ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098



বেড়ানোই হোক বা বিয়ে বাড়ি, জন্মদিনের পার্টি বা ফ্যামিলি গেট-টুগেদার ছবি তোলাটা মাস্ট। এ অভ্যেস অনেক দিনের, এ অভ্যেস দেশ-জাতি নির্বিশেষে একই। কনভকেশনের ছবি, প্রথম সমুদ্র বা পাহাড় দেখার ছবি- এসব যেন নস্টালজিয়া। স্মৃতি কে বেঁধে রাখার চক্রান্ত।অ্যালবামের পাতায় তোলা থাকবে আকাশের ছবি, ফুল-পাখীর ছবি, ঝরনা-নদীর ছবি, পাহাড়ের ছবি, হাসি মুখ বা বেদনা ভরা ছবি-এ সখ চিরন্তন। তাই যে ভালো ছবি তলে পরিবারে তার বেশ কদর। সব্বাই পাশাপাশি দাঁড়িয়ে গেল, পিছনে সবুজ বন, নীল নদী, বরফের পাহাড়, বা মাঝে বিয়ের কনে, অন্নপ্রাশনের খোকা-খুকি। ফটোগ্রাফার ফ্রেম থেকে আউট। অনেকটা কেমিস্ট্রির মলিকিউলার রিপ্লেসমেন্ট মেকানিজিমের মতন, একবার ফটোগ্রাফার চলে আসে ফ্রেমে আর তার বদলি হয়ে ছবি তুলতে ফ্রেম থেকে কেউ গিয়ে দাঁড়ায় লেন্সের পিছনে।

চলছিল বেশ, কেমন করে না জানি ২০০৩ সালে বাজারে এল  Sony Ericsson Z1010, যে মোবাইলে ছিল front-facing camera, ব্যাস চালু হয়ে গেলো নতুন ট্রেন্ড। মূলত ভিডিও কলিং এর জন্যই Front Cameraর ব্যবহার চালু হলেও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকলো “সেলফি”। ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম বা ফ্লিকারের মতন নানান সোশ্যাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়ল এই সেলফি বিপ্লব!২০১৩তে Oxford English Dictionary তেও স্থান পেল “সেলফি” শব্দটি। Oxford English Dictionary অনুযায়ী সেলফি হল “a photograph that one has taken of oneself, typically with a smartphone or webcam and uploaded to a social media website"



সেলফি যেন ছবির দুনিয়ায় অনেকটা রেডি তো কুক গোছের ব্যাপার। পটলা, বা মালতি পিসি তো বটেই, নামকরা ফ্যাশান সেলেব, স্পোর্টসম্যান, বা রাষ্ট্রনেতা সবাই প্রায় ভেসে গেছে এই সেলফির ঢেউয়ে। মুখ বেঁকিয়ে, ঠোঁট ফুলিয়ে (ওটাকে নাকি পাউট বলে) নানা বিভঙ্গে ছবি তোলাই নাকি সেলফি।টেকনিক্যাল বিপ্লবও তো কম হয়নি। কত সব ফিল্টার, কত সব সাজগজ-দিব্যি পালটে ফেলা যায় বদনের ভূগোল বা ইতিহাস। আহা,কচি নিমপাতার রঙে পটল চেরা চোখও পালটে যায় আঙ্গুলের ছোঁয়ায়।এমন উলটে দেখুন পালটে গেছির খেলায় তাই সামিল আট থেকে আশি। তবে যদি ইতিহাস ঘাঁটেন, সেই প্রথম বিশ্বা যুদ্ধের সময় কোন এক জার্মান বৈমানিক আকাশে কোন এক স্বয়ংক্রিয় কামেরায় নিজের ছবি তোলেন। সেটাকেও সেলফি বলতেই পারেন, কিন্তু তখন যেহেতু স্মার্ট ফোন বা ওয়েব ক্যাম ছিল না তাই অক্সফোর্ডের সংজ্ঞায় ওটি সেলফি নয়।
প্রসঙ্গত একটা কথা মনে পড়ে গেলো, জঙ্গলের গল্প।২০১১ তে ইন্দোনেশিয়ার Tangkoko Reserveএ ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফার ডেভিদ স্লেটার কিছু বিশেষ কারনে তাঁর কামেরাটি রেখে যান। পরে যখন ক্যামেরাটি উদ্ধার হয় তখন তাতে Celebes Crested Macaque প্রজাতির বাঁদরের কিছু সেলফি পাওয়া যায়। সেই ছবির কপিরাইট নিয়ে ২০১৬ তে নাকি কোর্ট-কাছারিও হয়েছে।বুঝুন ঠ্যালা, বাঁদরের সেলফি তাই নিয়ে নাকি মামলা, এ কেমন বাঁদরামো।



রনে-বনে-জলে-জঙ্গলে সেলফি তোলার এই বাতিক টা কেমন স্বার্থপর গোছের মনে হয়। নিজের ইগো আমি আমিত্ব জাহির করার মতন, ছবিতে কেবল নিজেকেই দেখা কোথায় যেন আত্মকেন্দ্রিক মানসিকটাকেই উস্কে দেয়। সাইকোলজিকাল অনেক গবেসনাও হয়েছে এই নিয়ে। সাধারণত সেলফি নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ নিজের গাল টা বাম দিকে হেলিয়ে সেলফি নেয়, ব্যাতিক্রম অবশ্যই আছে, কিন্তু এই প্যাটার্নটা প্রচ্ছন্নে Asymmetries Of Brain Lateralization এর তত্বকেই সমর্থন করে। অদ্ভুত ভাবে বেশিরভাগ সেলফি তে ফটোগ্রাফির Rule of Third  মিলে যায় অজান্তেই। মানুষের মন বোধহয় অবচেতনে ঠিক করে ফেলে নিজেকে সুন্দর দেখানোর সুত্র।
শেষ পাতে তাই একটা তথ্য দিয়ে যাই, American Academy of Facial Plastic and Reconstructive Surgery এর সমীক্ষাতে দেখা গেছে এই সেলফির চক্করে পড়ে, বহু মানুষ নাকি আসছেন নিজের মুখটা সেলফিতে যাতে সুন্দর লাগে তেমন করে দিতে।
অনেক্ষন কষ্ট করে আবল তাবোল পড়লেন, এবার একটা সেলফি তুলে নিন।                                                                                                                                                                                                                                                                                                        



No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098