রমজান – ইয়াসির আরিফ
রমজান মাস শুরু হওয়ার
সাথে সাথে তাকে আনুষ্ঠানিকতায় ঢেকে দেওয়া হচ্ছে । সংযমের
মাস যেন ভোজের মাসে পরিণত হয়েছে। সারাদিন সংযম ও উপবাস করার পর যদি পেট পুরে ভোজন
করা হয় তা হলে আর সংযম রইলো কোথায়? কোনও ক্ষুধার্ত ব্যক্তি
দীর্ঘ সময় পর যেমন খাদ্য দ্রব্য গ্রহণ করে এ তো সেই রকম অবস্থার সৃষ্টি হলো। তাকে
তো আর প্রকৃত রোজা পালন করা বলা যায় না। বাজারে প্রত্যেকটি দ্রব্যের মূল্য আকাশ
ছোঁয়া। বিশেষ করে ফলের দাম হঠাৎ করে দ্বিগুণ বেড়ে গেল। মনে হচ্ছে যেন ভোজের উৎসব
এসে গেছে। ইফতার এর মূল শব্দ ‘ফুতুর ‘ অর্থ
নাশতা বা হালকা খাবার।অধিক আহারের কোনও প্রয়োজন নেই।ইফতার করার সময় দরিদ্রতম
মানুষটির কথা স্মরণে আনতে হবে। কিন্তু ইফতার করার
ছবি দিয়ে আত্মপ্রচার শুরু হয়েছে। এরপর আছে ইফতার পার্টি। ইফতার পার্টি বেশির ভাগ
ক্ষেত্রেই রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতার উৎকৃষ্ট মঞ্চ। সংযমের বিন্দু মাত্র অবশিষ্ট থাকে
না এখানে। কেবলই আড়ম্বর প্রদর্শন। ভোরে
সামান্য কিছু খাবার ও জলের প্রয়োজন মাত্র। অধিক
আহারের আয়োজন হলে তো ভোজন উৎসব বলা যেতে পারে, তবে সংযম
কখনও নয়। তার উপর মহল্লায় মহল্লায় রাত্রি দুপুরে মাইকের শব্দ করে ঘুম ভাঙানোর
নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার হয়েছে। ইসলামে
ধর্মের বিষয়ে কোনও জোরজবরদস্তি নেই এ কথা একাধিক বার কোরানে বলা হয়েছে। ইসলাম সব সময় বিজ্ঞান ও যুক্তি নির্ভর। কোরানের প্রায় সাতানব্বই শতাংশ
কেবল বিজ্ঞান, দর্শন, সমাজ ও সৃষ্টি
সম্বন্ধে উল্লেখ করা হয়েছে। মাত্র তিন শতাংশ প্রথাগত ধর্ম বিষয়ে বলা হয়েছে।
রোজা রাখার ক্ষেত্রেও তাই দুর্বল, অসুস্থ, গর্ভবতী মা, পরিব্রাজক প্রভৃতি ব্যক্তিগণকে রেহাই
দেওয়া হয়েছে। তাই রাত্রি দুপুরে মাইকের মাধ্যমে সকলের ঘুম ভাঙানো যুক্তি হীন।
হজরত মোহাম্মদ (দঃ) প্রতিদিন গভীর রাতে তাহাজ্জোদ নামাজ পড়তেন।কিন্তু তিনি কখনও তাঁর স্ত্রীরও ঘুম ভাঙাতেন না। আমার
প্রতিবেশী রোজাদার নাও হতে পারে। এমনকি একই পরিবারের সকল সদস্য রোজা নাও রাখতে
পারে। তাই সকলের ঘুম ভাঙানো ঠিক নয়
।রমজানের শিক্ষা ধৈর্য ও সংযম। রমজানের আর একটি নাম হচ্ছে শাহরুল মুওয়াসাত।
অর্থাৎ সহমর্মিতার মাস। একে অপরের প্রতি সম্প্রীতি, সমবেদনা
ও সহমর্মিতা রমজানের মহান শিক্ষা। রোজা বা সংযম সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত বিষয়। যদি আপন
ইচ্ছায় কারও ঘুম না ভাঙে তবে তার রোজার মূল্য কোথায়? অপর
পক্ষে যখন কোনও মানুষ অন্য সময় গভীর রাতে তাহাজ্জোদ নামাজ পড়ে সে তো আপন ইচ্ছায়
ঘুম হতে ওঠে। ঘুম ভাঙানোর কোনও দায়িত্ব অপরের উপর চাপাতে হয় না। জাহির করে রমজান
পালন করা যতটা প্রাতিষ্ঠানিকতা পায় ঠিক ততোটা প্রাণ পায় না। রোজাদার সংসারের
স্বাভাবিক কাজকর্ম যথারীতি পালন করবে। কর্ম ব্যতিরেখে দিনের দীর্ঘ
সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেওয়াও বিধি সম্মত নয়। স্বাভাবিক জীবন যাপনের মধ্যেই সংযম
রক্ষা করা প্রকৃত রোজা পালন। রমজান পালনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো আমিত্ব বিসর্জন।
এবং আমিত্ব বিসর্জন সংগঠিত ভাবে হয় না। আমিত্বের উদয় হলে বিবেক ও মনুষ্যত্ব অস্ত
যায়।
No comments:
Post a Comment