লেখন ঃ ঋদ্ধিমান ভট্টাচার্য্য
তথ্য সহযোগিতা ঃ অমিত বিশ্বাস
আশির দশক। সুঠাম পাঠান ছুটে আসছেন বল হাতে। স্টাম্পের খুব কাছ থেকে,আম্পেয়ারের সমান্তরালে একটা জাম্প আর লাল বলটা সজোড়ে গুডলেংথ স্পটে ড্রপ খেয়ে হালকা অফ কাটারে ব্যাটসম্যানের ব্যাটের কোনা ছুঁয়ে কিপারের গ্লাভসে। আউট! সবুজ পিচে সাদা রোমান্টিকতা। কি ভীষণ নির্দয়,নিষ্ঠুর। তবুও কতোনা অষ্টাদশীর হৃদয়ে তোলপাড় ফেলে দেয় সেই উদ্ধত মানুষটি। আমি শোব পাশে মোর কেউ শোবে না,তুই ছাড়া এই দেহ কেউ ছোঁবে না—এমন লুকিয়ে রাখা ফ্যান্টাসিও সেই মানুষটি। অক্সফোর্ড থেকে দর্শন,অর্থনীতি আর রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক,কাউন্টিতে ক্রিকেট খেলা, দেবতুল্য রূপ—এককথায় এমন অ্যাপিলিং ক্রিকেটার খুঁজে পাওয়া মুশকিল। আকর্ষন এতটাই অমোঘ,পাশের বাড়ির মেয়েটিও যেভাবে ভেসে যেত,ভিজে যেত ভালোলাগায়, তেমনই প্রেমে পড়ে যেত রুপালী পর্দার রাজকন্যেরাও। এমনকি , মোহনীয় জিনাত আমন বা বাঙলার মুনমুন সেনও নাকি লিস্টে ছিলেন। কেচ্ছা গাইছি না,রটনার শেষপাতে যেটুকু ঘটনা পড়ে থাকে তাতেও তিনি প্রেমিক, প্লেবয়।
এতকিছু বলে দেওয়ার পরেও নামটা জানতে চাইলে,খুব বাজে ক্যুইজের প্রশ্ন হবে। এমন তো একজনই আছেন,তিনি আইসিসির হল অব ফেমের একজন, পাকিস্তান কে বিশ্বকাপ দেওয়া “কাপ্তান” ইমরান,ইমরান খান। প্রতিভার সাথে দম্ভ মিশলে যে,কেমন ক্ষেপনাস্ত্রের মতন চরিত্র তৈরি হয় তাঁর উদাহরণ ইমরান। যা করছি ঠিক,সাফল্যকে বন্দী করে রাখতেই হবে এমন জেহাদি রোমান্টিকতার জন্যই তিনি হিরো।
মহম্মদ ইকবালের কবিতার ভক্ত ছিলেন ইমরান,আবার ইংল্যান্ডের নাইট ক্লাবে ক্লাবেও ছিল তাঁর অবাধ চলাচল। সেই সময়ই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ইংল্যান্ডের এক শিল্পপতির মেয়ে সিটা হোয়াইটের সাথে। ছ‘বছরের সম্পর্কে পর বিচ্ছেদ। সিটার দাবি মেয়ে হওয়ায়,সন্তানকে নাকি মানতে চাননি ইমরান। কোর্ট অবধি গড়ায় সেই টানাপোড়েন। এরই মধ্যে ১৯৯৫ তে ৪৩ বছর বয়সে ইমরান প্যারিসে বিয়ে করলেন ২১ বছরের জেমিমা গোল্ডস্মিত কে। জেমিমা পরে নিজেও মুসলিম হয়েছেন। জেমিমা আর ইমরানের দুটি সন্তানও আছে। কিন্তু এই প্রেমের পরিনতিও ডিভোর্স। প্রেম -পুরাতন প্রেমের আবছায়াতে নতুন করে প্রেমে পড়া,এ যেন ইমরানের মতনই ন্যাচারাল,ইনসটিংকটিভ, অথচ দারুন ভাবেই ইমপালসিভ। ইমরানের জীবনও তাই মাল্টি ডাইমেনশানাল। শুধুমাত্র ক্রিকেটীয় কারনেই যিনি লেজেন্ড হতে পারতেন,তিনি নিজেই যেন বিতর্ককে তাড়া করে বেড়ালেন। সালমন রুসদি নাকি পাকিস্তান বাসীর ইমেজের সৎকার করেছেন তাই রুসদির সাথে একই মঞ্চে বসতেই চাননি। কোন এক টিভি চ্যানেলে ক্রিকেট অ্যানালিস্ট হয়ে আসার প্রস্তাবে বলেছিলেন সঙ্গে গাভাসকার,রিচার্ডস থাকলে যেতে পারি কিন্তু তাবলে সিধু,জাদেজা , রামিজ রাজাদের সাথে বসতে চাই না। ৭১র বাংলাদেশে পাকিস্তানের ভূমিকা নিয়েই প্রকাশ্যে সমালোচনা করেছেন। মায়ের নামে ক্যান্সার হসপিটাল করেছেন। তারিখ-ই-ইনসাফ নামে রাজনৈতিক দল তৈরি করেছেন। এখন তিনি পুরোদস্তুর রাজনৈতিক নেতা। পানামা পেপার স্ক্যান্ডাল,কমতে থাকা জিডিপি, মাত্র ১শতাংশ আয়কর দেওয়া,জঙ্গী তকমা পাওয়া দেশে ফিরিয়ে আনতে চান গনতন্ত্র।হয়ত হয়েই গেলেন সফল প্রধানমন্ত্রী। ক্রিকেটের মাঠে যেভাবে কাপ্তানি করতেন সেভাবেই কি দেশ চালাবেন,তা সময় বলবে। কিন্তু যেটা কমপালসারি তা হল, তার ভাইব। বর্তমানে ঘর বেঁধেছেন সাধ্বী মানেকার সাথে। সে সম্পর্ক টিকবে কিনা কেউ জানেনা। এরই মধ্যে গুড উইস এসেছে আগের স্রী জেমিমার থেকে। ছাড়ালে না ছাড়ে কি করিব তারে। প্রেম বোধহয় এমন ভাবেই প্রেমিকের লড়াই কে শংসাপত্র দেয়। হ্যাটস ওফ,মিস্টার খান! কন্ট্রোভার্সি আর সাকসেসের এমন কোহেশন সত্যি বিরল।
No comments:
Post a Comment