ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098





মৃত্যু মানুষের জীবনের এক অমোঘ পরিণতি।
"সে যে বাঁচিয়া থাকিতে চাহে-বাঁচাই যে তার ধর্ম সে মরণকে তো মরণ বলিয়া মানিতে পারেনা। তাহলে যে তার বাঁচিয়া থাকা, জীবন ধারণ অসাধ্য হইয়া পড়ে। সে বলিতেছে আমি মরিব না, আমি বাঁচিব, অনন্তকাল ধরিয়া আমি বাঁচিব, আমার আত্মা অবিনশ্বর। জীবন যেমন অন্ত মহাযাত্রায় ছুটিয়া চলিয়াছে, যুগ-যুগান্তরের ভেতর দিয়া আপনার পথ কাটিয়া চলিয়াছে, আত্মাও তেমনি। অনন্তকাল ধরিয়া কোনো এক বিশ্বে বাঁচিয়া থাকিবে, লীলাভিনয় করিবে, আপন কর্মের ফল ভোগ করিবে। মৃত্যু সে তো ঘাঁটি মাত্র; এইখানে আসিয়া আত্মা জীবনের নিকট বিদায় গ্রহণ করিয়া আপনার দেশে চলিয়া যায়, আর দেহ যাত্রাহীন শকটের ন্যায় ধূলায় লুটিয়ে থাকে।"

তাই মরণ একটি বাস্তব সত্য, যে সম্পর্কে বিশ্বাসের কোনো প্রয়োজন ঘটে না। 

কেউ কেউ মনে করে থাকেন যেহেতু মৃত্যু মানুষের অন্তিম সময়.. সেহেতু সেই মুহূর্তে মৃত্যুপথযাত্রী কিছু মানুষের মধ্যে এক ঐশ্বরিক শক্তি ভর করে থাকে.. ফলে বিখ্যাত মানুষদের কাছে সেই সময়ে কিছু তাৎপর্যপূর্ণ কথা বলে যাওয়াটাই স্বাভাবিক। আবার এক অংশ মনে করে থাকেন যে মৃত্যুর পূর্ব মুহুর্তে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই উক্ত ব্যক্তির মানসিক বা শারীরিক অবস্থা মোটেই স্থিতিশীল থাকে না। যার ফলে তার পক্ষে কখনোই গভীর, তাৎপর্যপূর্ণ, বা অর্থপূর্ণ কথা বলা সম্ভব নয়। যদিও দুই পক্ষেরই ধ্যান-ধারণা যুক্তি এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে মিলিয়ে দেখা গেলেও আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টিকে বিতর্কিত বলেই মনে হবে। কেননা মৃত্যুর আগে অনেক সাধারণ মানুষই গভীর অর্থপূর্ণ কথা বলে গেছেন আবার একই ভাবে অনেক বিখ্যাত ব্যক্তিও অস্পষ্ট এবং অনর্থক কথাও বলে গেছেন। 

আসুন জেনে নিই মৃত্যুর প্রাকমুহূর্তে বিখ্যাত মানুষদের কিছু মন্তব্য.. যা পরবর্তীতে মানবসমাজের মধ্যে গভীর ছাপ ফেলে গেছে....

১. বব মার্লে- 

প্রখ্যাত সঙ্গীতশিল্পী বব মার্লে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামির একটি হাসপাতালে ১৯৮১ সালের ১১ই মে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মৃত্যুর খানিকক্ষণ আগে তাঁর ছেলে জিগিকে তিনি বলেছিলেন... 
"Money can't buy life" 
এই মন্তব্যটি শুনলেই বোঝা যায় যে এর সাথে জড়িয়ে ছিল কত আক্ষেপ এবং তার জীবনের প্রতি গভীর উপলব্ধি।

২. আর্নেস্ট হেমিংওয়ে- 

আর্নেস্ট মিলার হেমিংওয়ে ছিলেন বিখ্যাত মার্কিন সাহিত্যিক এবং সাংবাদিক। বিশ শতকে ফিকশনের ওপর তাঁর নির্মেদ ভাষার ভীষণ প্রভাব ছিল। বিশ শতকের বিশের দশক থেকে ধারাবাহিকভাবে অধিকাংশ সাহিত্যকর্ম রচনা করেছিলেন। ১৯৫৩ সালে পুলিৎজার এবং ১৯৫৪ তে সাহিত্যে নোবেল লাভ করেন। 'The Old man and the sea' জনপ্রিয় গ্রন্থের এই লেখক জীবনের প্রতি বীতশ্রদ্ধ হয়ে ১৯৬১ সালের ২ রা জুলাই নিজের শটগান থেকে গুলি করে আত্মহত্যা করেন। আত্মহত্যার পূর্বে তাঁর স্ত্রীকে তিনি বলে গিয়েছিলেন 
"শুভরাত্রি, আমার বেড়ালছানা"

