ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098



১৯২৯ এর ৮ই আগস্ট, লাহোর জেলে বন্দী পরিদর্শনে এসেছেন ডা. গোপীচাঁদ । তখন জেলে চলছিল অনশন । রাজবন্দীর মর্যাদা দাবি করে   অনশনে বসেছিলেন ভগৎ সিং, সুকদেব, রাজগুরু , বটুকেস্বর দত্ত সহ আরো অনেকে। বটুকেস্বর দত্ত ছাড়াও তাদের মধ্যে ছিলেন আর একজন বাঙালি বিপ্লবী । ১৯২৯ সালের ১৪ই জুলাই , লাহোর ষড়যন্ত্র মামলায় একজন মুখ্য অভিযুক্ত হিসেবে কলকতা থেকে গ্রেফতার হয়েছিলেন তিনি । 

কলকাতায় বঙ্কিমবিহারী দাসের ঘরে ১৯০৪ সালের ২৭ অক্টোবর জন্ম হয় তাঁর । ১৯২০ সালে ভবানীপুর মিত্র ইনস্টিটিউট থেকে ম‍্যাট্রিক পাস করেন এবং তার পরই কংগ্রেস এর সদস্য হয়ে অসহযোগ আন্দোলনে যোগদান করেন তিনি । তাঁর বিপ্লবী জীবনের সূচনা হয় ১৯২৩ সালে। শচীন্দ্রনাথ সান্যাল যখন ভবানীপুরে ঘটি করেন সেই সময় তাদের দলে যোগ দেন এই তরুণ বিপ্লবী। দক্ষিণ কলকাতায় কর্মরত অবস্থায় ১৯২৪ সালে তিনি তৈরি করেন 'তরুণ সমিতি' , যে কারণে তাকে গ্রেফতার হতে হয়। ঢাকা জেলে থাকাকালীন সময়ে জেল কর্তৃপক্ষের অমানবিক আচরণের বিরুদ্ধে ২৩ দিন অনশন করেন তিনি।

মামলা (লাহোর ষড়যন্ত্র মমলা) চলা কালীন সময়ে  সঙ্গে  ডা. গোপীচাঁদের সাথে বেশ কয়েকবার কথাবার্তা বলেছিলেন এই বাঙালি । 

৮.৮.১৯২৯ 

" সুপ্ৰভাত মিস্টার দাস!"

"সুপ্ৰভাত (গলার স্বর অতি মৃদু)"

"আপনি জল ও ওষুধপত্র কিছু খাচ্ছেন না কেন?"

"আমি মরতে চাই।"

"কেন?"
 
"কারণ আমার দেশ, কারণ আমি রাজনৈতিক বন্দীদের মর্যাদা তুলে ধরতে চাই।"

১৩ দিন পর অর্থাৎ , ২১.৮.১৯২৯ তারিখে ডা. গোপীচাঁদ আবারও এসেছিলেন মি. দাসকে দেখতে। এবার তার সঙ্গে ছিলেন পুরুষোত্তম দাস  ট্যান্ডনও। তারা দুজন ভগৎ সিংকে ও তাদের সঙ্গে নিয়ে এসছেলেন মি. দাসের সাথে কথা বার্তা বলবার জন্য

পুরুষোত্তম দাস জিজ্ঞেস করলেন "আপনি আজ কেমন আছেন মিস্টার দাস?'

"খুব ভালো আছি।"
 
"আপনার তো বেঁচে থাকা দরকার।"

"বেঁচে আছি তো!"
 
"কোনো ওষুধ বা পুষ্টিকর কিছু না নিয়ে কেমন করে বেঁচে থাকবেন ?"
 
"আমার ইচ্ছাশক্তি দিয়ে।"

এই সময় ডা. গোপীচাঁদ বললেন "একটু ওষুধ অন্তত খান। আপনার এই অনশনের ফল দেখবার জন্যে আরও দুসপ্তাহ আপনাকে বাঁচতে হবে। তারপর যদি দেখেন, আপনার দাবি পূর্ণ হয় নি, তখন যা খুশি করবেন।"

"এই গভর্নমেন্টকে আমি একটুও বিশ্বাস করি না।"

"আমার মনে হয় , ডা. গোপীচাঁদ ঠিক কথাই বলেছেন। অন্তত আরও দুসপ্তাহ বেঁচে থাকবার জন্যে আপনার কিছু ওষুধ খাওয়া দরকার।" বললেন পুরুষোত্তম দাস।

"না। ওষুধ খাওয়া মানে এই নির্যাতনের মেয়াদ বৃদ্ধি মাত্র।"

ভগৎ সিং এবার কথা বললেন  "এর আগের বারে আপনি আমার অনুরোধ রেখেছিলেন।"

