উঃ! বড় কষ্ট।মাথার ভিতর
টা দপ্ দপ্ করছে জীবনানন্দর ।মাঝে মাঝে চেতনা টা আসছে আবার গভীর কোনও সমুদ্রে
তলিয়ে যাচ্ছে। ওঃ, ঈশ্বর! শুধু তারই জীবনে কেন এত কষ্ট ? সারাটা জীবন এক ছন্নছাড়া
রাহু যেন তাঁকে ছুটিয়ে মেরেছে। এতটুকু শান্তি তিনি পান নি কোনোদিন। একেই কি
প্রারব্ধ বলে ? কে জানে ?
বহুদূর সমুদ্রের পর হাল ভেঙে যে নাবিক ''''''সেই অবস্থাই যেন তাঁর। অতল
জলের নীচে তলিয়ে যাওয়া আবার ভেসে ওঠা। ডুবকি দিতে দিতে কোথায় পৌঁছে যান তিনি ? এতো
তাঁর ভারি চেনা। ওই তো ! ঐতো পদ্মার তির ! ওই তো তাঁর গ্রাম গাউপারা !
মিলু ,,,,, মিলু
,,,,,,! কে ডাকছে ? কে ? মা কুসুম কুমারী - আমার মনে আছে মা ছন্দ মিলিয়ে কথা কেমন
করে কবিতা হয়ে ওঠে !
আমাদের দেশে হবে সেই
ছেলে কবে ?
তার পর যেন কি ?
আবার
আচ্ছন্ন হয়ে পড়েন জীবনানন্দ ।
একটু জল !একটু জল !
এক মহিলা জল দেন -নার্স
ই হবেন হয় তো ।
কটা বাজে ?আজ কত তারিখ
নার্স ? বলতে চান কিন্তু গলা দিয়ে শব্দ বের হয় না। পান পাতার মতো শ্যামলা একটা
মুখ - সেই বরিশালের মেঘ ছাওয়া আকাশের মতো। সেই বাংলাদেশ ! তাঁর বড়ো প্রিয় বাংলার মুখ
আমি দেখিয়াছি ! হায় ! নাম হীন সেই কবিতাগুলি তেমন ই পরে আছে ডায়েরিতে ,কেউ ছাপাতে
রাজি হলো না ! শুধু ব্যঙ্গ ,শনিবারের
চিঠির কথা পাঁজরে রক্ত ঝরায়। কেউ বুঝলো না। এত রক্তপাত ,দীর্ণ জীবন ,পার্টিশন ।ওঃ
! বড়ো কষ্ট ।সারাজীবন মরীচিকার পিছনে ছুটে চলা। একটা স্থায়ী চাকরি তিনি রাখতে পারেন
নি ।বার বার বরখাস্ত। ঘরে তীব্র দারিদ্র আর অশান্তির ঘূর্ণি ।পালিয়ে পালিয়ে শুধু
ঘুরে মরা নির্জন অন্ধকারে শামুকের মতো ! ইংরেজি সাহিত্যের স্নাতকোত্তর তিনি কত
মানুষের পায়ে ধরেছেন। বাসের পারমিট পর্যন্ত ,,,,নাঃ কিছুই হয় নি। তবু ,তবু লেখাকে
ছাড়েন নি তিনি। রোগা শালিকের বিবর্ণ ইচ্ছায় ধূসর পাণ্ডুলিপি হয়েছে প্রেতিনির
রূপকথা। তারপর !কার্তিকের নবান্নের দেশে ঘুম নামে। ঘুম নামে চরাচর জুড়ে। সেই ঘুম
চামর বুলায় কবির নয়নে !!!!!
No comments:
Post a Comment