![]() |
দেবদীপ মুখার্জী |
দেবদীপ মুখার্জী,কিছুদিন আগেও নামটা কেবল একটা নামই ছিল। কিন্তু আজ,তাকে নিয়ে রীতিমত খোঁজখবর চলে সোশ্যাল মিডিয়ায়। নিজেকে স্ট্রাগলার মনে করলেও তিনি এখন,থ্রিলিং মিউজিসিয়ান। হয়নি আলাপ গানেই তার সাথে আলাপ এ শহরের। ৯ই এপ্রিল গানটা ইউটিউবে আপলোডের পর মাত্র ৭দিনের মধ্যে এক লাখ ভিউয়ার।সেই থেকে সেলেব সেলেব গন্ধটা গায়ে লাগছিল,সেটা নিজেও বুঝেছেন দেবদীপ। তবে সে মায়ায় ভেসে যাওয়ার মতন মানুষ যে তিনি নন তা বোঝা গেল ঘন্টা খানেকের আড্ডায়। বাগ বাজারের গঙ্গার ঘাটে বারংবার সার্কুলার রেলে হুইসেল, ঘটি গরমের ঘন্টাধ্বনি, কাক-শালিখের কিচিরমিচির মাখা বিকেলে, ব্লগ-টগের সাথে দেবদীপের ইন্টারভিউ যেন আস্ত একটা গান হয়ে রইল। প্রশ্ন কম,ভীষন ভাবে আবেগপ্রবণ মানুষটি গল্পের মতন শুনিয়ে গেলেন কেন তিনি গান ভালোবেসে গান।
এতটাই খোলামেলা ছিল সে আলাপ,পরে লিখতে বসে মনে হচ্ছিল,কিভাবে সাজানো যায়। কথায় কথায় দেবদীপ গানের নোটেশানের মতনই চলাচল করেছেন তাঁর অতীত,বর্তমান আর ভবিষ্যতে।
ছোটবেলার কথাঃ
ক্লাস থ্রি থেকে গানের প্রতি ভালোলাগা। তবে গানটাই গাইতে হবে ভাবেননি। ক্লাস ফাইভে পড়ার সময়ও বুঝতেন না বড় হয়ে কি হবেন। রবীন্দ্রসঙ্গীত,মান্না দে বড্ড কঠিন লাগতো। তার চেয়ে বেশী ভালোলাগত, অঞ্জন,নচিকেতা, সুমন,রূপম। হুল্লোড়ের গানে চিৎকার করে গলা মেলানোতেই ছিল আনন্দ।
গানের ইন্সপিরেশনঃ
এককথায়,শিলুদা। মারাত্মক ফ্যান ছিলাম শিলাজিতের গানের। ওমন সিম্পল কথায় যে গান হয়,ভেবেই ভালোলেগে যেত শিলুদাকে। হায়ের সেকেন্ডারি পরীক্ষা চলছে তখন, রাত জেগে মহাজাতি সদনে শিলুদার গানের শো দেখেছি। দেদার সিটি দিয়েছি। কতবার ক্লাস বাঙ্ক করেছি,শিলুদার গান শোনার জন্য।
দেবদীপ মুখার্জী |
গান গাওয়ার শুরুঃ
উচ্চ মাধ্যমিকের পর সায়েন্সের পাট চুকিয়ে, ভর্তি হলাম রবীন্দ্র ভারতীতে। সাবজেক্ট সরোদ। শিলুদাই বলেছিলেন,আগে বেসিকটা শিখতে। তখন তো গলায় সুরই লাগতো না। এরপর সরোদ দিয়ে শুরু হল। গিটারটা নিজেই শিখেছি। তবে গুরু মানবো শিলুদাকেই।
প্রথম অ্যালবামঃ
২০১৪তে স্বপ্ন রঙের মেয়েটা প্রথম অ্যালবাম। নিজেই সব করেছি। চাকরি করে পয়সা জমানো,নিজেই সিডি রাইট করা সবটুকু। কয়েকজন বন্ধু বান্ধব অবশ্য হেল্প করেছে। নেশা করি,তাই আমার অ্যালবাম পাবলিশ করতে চায়নি এক প্রোডিউসার। তবে নিজে মনে করি এটুকু স্ট্রাগেল করতেই হোতো। আগে যারা গান বাজনাকরেছে,তাদের থেকে এখনকার শিল্পীদের স্কোপ অনেক বেশী। কেবল রেকর্ড কোম্পানীর জন্য হা পিত্যেস করে বসে থাকতে হয় না। এটলিস্ট সোশ্যাল মিডিয়াতে নিজের গান বা কাজটুকু প্রিজার্ভ করানো যায়,লোকের কাছে পৌঁছে যাওয়া যায়।
গানের ভাষার প্রেম না রাজনীতিঃ
আমার গানে প্রেমটা আছে। আসলে রোজকার এই জীবনে প্রতি মুহূর্তেই কিছু না কিছু প্রেম হয়ে যায়। সবটা বলাও যায় না। কিন্তু প্রেম, স্বপ্ন, ভালোলাগা থেকেই যায়। আমার গানে তাই এসেছে। তবে আঙ্গিক একটু হয়তো আলাদা। আর রাজনীতি—মানে সো কল্ড দলাদলি আমি বুঝি না। আর তাই গানে সেটা নেই।
দেবদীপের সখঃ
ঔই যে দলের কথা বলছিলাম—গানের দল,বেড়ানোর দল এসবে আমার বেশ ইন্টারেস্ট। সান্দাকফু ট্রেক করেছি। ইচ্ছে আছে আসছে বছর নিজের বাইকটা নিয়ে লাদাক যাবো। রোগা টিনটিনে এই মানুষের বাইকটাও বেশ লো এন্ডের,তাই নিয়েই হোম টু হোম লাদাক রাইড করবো। আর এরবাইরে গোছানো শান্তিপূর্ণ জীবন,দুপুরে সুন্দরকরে বেড়ে দেওয়া ভাত-ডাল-আলুপোস্ত-পাঁঠার মাংস,তাতেই খুশী।
হয়নি আলাপঃ
গানটা লেখা ২০১৫তে। উপলদা,চন্দ্রবিন্দুর উপলের বাড়ির ছাদে,বর্ষবরণের রাতে এচ রুফটপ পার্টিতে গানটা গেয়েছিলাম। সবাই বলেছিল গানটা ভালো হয়েছে। উপলদাও ইনসিস্ট করল। ইউটিউবে আপলোড করলাম। এক সপ্তাহের মধ্যে এক লাখ ভিউ হবে ভাবিনি। খবরটা উপলদাই দিয়েছিল। সেই দিনটা ভুলতে পারবো না।
ভবিষ্যতের প্ল্যানঃ
আপাততঃ গানই। আগেই বলেছি,প্রেম বলতে দুটো— গীটার আর সরোদ। তবে যেদিন বছর পঞ্চাশ বয়েস হবে সেদিন স্টেজ শো করবো সরোদ বাজিয়ে। এখন গীটারটাই প্রায়োরিটি।
দেবদীপের পেপ টকঃ
ব্লগ টগের এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। যেভাবে নতুন, আনকোরা মানুষদের লেখা, আঁকা খুজে আনছে তা অনবদ্য। ব্লগ টগের ভিউয়ার লক্ষ ছাড়িয়ে যাক। যাদের সাথে, এখনো হয়নি আলাপ তারাও খুঁজে পাক ব্লগ টগের পথ।
No comments:
Post a Comment