ব্লগ-টগ

প্রকাশ্যে আত্মপ্রকাশের ঘরোয়া সূত্র

Post Page Advertisement [Top]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098

 “শুধু কলকাতা, বৃষ্টির কলকাতা
তোমার কপালে পরিয়ে দিচ্ছে টিপ
ভিড়ের কিনারে একা পড়ে আছে ছাতা সাবধানে যেও, অনেক দূরের দ্বীপ। ” 
মনে মনে আক্ষেপ ছিল,তাই বলে ছিলেন এই ইন্ডাস্ট্রি আমায় রাখতেও পারবেও না আবার ছাড়তেও পারবে না। এই আক্ষেপ আর অতৃপ্তি বোধই ছিল তার ইউএসপি। সত্যজিৎ,ঋত্বিক, মৃণাল এই যুগের পর বাংলা সিনেমায় যে মানুষটির চিন্তা-ভাবনা আবার নতুন করে ঘোর লাগাতে শুরু করেছিল,তিনি ঋতুপর্ণ ঘোষ। বাবাও ছিলেন চলচিত্র জগতের মানুষ,তবে যাদবপুর ইউনিভার্সিটি থেকে ইকনোমিক্স পড়াশুনার পাঠ চুকিয়ে ঋতুপর্ণ চলে এলেন বিজ্ঞাপনে। বঙ্গ জীবনের অঙ্গ বা তোমার সকাল আমার সকালের মতন সাবলীল কবিতায়  লিখলেন বিজ্ঞাপনের লাইন। নিছক বানিজ্যিক বিজ্ঞাপনেও যে এমন নরম অথচ সমূলে বিদ্ধ করার মতন ভাষা ব্যবহার করা যেতে পারে তা তিনিই দেখালেন। সত্যজিতের স্টাইলটা বরাবরই বড্ড ভালো লাগতো। ডিভিডিতে দেখতেন মার্লোন ব্র্যান্ডোকে আর তাই একদিন হীরের আংটির হাত ধরে চলে এলেন পরিচালনার দুনিয়ায়। এরপর কিন্তু কেবল ম্যাজিকই হয়েছে। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের গল্প নিয়ে বানিয়েছিলেন হীরের আংটি , সাদামাটা গল্পে এমন কিছু সংলাপ দিলেন যা দাগ কেটে গেল। গন্ধর্ব কুমার ধরা পড়ার পর যখন নির্ভিক গলায় বলছে লটারি চাই নি,উপার্জন করতে চেয়েছিলাম, মূল্যবোধের হলকা যেন চোখে মুখে লাগে। ঠিক তেমন দোসরের সেই আবৃত্তি “এবার ঠোঁটে মিলেছে আশ্রয়” দাম্পত্যের কতনা টানাপোড়েন কে কেমন অনায়াসে মিটিয়ে দেয়। দহনের প্রতিবাদ আর সামাজিকতার দরকষাকষি, বাড়িওয়ালীতে অব্যক্ত প্রেম ,সব কিছুতে ঋতুপর্ণ হয়ে উঠেছেন ফার্স্ট পার্সন। তিতলিতে মেঘ পিওনের দিস্তা ভরা মন খারাপ, শুভ মহরতে পিসিমার মিস মার্পল হয়ে ওঠা, রেন কোটে ও‘হেনরীকে ভেঙেচুরে ফেলা, চোখের বালিতে রবীন্দ্রনাথ কে অন্য আঙ্গিকে ইনটারপ্রেট করা,সবেতেই ছিল ঋতুপর্ণর সিগনেচার টাচ। তাই তো ট্রফি ক্যাবিনেটে এক ডজন জাতীয় পুরস্কার। 
বিতর্ককে পাত্তা দিতেন না। নিজেকে মনে মনে নারীই ভাবতেন। সেই নিয়ে কম সমালোচনা হয় নি। নিজের ইচ্ছে দাবড়ে প্রকাশ করেছেন। অভিনয় করেছেন। গান লিখেছেন। মেমোরিস ইন মার্চে গান লিখেছিলেন ব্রজবুলি ভাষায়। ঐশ্বর্য্য-অভিষেকর বিয়ের পিড়ি এঁকেছিলেন ঋতূপর্ণই। টকশোতে যখন হোস্ট,সে এবং ঋতুপর্ণই হোক বা ঘোষ এন্ড কোম্পানি,সবেতেই তাঁর পড়াশুনা,নতুন কিছু করার আগ্রহ প্রকাশ পেয়েছে। পত্রিকার সম্পাদনাও করেছেন,আর সেখানেও সফল তিনি। ঋতুপর্ণ সম্পর্কে দীপান্বিতা ঘোষ মুখোপাধ্যায় আনন্দবাজারে লিখেছিলেন - “ খুব জেদ ছিল ওর। মনে ঠাঁই দিয়েছিল— যাই হোক না কেন পৃথিবীকে আমি দেখিয়ে দেব, এই ভাবনাকে। কেউ আমার চেহারা, কথা, পোশাক নিয়ে হাসবে না, বরং নতজানু হবে! এ যেন ঈশ্বরের বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা। এই জেদের দাম ঋতুকে দিতে হয়েছিল। ভালবাসা খুঁজতে খুঁজতে একের পর এক মানুষ ওকে আরও একা করে দিয়ে চলে যেত! ঋতু মানেই একা এক সত্তা! ওর আলোয় যখন ক্ষমতার বৃত্ত তৈরি হল, তখন ওকে ব্যবহার করার জন্য মানুষ ভালবাসার ভান করত। ওর দুর্বলতা নিয়ে খেলত। আচ্ছা, শুধু ভালবাসার জন্য কেউ ওর কাছে থেকে যেতে পারত না? আমি ওর এত কালের বন্ধু বলে কি এ রকম ভাবছি? জানি না! ওর ভালবাসতে চাওয়াটার মধ্যে কী অস্বাভাবিক কিছু ছিল?
আসলে সে দিনগুলো যে কী যন্ত্রণার! ভুলতে পারি না। ওই যন্ত্রণা দিয়েই মেয়েমনের ভেতরটা দেখতে পেত ঋতু! ও কোনও দিন ছবিতে ইমোশন দেব বা ক্লাইম্যাক্স তৈরি করব বলে ছবি করেনি। অথচ ছোট ছোট করে মানুষের মনের কাটাছেঁড়াগুলো অবলীলায় দেখিয়ে গিয়েছে।”


