ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098



গোলপোস্টের ঠিক পেছন থেকে চিৎকারটা ভেসে আসছে, উত্তাল, উদ্দাম, উন্মুক্ত। আপনি ওদিকে তাকাতে বাধ্য। আর একটু এগিয়ে ওদের সামনে গেলে দেখা যাবে এক-দুশো নব-যৌবন, গলা-চিরে তাতাচ্ছে নিজের টিমকে। নিজের ‘ইস্টবেঙ্গল’কে।

না আপনি বসে থাকতে পারবেন না। যৌবনের চিৎকার অস্বীকার করার উপায় নেই। সবাই এক সাথে গাইছে-

ও ইস্টবেঙ্গল, এগিয়ে চল
আমরা আছি তোমরাই সাথে।

দূরে কেউ দাঁড়িয়ে আছে মশাল হাতে, সামনের জালের ওপর বসে কেউ ক্রমাগত দোলাচ্ছে ইস্টবেঙ্গলের বিরাট পতাকা।

অথচ বাংলা ফুটবলের মাঠ বলতে তো আপনি জানতেন – অজস্র খিস্তি, গালাগালি, মারামারি।
না, এসব আস্তে আস্তে বদলে যাচ্ছে সব, বদলে দিচ্ছে ‘ইস্টবেঙ্গল আল্ট্রাস’
এক গোলে পিছিয়ে পড়লে তারা গাল নয়, গান গাইছে আরও জোরে। খেলা শেষে ভাইকিং ক্ল্যাপ করছে, চলছে পায়রো, বাজছে ড্রাম আর সবাই মিলে হয়ে উঠছে টিমের ১২ নম্বর প্লেয়ার।

East Bengal Ground


ব্লগটগের তরফ থেকে আজ আমরা এসেছি ইস্টবেঙ্গল আল্ট্রাসের ইন্টার্ভিউ-এ। কিন্তু শুরুর আগেই আমাদের জানিয়ে দেওয়া হল কারোর নাম যেন ব্যাবহার করা হয়। কারণ জিজ্ঞাসা করাতে জানা গেল- আল্ট্রাস কারোর একার নয়, আল্ট্রাস সবার। হয় সবার নাম যাবে নইলে কারোর নয়।

অগত্যা আমরা মেনে নিতে বাধ্য হলাম কারণ সবাই মিলেই তখন গাইছে –
‘এই আমরা কারা?
ইস্টবেঙ্গল'
শুরু হল ‘সবার’ সাথে ইন্টার্ভিউ।

ব্লগটগ  - ২০১৩ তে যাত্রা শুরু আল্ট্রাসের আর আজ ২০১৮। এই পাঁচ বছরের জার্নিটাকে একটা কথায় বলতে হলে কী বলবে?

আল্টাস – ‘আমরা করবো শৃঙ্গজয়, নিশ্চয় নিশ্চয়’

ব্লগটগ - শুরুর দিনগুলোর গল্প যদি একটু বলো? মানে কেমন করে শুরু হল আল্ট্রাস?

আল্ট্রাস - ২০১৩ তে দুজন সমর্থক ফেসবুক চ্যাটের মাধ্যমে ভাবনা চিন্তা শুরু করে আল্ট্রাসের। ঘটনাচক্রে তারা আবার ওয়ার্ল্ড ফুটবলের মারাত্মক ফ্যান। তাদের মাথায় প্রথম আসে এই আল্ট্রাস কালচারটা যদি কোনভাবে ভারতে আমদানি করা যায়, যদি কোনভাবে আমাদের মাদার ক্লাব ইস্টবেঙ্গলে আনা যায়। ২০১৩ থেকে ১৫ পর্যন্ত ব্যাপারটা অনলাইনেই ছিল। মানে ফেসবুক পেজে আপডেট দেওয়া শুরু, গ্রুপ বানানো, এর ওর বন্ধুকে ডাকা। আমাদেরও যখন প্রথমবার বলা হয়েছিল আল্ট্রাসের প্ল্যানিং এর কথা তখন আমরা ভেবেছিলাম – ‘কলকাতায় এটা কোনদিনই সম্ভব নয়’। কারণ সমর্থকরা সেই ভাবে হয়তো নেবে না ওয়েস্টার্ন আল্ট্রাস কালচারটা। মাঠে খেলা দেখতে আসা মানেই চার অক্ষর পাঁচ অক্ষরের বাছা বাছা শব্দ। সেখান থেকে একসাথে গান গাওয়ার ব্যাপারটা হয়তো কেউ মেনেই নেবে না।
কিন্তু তারপর যত দিন এগোল বুঝতে পারলাম আমাদের মতন করে ভাবছে অনেকেই। একজন সমর্থক, সে এক বিরাট বাঙাল লেখা পতাকা নিয়ে মাঠে এসে গ্যালারির একদম পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতো। অসম্ভব গালাগালি সহ্য করেও সে কোনদিন মাঠে না এসে থাকেনি।
এই ছোটছোট ঘটনাগুলোই আমাদের সাহস জগালো। আমরাও প্রায় ১০-১৫ জনের একটা দল হয়ে উঠলাম।

