ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098




রাহমা জানালা থেকে মুখ ফিরিয়ে একবার বাসের ভিতরটা দেখে নিল।
যাত্রীতে ভরা হলেও রয়েলের বাসে চড়ে যেতে একটাই শান্তি,সেইটা হলো সিটটা কমফোর্টেবল আর একদম স্মুথলি চালায় গাড়ি।
এসি গাড়ি,তাই জানালা দিয়ে বাতাস আসবার জো নেই।
তবে এসির বাতাসে হালকা শীত শীত লাগছে।
পাতলা শালটা গায়ে জড়িয়ে স্কার্ফটা ঠিক করে নিল সে।
অর্ধেক এর মত রাস্তা এসেছে গাড়ি।জ্যাম নেই তেমন।দিনটা ইচ্ছে করেই সে সপ্তাহের মাঝামাঝি বাছাই করেছে।রবিবার।জ্যাম যাতে একটু কম হয়।একা একা ঢাকা যাওয়া এই প্রথম নয়।
তবে আজকের যাওয়াটা একেবারেই ভিন্ন রকম।
আজকে তার জীবনের অন্যতম এক আশীর্বাদ রূপী মানুষটার সাথে প্রথমবার দেখা হবে।রাতের পর রাতের কথামালা আদান-প্রদান শেষে অবশেষে সাক্ষাৎ!
রাহমা খুব খুব বেশিইই এক্সাইটেড!
কাউকে না বলেকয়ে একেবারে ঢাকা এসে পড়া কুমিল্লা থেকে চাট্টিখানি কথা না তারজন্য।প্রচুর সাহস জোগাড় করতে হয়েছে আর ঐ মানুষটাও রাজি হচ্ছিল না।সে ভয় ই পেয়েছিল, মন খারাপ ও করছিল কেন জারিফ সাহেব এত মানা করছে।মানুষটার নাম জারিফ!
সে ডাকে জারিফ সাহেব বলে।
শেষমেষ ভদ্রলোক রাজি হয়েছে বলেই রক্ষা!
নাহলে রাহমা কেঁদেকেটে সারাটাদিন কাটাতো।কিন্তু শেষমেষ যাওয়া হচ্ছে।
আর তাও আজকের এই বিশেষ দিনটাতে।
আজ ১৬ ডিসেম্বর।দুইবছর আগে এই দিনেই প্রথম জারিফের সাথে রাহমার ম্যাসেঞ্জারালাপ শুরু।তারপর কথামালাদের পাহাড় জমেছে,কেটেছে কতশত রাত গল্প,গান,কবিতা আর ভালোলাগাদের ভাগ করে নেয়াতে।
এর মাঝে হৃদয়ের ও আদান প্রদান যে কখন অজান্তেই হয়ে গেল।রাহমাই প্রথম আগ বাড়িয়েছিল চুপচাপ,ইন্ট্রোভার্ট জারিফের দিকে,ভালোবাসার কথা বলেছিল স্ট্রেইটকাট।
ভিতরে প্রচন্ড দ্বিধা ছিল,ছিল প্রত্যাখ্যান এর ভয়।কিন্তু শেষমেষ মিনমিন করে জারিফ ও বলে উঠেছিল ভালোলাগাকে ভালোবাসায় রূপান্তর করে "ভালোবাসি!"
আর তারপর?!
কথামালারা স্রোতের মত কেবলি এই পাশ থেকে ওই পাশ বয়েছে আর ভালোবাসা নামক কাব্য রচিত হয়েছে প্রতিটাদিন।
মেসেঞ্জারের টুং করা শব্দে বাস্তবে ফিরে এলো রাহমা।
"জারিফ সাহেব" লেখা চ্যাট হ্যাডে মেসেজেরা ইথার বেয়ে ভেসে আছে একগুচ্ছ মেঘের মত।
"এই মেয়ে,কদ্দুর এলে?
খারাপ লাগছেনা ত শরীর?
নেকাবটা খুলে রাখো,বেশি খারাপ লাগে যদি!"
মৃদু হাসলো রাহমা;
আবেগ না দেখানো ছেলেটা এইসব টুকটাক আলাপেই যে কি মন ছুঁয়ে দেয়া ভালোবাসাদের দেখিয়ে ফেলে ছেলেটা নিজেঈ জানেনা।
কোন সে আমলে তার Motion sickness এর কারণে খারাপ লাগতো, বমি হতো তা এখনো এই ছেলে মনে রেখে দিয়েছে,তাই এত সতর্কতা।
রাহমা বাইরে একবার নজর বুলিয়ে রিপ্লাই দিল মেসেজের,"আর একঘন্টার মত লাগবে।"
তারপর আবারো ডুব দিল ভাবনাদের অতল গহীনে!
