আজ,
"কি দেখছিস ওভাবে?
কোনো কথা নেই বার্তা নেই অন্ধকার একটা গলির সামনে এসে দাঁড়িয়ে গেলি। মাথার ঠিক আছে
তো তোর!" বলেই বেশ হকচকিয়ে গেল শান্তনু। কয়েক মুহূর্ত থেমে ফের বলল,
"রক্তিম, তুই কাঁদছিস? কি হয়েছে খুলে বলতো।"
সেদিন,
রাত আটটা। কেমিস্ট্রি
পড়া শেষ। ক্লাস ঘর থেকে বেরিয়ে জুতো পড়ছিলো রক্তিম। ঠিক তখনই পিছন থেকে শুনতে পেল,
"এক্সকিউজ মি!" পিছন ঘুরতেই রক্তিম দেখলো মেয়েটাকে, গোলাপি টি শার্ট আর
ডেনিম ব্লু জিন্স। আজকেই পড়তে এসেছে এই ব্যাচে। মেয়েটি বলল, "তুমিই রক্তিম
ব্যানার্জী, রাইট?" রক্তিম
মুচকি হেসে বললো "হমম।" মেয়েটির চোখে মুখে একটা জৌলুস দেখতে পেল রক্তিম।
মেয়েটি বলল, "আমি সৌরদীপ্তা। সৌরদীপ্তা বসু। আমি তোমার সব লেখা পড়েছি। আমার
খুব ভালো লাগে তোমার লেখা।" রক্তিম আবার মৃদু হেসে বললো, "ওহ, থ্যাংকস।
ইটস মাই প্লেসর। বাই দ্য ওয়ে, আমরা সেম ক্লাস সো তুমি না বলে তুই বললে বেশি খুশি
হব।" মেয়েটা বললো, "তাহলে আজ থেকে আমরা ফ্রেন্ড রাইট?" রক্তিম
সম্মতি জানালো।
আজ,
"কি ব্যাপার রে ভাই, কি এত ভাবতে বসলি? দেখ তাড়াতাড়ি বাড়ি
ফিরতে হবে। নাহলে কাকিমা আবার রাগারাগি করবে। হাজার হোক নেক্সট উইকে বিয়ে তোর! এটা
মাথায় রাখিস। কি রে আবার কাঁদছিস? খুলে বলতো সবটা। রক্তিম...."শান্তনু এবার
ঔৎসুক চোখে তাকালো। রক্তিম অবশেষে চোখ মুছতে মুছতে বললো, "বলছি। কিন্তু বাড়ি
ফিরে চল। ঘরে গিয়ে বলবো।"
সেদিন,
"কি ব্যাপার
বেমালুম চুপ করে গেলি যে? কি ভাবছিস এত? আবার লেখার প্লট আসল নাকি? হাই!
হ্যালো!" বলে রক্তিমের মুখের সামনে হাত নিয়ে গিয়ে একটা তুড়ি বাজালো
সৌরদীপ্তা। এবার বেশ নড়ে চড়ে বসল রক্তিম, বললো, "হ্যাঁ, বল। কিছু
বলছিলি?" সৌরদীপ্তা আবার বলতে লাগলো, "আমি কি বলবো? তুই কি বলবি বলেই তো
নিয়ে এলি। এখন নিজেই অন্য দুনিয়ায় হারিয়ে গেছিস। এরকম বাজে ডেটিং এর অভিজ্ঞতা বোধয়
কারোর নেই। কেমন একটা আনরোমান্টিক ছেলে! হাঃ!" এবার রক্তিম বেশ কিছুক্ষণ দম
নিয়ে বললো, "সাঁথিয়া তোকে বেশ কিছুদিন ধরেই বলব ভাবছি। শুধু তুই কি ভাববি
সেটা ভেবে বলিনি। কিন্তু আজ বলবই। আই লাভ ইউ সাঁথিয়া। আমি তোকে ভালোবেসে
ফেলেছি।"
আজ,
"শান্তনু শোন না, মা জিজ্ঞেস করছিল সব নেমন্তন্ন ঠিক মতো
হয়েছে কিনা? একটু লিস্টটা নিয়ে আয় তো একবার চেক করে নেই। এই এক ঝামেলা। কতবার না
করলাম, কে শোনে কার কথা! তুই ই বল শান্তনু, বিয়ে না করলে কোন মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে
যেত। যত্তসব!" রক্তিমের কথায় বেশ জোরে জোরে হেসে উঠলো শান্তুনু বললো,
"এখন এরকম বলছিস তো দেখবি একদিন এই মেয়েই তোকে এত ভালোবাসবে যে তুই ওকে চোখে
হারাবি। মিলিয়ে নিস আমার কথা।"
সেদিন,
আজ আকাশ খুব মেঘলা। সবে দুদিন হলো গরমের ছুটিতে বাড়ি এসেছে রক্তিম।
ফোনটা বেজে উঠলো ওর। রিসিভ করে কানে লাগালো ফোনটা। "কি ব্যাপার ম্যাডাম? আজ
বেশ সকাল সকাল ফোন করলে যে!" ওপাশ থেকে সাঁথিয়া বলল, "আসার পর একবার তো
দেখা করারও প্রয়োজন মনে করিস না। পাজি ছেলে। এক ঘণ্টার মধ্যে দেখা কর। ক্রুজ মলের
সামনে। দেরী করবিনা একদম।" রক্তিম সম্মতি জানিয়ে ফোন রেখে দিলো।
আজ,
এই তোমরা একটু তাড়াতাড়ি করো। বের হতে হবে তো। লগ্ন শুরু হয়ে যাবে
এরপর। নিয়ম শেষ করো তাড়াতাড়ি। এইতো প্রায় শেষ, এবার এই ঘটের চারপাশে ঘুরেই বেরিয়ে
পড়তে হবে। নিয়ম মেনে ঘটের চারপাশে ঘুরে বেরিয়ে পড়লো রক্তিম। পরনে লাল মান্যবরের
পাঞ্জাবী আর তসরের ধুতি। অবশেষে তাহলে বিয়ে হবে রক্তিমের। সাঁথিয়া কি দেখতে পাচ্ছে
সবটা? কি ভাবছে ও? ভুল বুঝবে না তো ওকে? রক্তিম তো সত্যিই ভালোবেসেছিলো ওকে। আর
এখনও ওকেই ভালোবাসে। বাড়ির চাপে বিয়ে করতে হচ্ছে।
সেদিন,
বেলা সাড়ে বারোটা
বাজে। সাঁথিয়া ফোন করার প্রায় আড়াই ঘন্টা হতে চলল। এখনো তো এলোনা। ফোনও ধরছেনা। কি
ব্যাপার কিছুই বুঝতে পারছেনা রক্তিম। সাধারণত এত দেরি তো করেনা। তাহলে কি আসবেনা?
না সত্যিই আসেনি। বিকেল নাগাদ ফোন আসে রক্তিমের কাছে। তখনই দৌড়ে গিয়েছিল হসপিটালে।
না শেষ দেখা আর হয়নি। ততক্ষনে সাঁথিয়া চলে গিয়েছিল রক্তিমকে ছেড়ে অনেক দূরে। যেখান
থেকে আর ফিরে আসা যায়না।
**********
রক্তিমের বিয়ের আজ
পাঁচ বছর হয়ে গেল। শুধু বিয়ের পাঁচ বললে ভুল। ছোট্ট সাঁথিয়ার ও দেড় বছর হয়ে
গিয়েছে। তিন জন আর বাবা মা পাঁচ জনের বেশ সুখী সংসার ওদের। সত্যিই, শান্তুনু ঠিকই
বলেছিল। একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আর সেদিন রক্তিম জাহানকে চোখে হারাবে।
আসলে যদি দুটো মন মেলার জন্য তৈরী হয়। তাহলে যত দূরই
হোক না কেন, যত দেরিতেই হোকনা কেন, তারা মিলবেই। হয়তো আমরা অনেক সময় ভেবে নেই আমরা
আমাদের জীবন কার সাথে কাটাবো। কিন্তু আসলে আমরা আমাদের জীবন কার সাথে কাটাবো সেটা
তো আমাদের ভাগ্যই ঠিক করে। সবটাই একটা ম্যাজিক!
*** সমাপ্ত***
No comments:
Post a Comment