![]() |
Image Courtesy - Rakesh Kumar Biswas |
সুকুমার রায়ের পাগলা দাশুকে মনে করুন,খর্ব দেহ,মাথা ভর্তি কাকের বাসার মতন চুল আর রসগোল্লার মতন চোখ। গালে কেমন একটা দুষ্টুমি মাখা হাসি। এবার চোখ বুজে ভাবুন আর জনের কথা— কিশোর কুমার গাঙ্গুলী। কেমন চেনা চেনা লাগছে না। ওমন লুনাটিক,প্রতিভা সত্যিই বিরল। হারমোনিয়াম বাজাতে পারতেন না ভালো,তাতে কি ২০০০ এর বেশী গান গেয়েছেন। আটখানা ফিল্ম ফেয়ার অ্যাওয়ার্ড আছে। নতুনের প্রতি আগ্রহ ছিল প্রচুর।অস্ট্রেলিয়ার জিমি রডগার্স ও টেক্স মর্টনের থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে কিশোর কুমার ‘ইয়ডলিং’ শিখেছিলেন।ক্ল্যাসিক্যাল মিউজিকে বিশেষ জ্ঞান ছিল না অথচ কত শক্ত শক্ত গান অনায়াসে গেয়েছেন। মনে করুন,পড়োশন ছবির “এক চতুর নাড়” গানে কিভাবে মান্না দের সাবেকি ক্ল্যাসিক্যাল আঙ্গিকের সাথে এক মাত্রায় পাল্লা দিয়ে “ঘোড়া-চতুরা,ঘোড়া-চতুরা” গেয়েছিলেন। নির্দ্বিধায় নিজের বরাদ্দ গান অন্যকে দিয়ে গাইয়েছেন। শোলের সেই বিখ্যাত গান “মেহবুবা মেহবুবা” কিশোর কুমার গাইবেন ঠিক ছিল। কিন্তু কয়েক বার গেয়ে পঞ্চম কে বলেদিয়েছিলেন —ও গান তুমিই গাও। বাড়িতে পরিচালক,প্রযোজকদের জন্য লিখে রাখতেন— কিশোর কুমার হইতে সাবধান। কোন দিন নাকি মদ ছুঁয়ে দেখেননি অথচ,অনবদ্য মাতালের অভিব্যক্তিতে গেয়েছিলেন—“ইয়ে যো মহাব্বত হ্যায়”। অভিনয়েও ছিলেন সমান সপ্রতিভ। মনে করুন লুকোচুরি ছবিতে যে মানুষটি লম্ফ ঝম্ফ করে গাইতে পারেন “শিং নেই তবু নাম তার সিংহ”,তিনিই আবার ছেলেমানুষের সারল্যে প্রেমে গদগদ হয়ে গান “এক পলকে একটু দেখা”। কিশোর কুমার এমনই যে আরও একটু বেশী হলে ক্ষতি নেই। মজার মানুষ,রেকর্ডিংয়ের সেটেও আগডুম-বাগডুম বকবকানি আর অঙ্গভঙ্গি করে হাসিয়ে ছাড়তেন লতাজিকেও। চারটে বিয়ে। এক্ষেত্রেও মিলটা চার্লি চ্যাপলিনের সাথে।
মানুষটাই ছিলেন ছকভাঙা। তাই বিশ্বভারতীর কপিরাইটের রাজ্যত্বকালেই মানিকবাবু কিশোর কুমার কে দিয়ে গাওয়ালেন রবি ঠাকুরের গান। চারুলতায় “আমি আকাশে পাতিয়া কান” যখন শেষ হয় ওগো বৌঠাকুরানী দিয়ে,দিব্যি মানিয়ে যায়। ঘরে বাইরেতেও “বিধির বাঁধন কাটবে তুমি এমন শক্তিমান” গানে কিশোর কুমারের ব্যতিক্রমী,অরাবীন্দ্রিক স্টাইলটাই মোস্ট অ্যাপ্রোপ্রিয়েট মনে হয়। আসলে রতনে রতন চেনে।
কিশোর কুমার নিজেই একটা গান। যখন তিনি নেই তখনও মনে হয়, কি আশায় বাঁধি খেলাঘর,বেদনার বালুচরে।
No comments:
Post a Comment