আচ্ছা,প্রতিটা মানুষ প্রথম ভালোবাসার মানুষটাকে দেখার দিনে কি এমনি উচ্ছ্বসিত,উৎকন্ঠিত থাকে?!
নাকি তারই ভাবনাটা একটু বেশি?!
এইজন্য না ত যে সে একটু ভিন্নরকম!
যেখানে প্রথম দেখা করার দিনে প্রতিটি প্রেমিকা তার প্রেমিকের জন্য শাড়ি,কাজল,চুড়িতে নিজেকে সাজায়;সেখানে সে একেবারেই সহজাত।
মানুষটার সাদা পছন্দ বলে লম্বা ছড়ানো একটা সাদা আর লালের কম্বিনেশনের গাউন পড়নে আর তার সাথে হালকা লাল রংগের হিজাব দিয়ে নেকাব করা!
কাজল ভালোবাসে সে নিজেও,আর জারিফ সাহেব  কতবার যে তার কাজলে গভীর কালো হয়ে উঠা চোখের প্রশংসা করেছেন,তা ভেবেই গাঢ় করে কাজল দেয়া!
আর হাতে সাদা অল্প কয়টা কাচের চুড়ি!
এইতো!
"আচ্ছা জারিফ সাহেবের ভাল্লাগবে তো আমাকে?!
সেকেলে বা সবাই যেমন বলে কিছুটা বেশিই সাদামাটা লাগবেনাতো?!
আশাহত হবেন না ত উনি?!
হয়ত বলতে পারবেন না,কিন্তু ক্যামেরার সুন্দর ছবি আর বাস্তবের দাগ,খুঁতে ভরা আমি ত আর এক নই,সেই আমাকে যদি উনার তেমন ভালো না লাগে?!"
এইসব ছাইপাশ ভাবতে ভাবতেই রাহমা বাইরে তাকিয়ে দেখে যাত্রাবাড়ি ক্রস করে ফেলছে প্রায়।মোবাইলের দিকেও নজর যায়।
আয়হায়,কতগুলা মিসডকল!
ইশ ভাবনার গহীনে গিয়ে কল এর শব্দ ই শুনেনি সে!
চটজলদি মোবাইলের মিসড কল হিস্ট্রি দেখে সে,জারিফ সাহেবই!
ইশ না জানি বেচারা টেনশনে আধমরা হয়ে গেল!
এই ভেবেই তাড়াতাড়ি ফোন দেয় সে।
"হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।
সরি সরি।আমি একদম শুনিনি বুঝছেন রিংটোন।
আমি?! এইত যাত্রাবাড়ির কাছাকাছি।
সমস্যা নেই ত।আপনি আস্তেধীরে আসেন ত।
আমি দাড়াবনে কমলাপুর।রাস্তা দেখে পার হইয়েন।
পনের মিনিট লাগবে?!
আচ্ছাহ ব্যাপারই না।আসেন আস্তে ধীরে।
আমি থাকব অপেক্ষায়।"
এই বলে কথা শেষ করলো রাহমা!
সে চেয়েছিল হুট করে নিজেই অফিস যেতে,কিন্তু জারিফ সাহেব তাহলে জীবনেও আর কথা বলবেনা।একা একা এসেছে তাতেই উনার যে কত চিন্তা,তার উপর সেই উত্তরা গেলে একা একা,উনি হার্ট এটাক ই করতো।
তাই কড়া আদেশ,অফিস থেকে হাফ ডে লিভ নিয়ে তিনিই আসবেন বাসস্টেশন!রিসিভ করবেন রাহমা কে!
আসুক,সেই ভালো।একটা স্বপ্ন বাস্তবায়িত হতে দেখবে রাহমা চোখের সামনে.....
আচ্ছা থাক,বেশি চিন্তা বন্ধ।গোছগাছ করে নেয় সে।হাতব্যাগ আর সাথের ছোট ব্যাগটা গুছিয়ে নেয়,একবার দেখে নেয় আবার সব।
মানুষটার জন্য টাকা জমিয়ে অল্প কিছু উপহার এনেছে সে।একটা হাতঘড়ি,খুব দামী না,কিন্তু রাহমার বেশ ভালো লেগেছ তাই কেনা।সেই কবে মানুষটা ঘড়ি হারালো,তারপর থেকে এত বলার পর ও কিনলোনা একটা ঘড়ি।তাই উপহার কিনতে গিয়েই সে আগে এইটা কিনেছে।
আর একটা সাদা শার্ট।একদম ধবধবে দুধসাদা শার্ট,মানুষটা ঠিক যেইরকমটা খুব পছন্দ করে তেমন।সাইজ হবে কিনা সেইটা নিয়ে একটু চিন্তা হচ্ছে,দেখা যাক!
