ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098


প্রথমেই বলে রাখি আমি যেটি লিখতে চলেছি সেটি কোনো রিভিউ না,এটি একটি সমালোচনা যেখানে আমি পুরোপুরি ভাবেই নিজস্ব মতামত জানাতে চলেছি।প্রথমেই গল্পের প্লট সম্পর্কে কিছু বলতে চাই,
                  
পুরো সিনেমাটা দেখে আমার যা মনে হয়েছিল যে এখানে সঞ্জয় দত্তের ক্যারিয়ার বা সিনেমা জীবনের উপর কিছু দেখানো হয়নি,যা হয়েছে তা তাঁর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে।এমন জীবন যা সম্পর্কে হয়তো আমরা জানি না।কুমার গৌরব(রাজেন্দ্র কুমারের ছেলে তথা সঞ্জয় দত্তের জামাইবাবু)যাঁর আত্মত্যাগ না থাকলে হয়তো সঞ্জয় দত্তের সিনেমা ক্যারিয়ার ১৯৮৫ তেই শেষ হয়ে যেত।কিংবা মাধুরী দিক্ষীত,তিনিও নেই।

Image Source - DNA India

আমি রাজকুমার হিরানির প্রশংসাই করব কারণ তিনি সঞ্জয় দত্তের জীবনের এমন কিছু ঘটনা তুলে ধরেছেন যা সম্পর্কে বেশিরভাগ মানুষই ওয়াকিবহাল ছিলেন না।গল্প ক্যামেরার পিছনের,মাত্র দুটো সিনেমার উল্লেখ আছে তাও না থাকার মতোই।তাঁর প্রথম সিনেমা "রকি" এবং তাঁর ডুবন্ত ক্যারিয়ারকে আবার তীরে তরীতে আনতে যে সিনেমাটি সাহায্য করেছিল "মুন্নাভাই এম.বি.বি.এস."।গল্পটি দুটো পার্টে বিভক্ত।প্রথম পার্টে দেখানো হয় কীভাবে সে ড্রাগ নেওয়া শুরু করে বাজে সঙ্গে পরে,তাঁর মা নার্গিসকে কীভাবে হারিয়ে ফেলেন এবং কীভাবে তিনি তাঁর সমস্ত নেশা ছাড়িয়ে একজন সুস্থ সবল মানুষে পরিণত হন।ইন্টারভেলের পর শুরু হয় আরেক যুদ্ধ।এবারের গল্প সঞ্জয় দত্তের "টেররিস্ট" পর্বের উপর।কীভাবে সে নিজেকে প্রমাণ করবেন যে তিনি টেররিস্ট না।সাসপেন্স একটু হলেও আছে,বাকিটা আপনাদের হলে গিয়ে দেখতে হবে।

এবার আসি অভিনয়ের কথায়।

সত্যি করে বলতে গেলে অভিনয়ের দিক থেকে কোনো ত্রুটি নেই সবাই তাঁদের একশো শতাংশ দিয়েছেন,কিন্তু সমালোচনা যখন একটু তো লিখতেই হয়।

Image Source - The Indian Express


রণবীর কাপুর(সঞ্জয় দত্ত):-আমার মনে হয় তাঁর জীবনের সেরা অভিনয় আমরা এই সিনেমায় দেখতে পাই।১৯৮১এর "রকি" হোক কিংবা ১৯৯৩-এর "সাজন" লুক,কিংবা "মুন্নাভাই" সবেতেই তাঁর বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর হাঁটাচলা কথা বলার ভঙ্গি সমস্ত কিছুতে তিনি ছক্কা হাঁকিয়েছেন।আর মেকআপে এর উপর আমার কিছু বলার কোনো অধিকার নেই।আমি তাঁকে ১০-এ ৯.৫ দেবো।



পরেশ রাওয়াল(সুনীল দত্ত):-প্রথমত সুনীল দত্তের সাথে তাঁর অঙ্গভঙ্গি বডি ল্যাঙ্গুয়েজ খুব একটা মানায়নি।কিন্তু এই রোলটি তিনি ছাড়া আর কেউ করতে পারতেন না।তার ওপর গলার স্বর একটা বড়সড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়ায়।কিন্তু!তাঁর অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি সমস্ত খামতি পূরণ করেছেন।অনবদ্য অভিনয়,কোনো কথা হবে না।

