ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098


প্রথমেই বলে রাখি আমি যেটি লিখতে চলেছি সেটি কোনো রিভিউ না এটি একরকম সমালোচনা যেখানে আমি পুরোপুরি ভাবেই নিজস্ব মতামত জানাতে চলেছি।

             গল্পের প্লট সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে একটাই কথা মাথায় আসে যে গল্পটির নিজস্ব কোনো প্লট নেই!সত্যজিৎ-রবীন্দ্রনাথ এমনকি কোনো জায়গায় বাচ্ছাদের পুরনো হিন্দি সিরিয়াল থেকেও কনসেপ্ট অনুপ্রাণিত হয়ে বানানো হয়েছে।আজ্ঞে,অনুপ্রাণিত।গল্পটি কিছুটা এরকম,এ ক বয়স্কা মহিলা উপমা মুখার্জি(তনুজা)-এর পুত্র সৌম্য(যীশু সেনগুপ্ত) ও তাঁর স্ত্রী মৌমিতা(অরুণিমা ঘোষ)তাঁদের নিজস্ব বাড়িতে না থেকে ফ্ল্যাটে থাকেন।মায়ের সাথে বউমা না মানিয়ে চলতে পারায় মাকে এক চাকরাণির কাছে একা ছেড়ে দিয়ে চলে যায়।এক দুর্ঘটনার দরুন এনজিও থেকে লোক ডাকা হয় ভাগ্যক্রমে সেই এনজিও যিনি চালান তিনি এনার ছেলের বাল্যকালের বন্ধু রাজদীপ।তিনি ঠিক করেন যে এনজিও-এর একটি বাচ্চা বিটলু(শ্রীজাত)কে রেখে যাবেন ওনার কাছে এবং প্রতিদিন বিকেল হলে আবার নিয়ে যাবেন।প্রথমে সে দুষ্টুমি করলেও পরবর্তীকালে বাচ্চাটি উপমার ভালো বন্ধু হয়ে যায়।সে ওই অনাথ ছেলেটির সমস্ত ইচ্ছে পূরণ করতে থাকে এবং একদিন বলে সৌম্য-এর কথা যে একসময় তাঁর ছেলেই ছিল তাঁর ভালো বন্ধু।উপমা গল্প লিখতো আর সৌম্য ছবি আঁকত,এক গল্পে সোনার পাহাড় দেখার স্বপ্ন তার সাথেই দেখেছিল কিন্তু সময়ের কাছে যেন সব হারিয়ে গেল।বিটলু বলল,গল্পটা আবার লিখতে শেষ করতে।কাউকে না জানিয়ে সে বিটলুকে নিয়েই চলে গেল সোনার পাহাড়ের খোঁজে!কী হল তারপর?তাঁরা কী খুঁজে পাবে সোনার পাহাড়?সৌম্য কী পারবে তাঁর মায়ের সাথে আবার আগের মতো বন্ধুত্ব করতে?জানতে গেলে হলে গিয়ে দেখুন,আমি হাঁপিয়ে গেছি আর বলতে পারলাম না!


এবার আসি অভিনয়ের ওপর:-

তনুজা(উপমা মুখার্জি):-অনেকেই ভাবতে পারেন এতো দ্বিগজ অভিনেতা থাকতে এনার নাম কেন আগে নিচ্ছি!এনার মূল চরিত্র এই গল্পে।সেই "দেওয়া নেওয়া","অ্যান্টনি ফিরিঙ্গি"-এর এতো বছর পর আবার বাংলা সিনেমায় তাঁর পদার্পণ।চরিত্রের মধ্যে খিটখিটে ভাব যেন পুরো সিনেমা জুড়েই রয়েছে।আবার কখনও বিটলুর সাথে মিলেমিশে থাকতে গিয়ে বয়স কমে এসেছে একদম শৈশবকালে।তবে তাঁর ডায়লগ ডেলিভারি নিয়ে কোনো নালিশ নেই।খুবই সুন্দর এবং সাধারণ অভিনয় কোথাও ওভার অ্যাক্টিং নেই।গল্পের প্রথম হাফ পুরো এনার নামে।


শ্রীজাত(বিটলু):-না,ইনি গায়ক শ্রীজাত নয়।এটি একটি বাচ্চা ছেলে।সম্ভবত প্রথম সিনেমা,তবে এই বাচ্চাটিকে এখনকার পেছন পাকা ওভার স্মার্ট ছেলেদের মতো একদমই বলা যায় না।চরিত্রটি ছিল একটি ডানপিটে বাচ্চা ছেলের যার HIV পজিটিভ আছে।সত্যি বলতে গেলে অভিনয়ে কোনো ত্রুটি আমার চোখে পড়ল না।দ্বিতীয় মূল চরিত্র।প্রথম হাফে বলতে গেলে তনুজা আর শ্রীজাত রাজত্ব করে গেছেন।