৩. জন কিটস- 

ক্ষণজন্মা ইংরেজ সাহিত্যিক জন কিটস জন্ম থেকেই এক মারণরোগ যক্ষায় ভুগছিলেন। এই ক্ষয়রোগে ভুগেই ইতালির রোমে ১৮২১ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি মাত্র ২৬ বছর বয়সেই মহান এই কথাসাহিত্যিক পরলোকগমন করেন। মৃত্যুকালে তার সঙ্গে ছিল বন্ধু জোসেফ সেবার্ন। সেবার্নের সামনে তার শেষ উক্তি.. 
"ঈশ্বরকে ধন্যবাদ। অবশেষে মৃত্যু এলো।" 

৪. মহাত্মা গান্ধী- 

ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অন্যতম পথিকৃৎ মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী, যাকে ভারতবর্ষ সহ পুরো বিশ্ব মহাত্মা গান্ধী বলে চেনে..  তিনি ভারতের স্বাধীনতার ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ১৯৪৮ সালের ৩০ শে জানুয়ারিতে নয় দিল্লীর বিড়লা ভবনে আততায়ী নাথুরাম গডসের গুলিতে নিহত হন। মৃত্যুর পূর্বমুহূর্তে গান্ধীজির মুখ দিয়ে অস্ফুটে বেরিয়েছিল.. 
" হা রাম!"

৫. কার্ল মার্ক্স- 

সমাজতন্ত্রের জনক তথা দার্শনিক কার্ল মার্ক্স মৃত্যুর আগে বলেছিলেন - 
"Go on.. Get out! Last words are for fools who have not said enough." ( যারা যথেষ্ঠ বলতে পারেনি, শেষ কথা তাদেরই জন্য )

৬. জর্জ হ্যারিসন- 

বিংশ শতাব্দীর অত্যন্ত প্রতিভাবান একজন জনপ্রিয় গায়ক এবং গিটারিস্ট। তবে তাঁর প্রতিভার ব্যাপ্তি ছিল আরো সুবিশাল। সঙ্গীত পরিচালনা, রেকর্ড প্রযোজনার পাশাপাশি তিনি ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক অব্দি। বিখ্যাত ব্যান্ড 'দ্য বিটলস' এর চার সদস্যের একজন হিসেবেই তিনি অচিরেই বিখ্যাত হয়ে ওঠেন। তাঁর অনুরাগীরা তাঁকে 'জর্জ হ্যারিসং' বলেও ডাকতেন। 'If I needed someone', 'taxman', 'here comes the sun' বিখ্যাত গানগুলোর স্রষ্টা জর্জ হ্যারিসন ২০০১ সালের ২৯ শে নভেম্বর মাত্র ৫৮ বছর বয়সে মেটাস্টটিক নন-স্মল সেল লাং ক্যানসারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর স্ত্রী অলিভিয়া হ্যারিসনের কাছ থেকে জানা যায় তাঁর মৃত্যুর আগে শেষ মন্তব্য ছিল- 
" তোমরা একে অপরকে ভালোবেসো"

৭. সম্রাট আওরঙ্গজেব- 

দোর্দণ্ডপ্রতাপ মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেব মৃত্যুর আগে সারাজীবনের কৃতকর্মের জন্য খুবই অনুতপ্ত ছিলেন। পুত্রের কাছে লেখা সর্বশেষ চিঠিতে তিনি লিখেছিলেন- 
" আমার জীবনে অনেক পাপ করেছি, জানি না কত শাস্তি আমার জন্য অপেক্ষা করছে।"