Image Courtesy : Eastbengal Ultras


আমরা প্রথম হাওড়ায় টিমের প্র্যাকটিসে গিয়ে আমাদের চ্যান্ট গুলো করি। তখন কর্মকর্তারা আমাদের এসে বলেছিল – ‘এসব কী হচ্ছে? কঙ্কালের পতাকা নিয়ে কী হবে?’
আমরা তখন বলেছিলাম – ‘এই মাঠটাকে আমরা আমাদের জন্যে স্বর্গ আর বিপক্ষ টিমের নরক বানিয়ে ছাড়বো’। সেই শুরু। প্রথম খেলা ছিল ২০১৩তে ১৮ই ডিসেম্বর বনাম ব্যাঙ্গালোর। তারপর ২০১৫ তেই ৬ই সেপ্টেম্বরের ডার্বি। যেখানে ডং দু গোল করেছিল আর আমরা ৪-১ এ জিতেছিলাম। সেই ম্যাচে আমরা সবাইকে লিফলেটে চ্যান্ট গুলো লিখে লিখে সবাইকে একসাথে গাইতে বলি, পায়রো শো হয়। প্রথম দিকে হয়তো সেই ভাবে সাড়া পাইনি কিন্তু এইভাবেই আস্তে আস্তে বাড়তে থাকে সমর্থন। ধীরে ধীরে দলটা যে কখন এত বড় হয়ে গেছে নিজেরাই বুঝতে পারিনি। এর পেছনে সোশ্যাল মিডিয়ার অবদান অনস্বীকার্য।
গ্যালারীতে আল্ট্রাস খিস্তি খেয়ে পথ চলা শুরু করেছিল আর এখন আল্ট্রাসের চ্যান্ট থামলে পেছন থেকে ষাটোর্ধ ভদ্রলোক বলেন- ‘কিরে? থামলি কেন?’

ব্লগটগ  – এই গান এবং চ্যান্টগুলো কার লেখা?

আল্ট্রাস - আমাদের নিজেদেরই। আসলে ওয়ার্ল্ড আল্ট্রাসের সুরের একটা ফরমুলার মতন আছে। বিভিন্ন দেশে সুর এক রেখে কথাগুলো নিজেদের মতন করে নেওয়া হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা এক। আমরাও বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জন নিজেদের মতন করে এক একটা করে গান রেডি করেছি।

ব্লগটগ  – প্রথম গান কোনটা?

আল্ট্রাস – প্রথম গান হল ‘আমরা করবো শৃঙ্গজয়’। 



ব্লগটগ  - বেশ। এই যে এত খরচ, মানে পতাকা, টিফো, মশাল, রংমশাল আর অনেক কিছু। এগুলোর খরচতো প্রায় অনেক। কীভাবে ম্যানেজ করো?

আল্ট্রাস - মুভমেন্টের সমস্ত খরচ যারা চাকরি করে তারা সবাই মিলে ফ্যান্ডিং করেই তোলে মুলত এছাড়াও ধরো বেশ কিছু অর্থ সাহাজ্যের দরকার থাকলে আমরা ফেসবুক পেজে অথবা গ্রুপে গ্রুপে জানাই এবং সবচেয়ে ভাল ব্যাপারটা হল শুধু পশ্চিমবাংলা থেকেই না বিদেশ থেকেও অনেকে নিজে থেকে এগিয়ে এসে আমাদের সাহাজ্য করে। আর আল্ট্রাস, গ্যালারীতে এটা প্রমান করে দিয়েছে যে তাদের টাকাটা কারোর পকেটে বা জলে যাচ্ছে না। সুতরাং আবারও তাদের সাহাজ্য পাওয়া যাচ্ছে নির্দ্বিধায়।

Image Courtesy : Eastbengal Ultras


ব্লগটগ  - আল্ট্রাসের আগে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি এবং আলট্রাসের পরে ইস্টবেঙ্গল গ্যালারি।পরিবর্তনটা কেমন?

