যে দেশে সালাম,বরকত,রফিক ও জব্বারের
মত ছাত্রেরা খুব নিভৃতে বাস করে প্রতিটা আঠারোর বুকে সেই দেশে অন্যায়ের প্রতিবাদ
হবেই আর তা রক্ত দিয়েই হোক!
সারা বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা এখন
রাস্তায় নেমেছে ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দলন’ এ।
গত ২৯ জুলাই রবিবার দুপুর সাড়ে
বারোটায় রাজধানীর বিমান বন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনের রাস্তায় ঘটে যায় এক
মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘটনা।জাবালে নূর নামক একটি বাস সড়কটির ফুটপাথে দাঁড়িয়ে থাকা
কিছু স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীর উপর উঠিয়ে দেয়।ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারায় শহীদ
রমিজউদ্দীন ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী দিয়া
খানম মীম এবং ওই একই কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী আব্দুল করিম।গুরুতর ভাবে
আহত আরো দুইজনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয় এবং আহত আরো বারো জন
ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়।
বাংলাদেশ কে বলা হয় অপার সম্ভাবনাময়
দেশ কিন্তু এ দেশে কে কার উপরে উঠবে,কে কার আগে যাবে আর তা দূর্নীতি দিয়েই হোক না
কেন তা নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যথা নেই।আগে বাড়তে পারলেই হলো।এটা শুধু মানুষের লাইফ
স্টাইলের কিছু লাইন আর কি!এ দেশে ঠিক এই লাইফ স্টাইলের মতনই নিত্যদিনের চলাচলেও কে
কার আগে যাবে এই চিন্তা থেকেই শুরু হয় ভয়াবহ রকমের প্রতিযোগিতা।
সেদিনের দূর্ঘটনাও এর ব্যতিক্রম
নয়।আগে যাবার চিন্তা থেকেই বাসটি দ্রুত গতিতে অতিক্রম করতে
গিয়ে উঠিয়ে দেয় ফুটপাতে
যে ফুটপাত কিনা মানুষের নিশ্চিন্তে চলাচলের রাস্তা।অন্যদিকে এসব বেপরোয়া বাস ড্রাইভার
বা অন্য কোনো গাড়ির চালকদের ঠিক মত কোনও ড্রাইভিং লাইসেন্স নাই।ওইদিন দুর্ঘটনার
পরপরই ছাত্ররা নেমে যায় রাজপথে এবং তারা গাড়ি ভাঙচুর করে।সাথে তারা গাড়ি থামিয়ে
ড্রাইভিং লাইসেন্স চেইক করা শুরু করে।
এদিকে পুলিশ মোতায়েন করা হলেও ছাত্র
সমাজ তাদের কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন’চালিয়ে যায়।এবং সারা দেশে
নেমে আসে শোক এবং আঠারোর শক্তি!
ছাত্র সমাজের দামী তারা নিরাপদে
বাঁচতে চায়,নিরাপদ সড়ক এবং তাদের মতই কিছু প্রান অকালে ঝরে যাওয়ার বিচার!
সেদিন থেকে শুরু হয় মানববন্ধন।ঢাকার
রাস্তায় রাস্তায় নেমে পরে ইউনিফর্ম পরিহিত সাধারণ শিক্ষার্থী, সাথে তাদের মা
বাবারাও সাপোর্ট করা শুরু করে।অন্যদিকে যেহেতু তারা রাস্তা অবরোধ করেছে তাই
রাস্তায় যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায় অনেকটা তাই কিছু মন্ত্রীর গাড়িও রাস্তার উলটো
দিক দিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে কিন্তু ছাত্র সমাজ তা রুখে দেয়।
তাদের উপর পুলিশের লাঠি চার্জ হচ্ছে
কিন্তু তারা দমে যাবার নয়।শুধু লাঠি চার্জ নয় তাদের কে
মারধোর ও করা হচ্ছে,এবং
তাদের কে শ্রমিক রাও পেটাচ্ছে।শিক্ষার্থীরা বলেছে দোষ তাদের নয় দোষ যদি থাকে তা
হলো সালাম,রফিক,জব্বারের তারাই তো শিখিয়ে গিয়েছেন কিভাবে নায্য দাবী আদায় করতে হয়,তারাই
তো ভাষা আন্দোলন করেছিলেন,তাই আমরা আজ রাজপথে আমাদের দাবী আদায়ে।
নৌমন্ত্রী শাহজাহান খান বলেন ভারতে
একটা দূর্ঘটনায় ৩৩ জন মারা গিয়েছিল কই সেখানে তো এরকম আন্দোলন হয়নি!এই বক্তব্যের
জের ধরে শিক্ষার্থীরা তাকে ধিক্কার জানিয়ে তার পদত্যাগের দাবী করেন।তারা শুধু বাস
