![]() |
Image Source - Google |
“What happens if you take a
rich magistrate’s son and make him learn in a village school sitting besides
the sons of servants and fishermen? He’ll hear tales of birds and animals that
make him curious about Nature. And that makes him one of India’s first scientists.”
১৯১৪ তে দ্য নেশন পত্রিকার এক সাংবাদিক
লন্ডনের মাইদা ভেলের এক ল্যাবরেটরিতে দাঁড়িয়ে নিজের চোখে দেখেছিলেন এক বাঙালী
বিজ্ঞান তপস্বীর পরীক্ষা নিরীক্ষা। এটা তাঁরই উপলব্ধি। যে মানুষ প্রকৃতির এত কাছে,সে মানুষের বোধ আর
চিন্তন নিছক ফিজিক্সের সূত্র বা বোটানির প্রচলিত নিয়মে বাঁধা পড়ে থাকবে তা হতেই
পারে না। নিজের আবিষ্কারের সুফল তুলুক সব মানুষ,এটাই ছিল তার ইচ্ছে।
পেটেন্ট নিয়ে নিজের দাবী সুরক্ষিত করা আর রিচ হয়ে ওঠতে তিনি চাননি। এখানেই কোথায়
একটা আলাদা ব্র্যাকেটে মধ্যে চলে আসেন তিনি।
আপেল তো রোজই পড়ে গাছ থেকে। কেন পড়ে
ভাবেনিতো কেউ। ভাগ্যিস প্লেগের ভয়ে নিজের বাড়ি ছেড়ে গ্রামে এসেছিলেন নিউটন তাই তো
টুপ করে পেড়ে নিলেন মাধ্যাকর্ষণের সূত্র। আজ হয়তো সে সূত্র চ্যালেঞ্জড। তবে
আইনস্টাইনের কোয়ান্টাম তত্ব বা টাইম ফ্রেমের আগে নিউটনই ধ্রুব সত্য। ইডেন গার্ডেনে
ইভের আনা আপেল খেয়ে যেদিন আদমের চরিত্রহনন হল আর সেই প্যারাডাইজ লস্টের পর আপেল
মানেই নিউটন আর অর্ধেক খাওয়া আপেল এলিট অর্থে স্টিফ জোবস। আপেলের সাথে
পদার্থবিদ্যার যোগ এটুকুই কিন্তু বোটানির হিসেব সেটাও তো অন্যরকম ছিল। দিব্যি ফুল
ফুটতো,ফল হোতো,কৃষ্ণচূড়োর তলায় দাঁড়িয়ে শপথ নিত প্রেমিক যুগল।
কিন্তু তারা যে বেঁচে আছে বুঝতেই পারতাম না একদিন। আজ সহজ মনে হলেও,সেই সময় দাঁড়িয়ে “গাছেরও প্রাণ আছে” এ আবিষ্কারের জন্য
কেবল বিজ্ঞান বুদ্ধি নয়,একটা সংবেদনশীল মনও দরকার ছিল আর সেটাই তাঁর এক্স ফ্যাক্টর। সেই জন্যই ম্যাজিস্ট্রেটের ছেলে লন্ডনে বাবার ইচ্ছেতে
ডাক্তারি পড়তে এসেও শিখলেন বোটানি আর বলে দিলেন গাছপালার অব্যক্ত কাহিনী,তারাও জীবন্ত!