আল্ট্রাস - টিম জিতলে উদ্দীপনাটা সবসময়েই এক। কিন্তু টিম হারলে বা খারাপ খেল্লে আগে উড়ে আসতো বাছাবাছা গালাগালি আর এখন তার বদলে হচ্ছে টিমকে তাতানোর গান। ওড়ানো হচ্ছে জায়ান্ট ফ্ল্যাগ, উড়ছে স্মোক বম্ব এর লাল হলুদ ধোঁয়া, জ্বলছে ফেয়ার্স। প্রথম দিকে আমাদেরও শুনতে হয়েছে –‘ বড়লোক বাপের ছেলে, গ্যালারীতে এসে পয়সা উড়িয়ে নাচন কাঁদন করছে’। কিন্তু আমরা শুরু থেকেই আমাদের কাজে ভীষণ ফোকাসড ছিলাম। আমরা জানতাম আমাদের কী করতে হবে। আমরা কী করতে চাই। তাই গায়ে মাখার সময় হয়নি আর সবচেয়ে বড় কথা আলটিমেটলি দিনের শেষে আমরা সবাই ইস্টবেঙ্গলের ফ্যান। কারোর সাথে ঝগড়া বিবাদের কোন প্রয়োজনই মনে করিনি কারণ আমরা সবাই একটা পরিবার। একসাথে সবাই মিলে টিমের ১২ নম্বর প্লেয়ারটা হওয়াই আমাদের লক্ষ্য।

YuvaBharati Krirangan


ব্লগটগ  - কলকাতা ডার্বি চিরকালই আমাদের দেশে বিখ্যাত। ৯৭ এ এক লাখ তিরিশ 
হাজার দর্শক, উত্তেজনা। কিন্তু এসব পৃথিবীর মানুষের কাছে তেমন ভাবে কোনদিনই পৌঁছয়নি কিন্তু এখন football fans asia থেকে শুরু করে বড় বড় সব আল্ট্রাস গ্রুপ এসে কভার করছে তোমাদের। বাংলা তথা ইন্ডিয়ার ফুটবলের মর্ডানিজাইশনে তোমাদের একটা বড় ভূমিকা আছে বলে মনে কর?

আল্ট্রাস - কথাটা আংশিক সত্যি। এমন নয় যে আমাদের আসার আগে কলকাতা ফুটবল বা ইস্টবেঙ্গল তেমন কোন ওয়ার্ল্ড মিডিয়ার কভারেজ পায়নি। হ্যাঁ তবে এটুকুন বলা যায় ইস্টবেঙ্গল আল্ট্রাস আসার পর বিদেশী মিডিয়ার কভারেজ অনেক বেড়ে গেছে। জার্মানির একটি মিডিয়া ভারতে এসে অবাক হয়ে গেছে যে ক্রিকেটের দেশে ফুটবল নিয়ে মানুষ এরকম পাগল। আল্ট্রাসের মত কালচার আছে এই দেশে। এই কদিন আগে copa90 এর মতন মিডিয়া কভার করেছে আমাদের গ্যালারী শো।
আসলে, আমরা শুরু থেকেই চেয়েছি আমাদের এই হিউজ ফ্যান বেসটাকে পৃথিবীর মানুষের কাছে প্রোমোট করতে। আমাদের জন্যে নয়, নাম পৌঁছক ‘ইস্টবেঙ্গলের’।

ব্লগটগ  - এটা তাহলে তোমাদের বিরাট পাওনা হিসেবে ধরা যায়।

আল্ট্রাস - অবশ্যই বিরাট পাওনা কিন্তু ততটাও নয়। বিরাট পাওনা হবে সেদিন, যেদিন গোটা যুবভারতী একসাথে চিৎকার করে চ্যান্ট করবে আর আমরা সবাই একটা নরক উপহার দেব বিপক্ষ দলের প্লেয়ারদের।

