ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098


‘‘রবীন্দ্রনাথ রামকিঙ্করকে ডেকে বললেন, শোন, কাছে আয়। তুই তোর মূর্তি আর ভাস্কর্য দিয়ে আমাদের সবখানে ভরে দে। একটা শেষ করবি আর সামনে এগিয়ে যাবি সামনে।’’ রাম কিঙ্কর তাই আর পিছনে ফেরেন নি। গোটা শান্তিনিকেতন জুড়ে ছরিয়ে আছে আর বুদ্ধ, সুজাতা, সাঁওতাল পরিবারের মতন সব ভাস্কর্য। ভুবন ডাঙ্গার মানুষটি বড় অদ্ভুত, কোপাই নদীর পাড়ে, জেভাবে লাল মাটিতে, পড়ন্ত রোদের রঙ মিশে যায়, তেমনি প্রকৃতি, প্রেম, প্রবৃত্তি আর প্রতিভা সব যেন মিলে মিশে ছিল রাম কিঙ্করের মধ্যে।

Ramkinkar baij Paintings

রামকিঙ্কর বেইজ  বাঁকুড়ার জেলার এক নাপিত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। রামকিঙ্কর ছেলে বেলায় স্বাধীনতা সংগ্রামীদের ছবি আঁকতেন। মেট্রিকুলেশন শেষ না করেই, ষোলো বছর বয়সে প্রবাসী পত্রিকার সম্পাদক রামানন্দ চট্টোপাধ্যায়ের সাথে চলে আসেন শান্তিনিকেতনে  আর চারুকলার ছাত্র হিসেবে যোগ দেন রাম কিঙ্করশিক্ষক হিসাবে পেলেন আচার্য নন্দলাল বসু কে হয়ত ফেলে এলেন সেই গ্রামের বাড়ি কিন্তু মাটির তাল হাতে কুমর পাড়ায় মূর্তি গড়া শিল্প মনটাকে নিয়ে এলেন সঙ্গে করে।কলাভবনে তাঁর কাজের নমুনা দেখে নন্দলাল প্রথম দিনই বললেন, ‘‘তুমি সবই জানো, আবার এখানে কেন?’’ একটু ভেবে তারপর বলেন, ‘‘আচ্ছা, দু-তিন বছর থাকো তো।’’ সেই থেকেই রয়ে গেলেন রাম কিঙ্কর, মৃত্যু অবধি।

দরাজ গলায় গাইতেন রবি ঠাকুরের গান, লালনের গান। কিছু একটা খুঁজে বেড়াতেন।নিজেকে ভাঙ্গা গড়ার খেলায় মাতিয়ে রেখে ছিলেন। নন্দলাল বসু কখনও চান নি, মডেল রেখে ছবি আঁকতে, কিন্তু সেই ছেলে বেলা থেকে রাম কিঙ্কর দেখেছেন, বেশ্যা বাড়ি থেকে মেয়েদের নিয়ে এসে মূর্তি গড়া। সেই টাটা পড়েন থেকেই জ্যান্ত শরীর কেও ভালো বেসে ফেলতেন রাম কিঙ্কর।একাধিক নারী সঙ্গ, যৌনতা- কম বিতর্ক হয় নি এই মানুষটিকে নিয়ে।একবার নাকি দিল্লি যাওয়ার পথে এক আদিবাসী রমণীর প্রেমের ডাকে তাঁর সঙ্গে নেমে গেলেন কোন এক স্টেশনে। বেপাত্তা! একদিন শান্তিনিকেতনে এল এক টেলিগ্রাম। তাতে কিঙ্কর লিখেছিলেন- ‘I lost myself, search myself.’

Ramkinkar Baij Paintings


কোথায় যেন মানুষ টাকে পিকাসর মতন মনে হয়।‘‘সব কিছুর মধ্যে যৌনতা আছে, যৌনতা ছাড়া সব কিছুই প্রাণহীন, ঊষর! যে মানুষের বিশ্বাসটাই এমন তার কাছে বিতর্কটা স্বাভাবিক। একটা রঙিন শিল্পী মন, বাঁধন ছাড়া প্রতিভা- এর আকর্ষণ ফেরানোর নয়।অকপট স্বীকার করেছেন-‘‘জীবনে অনেক মেয়ে এসেছে, এটা সত্যি। কেউ এসেছে দেহ নিয়ে, কেউ এসেছে মানসিক তীব্র আকর্ষণ নিয়ে। কিন্তু ছাড়িনি কাউকে। ধরেছি, আষ্টেপৃষ্ঠে ধরেছি। হজম করে ছিবড়ে করে ছেড়েছি। হজম করার মানে জানো? ও মন্ত্রটা আমার গুরুদেবের কাছে শেখা। তাঁর থেকে জন্ম নিয়েছে আমার অনেক ছবি, মূর্তি, অনেক কল্পনা, আর অনুভব