Image Source - indiatvnews.com

মণীষা কৈরালা(নার্গিস):-মেকআপের দিকে আরও একটু সতর্ক হলে ভালো হতো।কারণ নার্গিসের শেষ বয়সের চেহারা খুবই খারাপ ছিল,তবুও দুজনেই একই পথে হেঁটেছেন তাই মণীষা কৈরালার যেটুকু রোল ছিল তাতে ভালোই অভিনয় করেছেন,ত্রুটি নেই কোনো।

Image Source - Bollyworm


ভিকি কৌশল(কমলেশ কানাইলাল কাপাসি):-বেশি কিছু বলব না তিনি নিজের চরিত্রে নিজেকে মারাত্মকভাবে তুলে ধরেছেন এবং সিনেমায় একজন মূল সাপোর্টিং অ্যাক্টরের কাজ করেছেন।এই চরিত্রের অস্তিত্ব সম্পর্কে খুব একটা জানা নেই তবে যেটুকু জানতে পেরেছি চরিত্রটি আসল।শুধু নাম পাল্টানো হয়েছে।অভিনয়ে কোনো খামতি নেই এক কথায় অসাধারণ।



জিম সার্ভ(জুবিন মিস্ত্রি):-এনাকে যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।"পদ্মাবত"-এর মালিক কাফুর চরিত্রটি যতটা ভালো করে করেছিলেন এখানেও সমানভাবেই নিজের চরিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন।এনারও অস্তিত্ব ছিল,তবে ইনি সঞ্জয় দত্তকে নেশাখোর বানিয়েছিলেন কিনা তা জানা নেই।হ্যাঁ এনার সাথে সঞ্জয় দত্তের কোনো একটা ব্যাপারে অনেক ঝামেলা হয় এমনকি তা হাতাহাতির পর্যায় চলে আসে।শোনা যায় পরবর্তীকালে তিনি কোনো গানের ব্যান্ডের সাথে যুক্ত হন।যেটুকু রোল ছিল তাতে তিনি খুব ভালো অভিনয় করেছেন।

Image Source - India.com


দিয়া মির্জা(মান্যতা দত্ত):-এককথায় ডিরেক্টর এনাকে অভিনয় করার সুযোগ দেননি।দু-চারটে সিন খুবই কম ডায়লগ তবে অভিনয় ভালো।

Image Source - POPxo

সোনাম কাপুর(রুবি):-এনার অস্তিত্ব সম্পর্কে বিতর্ক আছে।প্রথমত ইনি টিনা মুনিম না।সঞ্জয় দত্তের কোনো এককালের বান্ধবীর চরিত্র ফোটাতে এনার ব্যবহার।সবই ঠিক আছে কিন্তু সেই ইমোশনাল সিনে মার খেয়ে গেলেন।তাছাড়া ঠিকঠাক।



অনুষ্কা শর্মা(উইনি ডিয়াজ):-সবচেয়ে বিতর্কিত চরিত্র।পর্দা ফাঁস করছি এরকম কোনো চরিত্র বাস্তবে নেই।যদি বলি এই চরিত্রটি রাজকুমার হিরাণী এবং তাঁর স্ক্রিপ্ট রাইটারের?বিশ্বাস করতে হবে কারণ সঞ্জয় দত্তের কোনো জীবনী আজ পর্যন্ত লেখা হয়নি।এটাই বোঝানো হয়েছে যে ওই বইটা ছিল এই সিনেমার স্ক্রিপ্ট যা পরবর্তীতে সিনেমা হয় যেটা আমরা আজ হলে বসে দেখলাম।কী অসাধারণ ব্যাপার না?অনুষ্কা শর্মা এককথায় খুব ভালো অভিনয় করেছেন।


