ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098

Image Courtesy -  Sritama Rakshit

ঋদ্ধিমান





কিছুদিন আগে আমার শহরে স্যানিটারি প্যাডে মেসেজ লিখে প্রতিবাদ হল। কেউ ছিঃ বললেন, কেউ বাঃ বললেন। শবরীমালা মন্দরি রজঃস্বলার প্রবেশ নিষিদ্ধ হলে নিউজ পেপারে বিস্তর লেখালেখি হল। পিরিয়ড বা মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল নিয়ে হাজার ট্যাবু, লজ্জা ,অধিকার, বিজ্ঞানচেতনা, পুজোপাট, সিনেমা থেকে ভেন্ডিং মেশিন অনেক কিছুই হল। 


জানি না টিমি প্যালকে ভুলে গেছে কিনা সবাই এত কিছুর মাঝে। সময়টা ২০১৬র শেষ দিকের। টিমির ফেসবুক পেজ টিমিইমাজিনেসনে “দ্য ডায়েরি অব মাই পিরিয়ডস” নামের একটা অ্যালবাম নিয়ে খুব হৈচৈ হয়। টিমি আদতে রোমানিয়ান, পেশায় গ্রাফিক ডিজাইনার। টিমির ওই পোস্টটা বিতর্কিত,কারন তা ছিল একটা ছবি যা টিমি নিজেই এঁকেছিল তার নিজের মেনস্ট্রুয়াল ব্লাড দিয়ে। যদিও এর আগেও,২০১৫ সালে গ্লাসগো স্কুল অব আর্টসের ছাত্রী জেস কামিনও নিজের ঋতুরক্তে এঁকেছিলেন নৃত্যরত মহিলার অ্যাবস্ট্রাক্ট এক ছবি। সমগ্র নারী সমাজের হয়ে ট্যাবু মুক্তির উল্লাস সবার সামনে তুলে ধরেছিলেন জেস। কেবল প্রচারের আলো নিজের দিকে টেনে আনা বা পেজ থ্রির কয়েকশ স্কয়ার ইঞ্চির পোস্টার হিসাবে নয়,নারীর নারীত্বের আনন্দ হায়া হীন করে প্রকাশই ছিল জেসের উদ্দেশ্য। 

Image Source - Boredpanda


এই জেস বা টিমির চিত্রভাষার প্রেক্ষিতে যে সামাজিক বিধিবদ্ধতা লুকিয়ে আছে তা পেছন ফিরতে বাধ্য করে ৬০০০ খ্রৃষ্টপূর্বের ভোলগার তীরে। পাইনের ছায়ায় মোড়া বিস্তৃত নদী উপত্যকায় এক বলিষ্ঠ নারী—নিশা। নিপুণ হাতে ভাল্লুক মারতে পারে নিশা। সেই পরিবারের প্রধান। মাতৃশাসনের সেই সময়। সম্পত্তি বোধ তখনও তৈরি হয়নি। নিশার কথাই শেষকথা। নিজের ইচ্ছেয় নিশা বেছে নিত তার যৌন সঙ্গী।নিশার একাধিক স্বামী পুত্র কন্যা। নিছক প্রেম নয় বংশবৃদ্ধির প্রয়োজনেই তখন যৌনতা। বসন্তে নিয়ম মেনেই সঙ্গম হতো পছন্দের পুরুষের সাথে। সে পুরুষ স্বামী হতে পারে,ভাই হতে পারে,প্রেমিক এমনকি পুত্রও হতে পারে। শরীর থেকে ঋতুরক্তের স্রাব বন্ধ হওয়ার অর্থ আরেকটি প্রানের সূচনা। পরিবারে সদস্য সংখ্যা বৃদ্ধি। নারীই নির্ণায়ক তখন। সেকাল বদলে গেল। শারিরীক  সক্ষমতায় নারী কে ছাপিয়ে এগিয়ে গেল পুরুষ। মাতৃত্ব রক্ষার তাগিদে নারী নির্ভরশীল  হল পুরুষের। পুরুষের যৌনতার খেলনা হয়ে গেল একদিন নারী। নিশারা হারিয়ে গেল ভোলগার স্রোতে। ভোলগা থেকে গঙ্গা,সর্বত্র মাতৃতন্ত্রিক সমাজ পালটে গেল পুরুষতান্ত্রিক সমাজে। ঋতুর সময়টুকু খেলনা ব্যবহারের অযোগ্য তাই তখন নারী হল অশুচি। জল বয়ে গেল অনেক,ব্যথার বীজ রয়েই গেল। 



