১৯৭৬ সাল,শ্যাম
বেনেগাল বানালেন “মন্থণ”। ভারতের White
Revolution প্রেক্ষিতে তৈরি এ ছবির প্রোডাকসন কস্টের
অনেকটাই বহন করেছিল গুজরাতের প্রায় পাঁচ লক্ষ গোয়ালা। প্রত্যেকে কনট্রিবিউট করেছিল
দু‘টাকা করে। ১৯৭৭’এ মন্থণ পেল সে বছরের ন্যাশানাল
ফিল্ম ফেয়ারে,বেস্ট হিন্দি ফিল্মের তকমা। যেদিন রিলিজ
হয়েছিল সিনেমাটা , ট্রাক বোঝাই হয়ে সেইসব
ফাইনান্সার গিয়েছিল প্রিমিয়ারে। আসলে গুজরাতের সামাজিক আর অর্থনৈতিক প্রেক্ষিতে এই
আন্দোলন ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ। স্বাধীনতার আগেই ত্রিভুবন দাস প্যাটেলের হাতে গড়া
দুগ্ধ খামার টিই ডঃ ভার্গিস কিউরেনের চেষ্টায় হয়ে উঠে আমুল,টেস্ট ওব ইন্ডিয়া। আমুলই বোধহয় ভাবতে বাধ্য করেছিল “দুধ না খেলে হবে না ভালো ছেলে”।
ভারতে তো বটেই বাইরেও
মিল্ক বা মিল্ক প্রোডাক্ট ব্র্যান্ড হিসেবে আমুল জনপ্রিয়। তবে আমুলের এই সামাজিক
গুরুত্ব,মার্কেট ভ্যালু বা নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের স্পনসর হওয়া—আনন্দ থেকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা মাইলস্টোন গুলির অন্যতম
আমুলের বিজ্ঞাপনের কৌশল আর সতন্ত্রতা।
মনে করুন গল্প হলেও সত্যি সিনেমার ওই অংশটা।
টাইয়ের বিজ্ঞাপনে নগ্ন নারী শরীরের ব্যবহার নিয়ে শিল্পী যখন নিজেই ডিলেমায়, তখন তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে সেক্সের শক দিয়ে পাবলিসিটিটাই
আসল। শকুমেন্টরি কনসপ্টে পাপলিসিটিটাই আসল,রেলিভেন্স
ক্রেতারাই ভেবে নেবে। এই নিছক বাজারি পদ্ধতি কিন্তু বিজ্ঞাপনে সফল। আর আছে
সেলেব্রেটি ইমজের ব্যবহার। কখনও ট্রেন্ড হয়েছে বাচ্ছা ছেলেমেয়েদের দিয়ে প্রোডাক্ট
এনডরসড করানো। প্রত্যেক কোম্পানি তাদের বিজনেস ফিলোজফি অনুসারে ঠিক করে নিয়েছে
তাদের বিপনণের ভাষা। কিছু কিছু আজও তাই ইউনিক! যেমন
ইনটেল। ওরা বার্সালোনার স্পনসর ছিল। কিন্তু লোগো ব্যবহার করা হতো জার্সির ভিতরে। ঠিক সেলিব্রেসানের মুহূর্তে জার্সিটার ভেতরের ভেস্ট
উন্মোচিত হলেই চোখে পড়বে ইনটেলের লোগো। ভাবুন তো পাবলিসিটি করতে এসে এ কেমন
লুকোচুরি খেলা। আসলে ইনটেল চাইছিল এই ভাবে তাদের ট্যাগ লাইনটাও কন্সেপচুয়ালিজ
করতে- “Intel
Inside”।
এই ধরনের এক নতুন ভাবনায় আমুল পালটে গেলো
ভারতীয় Brand
Promotion এর
ধরন। ১৯৬৬ সালে আমুল বিল বোর্ড বিজ্ঞাপনের জন্য নিয়োগ করে Advertising and Sales
Promotion (ASP)
নামের একটি সংস্থাকে। সেই সংস্থার তৎকালীন অধিকর্তা Sylvester da Cunha,
তাঁরই ভাবনার ফসল এই আমুল বাটার গার্ল। লাল পলকা ডটের ফ্রক, নিল হাফ পনি
চুলের হাতে আঁকা কার্টুনই দিনে দিনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। তবে এই সৃষ্টির পিছনে আছে এক
প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস। ১৯১৫ সালে তৈরি হয়েছিল পলসন ডেয়ারি। এসময় প্রায় মনোপলি