এবার আসি কমেডির ওপর।


যাঁরা বলছেন সিনেমাটি খুব সিরিয়াস প্রচন্ড ইমোশনাল।তাঁদের মুখে ফুলচন্দন পড়ুক।যে সিনেমায় "ঘাপাঘাপ"-এর মতো ডায়লগ থাকে তাতে কমেডি থাকবে না কখনও হয় নাকি!কমেডি ব্যাপারটা খুব সুন্দরভাবে তুলে ধরা হয়েছে।এই প্রচন্ড ইমোশান চোখ থেকে জল পড়ছে এই পড়ল,এমন সময় এমন এক সিন দেখিয়ে দিল যাতে আপনি হেসে উঠলেন।আবার প্রচন্ড কমেডি তখনই উড়ে এসে জুড়ে বসল ইমোশান।যেমন উদাহরণ হিসেবে ট্রেলারে যেটা দেখেছেন "মঙ্গলসূত্র"-এর ব্যাপারটা।সিনেমা শুরু হয় কমেডি দিয়ে এবং শেষও হয় কমেডি দিয়ে।যত দূর মনে হয় এটাও একটা সিম্বল যে সঞ্জয় দত্তের জীবনটাও এরকমই হাসির মধ্যে কান্না কখনও কাঁদতে কাঁদতে হাসি।

মিউজিকের ব্যাপারে 

বলতে গেলে খুব বেশি মিউজিক ব্যবহার করা হয়নি।এমন না যে পুরো সিনেমা জুড়েই ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিক চলেছে।সিরিয়াস সিনে পুরো স্তব্ধ।গমগম করছে ডায়লগ কখনও ডায়লগের সাথে মিলিয়ে স্যাড মিউজিক,আর সবথেকে হৃদয় স্পর্শ করে যেটা,মাউথঅর্গানের মিউজিকটা।এছাড়া তিনটি গান,তিনটেই খুব ভালো বিশেষ করে "ফাতেহ" গানটি খুবই সিম্বলিক।এছাড়া "রুবি" বা "বারিয়া" দুটিই ভালো।এ.আর.রেহমানের কম্পোজিশন ভালো না হয়ে যাবে কোথায়?

এবার আসি সিনেমার কিছু ত্রুটি 

যা আমার চোখে পড়ল।আবারও বলছি এটি আমার নিজস্ব মতামত।

১)প্রথমত আমার যেটা সবথেকে খারাপ লেগেছিল,কুমার গৌরবের অনুপস্থিতি।১৯৮৫-এ যখন দুজনেই পরপর ফ্লপ খাচ্ছেন তখন কুমার গৌরব "নাম"-নামক সিনেমায় মূল চরিত্রের অফার পান এবং সঞ্জয় দত্ত দ্বিতীয় নায়কের।কিন্তু কুমার গৌরব নিজের চরিত্রটি সঞ্জয় দত্তকে দেন,তিনি জানতেন মূল চরিত্রটি করলে তিনি হয়তো আবার সাকসেস পেতেন কিন্তু বন্ধুত্বের জন্য তিনি এই আত্মত্যাগ করলেন।"নাম" সুপারহিট হয়(একটি গান "চিট্ঠি আয়ি হ্যায়" যা আজও হিট)এবং সঞ্জয় দত্ত আবার হিট করতে শুরু করেন আর কুমার গৌরবের ক্যারিয়ার ডুবে যায়।কোথায় সেই বন্ধু?

২)পুরো সিনেমা জুড়েই একরকম জোর করে প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে যে সঞ্জয় দত্ত টেররিস্ট না।আমার মনে হয় সাধারণ মানুষ বা তাঁর ফ্যানেরা এটা মানতে পারলেও যাঁরা সঞ্জয় দত্তকে পছন্দ করেন না তাঁরা কোনোদিন সিনেমার লজিক মানতে পারবেন না।

৩)সবথেকে বড় মিস্টেক বোমান ইরানিকে নিয়ে।কোনো সিনেমায় যখন আপনি বোমান ইরানিকে একটা ছোট্ট রোলে(রুবির বাবা)রাখছেন আবার তারপর সঞ্জয় দত্তেরই একটা সিনেমা "মুন্নাভাই এম.বি.বি.এস."-এ তাঁকেই দেখান তাহলে তো এটাই মানতে হয় যে রুবির বাবা আবার পুনর্জন্ম নিয়ে অভিনেতা হয়েছেন।কী দরকার ছিল ওইটুকু দেখানোর?