এই ব্যথাই টিমির শিল্পের অনুপ্রেরনণা। এই সময় যখন মেকানিকাল উন্নয়নের জৌলুসে আমরা মহাবিশ্ব মহাকাশ ফাড়ি দাপিয়ে বেড়াচ্ছি,তখনও মাসের ওই পাঁচদিন প্রতিটি নারীর কাছেই বেদনার,লুকিয়ে থাকার। ব্লাড স্টেইন কৌতুহলের,কৌতুকের। সেই কৌতুকের বিপ্রতীপে নিজেকে এনে দাঁড় করিয়েছে টিমি। টানা নয়মাস ধরে নটা ক্যানভাসে কেবল নিজের মেনস্ট্রুয়াল ব্লাড ব্যবহার করে একটি ভ্রুণের ছবি এঁকেছে টিমি। সাংঘাতিক কথা লিখেছিল টিমি  ওই ছবির ক্যাপসান হিসাবে—  “ হোয়েন আ ওভাম ডাইস,এন আর্ট ইজ বর্ণ ”। প্রতিটি ফোঁটা রক্তের যন্ত্রণা একটা নতুন জীবনের কোরক হয়ে থেকে যায় টিমিইমাজিনেশনের ফেসবুক ওয়ালে। 


গল্পটা এখানেই থেমে যেত।  কিন্তু এমন ব্যাতিক্রম যে আরো অনেক আছে,যাদের শিল্প বোধ বার্থ অফ ভেনাসের মতন পেলব নয়। অনেক যন্ত্রণা,অনেক আঘাত তাদের অন্য ব্রাকেটে এনে দেয়। এখানে তাই আর একটি নাম মনে পড়ে গেল সে, পাপিয়া।  পাপিয়া দাস বাউল। গান করেন। সাংবাদিকতা করেন। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে তিনিও এমন মেনস্ট্রুয়াল ব্লাড দিয়ে ছবি এঁকেছেন। সাহসী এই বাঙালির জীবন নিয়ে ডকুমেন্টররি তৈরি করছে চেক টিভি। ২০০৬ সালে প্রাগে তাঁর ছবির প্রদর্শনী হয়েছে। ৫০০র বেশী এমন ছবি পাপিয়া এঁকেছেন। পেয়েছেন সালভাদোর দালি পুরস্কারও। ট্যাবু ভাঙাই ছিল তাঁর লক্ষ্য। যেদেশে মেয়ে ঋতুমতী হলে অশুচি ভেবে আলাদা রাখা হয় তারাই অম্বুবাচীতে কামাখ্যার ভীড় করে। সযত্নে বহন করে আনে ঈশ্বরের রজঃ রক্ত,সৌভাগ্যের সূচক হিসাবে। 



কেমন অদ্ভূত ভাবে দুজনের দর্শন সমপাতিত হয়। রোমানিয়া আর আমাদের এই বাঙলা এক হয়ে যায় দুই নারীর সাহসে। মন খুঁজে পেতে চায় এমন ছকভাঙা যাদুকর দের,ম্যাজিকের আশায়।


তথ্য সূত্রঃ ইন্ডিয়া টুডে,ভোলগা থেকে গঙ্গা- রাহুল সংকৃত্যায়ন, টিমিইমাজিনেশন, ফেসবুক।

No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098