তিনিই আচার্য্য জগদীশ চন্দ্র বসু । পদার্থবিদ, বোটানিস্ট,ইনভেন্টর,বসু বিজ্ঞান মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা এবং
এক কথায় ভারতের প্রথম এক্সপেরিমেন্টাল সায়েন্টিস্ট। রবীন্দ্রনাথও তাঁকে ঋষি বলেছেন—“ভারতের কোনও বৃদ্ধ
ঋষির তরুণ মূর্তি তুমি হে আর্য আচার্য জগদীশ”।
জগদীশ চন্দ্র বসু বাংলাদেশের ময়মনসিংহ
শহরে ১৮৫৮সালের ৩০শে নভেম্বর তারিখে জন্মগ্রহণ করেন। তার পরিবারের প্রকৃত বাসস্থান
ছিল বর্তমান বাংলাদেশের মুন্সিগঞ্জ জেলার অন্তর্ভুক্ত বিক্রমপুর নামক স্থানের রাঢ়িখাল গ্রামে। তার বাবা ভগবান চন্দ্র বসু তখন ফরিদপুরের ডেপুটি
ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন। এর আগে তিনি ১৮৫৩ থেকে ১৮৫৮ সাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ জিলা
স্কুলের প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ভগবান চন্দ্রই এই স্কুলের প্রথম
প্রধান শিক্ষক ছিলেন। পরবর্তিতে তিনি বর্ধমান ও অন্যান্য কিছু অঞ্চলের ডেপুটি
ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া তিনি ব্রাহ্ম সমাজের একজন বিশিষ্ট
নেতা ছিলেন। ইংরেজ সরকারের অধীনে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থাকা সত্ত্বেও তিনি আর সবার
মত নিজের ছেলেকে ইংরেজি স্কুলে ভর্তি করাননি। তিনি চাইতেন তাঁর ছেলে সকলের সঙ্গে
সবার মতন করে বড় হোক। বাবার এই মূল্যবোধ জগদীশ চন্দ্রের চরিত্রেও প্রকট ছিল।
কলকাতার সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে
তিনি বিএ পাশ করেন। উদ্দেশ্য ছিল বিলেতে জাবেন আর আইসিএস পরীক্ষায় পাশ করে দেশে এসে
সরকারি চাকরি । কিন্তু বাবা রাজী ছিলেন না। তিনি চাইতেন আধুনিক কৃষিবিদ্যা শিখে দেশের কৃষিকাজের
উন্নতি সাধনের জন্য কাজ করুক জগদীশ ।শেষ পর্যন্ত স্থির হয় তিনি চিকিৎসাবিজ্ঞান পড়বেন আর তাই চলে আসেন লন্ডন, ১৮৮০ সালে। কিন্তু শারীরিক অসুস্থ্যতার কারনে ডাক্তারি পড়া বন্ধ হয়ে যায় আর কেমব্রিজের
ক্রাইস্ট কলেজে ভর্তি হন। এখান থেকে ট্রাইপস পাশ করেন। এর পরপরই লন্ডন
বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসসি পাশ করেন। দেশে ফিরে এলেন ১৮৮৫ সালে। বড়লাটের সুপারিশে
অস্থায়ী অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন প্রেসিডেন্সী কলেজে। একে অস্থায়ী তার পর ভারতীয়
তাই মাইনেও অর্ধেক। প্রতিবাদ করলেন জগদীশ। আন্দোলনে কর্তৃপক্ষ বাধ্য হল দাবী মেনে সম্পূর্ণ বেতন দিতে। কলেজের গবেষনাগারেই শুরু হল জগদীশ
চন্দ্রের গবেষনার কাজ। তিনি যে সব গবেষণা কাজ করেছিলেন তা
লন্ডনের রয়েল সোসাইটির জার্নালে প্রকাশিত হয়। এই গবেষণা পত্রগুলোর সূত্র ধরেই
লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয় ১৮৯৬ সালের মে মাসে তিনি পেলেন ডিএসসি ডিগ্রী।
প্রতিদিন নিয়মিত কলেজে পড়ানোর পর যে
সময় পেতেন, তিনি গবেষণার কাজ করতেন। অর্থ সংকট, প্রেসিডেন্সি
কলেজের উন্নতমানের গবেষণাগারের অভাব এত প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও সীমিত খরচে স্থানীয়
মিস্ত্রীদেরকে শিখিয়ে পড়িয়ে তিনি তাঁর গবেষণার জন্য উপকরণ প্রস্তুত করতেন। ইউরোপীয় শিক্ষকদের অনেকেই তখন মনে করতেন ভারতীয়রা
বিজ্ঞান শিক্ষাদান এবং গবেষণা কাজের উপযুক্ত নয়। জগদীশ চন্দ্র র এই ধারণা ভুল
প্রমাণিত করে নিজের হাতে হাতে গড়ে তোলেন সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাদ সাহা, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ, দেবেন্দ্রমোহন বসুর মতন একদল কৃতী শিক্ষার্থী। এখানেই তাঁর স্বতন্ত্রতা।
