গত মাসের বিষয় ছিল ‘প্রেমের গল্প’ এবং সেরা তিনটে প্রেমের গল্পের মধ্যে একটি নির্বাচিত হয়েছে সুপর্ণা চক্রবর্তী এর ‘মাথুর’
পরের মাসের বিষয় জানতে চোখ রাখুন ব্লগটগের ফেসবুক পেজে।
বছর কুড়ির পরমার যখন বারো বছরের বড়ো নিখিলেশের
সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল ,হাসিদি চোখ মটকে বলেছিল ,এতো কাকুর সাথে সংসার !সে কি আজকের
কথা !অর্ধ শতাব্দী পার হয়ে গেল ।কিন্তু মনে হয় যেন এই তো সেদিন ।কংক্রিটের শহরে
বড়ো হওয়া পরমা
উত্তরবঙ্গের চা বাগানে
এসে হাতে যেন স্বর্গ রাজ্যের চাবি পেয়েছিল । কি সবুজ !কি সবুজ!
আর ঘরের মানুষটা :এক আকাশ রোদ্দুর যেন ।অকালেই বাপ
মা মরা নিখিলেশের ঘরের বাঁধন তেমন ছিল না বরং ছিল এক সুগভীর কবি মন ।বিরাট বড়ো শাল
গাছের তলায় দাঁড়ালে যেমন অনুভূতি হয় ,ওর কাছে দাঁড়ালেও তাই !বাংলোর কাছেই তিরতিরে ঝর্ণা ।সেখানে ই রোজ সকালে চায়ের
আমন্ত্রণ ।কখনো বা দুপুরের আগেই বাইক নিয়ে বেরিয়ে পড়া ।অজানা গাঁয়ের পথে বা কোনো একলা নদীর বাঁকে
।নীলচে জলে পা ভাসাতো পরমা আর নিখিলেশ গাইতো -
জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে।
সে সুর ছড়িয়ে যেত চরাচর জুড়ে ।পাহাড়ে মেঘেরা থমকে
থামতো।তিস্তার বালুচরে উড়ে বেড়াতো তিতির এর দল ।এরপর অনি এলো ।তখন তিন জনের আকাশ
খোঁজা পালা । কখন যে ঈশান কোণে
মেঘ জমেছিল ঘুণাক্ষরেও টের পায় নি সে ।ঝড় যখন এলো নিমেষে জীবন লণ্ডভণ্ড ।ছোট্ট
অনিকে নিয়ে আবার সেই কংক্রিটের শহর ।কতই বা বয়স তার তখন ,বছর ত্রিশ ।সুন্দরী পরমার
সম্বন্ধ এসেছিল কত কিন্তু সসম্ভ্রমে পাশ কাটিয়ে একলা দাঁড় বেয়েছে সে।একযুগ দুযুগ
নয় চল্লিশ বছর !তবু এতটুকু ফিকে হয়ে নি সেই সবুজের আমন্ত্রণ আর সেই শাল গাছের ছায়া
।বিলোল সন্ধ্যায় দশ তলার
ব্যালকনিতে যখন লালচে আকাশ ডাক দিয়ে যায় ,পরমা স্পষ্ট দেখতে পান তিস্তার বালুচর ।বড়ো
বড়ো পাথর ছড়িয়ে আছে এখানে ওখানে । তারই একটিতে বসে পিছন ফিরে শাল প্রাংশু মহাভুজ
গিটার বাজিয়ে গাইছে -
জীবন মরণের সীমানা ছাড়ায়ে
বন্ধু হে আমার …
পরমার হেমন্তের নৌকা তীর ছুঁতে চায়।সে যে তার
অপেক্ষায় আছে !!ধিতাং মাদল বোল তোলে আহেরি ভৈরবে -মাথুরের পালা শেষ হতে আর তো বেশি
দেরি নেই !!!!!!!!
No comments:
Post a Comment