যীশু সেনগুপ্ত(সৌম্য):-এনার অভিনয় নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই,তিনি বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন এবং আমাদের সামনে খুব সুন্দরভাবে তুলেও ধরেছেন।তবে তাঁর এই রোলটি করতে কোনো অসুবিধাই হয়নি কারণ এরকম রোল এর আগে অনেকবার করেছেন তিনি।মূল চরিত্র না তবে কেউ যদি নায়কের চরিত্র বলতে চান তবে এই "সৌম্য"-চরিত্রটি বসাতে পারেন।যে ছেলেটা এককালে মায়ের খুব কাছের বন্ধু ছিল সেই এখন মাকে ফেলে রেখে অন্য বাড়িতে থাকে,কিছু ভুল বোঝাবুঝি,মনোমালিন্য ইত্যাদি ইত্যাদি।নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন খুবই ভালো করে।অনবদ্য অভিনয় কোনো খামতি নেই।

পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়(রাজদীপ):-এই চরিত্রটি একটু অন্যরকম।রক্তের সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও বিটলুর প্রতি তাঁর ভালোবাসাটা একজন অভিভাবকের থেকে কম না।তিনিও এক অন্য ধরনের অভিনেতা নতুন করে কিচ্ছু বলার নেই।যেমন ডিরেকশন দিচ্ছেন তেমনই আবার দ্বিতীয় নায়কের অভিনয়ও করছেন।যথেষ্ট ভালো অভিনয়।

অরুণিমা ঘোষ(মৌমিতা):-সৌম্যের স্ত্রী।এনার চরিত্রের বেশিরভাগই গেছে শাশুড়ির বিরুদ্ধে ঝামেলা করে,শেষের দিকে যদিও তাঁর ছন্দপতন ঘটে।আসলে অভিনয় করার খুব বেশি সুযোগ পাননি,তবে যেটুকু করেছেন তাতে অবশ্যই ভালো অভিনয় বলাই যেতে পারে।

সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়(ম্যাজিক দাদু):-অনেকেই ভাবতে পারেন এনার নাম শেষে কেন!এক্ষেত্রে বলে রাখি ওনার গেস্ট পারফরম্যান্স ছিল।তাই দু-চারটে সিনই ছিল।ম্যাজিক দাদু বলা হতো কারণ ইনি এনজিও-এর বাচ্চাদের যা চাইতো সব দিতেন।এনার অভিনয় নিয়ে কিছু বললে নরকেও জায়গা হবে না তাও বলছি যেটুকু অভিনয় ছিল তা খুবই সুন্দর।

মিউজিক খুব বেশি নেই।এখনকার সিনেমার মতো চব্বিশ ঘণ্টা যে ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক বাজছে সেরকমও না।দুটি গান আছে।একটি অনুপম রায়ের "একটা মন"।গানটা যেন কোথাও একটা আঘাত করেছিল,আশা করি সেটা শুধু আমার একার হয়নি।অপরটি ইমন চক্রবর্তীর "কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা"।খুবই প্রিয় একটি রবীন্দ্রসঙ্গীত,আর সেটা খুব ভালো করে তুলেও ধরেছেন।একটি মৃদু টোন পুরো সিনেমা জুড়ে মাঝেমধ্যেই চলেছে যেটা ট্রেলারেও ছিল।ওই টোনটি আপনাকে ইমোশনাল করার জন্য যথেষ্ট।

সিনেমার কিছু ত্রুটি যা আমার চোখে পড়ল।অনুপ্রাণিত হয়ে করা কিছু জিনিস আমি তুলে ধরতে চাই,এই জিনিসটা আমি সাধারণত লিখি না তাও এটা দেখে লিখতে বাধ্য হচ্ছি।

১)সৌম্য যে পেন্সিলে আঁকত,সেই পেন্সিলে আঁকা যেকোনো ছবিই জ্যান্ত হয়ে তার কাছে পরের দিন সকালে আসত,এখানে যদিও তাঁর মা এনে রাখত কিন্তু কনসেপ্ট অনুপ্রাণিত হওয়া একটি পুরনো হিন্দি সিরিয়াল "শাকালাকা বুমবুম থেকে"।বৈশিষ্ট্য একই শুধু ওখানে সঙ্গে সঙ্গে ডেলিভারি হতো আর এখানে দেরি করে আসে।

২)কোনো সিনেমাকে হিট করানোর জন্য বহুকাল আগের মারাত্মক কোনো হিট সিনেমা সম্পর্কে কী না তুললেই নয়।এ বিষয়ে প্রথমে যখন সৌমিত্রবাবু স্টেজে এসে "জীবনে কী পাব না"-শুরু করলেন তাও মেনে নিয়েছিলাম কিন্তু যখন তনুজাকে বললেন,"বহুকাল আগে তোমার একটা কবিতা পড়েছিলাম 'তিন ভুবনের পারে"।এটা কী ছিল!পুরনো জুটি ফিরেছে বলে তাঁদের অভিনীত পুরনো ছবির কথা মনে করাতে হবে এর তো কোনো মানেই নেই।

৩)তনুজার গল্পের মধ্যে বীরপুরুষের কনসেপ্ট!সেই গল্পের শেষটা দেখে আপনার মনে হবে যেন বীরপুরুষ কে গল্পাকারে লেখা হয়েছে।কে করে এরকম?একটা কবিতার গদ্যরুপ করে কে পত্রিকায় ছাপান?

