওয়া,
প্রেম অপ্রেমের কাহিনি হল এই'যেখানে বিচ্ছেদ '।বিচ্ছেদ মানে যে
চিরতরে অস্তিত্বের সঙ্গে থেকে যাওয়া তারই উপলদ্ধির লিপিবদ্ধকরণ হল গ্রন্থটি।
'যেখানে বিচ্ছেদ 'এর প্রচ্ছদ অলংকরণ
করেছেন শিল্পী
দেবাশিস সাহা। প্রচ্ছদের সঙ্গে বিষয়বস্তুর যথেষ্ট
সামঞ্জস্য রয়েছে। দুটো মুখের মধ্যবর্তী ব্যবধানে তিনি 'যেখানে বিচ্ছেদ 'লিখে
সাজিয়েছেন, যা তাৎপর্যময়। সম্পর্কে র দূরত্ব বেড়ে যাওয়া,
যোগাযোগ কমে আসাকে শিল্পী সুন্দর
ভাবে প্রচ্ছদের মধ্যে ফুটিয়ে তুলেছেন। প্রচ্ছদে রঙের ব্যবহারের গুরুত্ব রয়েছে
যথেষ্ট। এখানে 'বিচ্ছেদ' কে কালো রঙে না দেখিয়ে 'লাল' রঙের রেখায় সাজানো হয়েছে। গাঢ় রঙের ব্যবহার বিচ্ছেদ ও
বিষাদের ভার বহন করছে।
একজন কবির জীবনের রয়েছে অনেকগুলি অধ্যায়, অনেক পরত
যার প্রতিটি বাঁকে বাঁকে দাঁড়িয়ে থাকে কবি। কবির মনের আবেগ, বিষাদ, যন্ত্রণা নিয়ে
দাঁড়িয়ে রয়েছেন। নোটবুক আর পেনের সঙ্গে সঙ্গে
সুন্দরের প্রতি আকর্ষণ ও তাঁদের জীবনে নামিবে আনে
ট্র্যাজেডি। সেই সব পেয়েও হারিয়ে ফেলার কাহিনি
হল'যেখানে বিচ্ছেদ '।।
No comments:
Post a Comment