সব কাজ শেষ হয়নি। তার আগেই হয়ে গেল ঋতুসংহার। 

ঋতুপর্ণের সিনেমার সূচীঃ

১৯৯৪ - হীরের আংটি

১৯৯৪ - উনিশে এপ্রিল (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক, জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী- দেবশ্রী রায়)

১৯৯৭ - দহন (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ স্ক্রিন প্লে, জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী- ইন্দ্রাণী হালদার, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত)

১৯৯৯ - বাড়িওয়ালি (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রী-কিরণ খের, শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেত্রী- সুদীপ্তা চক্রবর্তী)

১৯৯৯ - অসুখ (জাতীয় পুরস্কার - বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ সিনেমা)

২০০০ - উৎসব (শ্রেষ্ঠ পরিচালকের জাতীয় পুরস্কার)

২০০২ - তিতলি

২০০৩ - শুভ মহরত (জাতীয় পুরস্কার - বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠ সিনেমা, শ্রেষ্ঠ সহঅভিনেত্রী- রাখী)

২০০৩ - চোখের বালি (জাতীয় পুরস্কার - শ্রেষ্ঠ বাংলা সিনেমা)

২০০৪ - রেনকোট (হিন্দি ভাষায় শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের জাতীয় পুরস্কার)

২০০৫ - অন্তরমহল

২০০৬ - দোসর (জাতীয় পুরস্কার, বিশেষ জুরি পুরস্কার - প্রসেনজিৎ চক্রবর্তী)

২০০৭ - দ্য লাস্ট লিয়র (ইংরেজি ভাষায় শ্রেষ্ঠ ছবির জাতীয় পুরস্কার)

২০০৮ - খেলা

২০০৮ - সব চরিত্র কাল্পনিক (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ বাংলা সিনেমা)

২০১০ - আবহমান (জাতীয় পুরস্কার শ্রেষ্ঠ পরিচালক, বাংলা ভাষায় শ্রেষ্ঠ ছবির জাতীয় পুরস্কার, শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর জাতীয় পুরস্কার)

২০১০ - নৌকাডুবি

২০১২ - সানগ্লাস

২০১২ - চিত্রাঙ্গদা (বিশেষ জুরি পুরস্কার, অভিনেতা ঋতুপর্ণ ঘোষ)

২০১২ - জীবনস্মৃতি (রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আত্মজীবনী অবলম্বনে নির্মিত তথ্যচিত্র)


No comments:

Post a Comment

Bottom Ad [Post Page]

To Place your advertisement here call - +917980316633/+918145704098