Ramkinkar Baij Paintings


মনিপুরের বিনোদিনী, আসমের নীলিমা, ভুবনডাঙার খাঁদু, দক্ষিণের জয়ন্তী আর মনের মানুষ রাধি- এই সব নাম গুলো একাকার হয়ে আছে রাম কিঙ্করের জীবনের ক্যানভাসে।বিনোদিনী শান্তিনিকেতন ছেড়ে চলে যাওয়ার পর মনিপুরি ভাষাতে একতা নাটক লিখেছিলেন রাম কিঙ্করকে নিয়ে। শরীরের বিভঙ্গ চিনিয়ে দেওয়া মেয়েটি ছিল রাম কিঙ্করের ছাত্রী।ক্যানভাসের রঙ কিভাবে যে মাখামাখি হয়ে যেত নীলিমা্র খোলা পিঠে আর শরীরের আনাচে কানাচে। জয়ন্তী জয়াপ্পাআস্বামীর নাম দিয়েছিলেন জয়া। ছিপছিপে লম্বা মেয়েটিকে করেছিলেন সুজাতার মডেল।বিষণ্ণ দুপুরে কোলে ছেলে নিয়ে ঘরে আসতো খাঁদু, ওর আঁচল সরানো বুকের দুধ খেত ওর ছেলে।আর একের পর এক স্কেচ করে চলত রাম কিঙ্কর।আর রাধি, মানে রাধারানী কে ছাড়তেই পারেন নি কোনদিন।

Ramkinkar Baij Paintings


রতনপল্লিতে রামকিঙ্করের কুঁড়েঘরের দেওয়ালে টাঙানো  অয়েল পেন্টিং, ছড়িয়ে থাকা  ভাস্কর্যের টুকরো যুবতীর গন্ধ, পোড়া শুয়োরের মাংস, “আকর্ষণীর বাংলা মদ, লালনের সুর আর ওই মানুষটি- ঠিক যেন সিনেমার মতন, রহস্যের মতন।যারই ছবি এঁকেছেন, বাঘের মতন ঘার ধরে তাঁর সব টুকু নিয়ে নিয়েছেন, অনুভব করেছেন কিন্তু সচেতন ভাবেই গোপন রেখেছেন, তাঁর ছবিতে, ভাস্কর্যে।‘‘রিয়ালিটির সবটাই কপি করতে নেই’’-এমনটাই মনে করতেন রাম কিঙ্কর।
Ramkinkar Baij Paintings

এক নারী থেকে অন্য নারী, এক মোহ থেকে অন্য মোহ ছুটেছেন বল্গা হীন ঘোড়ার মতন। তবুও রাধা কে জড়িয়েই থাকতে ছেয়েছিলেন। শেষের দিকে যখন কলকাতায় আনা হল চিকিৎসার জন্য, আসতে চান নি।ফেরা হয়নি।
শ্রাবণের ধারার মতন ঝরে গেল তাঁর ইচ্ছে, কোপাইয়ের বুকে ছায়া হয়ে রয়ে গেল রাম কিঙ্কর বেজ। ১৯৭৫ সালে ঋত্বিক ঘটক শান্তিনিকেতন গিয়ে তথ্যচিত্র করেছিলেন রাম কিঙ্কর কে নিয়ে। অসুস্থ, তবু গেলেন। গোড়ার দিকে একটি ফ্রেমে ক্লোজআপে দেখা গেল বুদ্ধের মুখ। পাখোয়াজ বাজছে, ইউক্যালিপটাসের ছায়া মাখা পথ ধরে পায়েসের রেকাব নিয়ে হেঁটে চলেছে-সুজাতা। রামকিঙ্কর তখন অসুস্থ্য, বয়েসের অত্যাচারের ছাপ পড়েছে শরীরে।চোখে প্রায় অন্ধ, হাত কাঁপে। মনে মনে ছবি আঁকেন রামকিঙ্কর। আর এগোতে চাইনা, এরপর তো মৃত্যুর উপত্যকা।
ও চাঁদ চোখের জলের লাগল জোয়ার, দুখের পারাবারে


তথ্য সুত্রঃ
১। দেখি নাই ফিরে-সমরেশ বসু
২।ঋত্বিক-সুরমা ঘটক
৩।ভুবনডাঙার কিঙ্কর-আবীর মুখোপাধ্যায়
৪।উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098