৮. অগাস্টাস সিজার- 

অগাস্টাস সিজার ছিলেন রোমান সাম্রাজ্যের প্রথম সম্রাট। তাঁর আমলে একটি স্বৈরাতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রবর্তিত হয়.. যা 'প্রিনকিপাত' নামে পরিচিত ছিল। অগাস্টাস ছিলেন সেই সাম্রাজ্যের 'প্রিনকেপস' বা প্রথম নাগরিক। রোমান সাম্রাজ্যের প্রথন নৃপতি সাম্রাজ্যের সমগ্র জনজীবনের মধ্যে নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হন। তাঁর আমলে এই সুবিশাল রোমান সাম্রাজ্যে সমৃদ্ধিও ঘটে। তাই মৃত্যুর আগে প্রজাদের উদ্দেশ্যে বারংবার গভীর অর্থপূর্ণ কথাও বলে গিয়েছিলেন। 
" আমি কাঁদা মাটির রোমকে পেয়েছিলাম.. তোমাদের কাছে একে মর্মর বানিয়ে দিয়ে গেলাম।"

৯. গ্যেটে- 

"জার্মানির সেরা গুণী ব্যক্তি এবং পৃথিবীর শেষ বহুশাস্ত্রজ্ঞ" বলেছিলেন জর্জ এলিয়ট। কবিতা, নাটক, ধর্মতত্ত্ব, সাহিত্য এবং বিজ্ঞানের বহুবিধ পরিসরে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য। এছাড়াও জ্যোতির্বিদ্যা, অস্থিবিদ্যা, আলোকবিদ্যা, ও উদ্ভিদের রূপান্তরবিদ্যায়ও অধ্যবসায়ের সঙ্গে আত্মনিয়োগ করেন। ষোড়শ শতাব্দীর জার্মান উপকথা তাঁর অন্যতম জনপ্রিয় সাহিত্যকীর্তি 'ফাউস্ট' এর ওপর ভিত্তি করেই রচিত হয়েছিল। মৃত্যুর আগে তাঁর শেষ উক্তি ছিল 
"আলো। আরো আলো।"

১০. আর্কিমিডিস- 

একজন বিখ্যাত গ্রিক গণিতজ্ঞ, জ্যোতির্বিদ, পদার্থবিজ্ঞানী এবং দার্শনিক। আর্কিমিডিস ছিলেন প্রাচীন কালের সর্বশ্রেষ্ঠ গণিতজ্ঞ। তাঁর কাজের খুব কম লিখিত দলিল মধ্যযুগ অব্দি অবশিষ্ট ছিল। সেই গুটিকয়েক দলিলই পরবর্তীকালে রেনেসাঁস যুগের বিজ্ঞানীদের কাছে মূল্যবান সম্পদ বলে বিবেচিত হয়। আর্কিমিডিসের মৃত্যু সম্পর্কে বিখ্যাত ইতিহাসবিদ প্লুটার্ক বলেছেন.. গণিতের সূত্র নিয়ে একদিন আর্কিমিডিস তাঁর উঠোনে বসে দাগ কেটে হিসেব করছিলেন। সেসময় গ্রিস জিতে সদ্য বিজয়ী রোমান সেনাপতি মার্সলাস আর্কিমিডিসকে সসম্মানে সভাসদে নিয়ে আসার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেন। সৈন্যরা তাঁর কাজের ব্যাঘাত ঘটিয়ে হাঁকডাক করলে আর্কিমিডিস চিৎকার করে ওঠেন.. 
" আমার নকশা থেকে দূরে সরে দাঁড়াও।" 

এই মন্তব্যই ছিল তাঁর জীবনের সর্বশেষ উক্তি। সঙ্গে সঙ্গেই উত্তেজিত এক সৈনিকের তরোয়ালের আঘাতে দ্বিখণ্ডিত হয়ে যান।

১১. এডগার এলান পো- 

এডগার এলান পো ছিলেন একাধারে মার্কিন কবি, গল্পকার, সমালোচক এবং সম্পাদক। বৈচিত্র্যে ভরপুর এই প্রতিভার সারা জীবন কাটে দুঃখ, আর্থিক দৈন্যদশা ও মানসিক অস্থিরতার মধ্যে। তাঁর বিখ্যাত কবিতাগুলির মধ্যে 'Annabel Lee', 'The Bells', 'To Hellen' প্রভৃতি ছিল উল্লেখযোগ্য। তাঁর সৃষ্টিকর্মে বরাবরই ছিল বিষণ্ণতা এবং অন্ধকার জীবনের প্রচ্ছন্ন একটি ছায়া। ১৮৪৯ সালের ৭ই অক্টোবর শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগকালে তাঁর শেষ কথা ছিল 
"ঈশ্বর আমার অসহায় আত্মাকে সাহায্য করো।"


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098