ছিল পলসনের। আমুলএর উত্থানে ধাক্কা খায় পলসনের মনোপলি। সেই পলসনের বিজ্ঞাপনেও ব্যবহৃত হত একটি মেয়ের
হাতে আঁকা কার্টুন। সেই চরিত্রটিকে মাথায় রেখেই Sylvester da Cunha
বানিয়ে ফেললেন আমুলের ম্যাসকট।
Sylvester da Cunha র Advertising and Sales
Promotion (ASP)
কোম্পানির আর্ট ডাইরেক্টর Eustace Fernandes বানালেন বাটার গার্লের ছবি, আর Sylvester da Cunha র স্ত্রী Nisha DaCunha লিখলেল দারুন একটি ট্যাগ
লাইন- “Utterly Butterly”।
এরপর থেকে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ঘটনার
প্রেক্ষিতে আমুল তৈরি করেছে তাদের পোস্টার, যা একদিকে সাহায্য করেছে আমুলের
ব্র্যান্ড ভ্যালু বাড়াতে, তেমনই আমুল বুঝিয়ে দিতে পেরেছে এই সব ঘটনার গুরুত্ব,
মজার ছলে কিন্তু স্পষ্ট করে। বিজ্ঞাপনের এমন স্টাইল সত্যি বিরল। এই দীর্ঘ পঞ্চাশ
বছর ধরে, আমুলের বিজ্ঞাপন বিল বোর্ডে জমা হয়েছে নানা দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক ঘটনার কোলাজ।
Celebrating the success of India’s first
test tube baby
Indian Railways
introduces cushioned seats in the First Class Compartments of trains.
A successful launch of Chandrayan.
Image Courtesy
India Wins ICC World Cup, 2011
Anna Hazare's Jan Lokpal
Comment on the Bofors scandal
US warning Pakistan against terror
strikes
When Maria
Sharapova said she didn't know who Sachin was
In
memory of the Latin American author, Marquez
In
memory of the Latin American author, Marquez
বাহুবলি থেকে বব ডিলন, প্যারিসে জঙ্গি হানা থেকে নর্মদা
আন্দোলন, ভারত আমেরিকা রাজনৈতিক সম্পর্ক থেকে সমকামিতা সব কিছুতেই ছিল আমুলের
ছোঁয়া। এমন সব আসাধারন সৃষ্টিশীল বিলবোর্ড
বিজ্ঞাপন নিয়ে বিতর্কও কম হয়নি। ইন্ডিয়ান এয়ার লাইন্সের ধর্মঘট নিয়ে বিল বোর্ড
তৈরি করায় ক্ষোভের মুখে পড়তে হয় আমুল কে, পরে সরিয়েও নিতে হয়েছে সে বিজ্ঞাপন।
সত্যম কেলেঙ্কারি তে আমুলের ‘Satyam Sharam Scandalum!'
নিয়েও বিতর্ক কম হয়নি। এমনকি শিবসেনার রোষেও পড়তে হয়েছিল আমুলের গণেশ চতুর্থীর
বিজ্ঞাপন। Ganpati Bappa More Ghya (Ganpati
Bappa take more) রাগিয়ে দিয়েছিল তাদেরকেও।
আমুল গার্লের সুবর্ণ
জয়ন্তীতে DaCunha Communications প্রকাশ করেছে একটি বই
যাতে উঠে এসেছে দেশ হিসাবে প্রগতিশীল ভারতের গল্প, আমুল গার্লের চোখে।
Amul’s India নামের এই বইটিতে যেমন রয়েছে আমুলের সেরা বিজ্ঞাপন গুলো
তেমন রয়েছে দিপিকা পাদুকন, অমিতাভ বচ্চন, শাহরুখ খান, সুনীল গাভাস্কার, হর্ষ
ভোগলে, সানিয়া মির্জা, শোভা দে, শ্যাম বেনেগালের মতন জনপ্রিয়দের লেখাও।
একটা ছোটো হাতে আঁকা
কার্টুন হয়ে উঠল বিজ্ঞাপনের জগতে একটা মাইল স্টোন। পঞ্চাশ বছর পেরিয়ে গেলেও Utterly
Butterly আমুল গার্ল আজও The Taste of India।
.
No comments:
Post a Comment