ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098

- ঋদ্ধিমান ভট্টাচার্য্য 

It’s going to be hard work, bringing all the old forests back.
The seas have begun rising, and the winds grow cold.
Towns have become cities, and Jadav is growing old.
But he keeps on planting and planting and planting.

লাইনগুলো নেহাতই এক শিশু পাঠ্য থেকে নেওয়া, কিন্তু সেই যে চিরন্তন বানী অনুরণিত হয়-

দাও ফিরে সে অরণ্য, লও এ নগর,
লও যত লৌহ লোষ্ট্র কাষ্ঠ ও প্রস্তর
হে নবসভ্যতা! হে নিষ্ঠুর সর্বগ্রাসী,
দাও সেই তপোবন পুণ্যচ্ছায়ারাশি,
গ্লানিহীন দিনগুলি, সেই সন্ধ্যাস্নান,
সেই গোচারণ, সেই শান্ত সামগান,
নীবারধান্যের মুষ্টি, বল্কলবসন,
মগ্ন হয়ে আত্মমাঝে নিত্য আলোচন
মহাতত্ত্বগুলি। পাষাণপিঞ্জরে তব
নাহি চাহি নিরাপদে রাজভোগ নব--
চাই স্বাধীনতা, চাই পক্ষের বিস্তার,
বক্ষে ফিরে পেতে চাই শক্তি আপনার,
পরানে স্পর্শিতে চাই ছিঁড়িয়া বন্ধন
অনন্ত এ জগতের হৃদয়স্পন্দন।

জানি আজ আর আরন্যক হয়ে ভানুমতির সাথে বসেম বুনো তেওরির ফুলের নকশি কাঁথা আঁকা সন্ধ্যায়, জোনাকির আলোয় শজারুর ঝলসানো মাংসের ভোজ খাওয়ার দিন নেই। কবিয়াল যারা, তারাও নাগরিক। তবু এই নগর কেন্দ্রিক সভ্যতাকে টিকিয়ে রাখতে ওই অরন্যে লালন করতেই হত। জানি লেখাটা নিছক ইকোলজির লেকচার মার্কা মনে হচ্ছে। আসলে শিশুপাঠ্য বলেই বলেই লেখাটা সরল। সেই ক্লিশে হয়ে যাওয়া স্লোগান “গান লাগান প্রান বাঁচান” টাইপ আরকি।তবে একেবারে ওপরের লেখাটায় দেখুন একটা নাম আছে “যাদব”। লালু প্রসাদ বা কুলদীপ হলে যত সহজে চিনে ফেলা যেত ততটা সহজ না হলেও, মানুষ টির জন্য গর্ব করার অনেক কারন আছে।২০১৫তে উনি পদ্মশ্রী পেয়েছেন।জহরলাল নেহেরু ইউনিভার্সিটির ভাইসচ্যান্সেলর সুধীর কুমার সপরি তাঁকে ডেকেছেন "Forest Man of India" নামে।২০১৪এর কান ফেস্টিবালে যাদবের উপর নির্মিত তথ্যচিত্র পেয়েছে “Best Documentary prize at the Emerging Filmmaker Showcase in the American Pavilion” এর সন্মান।StoryWeaver থেকে যাদবের গল্প, ভিনায়াক ভারমার ইলাস্ট্রেটেড শিশুপাঠ্য “Jadav and the Tree-Place” প্রকাশিতও হয়েছে।

যাদবের পুরো নাম যাদব মলাই পায়েং।আসামের মিশিঙ সম্প্রদায়ের মানুষ।ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে, স্ত্রী বিনিতা আর তিন ছেলে মেয়েকে নিয়ে যাদবের সংসার।নিজের গোয়ালের কত না জানি গবাদি পশু বাঘে টেনে নিয়ে গেছে তবুও মানুষ টি নিজে হাতে রক্ষা করছে বন আর বনের পশু, ধরিয়ে দিচ্ছে পোচারদের।ঘটনাটা ১৯৭৯ সালের, যাদবের বয়স তখন ১৬। ব্রহ্মপুত্রে বন্যা হল আর যখন সেই বানের জল নামলো মাজুলির সেই দ্বীপের প্রচুর সাপ আর সরীসৃপ কে টেনে নিয়ে গেলো সবুজ হীন এক বালির চরায়।প্রচণ্ড গরমে উজাড় হয়ে গেলো তারা।তখন গোলাঘাট জেলার বনদপ্তর পরিকল্পনা করল অরুনা চাপড়ির ২০০ হেক্টর জমিতে গাছ লাগান হবে। টিকাদারের অধীনে যাদব যোগ দিল সেই কাজে শ্রমিক হিসাবে।পাঁচ বছরের সি সরকারি কাজ শেষ হয়ে গেলেও যাদব ভালো বেশে ফেলল সে কাজ।বন দপ্তর থেকে লাগান সেই গাছ গুলোর যত্ন করার পাশাপাশি যাদব নিজে থেকেই নতুন গাছ লাগানো শুরু করল।
২০০৮ সাল, হাতির খোঁজে আসা বন বিভাগের কর্মীরা অবাক হয়ে গেলেন। অরুনা চাপড়িতে রাতারাতি তৈরি হয়েছে গন বিস্তীর্ণ এক অরন্য।সে অরন্য জুড়ে অর্জুন, শিরীষ, জারুল, কৃষ্ণচুড়া, শিমুল আর বাঁশের ঝাড়।সেই ৫৫০ হেক্টরের জঙ্গলে আজ বিচরন করে গণ্ডার, হাতি, হরিণ, খরগোশ আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার।দশকের পর দশক ধরে একা একটি মানুষের প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা এই অরণ্য আজ যাদবের নামে “Molai Forest” নামেই পরিচিত।


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098