৪)এবারের কথা টাইটেল নিয়েই।পরমব্রত চ্যাটার্জি আমার খুব পছন্দের মানুষ তবুও বলছি তিনি বোধহয় ভুলে গেছেন সত্যজিৎ রায় একজনই হন।ওই যে "সোনার কেল্লা"-নামকরণের পেছনে যা লজিক।এখানেও সোনার পাহাড়ের পেছনে একই লজিক।সূর্যকিরণ!নমস্কার!

আপনার সিনেমাটি কেন দেখা উচিত?

সিনেমাটি সম্পর্কে যতই সমালোচনা করি না কেন অভিনয়ের দিক থেকে তো একফোঁটা খামতি নেই।আর প্লটের বেশিরভাগই অনুপ্রাণিত হওয়ার পরেও মূল যে মেসেজটি দেওয়া হয়েছে তা এখনকার দিনে প্রচন্ড ভাবে সিম্বলিক।কেউ তাঁর মা-বাবাকে স্টেশনে ফেলে রেখে চলে আসছে।কেউ ঘুরতে নিয়ে যাওয়ার নাম করে নিয়ে গিয়ে ট্রেনে তুলেই দৌড়!কেউ ঘর থেকে তাড়িয়ে দিয়েছে।এভাবেই প্রতিটি দিন কলকাতা পুলিশের কাছে অসংখ্য বয়স্ক ব্যক্তিরা উপস্থিত।যখন তনুজা কাউকে না বলে গ্যাংটকে চলে যান তখন যীশু থানায় ডাইরি করাতে গিয়ে দেখেন ওই ঘরে প্রচুর বয়স্ক মানুষেরা বসে আছেন।তাঁরা আজও আশা নিয়ে আছেন যে তাঁদের সন্তানরা একদিন হয়তো আসবে আর নিয়ে যাবে তাঁদের।সেই সময় এক বয়স্কা যীশুকে নিজের ছেলে মনে করে আনন্দে উৎফুল্য হয়ে বলতে থাকে যে আমার ছেলে এসে গেছে আমাকে নিতে এসছে!বিশ্বাস করুন আপনি চেষ্টা করলেও চোখের জল ধরে রাখতে পারবেন না।ছেলে মেয়েদের এতোটাই ব্যস্ত জীবন যে তাঁরা নিজের মা-বাবার বোঝা নিতে পারে না,আসলে নিতে চায় না।ও কী দরকার কয়েকদিন পর এমনিতেই মরে যাবে ছেড়ে দিই!আমার মতে এরকম মানসিকতার মানুষগুলোকে ফায়ারিং স্পটে দাঁড় করিয়ে মারা উচিত।বর্তমান যুব সম্প্রদায়ের এই সিনেমাটি খুবই প্রয়োজনীয়।অভিভাবকদের কীভাবে অবহেলা করা হয়,কীরকম ভুল বোঝাবুঝি হলে মা আর ছেলের মধ্যে ঝামেলা হয়,জেনারেশন গ্যাপ।ছোটোখাটো ঝামেলা হতেই পারে কিন্তু তা বলে যাঁরা নিজের সবটুকু দিয়ে আপনাকে মানুষ করেছেন তাঁদের শেষমেশ ওই অবস্থায় ফেললে খারাপ লাগবে না আপনাদের?
                      এখানে খুব ভালোভাবে দেখানো হয়েছে যে শেষের দিকে তনুজা তাঁর ছেলেকে কোনোরকম পাত্তাই দিতো না।ব্যাপারটা এইরকম যে তোমার আমায় দেখো না তাই আমিও আর কথা বলব না নিজের মতো করে চলব তোমাদের কী!তবে নিজের যে ভালোবাসাটা পাওয়ার কথা সেটা যখন একটা বাইরের ছেলে পাবে তাও আপনার সামনে!বিশ্বাস করুন অভিভাবকদের আপনি ভালোবাসলে আপনার জ্বলে যাবে।এরকমই কিছু দেখানো হয়েছে তবে শেষ সিনেও প্রচন্ড ইমোশান আছে।কী হবে তা জানতে গেলে আপনাদের হলে গিয়ে দেখতে হবে।দেখে আসুন "সোনার পাহাড়"।আশা করি খুব ভালো লাগবে।

No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098