গত মাসের বিষয় ছিল ‘প্রেমের গল্প’ এবং সেরা তিনটে প্রেমের গল্পের মধ্যে একটি নির্বাচিত হয়েছে দীপ্তনীল ব্যানার্জি এর ‘এক্স ইস অলয়েজ নট ইকুয়ালস টু প্রেম’
পরের মাসের বিষয় জানতে চোখ রাখুন ব্লগটগের ফেসবুক পেজে।
একটু ইতস্তত করে ফেসবুকে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্টটা
পাঠিয়েই দিল নীল। সাথে সাথে একসেপ্ট।
এতটা ভাবেনি। একটু শান্ত হয়ে বসে ভালো করে প্রোফাইল, ছবিগুলো দেখতে লাগলো সুতপার।
স্বামী, বাচ্চা নিয়ে সংসার। চিপকে চিপকে ছবি। ততোধিক ন্যাকা ন্যাকা মন্তব্য। খুব
মিষ্টি বাচ্চাটা বছর পাঁচেকের হবে।
কাজকর্ম এখন বিশেষ কিছু নেই।অদিতি গত পাঁচ মাস
নেদারল্যান্ডে অফিস ট্রেনিং এ। একবছরের জন্য। মাসি রান্না করে রেখে দিয়ে চলে গেছে।
মেসেজে গিয়ে ছোট্ট একটা
"হাই" লিখে পাঠিয়ে দিলো সুতপাকে। সাথে সাথে সীন হয়েছে দেখে একটু
উত্তেজিত হয়েই উত্তরের অপেক্ষা করছিল। দশ মিনিট পরও রিপ্লাই না পেয়ে মাটিতে পা
রাখল নীল। যে মেয়েটা ছবছরের সম্পর্ক ভেঙ্গে দেবার সময় একটা কারন দেখানোর ও দরকার
মনে করেনি তার কাছে এখন খেজুরে আলাপের সময় আছে এটা ভাবা বোকামো।
সুতপার সম্পর্ক ভাঙাটা আজ ও একটা রহস্য নীল এর
কাছে। শুধু একটা বাইকওলা পুরুষালী ব্যক্তিত্বের জন্য এতদিনের সম্পর্ক বাদ? অবশ্য
হবে নাই বা কেন? টাকা পয়সা, কেরিয়ার এইসব দিকে নীল আর অলকেশ দুজনেই তুল্যমুল্য।
তাহলে স্মার্টনেস আর বাইক নিয়ে হিরোগিরির এক্সট্রা প্রিভিলেজ নেওয়াই যায়। এইসব
ভাবতে ভাবতে রাতের খাওয়া খেয়ে আবার মেসেঞ্জার খুলে একটু চমকাল নীল। সুতপার টেক্সট।
"কেমন আছো? সরি, দেরি হল উত্তর দিতে। বাচ্চাটা অসুস্থ।"
এত দিন পরেও গল্প শুরু হতেই তরতরিয়ে চলতে লাগলো।
অদিতির ফোন ধরে বললো "আজ একটু কাজ আছে, কাল কথা বলছি।" অদিতি বরাবর ই
ভীষণ আন্ডারস্ট্যান্ডিং। তাই নো প্রব্লেম। প্রব্লেম টা শুরু হল সুতপার সাথে হিসেব
মেলাতে। যত কথা বলছিল ততোই অবাক। এতটা খারাপ আছে সুতপা? ফেসবুক কি তাহলে শুধুই
মিথ্যের আয়না? অলকেশের জন্যই নিজের ব্রাইট কেরিয়ার ছেড়ে গৃহবধূর জীবন বেছে নেয় সুতপা। আর তাকেই আজ
প্রতিদিন তাকিয়ে থাকতে হয় সামান্য কটা দয়ার টাকা পেলে নিজেকে আর বাচ্চাটাকে
খাওয়ানোর জন্য। এটা পুলিশ কেস নয়। অবহেলা, উপেক্ষার কোন সাক্ষী, প্রমান হয় না।
পরপর তিন চার দিন দ্যাখা হল। কখনো প্রথাগত যৌনতায়
না জড়ালেও, সুতপার হাত ধরে রেস্টুরেন্টে বসা বা সিনেমা দ্যাখা এগুলো নতুন নয়
নীলের। তবু এতদিন পর একটু অদ্ভুত অনুভুতি দুজনেরই। অলকেশ জানত নীলের ব্যাপার টা।
তাই এর মধ্যে সুতপাকে জানিয়েই
ফেসবুকে ওকে আনফ্রেন্ড করে ব্লক করে দিয়েছে। অনেকদিন পর
সেই পরিচিত ভালবাসা আর সহানুভূতি পেয়ে সুতপা আবার বাঁচতে চাইছে। অর্থনৈতিক
সমস্যাতেও নীল আশাতীত ভাবে আগলে রেখেছে।
মাস দুই পর প্রস্তাবটা হঠাৎ সুতপাই দিলো। "এই
শনিবার তো রনির স্কুলের কি সব প্রোগ্রাম আছে, তোমার ও কলেজ ছুটি। তাহলে বাড়িতে
এসনা, রান্না করে খাওয়াই। নীল খুব একটা অবাক হয়নি।
বরাবরের অভ্যেসে একদম সময় ধরে পৌছে গেছিলো সুতপার
বাড়ি। খুব যত্ন করে রান্না করে খাইয়েছিল সেদিন। প্রত্যাশিত ভাবেই সবকিছু দিয়ে নীল
কে গ্রহন করেছিলো সুতপা। চরম মুহূর্তে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল "যেও না নীল আর
আমায় ছেড়ে। আমি ভুল করেছিলাম। আর থাকতে পারবনা"। আলতো করে চোখের জল মুছিয়ে
নীল যখন বাড়ি ফিরল তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে।
চা খেতে খেতে নিজের বারান্দায় বসে ফোনটা হাতে নিল
নীল। মুখে একটা ভাললাগার হাসি। ও সরকারের প্রতিরক্ষা বিভাগের বড় আধিকারিক। অফিসে
থাকলে ওর অনুমতি ছাড়া কারো দ্যাখা করার ক্ষমতা নেই। আস্তে আস্তে সুতপার দুটো নাম্বারই ব্লক করল। অদিতিকে একটা টেক্সট করল
"এবার অন্তত এক সপ্তাহ ছুটি নিয়ে এস। ভালো লাগছেনা।"
সব প্রেমের গল্পে প্রেম থকেনা।
সহানুভুতির আড়ালে লুকিয়ে থাকে প্রতিশোধও।
No comments:
Post a Comment