৪)আবারও বলছি মণীষা কৈরালার মেকআপে গুরুত্ব দিতে হতো।ওনাকে দেখে যথেষ্ট সুস্থ সবল লেগেছিল।শেষ বয়সে নার্গিস পুরো ভেঙে গেছিলেন শারীরিকভাবে।

৫)ব্যক্তিগত জীবন সম্পর্কে দেখালে রিচা শর্মাকে(প্রথম স্ত্রী) বা রিহা পিল্লাই(Rhea Pillai,দ্বিতীয় স্ত্রী) সম্পর্কে দেখানো যেত।আরে মান্যতা সম্পর্কেই দেখান কীভাবে তাঁর জীবনে ঢুকল।
৬)মাধুরী দীক্ষিতের অনুপস্থিতি।আর তাছাড়া অনেক কিছুই অভিনয়ের পয়েন্টে বলে দিয়েছি।

আপনার সিনেমাটি কেন দেখা উচিত?


সঞ্জয় দত্তের বদনামকারীরা দূরে থাকুন হজম হবে না(আমার নিজেরও খুব একটা হয়নি)।তবে যদি সমস্ত ঘটনা সত্যি হয় বা নাও হয়,একটা মেসেজ সিনেমাতে রয়েছেই যে প্রেস-মিডিয়া কখনও সত্যি ঘটনা ছাপে না।তাঁরা রসালো খবর ছাপে "যা রটে তা ঘটে না" বুঝলে অজিতেশ।সত্যি ঘটনা হয়ে থাকলে একটা কথা আপনাকে মানতেই হবে মিডিয়া সঞ্জয় দত্তের ক্যারিয়ার হোক বা ব্যক্তিগত জীবন সমস্ত কিছু শেষ করে দিয়েছেন আর সমস্ত হেডলাইনের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন।আপনি সিনেমাটি দেখবেন নিরপেক্ষভাবে ভুলে যান সঞ্জয় দত্তের বায়োপিক।সাধারণ মানুষের চোখে দেখুন,রিয়ালিটি না ওঁর উত্থান পতন দেখুন।জীবনের গ্রাফ দেখলে বুঝতে পারবেন কখনও আকাশছোঁয়া তো কখনও মাটির সাথে মিশে যাওয়া।বাবা-মাকে খুব ভালোবাসতেন সেটাও বারবার দেখানো হয়েছে।কাঁদিয়েছে কিছু সিন যা দেখে আপনি হেটার হলেও চোখ ছলছল করবেই।নার্গিসের মৃত্যু,সুনীল দত্তের মৃত্যু,বাবাকে না বলা কথা,জেলের যন্ত্রণা,আর সবশেষে বন্ধুত্ব।আমি পারলাম না শেষ সিন একটু ফাঁস করছি,যখন সঞ্জয় দত্তের বন্ধু ওই লাল জ্যাকেট পরে সঞ্জয় দত্তের সামনে আসে আবার ওঠে "ঘাপাঘাপ"-এর কথা সত্যি বলছি ফেটে পরেছিলেন সবাই হলে(এখানেও একটা ত্রুটি বলি,ওটা সঞ্জয় দত্ত লাল জ্যাকেট না লাল শার্ট দিয়েছিলেন)।আরেকবার ফেটে উঠেছিল হল,যখন "মুন্নাভাই এম.বি.বি.এস"-এ সঞ্জয় দত্তের এন্ট্রি হয়।অসীম নিস্তব্ধতার মধ্যে হঠাৎ কোলাহল।আসলে দর্শকদের হাসি কান্নার গ্রাফটাও তাঁর জীবনের মতোই হয়ে উঠেছিল।যাওয়ার আগে রণবীর কাপুরকে একটা কথা বলতেই হয়।অভিনয়ের দিক থেকে সেরা বায়োপিক দেখলাম।"ফাটিয়ে দিয়েছো"।অবশ্যই দেখুন "Sanju"-আপনাদের নিকটবর্তী প্রেক্ষাগৃহে।ভালো লাগবে।

ধন্যবাদ।


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098