ভাঙছে না তারা ভেঙে যাওয়া কাঁচের টুকরো গুলো নিজেরাই পরিষ্কার করছে আরেকদিকে লাইসেন্স আছে কিনা তা জানতে
চাওয়ায় যাত্রাবাড়ি দনিয়ায় এক শিক্ষার্থীর উপর দিয়ে পিকাপ
গাড়ি উঠিয়ে দেন এক চালক!সেই শিক্ষার্থী
এখন আশঙ্কামুক্ত।
এদিকে পুরো ঢাকার অবরোধ,মানববন্ধন কে
এর সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে বিভিন্ন পাবলিক এবং প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় গুলো
অবরোধ কর্মসূচী পালন করছে।
আজ ২ আগস্ট বৃহস্পতিবার অবরোধ ও মানববন্ধন
কর্মসূচী আরো জোরালো হয়েছে,আজ উত্তরা হাউজবিল্ডিং এ শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরুদ্ধ করে
লাল সবুজের পতাকা গায়ে জড়িয়ে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
আন্দোলনের সমর্থনে শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে পথ নাটক করেন।এবং বিক্ষোভ মিছিল
তো চলছেই ‘নিরাপদ সড়ক চাই আন্দলোনে’
আজ শুধু ঢাকা নয় সারা বাংলাদেশে কিছু
কিছু কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে।ছোট ছোট বাচ্চা যারা কিনা আন্দোলনের আ ও বুঝেনা
তারাও রাজপথে নয় দফা দাবী আদায়ে।
তাদের নয় দফা দাবীঃ
১. বেপোরোয়া
ড্রাইভারকে ফাঁসি দিতে হবে এবং এই শাস্তি সংবিধানে সংযোজন করতে হবে।
২. নৌ-পরিবহন মন্ত্রীর ঐ
দিনের বক্তব্য প্রত্যাহার করে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে নিঃশর্ত ক্ষমা চাইতে হবে।
৩. শিক্ষার্থীদের চলাচলে
এমইএস ফুটওভার ব্রিজ বা বিকল্প নিরাপদ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে।
৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে, থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে।
৭. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না।
৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।
৪. প্রত্যেক সড়কের দুর্ঘটনাপ্রবণ এলাকাতে স্পিড ব্রেকার দিতে হবে।
৫. সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ছাত্র-ছাত্রীদের দায়ভার সরকারকে নিতে হবে।
৬. শিক্ষার্থীরা বাস থামানোর সিগন্যাল দিলে, থামিয়ে তাদের বাসে তুলতে হবে।
৭. শুধু ঢাকা নয়, সারাদেশের শিক্ষার্থীদের জন্য হাফ ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।
৮. ফিটনেসবিহীন গাড়ি রাস্তায় চলাচল বন্ধ ও লাইসেন্স ছাড়া চালকরা গাড়ি চালাতে পারবে না।
৯. বাসে অতিরিক্ত যাত্রী নেওয়া যাবে না।
ইউনিফর্ম
পরা বাচ্চা রা যাদের কে নিয়ে ভাবতাম এদের দিয়ে কিচ্ছু হবেনা আজ তাদের দেখে মনে হলো
আমরাই কিছু করতে পারিনি।ওদের গলার নীচ থেকে সম্পূর্ন টা কলিজা।এই কলিজা ধারন না
করলে হয়তো বুঝতেই পারতাম না পৃথিবী কেন এদের দিকে অবাক তাকিয়ে রয়।
ফার্মগেট,মতিঝিল,মিরপুর,উত্তর্,আসাদ
গেইট,এমনকি আমাদের দেশের আদিবাসীরাও আন্দোলন চালিয়তে যাচ্ছে,
যা আমাদের
ট্রাফিক পুলিশ করতে পারেনা তাই করছে আমাদের বাচ্চা বাচ্চা ভাই বোনেরা
এদিকে লাস্ট
আপডেট অনুযায়ীঃপ্রধানমন্ত্রী দিয়া খানম মীম আর আব্দুল করিমের পরিবার কে ২০ লক্ষ
টাকা করে ক্ষতিপূরণ দিয়েছেন!
কিন্তু এই
প্রাণ,এই তারুণ্যকে কে ফিরিয়ে দিবে!
তাজা রক্ত
গুলো জেগে উঠেছে! জেগে উঠেছে হাজারো প্রাণের মধ্যে মীম আর করিম! ওরা এই প্রাণেই
প্রাণ ফিরে পাবে!এই দাবী ওরা আদায় করবেই।আর অকালে যেন প্রাণ না যায় তাই আমার
ভাইয়েরা রাজপথ কাপাচ্ছে!
এই আমার
বাংলাদেশ! মাথা নত করেনা এরা! মাথা নত করতে শেখেনি এরা।
কোটি প্রাণে
আজ মতম উঠেছে! ওরা নির্ভীক!
আমার
বাংলাদেশ জেগেছে বৃষ্টিতে ভিজে,রোদে পুড়ে! আমার বাংলাদেশ উঠে দাড়িয়েছে মায়ের কান্না মুছতে!
আমার
বাংলাদেশ,আমার গর্ব!
No comments:
Post a Comment