ব্রাহ্ম সমাজের বিখ্যাত সংস্কারক দুর্গা মোহন দাসের মেয়ে অবলার সাথে
১৮৮৭ সালে জগদীশ চন্দ্র বসুর সাথে বিয়ে হয়।বিয়ের পর
অবলার পড়াশুনা, আর্থিক অনটন সব মিলিয়ে এক অস্থিরতার
মধ্যে দিয়ে যান জগদীশ চন্দ্র।
জগদীশ চন্দ্র র আঠারো মাসের গবেষণার
মধ্যে মুখ্য ছিল অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ নিয়ে গবেষণা। ১৮৯৫ সালে তিনি অতিক্ষুদ্র তরঙ্গ
সৃষ্টি এবং কোন বেতারে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে তা পাঠাতে তিনি সফল হন। ১৮৮৭
সালে বিজ্ঞনী হের্ৎস প্রতক্ষভাবে বৈদ্যুতিক তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করেন। এ
নিয়ে আরও গবেষণা করার জন্য তিনি চেষ্টা করছিলেন যদিও শেষ করার আগেই তিনি মারা
যান। জগদীশ চন্দ্র তার অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করে সর্বপ্রথম প্রায় ৫ মিলিমিটার তরঙ্গ
দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট তরঙ্গ তৈরি করেন। এ ধরণের তরঙ্গকেই বলা হয়ে অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ বা
মাউক্রোওয়েভ। আধুনিক রাডার, টেলিভিশন এবং মহাকাশ
যোগাযোগের ক্ষেত্রে এই তরঙ্গের ভূমিকা অনস্বীকার্য। মূলত এর মাধ্যমেই বর্তমান
বিশ্বের অধিকাংশ তথ্যের আদান প্রদান ঘটে থাকে। পেটেন্ট বিতর্কে যদিও রেদিও
আবিষ্কারের কৃতিত্ব ছিনিয়ে নিয়ে যান মার্কনি, এই আবিষ্কারের পথিকৃৎ ছিলেন জগদীশ চন্দ্র।
উদ্ভিদের প্রান, রাসায়নিক বা ভৌত
উদ্দীপনায় উদ্ভিদের সারা দেওয়া বা নিজের তৈরি যন্ত্র কেস্কোগ্রাফ কথা সবারি জানা
তেমনি তাঁর লেখা গবেষণা পত্র গুলি যেমন Responses in
the Living and Non-living (১৯০২), Plant
Responses as a Means of Physiological Investigations (১৯০৬), Comparative
Electrophysiology (১৯০৭), Physiology of
the Asent of Sap (১৯২৩), Physiology of
Photosynthesis (১৯২৪), Nervous
Mechanism of Plants (১৯২৫), Collected
Physical Papers (১৯২৭), Motor
Mechanism of Plants (১৯২৮),Growth and Tropic Movement
in Plants (১৯২৯) সারা বিশ্বে সমাদৃত হয়। ভারতীয় ব্যাবহারিক বিজ্ঞানের ইতিহাসে জগদীশ চন্দ্র
বসুর এই সব কাজ এক একটি মাইল স্টোন। আইনস্টাইন তার সম্পর্কে নিজেই বলেছইলেন “ জগদীশচন্দ্র যেসব অমূল্য তথ্য পৃথিবীকে উপহার দিয়েছেন তার যে কোনটির জন্য
বিজয়স্তম্ভ স্থাপন করা উচিত” ।
প্রতিভার স্বীকৃতিও মিলেছে নানা দেশ থেকে। ১৯১৬ তে পেয়েছেন নাইটহুড। ১৯৫৮ সালে জগদীশ চন্দ্রের শততম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষ্যে পশ্চিমবঙ্গ
সরকার "JBNSTS" নামে একটি বৃত্তি
চালু করে।
এত গেলো বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসুর গল্প। এর বাইরেও তাঁর অবদান অনেক, বিশেষত বাঙলা সাহিত্যে।১৮৯৬ তে তিনি লেখেন “নিরুদ্দেশের কাহিনী”
যা পরে স্থান পায় তাঁর লেখা সঙ্কলন “অব্যক্ত”
তে যদিও অন্য নামে (পলাতক তুফান) । বাংলা ভাষায় প্রথম ফিকশন Science Fiction হিসাবে বিখ্যাত হয়ে
আছে এই বইটি।
১৯৩৭ এর ২৩শে নভেম্বর গিরিডি তে শেষ
নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন বিজ্ঞানী জগদীশ চন্দ্র বসু। শেষ জীবনে ওখানেই থাকতেন তিনি।
নামটা কেমন রোমাঞ্চকর নয়। মিল পাচ্ছেন কিছুর সাথে? গিরিডি, উশ্রি নদী, ল্যাবরেটরি, ফিজিক্সের প্রোফেসর,ইনভেন্টর তিলু কে মনে
পরছে না কি? আমাদের
প্রোফেসর শঙ্কু! মিলটা
কি নেহাতই কাকতালীয় ?
No comments:
Post a Comment