৬ নং গলিটা মনে আছে তোমার বিজয়।মনে আছে পল্লীর ভেতরের সেই স্যাতস্যাতে বাড়িটার
কথা।কত নাম উঠেছিল তখন পেপারে আমাদের।চরিত্রহীন পুলিশ আরো কত কী! তুমিও ভয় পেয়েছিলে
চাকরি চলে যাবার।আমার যদিও কোনো দিনও এসবের ভয় ছিল না,কিন্তু সেবার ভয় লাগলো।যদি
অচিরা সংসার ছেড়ে চলে যায়।তখন আমার কি হবে।
কিন্তু তাও মেয়েটাকে উদ্ধার করার প্রশ্ন ছিল।মনে পড়ছিল মেয়েটার মা বাবার
মুখ।বাংলাদেশ থেকে মেয়ের খোঁজে এসেছিলেন ওরা।মেয়েটাও মায়াবিনী দেখতে ছিল।আর বলতে
নেই কেস টাও পরলো আমাদের হাতেই।অনেক খুঁজে নিষিদ্ধ পল্লীতেই পাওয়া গেল
মেয়েটাকে।কিন্তু পুলিশ হয়ে তো মেয়েটাকে বের করতে পারি না।জীবন নষ্ট হবে যে
মেয়েটার।তাই কাস্টমার হয়ে যেতাম।
তোমার মনে আছে হয়তো প্রথমে যেতে খুব একটা ভালো লাগতো না,কষ্ট হতো ওদের দেখে।তাও আর কি
করা যায়,আমাদেরও তো হাত বেঁধে দিয়েছে নিয়ম।যাই হোক,ওখানে গিয়ে আমরা প্ল্যান করলাম কিভাবে মেয়েটাকে বের করে আনবো।কিন্তু এর
মধ্যেই পেপার,খবরের শিরোনামে আমরা।চরিত্রদোষ বিজয়
চরিত্রদোষ।তোমাকে তো বাঁচিয়ে দিলাম কিন্তু আমি পরলাম সংসারের ফাঁদে।পল্লীতে যাবার
জঘন্য অপরাধে অচিরা মেয়েকে নিয়ে ছেড়ে চলে গেল।
তোমাকে আর টানি নি এসবে আমি।তোমার নতুন সংসার,সব নতুন।তুমি বলেছিলে আমাকে
যে তোমার সাহায্য যেন নেই,কিন্তু আমি নেই নি।যাই হোক,পল্লীর অপরাধে চাকরিও গেল।আসলে টাকা ছিল তো তাই চাকরি যাবার ভয় পেতাম
না।কিন্তু অচিরা,মেয়ে এটার ভয় ছিল,আর
হলোও তাই।
যাই হোক,এর কিছু দিন পরই মেয়েটাকে নিয়ে প্ল্যান মতো পল্লীর থেকে বের করে নিয়ে
এলাম।তুলে দিলাম ওর মা বাবার হাতে।মেয়েটা আমাকে বাবা বলে ডেকেছিল,জানো বিজয় জীবনের শ্রেষ্ট প্রাপ্তি ছিল ওটা।আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম
বাবা কেন আমাকে!মেয়েটা তার থেকেও অবাক করার মতো উত্তর দিয়েছিল।কি বলেছিল
জানো।বলেছিল আমার বাবা আমাকে পৃথিবীর আলো দেখিয়েছে,কিন্তু
আপনি আমাকে অন্ধকার থেকে বের করে এনে নতুন সূর্য দেখালেন।আজ মৃত্যু সজ্জায় এই
কথাটা খুব মনে পরছে।
নিজের মেয়ের থেকে তো আর ঠিক করে বাবা ডাক শুনতে পারলাম না।কিন্তু ওই ডাকেই ভর
করে বেঁচে ছিলাম জানো......
দিন তিনেক পর জ্যোতির্ময় বাবুর বাড়ির সামনে ভিড়।তার স্ত্রী অচিরা মেয়েকে নিয়ে
এসেছে আজ তাকে দেখার জন্য।বিজয়কে লেখা চিঠি ডাকবাক্সে যায়নি।হয়তো কেনোদিন ডাইরির
পাতা খুলে তা কেও পাবে,আর জানবে কে ঠিক কে ভুল।হয়তো সময়ই উত্তর দেবে এ প্রশ্নের।।
No comments:
Post a Comment