সাথের ডায়েরিটাও গুছিয়ে নিল।পাতায় পাতায় যার রাহমা তার জারিফ সাহেবের প্রিয় গানগুলোর কথা লিখেছে।
বাস থামতেই আস্তেধীরে নামলো সে।
উনি যেহেতু বলেছে পনের মিনিট তবে সে নিশ্চিন্ত পনের মিনিট থেকে এক মিনিট ও দেরি হবেনা।ভীষণ সময়সচেতন তার জারিফ সাহেব।আর আজ ত নিশ্চয়ই আরো বেশিইই জলদি আসবে।
হিজাবটা ঠিকঠাক করে,কালো শালটা জড়িয়ে নিল সে গায়ে।
দশ মিনিটের মত পার হলো।
আশপাশ দেখছে রাহমা,টং দোকান দেখা যাচ্ছে,
এককাপ চা খাওয়া যায় কিনা হঠাৎ ভাবলো সে!
আগাবে দোকানের দিকে এমন সময়ই পেছন থেকে ডাক-"কি ব্যাপার রাহমা ম্যাডাম, চা টা আমাকে ছাড়াই খাওয়ার পায়তারা হচ্ছে  বুঝি?!"
কন্ঠ শুনেই রাহমা যেন বরফপানি খেলবার বরফ হয়ে গেছে, জমে যেইভাবে আছে এক্কেবারে তেমনই রইলো।
এই সেই কন্ঠ,যা শুনবার জন্য কত টালবাহানাই না প্রথম প্রথম সে করতো;
এই সেই কন্ঠ যেই কন্ঠের গানগুলো সুর,ছন্দ না মেনে কেবল ভালোবাসার মাপকাঠিতে কানকে বাধঁতো।
পিছনে ফিরবার সাহস হচ্ছেনা রাহমার,যদি স্বপ্ন হয়?!
প্রতিভোরে দেখা সেই স্বপ্নটা?!
পিছে ফিরলে যদি ঘুম ভেংগে যায়?!
"কি ব্যাপার ম্যাডাম,চক্ষু ত অন্তত দর্শন করান!"
শেষমেষ রাহমা ফিরে তাকায় আর দেখে মানুষটা দাড়ানো;
তার প্রিয় কালো রংগের টিশার্ট এ,মুখে সেই অদ্ভুত হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া হাসি।
তার সামনে তার জারিফ সাহেব!
তার সেই প্রিয় মানুষটা!
রাহমার নেকাবের নীচ দিয় কয়েক ফোটা জল টুপটাপ গড়ায়,আনন্দাশ্রু!
জারীফ বলে উঠে,"এই মেয়ে, চল ত,ব্যাগটা দাও।কাজল লেপ্টে যাচ্ছে ত কাদঁছো যে বোকা।
অবশ্য তাতে আরো মায়াবতীইই লাগছে।চলো চা খাওয়া যাক।তোমার জন্য তোমার প্রিয় ঘন দুধের দুধচা আর আমার জন্য আমার প্রিয় কড়া করে এক কাপ লাল চা।"
এই বলে জারীফ একহাত দিয়ে রাহমার হাত ধরলো আর আরেক হাতে নিয়ে নিল রাহমার হাতের ব্যাগটা!
দুইজন হাটতে শুরু করলো।
রাহমার মনে হলো,প্রথম স্পর্শ একেই বলে!
এত অদ্ভুত এই স্পর্শ!
স্বপ্ন না ত এইসব?!ভেংগে যাবেনাত আবার?!
পরক্ষণে রাহমার মনে হলো,নাহ!
এইটা স্বপ্ন না,এইটা অবশ্যই বাস্তব।
স্বপ্ন এতটা সুন্দর হতেই পারেনা,বাস্তবই পারে কেবল এতটা সাধারণেও অসম্ভব সুন্দর হয়ে ধরা দিতে!
রাহমা তার জারিফ সাহেবের হাতে হাত ধরে হাটেঁ সামনের দিকে,বুকে ভালোবাসা আর চোখে গভীর মায়াদের নিয়ে!

No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098