Image Courtesy : Eastbengal ULTRAS


ব্লগটগ  - এখন প্রচুর বাঙালি শুধু নয়, প্রচুর ভারতীয়দের মধ্যেও epl বা la liga নিয়ে ভীষণ মাতামাতি আছে। ভারতীয় ফুটবলের নাম শুনলেই একটা নাক সিটকনো ব্যাপার থেকেই যাচ্ছে। তোমাদের মনে হয়না ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্যে তাদের ভারতীয় ফুটবলকে সাপোর্ট করা একান্ত প্রয়োজন?

আল্ট্রাস - অবশ্যই। সমর্থক ছাড়া ফুটবল হয়না। ভাল ফুটবল অবশ্যই দেখুন। আমরা নিজেরাই রাত 
জেগে epl বা la liga দেখি। এবং বিশ্বাস করি এরা অনেক উঁচু মানের প্লেয়ার। কিন্তু এটাও মনে রাখতে হবে ভারত আমাদের রুট। আমাদের দেশের প্লেয়াররা ওই তিরাঙ্গার জন্যেই খেলে। ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্যে যেমন ফুটবলারদের সেরাটা দিতে হবে তেমনি সমর্থকদেরও আরও এগিয়ে আসতে হবে। ফুটবলারদের পাশে দাঁড়াতে হবে, গ্যালারীতে চ্যান্ট করতে হবে। তবেই না আরও তেড়েফুঁড়ে উঠবে ফুটবলাররা। নিজের রুটটা ভুললে চলবে না। ভাল খেলা অবশ্যই দেখুন, বিদেশের টিম সাপোর্ট করুন কিন্তু একটা কথা ভুলবেন না-
জীবনে ডাল ভাত আর বিরিয়ানির মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে শিখুন। প্রথমটা নেসেসিটি পরেরটা লাক্সারি।   

Eastbengal Ultras at Home ground



ব্লগটগ  - টিভির ওপারের সমর্থকদের জন্যে কী বলবে?

আল্ট্রাস - মাঠে আসুন, আমরা আহ্বান করছি আপনাদের সবাইকে। এমন নয় যে মাঠে এলেই আমাদের সাথে যোগ দিতে হবে সেটা যারযার ব্যাক্তিগত ব্যাপার কিন্তু গ্যালারীতে আসুন ইস্টবেঙ্গলকে, মোহনবাগান অথবা বাঙ্গালোর যেই টিমই হোক সাপোর্ট করুন, ভারতীয় ফুটবলের উন্নয়নের জন্যে সবার এক হওয়া ভীষণ প্রয়োজন। আর আমাদের কাজ, চ্যান্ট যদি ভাল লাগে তবে নির্দ্বিধায় চলে আসুন গোলপোস্টের পেছনে। কোন কার্ড বা মেম্বারশিপ লাগবে না শুধু লাগবে ৯০ মিনিট টিমকে চিৎকার করে তাতানোর অফুরান শক্তি। দেখা হোক গোলপোস্টের পেছনে...

Viking Clap



আরও কিছু বলতো মনে হয় কিন্তু তার আগেই ইস্টবেঙ্গল দিয়ে ফেলেছে আরও একটা গোল আর চিৎকারে ভেসে উঠেছে গোটা গ্রাউন্ড। আবাল-বৃদ্ধ-বনিতার চিৎকার ভেসে আসছে চারদিক থেকে। আমরাও নেচে তালে তালে...

সামনে থেকে মাইক নিয়ে কে যেন খুব ধীর স্বরে শুরু করলো –
‘সা লা লা লা লাও ইস্টবেঙ্গল’

এরপরের চিৎকারটা ভয়ঙ্কর এক গর্জন। সেটা না হয় নাই বা লিখলাম আজ।
আপনার জন্যে তুলে রাখলাম ইস্টবেঙ্গল আল্ট্রাসের গ্যালারীতে...

Image Courtesy : EastBengal ULTRAS

  
Eastbengal Ultras Facebook: https://www.facebook.com/EBULTRAS1920
   
Instagram - @ ebultras1920
Twitter - @ ebultras1920

No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098