"হাঁ। কিন্তু আপনি আবার এসেছেন কেন? এবারে আর আপনার কথা শুনতে রাজি নই। আপনি যান।"

পুরুষোত্তম দাস ও ডা. গোপীচাঁদ একসঙ্গে বলে উঠলেন "ভগৎ সিং তো নিজে আসেননি। আমরাই তাঁকে নিয়ে এসেছি।"
 
"ভগৎ সিং, আপনি আমার বুক ভেঙে দিয়েছেন।"

"আমি এদের অনুরোধেই এসেছি। কিন্তু আপনাকে অনুরোধ করি আপনি আর পনেরোটা দিন বেঁচে থাকবার চেষ্টা করুন।" বলছিলেন ভগৎ সিং "আমাদের দাবি যদি না মেনে নেয়, তখন আমরা মরতে পারি।"

"আপনাকে গায়ের জোরে খাওয়ালো কী করে?"

"আমি যতক্ষণ পেরেছি, প্রতিরোধ করেছি। আমার অনুরোধ, আপনি রোজ একপোয়া করে দুধ খান।"

তারিখটা ছিল ৩০.৮. ১৯২৯ যতীন দাসকে দেখতে এলেন ডা. গোপীচাঁদ ।  সাথে ছিলেন পন্ডিত শান্তনম, সর্দার শার্দুল সিং কবিশের ও ভগৎ সিং-এর পিতা সর্দার বিষণ সিং। তাদের পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলেন বিপ্লবী জিতেন সান্যাল।

ডা. গোপীচাঁদ জিজ্ঞেস করলেন "মিস্টার দাস, কেমন আছেন?"

(উত্তর নেই)। 

"আপনি তো কথা রাখলেন না। আপনি বলেছিলেন যে, এই কটা দিন বেঁচে থাকবেন। কিন্তু এভাবে কি সম্ভব ?"
 
(তবুও কোনো উত্তর এলো না।)

"কেন ওষুধ খাচ্ছেন না বলুন তো ?"

(কোনো উত্তর এলো না এবারেও)।

ডা. গোপীচাঁদ আরো বলেন "আপনার মৃত্যু হলে সব নষ্ট হয়ে যাবে। একমাত্র একজন ছাড়া কমিটির আর সকলে সবগুলি দাবি মেনে নিয়েছেন। আপনি যদি চান, আমি তাদের এখানে আনতে পারি। আপনি আপনার কথা রাখুন।"

(তাঁর কাছ থেকে তবুও কোনো উত্তর এলো না।)

এবার পন্ডিত শান্তনম বললেন "মিস্টার দাস, আমরা জানি – মৃত্যু আপনার কাছে কিছুই না। আপনাকে আদর্শচ্যুত করবার কোনো অধিকার আমাদের নেই। আমরা বলছি না, যে আপনি অনশন ভঙ্গ করুন। ওষুধ খেয়ে ক’দিন বেশি বাঁচবার মানে যন্ত্রণা বৃদ্ধি। কিন্তু তবু আমাদের জন্যে, জেল কমিটির অনুমোদনের ফল কী হয় শুধু সেইটুকু দেখবার জন্যে আপনাকে আরও কদিন বাঁচতে বলছি।"

মি. দাস, জিতেন সান্যালের মুখের দিকে তাকালেন। সান্যাল নিচু হয়ে দাসের মুখের কাছে কান পাতলেন। এখন সামান্য ঠোঁট নড়তে দেখা গেল তার। 

"কিন্তু আপনি কথা রাখছেন না। বলেছিলেন, দুসপ্তাহ বেঁচে থাকবেন। এখনো তো চোদ্দ দিন হয়নি!" বলছিলেন ড. গোপীচাঁদ 

সান্যালের কানে কানে ফিসফিস করে বললেন "৪ঠা সেপ্টেম্বর চোদ্দ দিন পূর্ণ হবে। আমি বেঁচে থাকব।"

কোনোরকম মেকি বা লোক দেখানো আন্দোলন নয় , টানা ৬৩ দিন অনশনের পর ১৩ই সেপ্টেম্বর ১৯২৯ সালে এই তরুণ বিপ্লবী চির নিদ্রায় নিদ্রিত হন । নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুর নেতৃত্বে তাঁর মরদেহ কলকাতায় আনা হয় এবং প্রায় দেড় লক্ষ মানুষের উপস্থিতিতে কেওরাতলা মহাশ্বসানে তার শেষ কৃত্য সম্পন্ন করা হয় । তাঁর এই হার না মানা সংগ্রামের জন্য ভারতীয় স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাসে চির অমর হয়ে থাকবেন বিপ্লবী যতীন্দ্রনাথ দাস ( যতীন দাস )

(তথ্য সংগৃহিত, " অনশনরত বিপ্লবী যতীন দাসের সাথে কথোপকথন)


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098